Hero Ignitor 125 IBS বাইকে ৫৫ কি.মি. মাইলেজ - নাজাহ্ রাঈদ
This page was last updated on 30-Jul-2024 03:22am , By Raihan Opu Bangla
আমি মোঃ নাজাহ্ রাঈদ। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ এর স্বরুপকাঠী উপজেলায় বসবাস করি। বর্তমানে আমি একটি Hero Ignitor 125 IBS বাইক ব্যবহার করছি । আজ আমি আমার এই বাইকটি রাইড করার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
Hero Ignitor 125 IBS বাইকে ৫৫ কি.মি. মাইলেজ
বাইক এক অন্যরকম ভালোবাসার জিনিশ আমার কাছে। ক্লাস ফাইভ এর পরীক্ষা শেষ করেছি মাত্র। বাইকের প্রতি আমার ভালবাসা আমার আশেপাশের সবাই কম বেশি যানতো। তাই হঠাৎ করেই এক রাতে প্রতিবেশী এক ডাক্তার আংকেল তার নিজের ব্যবহৃত "Honda CD 80" বাইক দিয়ে আমাকে বাইক চালানো শিখাতে বের হয়।
সেই থেকেই শুরু হয় বাইক এবং বাইকিং এর প্রতি আমার নিরন্তর ভালোবাসা।
নিজের বাইক না থাকার কারণে চালানো শিখার পর থেকে বাইক চালানোর বিষয়টা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। সুযোগ পেলেই অন্য কারো বাইক চালানোর চেষ্টা করতাম। আম্মু নানা সময় বকাঝকা করত। সময়ের সাথে সাথে যখন বড় হলাম তারপর থেকে আম্মুর বকাঝকা ও কমে গেল। পরবর্তীতে আম্মুজানই উৎসাহ দিতেন ধীরে সুস্থে বাইক চালানোর জন্য। সময়টা, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারী।
আম্মু আর আমি বাজার থেকে রিকশা করে বাসায় ফিরছিলাম। তখন "হোন্ডা" কোম্পানির শোরুম এর সামনে রিকশা থামিয়ে আম্মু বললো, চলতো একটা বাইক দেখি। আমি যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেলাম এমন একটা অবস্থা। আমার এই জীবনে আমি আমার আম্মুকে কোনদিন বলিনি যে আমার একটা বাইকের প্রয়োজন বা কিনে দাও। সেখানে যদি মা নিজে থেকেই বলে চল বাবা একটা বাইক দেখি। কি অবস্থা হয় তা তো কিছুটা বুঝতেই পারছেন ।
Hero Ignitor 125 IBS First Impression Review In Bangla – Team BikeBD
ওই শোরুমে Honda Livo 110 বাইকটি পছন্দ হলেও কালার পছন্দ না হওয়ায় এবং ডিস্ক ব্রেক না থাকায় সেটা নেয়া হয়নি। আমার খালাতো ভাই ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছে । ভাই আম্মুকে বলে আন্টি রাঈদ কে একটা বাইক কিনে দিন। আমি আগামীকাল চলে যাচ্ছি রাঈদ এর বাইকটা দেখে যাই।
পরেরদিন সকালবেলা অর্থাৎ ৯ ই জানুয়ারি ১১ টার দিকে আম্মুজান ভাইয়া কে ফোন দিয়ে বলে চলো রাঈদ এর জীবনের প্রথম বাইক ওর পছন্দেই কিনে দেই। চলে গেলাম সবাই আম্মুকে নিয়ে Hero বাইকের শোরুম এ। সেখান থেকে পছন্দ করে নিয়ে নিলাম জীবনের প্রথম বাইক Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি।
এরপর সার্ভিস সেন্টার থেকে Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি সব কিছু ওকে করে স্টার্ট দিলো । জীবনের প্রথম নিজের বাইকের ককপিটে বসে বাইক স্টার্ট করার অনুভুতি কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে বর্ননা করা সম্ভব নয়,অনুভূতিটাই ছিল অন্যরকম। প্রথমবার টেস্ট রাইডেই প্রথম পিলিয়ন হিসেবে আম্মুকে নিয়ে রাইড দিলাম, এ যেন জীবনের অন্যতম এক আত্মতৃপ্তি।
টেস্ট রাইড দিয়ে এসে বাইকটি চালানোর জন্য দিলাম আমার খালাত ভাই সালমান আরেফিন ভাইয়াকে, যার জন্যই হয়ত এতো দ্রুত এবং অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়েছিলাম নিজের Hero Ignitor 125 IBS বাইকটিকে। সে বাইকটি চালিয়ে দ্রুত বাসা পর্যন্ত চলে যায়।
কেননা একটু পরেই তাকে ঢাকায় রওনা দিতে হবে। মূলত কমিউটার বাইক হিসেবে এটি চালিয়ে যেমন আরামদায়ক তেমনি এর ওভারঅল ফিচারগুলো দারুণ। বন্ধুর Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি চালিয়ে এই বাইকের প্রতি ভাললাগা সৃষ্টি হয় এবং সেই ভালো লাগা থেকেই এই বাইকটি বেছে নেওয়া।
আমি যখন Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি ক্রয় করি তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিল ১,২০,৯৯০ টাকা। সম্পূর্ন টাকা ক্যাশ দিয়েই আমি বাইকটি কিনি। মূলত নিজের পড়াশুনার জন্য যাতায়াত সহ আম্মুর রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করার জন্যই হঠাৎ করে বাইকটি আমাকে কিনে দেয়।
এই আর্টিকেলটা যখন লিখছি, আজ ১৯ শে নভেম্বর অর্থাৎ ভালোবাসাটার ১০ মাস ১০ দিন পূর্ণ হলো। এখন পর্যন্ত ৯১৬০ কিলোমিটার পথ চলায় Hero Ignitor 125 IBS আমাকে কখনো নিরাশ করেনি আমার এই পথ চলার সঙ্গী।
বাইকটির অন্যতম পছন্দের দিক হলো এর আউটলুক, ইঞ্জিনের শক্তি এবং I3s নামে একটা নতুন ফিচার। এই I3s ফিচারের কারনে বাইক নিউট্রাল অবস্থায় থাকলে অটো ৩ সেকেন্ড পরে বন্ধ হয়ে যাবে। আবার ক্লাচ ধরলে বাইক অটো স্টার্ট নিবে যা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। এখন পর্যন্ত আমি বাইকের ৩ টি ফ্রি সার্ভিসিং করিয়েছি। প্রথমবার ৪০০ কিলোমিটারে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছিলাম।
এর পর থেকে প্রতিবার ৮০০-১০০০ কিলোমিটার রাইডের পরে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি প্রথম ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ পেতাম ৩৯ কিলোমিটার পার লিটার । ২০০০ কিলোমিটার এর পরে একটুও হতাশ করেনি আমাকে। সিটিতে রাইড করে ৪৮-৫০ কিলোমিটার পার লিটার মাইলেজ পেয়েছি এবং হাইওয়েতে ৫৫+ এভারেজ মাইলেজ পাই যা একটা ১২৫ বাইকের জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয়।
আমি প্রতিবার কম্পানির নিয়ম অনুযায়ী সার্ভিসিং করাই। এছাড়া ১৫ দিন পরপর চেইন টাইট দেই, লুব করাই, টুকটাক যা দরকার হয় কাজ করাই। আমি হিরো অথোরাইজড 10w30 গ্রেড এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি সেই শুরু থেকে। বেশ ভালোই সার্ভিস পাচ্ছি এই ইঞ্জিন অয়েল থেকে। এখনো ইঞ্জিন সাউন্ড প্রথম দিনের মতো স্মুথ আছে।
কম্ফোর্ট এর দিক বিবেচনা করে আমি বাইকটির হ্যান্ডেলবার পরিবর্তন করে FZ-S V2 এর হ্যান্ডেলবার লাগিয়ে নেই। এবং ঝালাই করে স্টান্ড টা একটু বড় করে নেই। হ্যান্ডেলবার পরিবর্তন এর ফলে আমি হাইওয়েতে বাইকটি চালানোর ক্ষেত্রে এক্সট্রা কম্ফোর্ট পাই। একদিনে সর্বোচ্চ ২৮৯ কিলোমিটার চালিয়ে একটুও ব্যক পেইন ফিল করিনি।
Also Read: Hero Ignitor 2018 মালিকানা রিভিউ - একরাম হোসেন
Hero Ignitor 125 IBS বাইকে হাইওয়েতে আমি সর্বোচ্চ ১১৩ কিলোমিটার স্পীডে আমার বাইকটি রাইড করেছি পিলিয়ন ব্যতীত। আপনি যে কোন ধরনের রাইডে সঙ্গী করতে পারেন বাইকটিকে। হয়ত লং রাইডে একটু কষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু আশা করি নিরাশ করবে না আপনাকে।
Hero Ignitor 125 IBS বাইকটির কিছু বিষয় যা আমার কাছে ভাল লাগেনি -
- বাইকটিতে স্পীড এর তুলনায় ব্রেকিং সিস্টেম আমি আশানুরূপ পাইনি।
- হাই স্পিডে বাইক চালানো অবস্থায় ব্রেক করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয় ।
- হয়ত আর একটু উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম থাকলে আরো ভালো হত ।
- বাইকটির হেডলাইট কিছুটা নিম্নমানের, রাতে চালাতে অসুবিধা হয়।
- হাই আরপিএম-এ বেশ কিছুক্ষণ চালালে বাইকের ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়।
- বাইকটির হর্ণ খুব একটা ভাল মানের না।
Hero Ignitor 125 IBS বাইকের সকল ফিচার এবং চালানোর অভিজ্ঞতার আলোকে আমার দৃষ্টিতে Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি এই সেগমেন্টে সব দিক থেকে এক কথায় অনন্য একটি বাইক। কিন্তু সব থেকে হতাশ করেছে স্পীড অনুযায়ী এর নরমাল ব্রেকিং সিস্টেম।
তবে আপনি ইঞ্জিন ব্রেকিং-এ পারদর্শী হলে হাই স্পীডে রাইড করলেও আশা করি বাইকটি নিয়ন্ত্রন করতে তেমন কোন সমস্যা হবেনা। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ নাজাহ্ রাঈদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।