Runner Turbo 150cc এর মালিকানা রিভিউ-মোস্তাফিজ রুবেল

This page was last updated on 03-Jul-2024 06:00am , By Shuvo Bangla

Runner Turbo 150cc এর মালিকানা রিভিউ

আমি মূলত Runner Bikers Club (RBC) এর Admin মেহেদী হাসান ভাইয়ের অনুপ্রেরনায় এই রিভিউ লিখছি। এইটা আমার প্রথম রিভিউ। যতটুকু সম্ভব Runner Turbo 150cc এর ভালো খারাপ সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করব। আমি গত ২০-১১-২০১৫ তারিখে রানার টার্বো ১৫০ বাইকটি কিনি। এখন পর্যন্ত ৭,৬২৬ কিমি চালিয়েছি। এবার চলুন রিভিউ শুরু করি।


ইঞ্জিন ও পারফরমেন্স

প্রথেমে আসি ইঞ্জিনের কথায়। রানার টার্বো ১৫০ এর ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট হচ্ছে ১৪৮.২ সিসি; ১১.৪ বিএইচপি, ক্ষমতা ৮.৫ kw @ ৭৩০০ আরপিএম, টর্ক ১১.৫ নিউটন মিটার @ ৫৫০০ আরপিএম, ৫ স্পিড গিয়ার, এয়ার কুলড, সিঙ্গেল সিলিন্ডার । রানার টার্বো ১৫০ এর ইঞ্জিনের সাইজ আর ক্ষমতার দিক থেকে এটি ১২৫ সিসি বাইকের সমান।

এবার আসি পারফরমেন্সের দিকে। আগেই বলেছি Turbo 150 সিসি বাইকের ক্ষমতা ১২৫ সিসি বাইকের সমান কিন্তু ক্ষমতা বনাম ওজনের অনুপাত অর্থাৎ ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে রানার টার্বো ১৫০ এর ওজন কিছুটা কম। এর ওজন ১২৯ কেজি। আর এই কম ওজনই রানার টার্বো ১৫০-কে এনে দিয়েছে এক দুর্দান্ত গতি। খুব কম সময়েই দ্রুত স্পিড উঠে।


সৌন্দর্য, অনুভূতি ও প্রস্তুতমান

সৌন্দর্য : রানার এর সবথেকে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫০ সিসির বাইক রানার টার্বো ১৫০। এটা দেখতে আমার কাছে অসাধারণ লাগে। বাজারে অন্য ১৫০ সিসি বাইক থেকে লুক এর দিক থেকে কোন অংশে কম নয় টার্বো ১৫০। এই বাইকের মতো ডিআরএল অন্য ১৫০ সিসি বাইকে নাই বললেই চলে। হেডলাইটের লুকটাও অসাধারন। এক কথায় বাইকের ডিজাইন বাইকের সাথে মানানসই হয়েছে। প্রথম দেখায় এর প্রেমে পরে যাই।

অনুভূতি : আমি প্রায় ১১ মাস ধারে টার্বো ১৫০ চালাচ্ছি। আমি এই বাইকের আগেও অন্য ১৫০ সিসি বাইক চালিয়েছি। এটা চালানোর সময় মনে হয় হ্যাঁ আমি একটা ১৫০ সিসি বাইক চালাচ্ছি। পুরা বাইক বডির সাথে সেঁটে থেকে যার কারনে রেসিং বাইকের কিছুটা ফিল পাওয়া যায়।


প্রস্তুতমান

একটা বাইক ২০,০০০ কিমি রাইড করার আগে এর মান সম্পর্কে খুব বেশি বলা যায়না। আমার ৭,৬২৬ কিমি চালানোর পর মনে হয়েছে টার্বো ১৫০ এর প্রস্তুতমান ভাল হবে। আমার ৭,৬২৬ কিমি চলার মাঝে শুধু একবার পিছনের ব্রেক শু এবং ক্লাচ ক্যাবল একটা পরিবর্তন করেছি। ইঞ্জিনের সাউন্ড অনেক স্মুথ। যেমন প্রথমে ছিল এখনো তেমন আছে।

হ্যান্ডলিং ও ব্রেকিং

আমি অন্য যত বাইক চালিয়েছি সেইসব বাইকের মতোই টার্বো ১৫০’র হ্যান্ডলিং আমাকে নিরাশ করেনি। ঢাকা শহরে জ্যামের মধ্যে খুব ভালভাবেই চালিয়েছি। যেভাবে ইচ্ছা চালিয়েছি কখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। আমি রাস্তা ফাঁকা পেলেই ৮০-৯০ কিমি স্পিডে চালাই এবং খুব সহজেই অল্প সময়ে স্পিড কমিয়ে আনতে পারি। ( আপনারা ভুলেও আমার স্পিড দেখে নিজে স্পিড বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। যতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন ততটুকু স্পিড উঠাবেন)। আজ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কোন দুর্ঘটনা ঘটাইনি। আমার কাছে টার্বো ১৫০’র নিয়ন্ত্রণ খুব ভালো মনে হয়েছে।

ব্রেকিং মোটামুটি ভাল। তবে খুব ভাল মানের তা বলব না। কারন আমি অনেক বার ফেজার চালিয়েছি তাই যদি ব্রেকিং এর কথা বলি তাহলে বলব রানার এর উচিৎ হবে টার্বো ১৫০ এর ব্রেকিং আরও ভাল করা (১৫০ সিসি বাইক হিসেবে)। সাধারণ স্পিডে রাইড করলে এই ব্রেকিং সিস্টেমে বাইক নিয়ন্ত্রণ করতে তেমন কোন সমস্যা হবে না।


সর্বোচ্চ গতি ও মাইলেজ

আমি টার্বো ১৫০ এর টপ স্পিড ১০৬ কিমি/ঘন্টা তুলতে সক্ষম হই। আমি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিজয় সরণী মোড় দিয়ে আমার অফিস যাই। তেমন জ্যাম থাকে না। হয়ত এই জন্য আমি ৫০ কিমি/লিটার মাইলেজ পাচ্ছি।

অর্থের সঠিক মূল্যায়ন

মাত্র ১,৪০,০০০ টাকায় একটি ১৫০ সিসি বাইক। এই দামে এর থেকে ভাল বাইক আর কি হতে পারে। সব থেকে বড় কথা হলো বিক্রয়ত্তোর সেবা। অনেক কম দামি বাইক বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু সেই বাইক কিনার পর ক্রেতাকে ভোগান্তিতে পরতে হয় কারন তাদের কোন সার্ভিসিং সেন্টার নাই। তারা বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে পারে না। রানার অটোমোবাইলস একটা বাংলাদেশি ব্রান্ড। এদের সার্ভিসিং সেন্টার দেশের প্রায় সব জায়গায়। আমি এইটা চিন্তা করেই এই বাইক কিনেছি। রানার এর সেবার মান সবথেকে ভাল। আসল কথা হলো এত কম টাকায় একটা ১৫০ সিসি বাইক সাথে অনেক ফিচারস , ভাল সেবা, আমার মনে হয় এগুলাই যথেষ্ট এই বাইক নেওয়ার জন্য।

অপূর্ণতা

আমাদের দেশে যত বাইক আছে কোন বাইক ই ১০০% নিখুঁত নয়। একটা বাইকে সবধরনের সুযোগ সুবিধা থাকে না। আমার কাছে রানার টার্বো ১৫০ বাইকের যে সমস্ত খারাপ লেগেছে তা নীচে উল্লেখ করছি :

১। বিএইচপি : ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে টার্বো ১৫০ এর বিএইচপি মাত্র ১১.৪ যা ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে মোটেই কাম্য নয়। কমপক্ষে ১২+ বিএইচপি হলে আর ও স্পিড পাওয়া যেত।

২। টর্ক : ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে টার্বো ১৫০ এর টর্ক ৫,৫০০ আরপিএম। টর্ক আরও বেশি হলে ভাল হত ( ৬০০০+ আরপিএম)

৩। টায়ার : এইটা হলো টার্বো ১৫০ এর সবথেকে খারাপ দিক। ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে টার্বো ১৫০ এর টায়ার অনেক চিকন। পিছনের টায়ার এর সাইজ ১২০ এবং সামনের টায়ার এর সাইজ ১০০ দিলে ব্রেকিং অনেক ভাল হত। হার্ড ব্রেক করলে চাকা স্কিড করে। কাঁদা পানি রাস্তায় চাকা অনেক সময় স্লিপ করে।

৪। পিছনের সাসপেন্সন : টার্বো ১৫০ এর পিছনের সাসপেনশন অনেক খারাপ। অনেক ঝাঁকি লাগে। খারাপ রাস্তায় সাসপেনশন ঠিকমত খেলে না।

৫। ব্রেক : ব্রেকিং সিস্টেম তেমন ভালো নয়। ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে টার্বো ১৫০ এর ব্রেকিং সিস্টেম আরও ভাল দরকার কারন অন্য ১৫০ বাইকে টপ স্পিডে যত দ্রুত কম সময়ে থামা যায় টার্বো ১৫০ তে তার থেকে অনেক বেশি সময় লাগে।

এখানে আমি যা লিখেছি তা শুধুই আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি। অন্য কারো সাথে নাও মিলতে পারে।

সবশেষে একটা কথাই বলব সব বাইকেরই কিছু না কিছু দোষ আছে সেটা যত দামী বাইকই হোক। আগেই বলেছি অর্থের সঠিক মূল্যায়নের কথা চিন্তা করলে এই বাজেটে টার্বো ১৫০ একটা বেস্ট বাইক। আমাকে এখন পর্যন্ত কোন পেইন দেয়নি। আমি টার্বো ১৫০ নিয়ে ভাল আছি।

বাইক চালানোর আগে অবশ্যই হেলমেট পরিধান করুন

মনে রাখবেন একটা দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না

ধন্যবাদ সবাইকে এত কষ্ট করে আমার এই রিভিউ পরার জন্য। মানুষ মাত্র ভুল হয়। তাই ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন।

লিখেছেনঃ মোস্তাফিজ রুবেল

  আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।