উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব

This page was last updated on 07-Jul-2024 11:05pm , By Shuvo Bangla

সাধারনত দেখা যায় যে অনেক বাইকারই বেশ গরম অবস্থাতেই বাইক ওয়াশের দোকানে বাইক ধোয়ান। হয়তো তাদের অনেকেই বাইকের উত্তপ্ত ইঞ্জিন থেকে গরম বাষ্প উঠতে দেখে বেশ বন্য উল্লাস অনুভব করেন; হাহ্ হা.. আমি আসলে মজা করলাম। আসলে বাইকের উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব নিয়েই আজকের আমাদের আলোচনা। চলুন আজকের আলোচনা থেকে জেনে নেয়া যাক বাইকের ইঞ্জিন উত্তপ্ত অবস্থায় পানি ব্যবহার করলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

বাইকের-উত্তপ্ত-ইঞ্জিনে-ঠান্ডা-পানির-প্রভাব

পদার্থের উপর তাপের প্রভাব

উত্তপ্ত ইঞ্জিনে পানি ঢালা বা ব্যবহার করা আসলেই একটি ক্ষতিকর অভ্যাস। আমাদের মুল আলোচনায় যাবার আগে চলুন পদার্থবিজ্ঞান এই বিষয়ে কি বলে তা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেয়া যাক। আসলে কি ঘটে যখন কোন পদার্থকে গরম বা ঠান্ডা করা হয়? তাপমাত্রার পরিবর্তনে আসলে পদার্থে কি ধরনের বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন ঘটে?

এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় পদার্থের উপর তাপের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। যখন কোন পদার্থের তাপমাত্রা বাড়ানো হয় তখন পদার্থের মধ্যকার অনুগুলো তার স্থানে কাঁপতে থাকে। তাপমাত্রা আরো বাড়ানো হলে তাপের অনুপাতে অনুগুলোর কম্পন আরো বেড়ে যায়। আর একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পর অনুগুলোর কম্পন বেড়ে গিয়ে নিজের স্থান থেকে সরে যায়।

temperature-effect-on-matter-solid-liquid-gas

আর এই অবস্থার প্রেক্ষিতে পদার্থ কঠিন অবস্থা থেকে তরল, আর তরল অবস্থা থেকে বায়বীয় পদার্থে রুপ নেয়; আর তাদের বৈশিষ্ট্যে আমূল পরিবর্তন আসে। আর এই প্রক্রিয়ায় পদার্থের আকার আকৃতিতেও নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে।

অপরপক্ষে যখন পদার্থের তাপমাত্রা কমানো হয় তখন উল্টো প্রক্রিয়া ঘটে। সেক্ষেত্রে পদার্থের অনুগুলো ঘনসন্নিবেশিত হয়ে পড়ে, আর তাদের মধ্যকার ফাঁকগুলো একেবারেই কমে যায়। আর সাধারনত তাপ হ্রাসের শেষ আবস্থায় দেখা যায় অনুগুলো তাদের মধ্যকার আকর্ষন হারিয়ে ফেলে। ফলত: পদার্থের শক্তি, নমনীয়তা হারিয়ে যায় আর তা ভঙ্গুর প্রকৃতি ধারন করে।

কঠিন পদার্থে দ্রুত তাপ পরিবর্তনের প্রভাব

সাধারন বিজ্ঞানের আলোচনার পর প্রশ্ন এসে যায় যদি খুব দ্রুত কোন পদার্থের তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটানো হয় তখন আসলে কি ঘটে? মুলত: এই দ্রুত তাপমাত্রার পরিবর্তনে তরল ও বায়বীয় পদার্থ সমানুপাতিকহারে সাড়া দেয়। এক্ষেত্রে তাদের অনুগুলো দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে, পদার্থের ঘনত্ব কমে যায় আর পরিসরে বৃদ্ধি পায় এবং শেষতক তাদের নির্দিষ্ট আকৃতি লোপ পায় আর বাষ্পীভুত হয়। তবে বায়বীয় ও তরল পদার্থের প্রমিত তাপমাত্রা নিশ্চিত করলে তারা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়।

তবে সাধারনত কঠিন পদার্থ বিশেষকরে ধাতব পদার্থের উপর তাৎক্ষনিক তাপমাত্রার পরিবর্তন ধীর আর যথেষ্ট নেতিবাচক। আর প্রভাব আরো খারাপ হয় যখন ধাতব পদার্থের উপর আংশিকভাবে তাৎক্ষনিক তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটানো হয়। কঠিন পদার্থের তাৎক্ষনিক তাপমাত্রার বৃদ্ধিতে অনুগুলো সেই অনুপাতে যথেষ্ট দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনা। আর তাপমাত্রা আকষ্মিক হ্রাসেও ছড়িয়ে কাঁপতে থাকা অনুগুলো সেই অনুপাতে অনেকাংশেই দ্রুত স্বস্থানে ফিরে আসতে পারেনা।

মুলত: এধরনের অবস্থার প্রেক্ষিতেই কঠিন পদার্থ তার প্রমিত তাপমাত্রার কিছু গুনাবলী হারিয়ে ফেলে। এর ফলশ্রুতিতে পদার্থ তার স্বাভাবিক শক্তি, নমনীয়তা হারিয়ে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সুতরাং এখানে আকষ্মিক তাপমাত্রা পরিবর্তনের বিপজ্জনক মাত্রাটা সহজেই অনুমেয়। আর বিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলা হয় থার্মাল শক্, যেটা ধাতব পদার্থে বিশেষ প্রভাব ফেলে।

উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব

এখন আসা যাক আমাদের মুল আলোচ্য বিষয় উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব নিয়ে। একটি বাইকের উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির ঢেলে দিলে আসলে কি ঘটতে পারে? একটি গরম ইঞ্জিনে পানি ঢেলে দিলে বাহ্যত আপনারা দেখবেন পানি দ্রুত বাষ্পিভুত হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে পানি খুব দ্রুত ইঞ্জিন ক্রাঙ্ককেস এর উপরিভাগ থেকে তাপ শোষন করে বাস্পীভুত হয় ।কিন্তু বিপজ্জনক বিষয় হলো ক্রাঙ্ককেসের ভেতরের তলে উচ্চ তাপমাত্রাই থেকে যায়। ফলে একই ক্রাঙ্ককেসের একই স্থানে ভিন্ন তলে তাপমাত্রার প্রচন্ড বৈষম্য সৃষ্টি হয়।

আর আরো বিপদজনক বিষয় হলো ঢেলে দেয়া পানি পুরো ক্রাঙ্ককেস থেকে তাপমাত্রা শোষন না করে কেবল ঢেলে দেয়া অংশ হতে তাপ শোষন করে। সুতরাং এক্ষেত্রেও তাপমাত্রার বৈষম্য প্রকট হয়  আর ক্রাঙ্ককেস প্রচন্ড থার্মাল শকের শিকার হয়।

এই অবস্থায় অনেকেই হয়তো বলতে পারেন যে তারা বহুবার এমন করেছেন তবে আজ পর্যন্ত তাদের বাইকের ইঞ্জিনে কিছু হয়নি তো! তবে সচেতন হবার এমন প্রশ্নই বা আসছে কেন? উত্তরে বলতে হয়, তারা অনেকটাই ভাগ্যবান যে বাইকের ইঞ্জিনের ধাতব উপাদান এমন শক্ সহ্য করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ও সহনশীল। তবে এও সত্য যে এই সব অবিবেচনা প্রসূত বাজে অভ্যাসের ক্ষতিকর ফল সুদুরপ্রসারী। তবে চলুন দেখে নেয়া যাক উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব কেমন হতে পারে।

উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব

  • উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিলে ক্রমে ইঞ্জিন ক্রাঙ্ককেস এর স্বাভাবিক শক্তি ও নমনীয়তা হারায় আর ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
  • ইঞ্জিন ক্রাঙ্ককেসে আংশিকভাবে সুক্ষ চিড়্ দেখা দিতে পারে যেটা পরে আরো ছড়িয়ে যেতে পারে।
  • এই অভ্যাসের ফলে ইঞ্জিন গ্যাসকেট নষ্ট হয়ে যেতে পারে আর তেল লিক হতে পারে।
  • ইঞ্জিনের হেড গ্যাসকেট নষ্ট হয়ে সিলিন্ডারের কম্প্রেশন কমে যেতে পারে।
  • এটা স্পার্ক প্লাগের আয়ু কমিয়ে দেয় ও স্পার্ক প্লাগের সিরামিক জ্যাকেট ভঙ্গুর করে তোলে।
  • ইঞ্জিনের কালার কোটিং, ফিনিশিং নষ্ট হবার পেছনে উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব অনেক বেশি।
  • উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব এ ইঞ্জিনের খাঁজ, বোল্ট ও অন্যান্য অংশে মরিচা, ক্ষয় ও মলিনতা দেখা দেয়।
  • তাপ শোষনের ফলে বের হওয়া গরম বাষ্প বাইকের সিডিআই, ইসিইউ ও অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রাংশের সরাসরি ক্ষতি করে।
  • উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব এ ইঞ্জিনের কুলিং রেডিয়েটরের কার্যক্ষমতা ও স্থায়ীত্ব দ্রুত হ্রাস পায়।
  • তাপমাত্রার ব্যপক বৈষম্যের ফলে মোটরসেইকেলের কুলিং সিষ্টেমে লিকেজ দেখা দেয়।

উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব – কি করা যেতে পারে?

উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব কতটা ক্ষতিকর জানার পর স্বভাবতই প্রশ্ন চলে আসে এর প্রেক্ষিতে আমরা বাস্তবিকভাবে কি করতে পারি। উত্তর খুব্ই সহজ; আপনার বাইকের ইঞ্জিন মোটামুটি ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর যদি কোন কারনে খুব তাড়ার মধ্যে থাকেন তবে ইঞ্জিনের অংশে পানি না দিয়েই বাইকের বাকি অংশ পরিষ্কার করুন। ইঞ্জিনের অংশের তাপমাত্রা কমে গেলে তবেই তা পরিষ্কারে পানি ব্যবহার করুন, নয়তো ইঞ্জিনের অংশটুকু বাদ রাখুন।

প্রাসঙ্গিকভাবে আমাদের আলোচনার এই পর্যায়ে আবশ্যিকভাবে আরেকটা বিষয় চলে আসে তা হলো বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালনোর বিষয়ে তাহলে কি করা যেতে পারে। এখানে আবারো বলতে হয় বৃষ্টির পানিও গরম ইঞ্জিনের সমান ক্ষতি করে। তবে আশার কথা হলো যে বৃষ্টি হঠাৎ করে এসে ইঞ্জিনের উত্তপ্ত অংশে সরাসরি পড়ে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৃষ্টির বেশ আগেই পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায় যা সমানভাবে ক্রাঙ্ককেসের বাইরের তলে কাজ করে।

আর কোন সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলেও তা গড়িয়ে ইঞ্জিনের উত্তপ্ত অংশে যেতে খানিকটা সময় পায়। আর এক্ষেত্রেও ক্রাঙ্ককেস বাতাসের তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য কিছুটা হলেও সময় পায়। তবে প্রবল বৃষ্টিতে গরম ইঞ্জিন নিয়ে বাইক চালানোর যে খারাপ প্রভাব রয়েছে তা অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই। তবে কেউ কি তা কেয়ার করে? সত্যি বলতে কি আমি নিজে অন্তত কেয়ার করি না। কারন বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানো আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের একটি বিষয়!

তো বন্ধুরা এই ছিল আমাদের বাইকের উত্তপ্ত ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাব নিয়ে আজকের আলোচনা। আশা করি আমাদের আলোচনা আপনাদের ভালো লেগেছে। আর বাইক নিয়ে আপনাদের সচেতনতাও হয়তো কিছুটা বেড়েছে। তবে সচেতনভাবে একটি উত্তপ্ত বাইকে ঠান্ডা পানি ব্যবহার তথা চরম থার্মাল শকের চাপ না দেয়াই ভালো। তবে একান্তই যদি বৃষ্টিতে ভিজে বাইক চালানোর আনন্দ উপভোগ করতে চান তবে তাতে আমরা বাধা দিতে পারিনা! যাহোক নিজের বাইকের যত্ন নিন আর আনন্দ ভ্রমন উপভোগ করুন। সবাইকে ধন্যবাদ ।

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Revoo C03

Revoo C03

Price: 0.00

Revoo A01

Revoo A01

Price: 0.00

Yadea E8S Pro

Yadea E8S Pro

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Revoo C03

Revoo C03

Price: 0.00

Revoo A01

Revoo A01

Price: 0.00

Yadea E8S Pro

Yadea E8S Pro

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes