Hero Hunk - ১৫,০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ লিখেছেন আসরার
This page was last updated on 11-Jul-2024 01:32pm , By Shuvo Bangla
আমি আসরার আহমাদ , আজ সকলের সাথে কথা বলতে চাই আমার ১৫,০০০ কিলোমিটার চালানো Hero Hunk নিয়ে। আমি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ ৮ম সেমিস্টারের ছাত্র এবং একটি মিউজিক প্রোডাকশন হাউজের ফটোগ্রাফার । আর এদিক ওদিকের কথা না বলে সরাসরি বাইকের কথায় চলে আসি ।
সবার মতই আমার বাসাতেও বাইকের প্রতি আমার অভিভাবকগণ আগ্রহী ছিলেন না । তাদের নানা উক্তির মাঝে “মোটরসাইকেল = মরণসাইকেল” এবং “হুন্ডা চালায় গুন্ডারা” উল্লেখযোগ্য ছিল । যার পরনাই আমার নিজের বাইক হওয়াটা আমার কাছে দুঃসাধ্য ব্যাপার বলে মনে হচ্ছিলো ।
তবে ভাগ্যক্রমে আমার বাবার নিজেরও বাইকের প্রতি দূর্বলতা থাকায় এবং এই ছোট্টো মোটর যানটির অসাধারণ প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পেরে হূট করেই ১৫ই ডিসেম্বর, ২০১৫ তে আমার ঘরে আমার নিজের নামে রেজিস্টার করা এক খানা Hero Hunk Double Disc চলে আসে যা নিলয় হিরো এর তেজগাঁও শোরুম থেকে ক্রয় করা হয়েছিলো ।
Also Read: Hero Hunk এর বিক্রয়মূল্য
অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রকম বাইক চালানো ও তার খুটিনাটি সম্পর্কে জানার আগ্রহের কারণে বাইক কেনার আগেই আমি ভালই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়ে উঠেছিলাম যা আমার বাইক মেইনটেনেন্স ও বাইকের সর্বোচ্চ পার্ফরম্যান্স বের করে আনতে সাহায্য করেছে । এবার আমি আমার ১৫০০০ কিলো চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে পর্যায়ক্রমে এর স্পেসিফিকেশন, ভাল দিক ও খারাপ দিক গুলো তুলে ধরবো ।
স্পেসিফিকেশন:
প্রথমেই বলে নেই Hero Hunk এর যাবতীয় স্পেসিফিকেশন । এই বাইকটি সিঙ্গেল সিলিন্ডারের এয়ার কুলড ১৪৯.২ সিসি এটিএফটি ইঞ্জিন সম্বলিত শক্তিশালী একটি বাইক । শক্তি শালী বলার কারণ এর সর্বোচ্চ শক্তি ১৫.৬ বিএইচপি এবং এর সর্বোচ্চ টর্ক হচ্ছে ১৩.৫০ এনএম । এর ওজন ১৪৬ কেজি এবং এর তেল ধারণ ক্ষমতা ১২.৪ লিটার । এই বাইকটির সামনে টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক এবসরবার এবং পেছনে নাইট্রোক্স জিয়ারেস সাস্পেন্সন দেয়া হয়েছে ।
ডাবল ডিস্ক ব্রেকের সামনেরটি ২৪০ এম এম এবং পেছনেরটি ২২০ এম এম । এতে ১২ ভি এর ব্যাটারি, ৩৫ ওয়াট এর হ্যালোজিন বাল্ব হেড লাইট এবং এল এই ডি ব্যাক লাইট ব্যাবহার করা হয়েছে । এটিতে ৫ টি ধাপ সম্বলিত গিয়ারবক্স রয়েছে এবং Hero Hunk এর গ্রাউণ্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬৩ এম এম । এই বাইকটিতে ১০W৩০ গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে বলা হয়েছে । এবার চলুন আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই বাইকের ভাল ও খারাপ দিকগুলো দেখে আসি । এখানে যাবতীয় মন্তব্য আমার ব্যাক্তিগত তাই কারো মতের অমিল হলে ক্ষমা প্রার্থী ।
ভালো দিক
এক্সিলেরেশন – বাইকটির এক্সিলেরেশন এই সেগমেন্টের এয়ার কুলড বাইকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য । এর অসাধারণ রেস্পন্স আপনাকে যে কোন পরিস্থিতি বা অবস্থায় কনফিডেন্ট থাকতে সাহায্য করবে । এর লুকের পাশাপাশি এই এক্সিলেরেশনের কারণেও একে ইংরেজিতে বুল বা ষাঁড় বলা হয়ে থাকে । সিটিং পজিশন – এই বাইকটির বসার জায়গা এই সেগমেন্টের বাইকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ আরামদায়ক একটি ।
হাই ওয়েতে দীর্ঘক্ষণ বাইকিং বা জ্যামে বসে থাকার সময় এর উপকারিতা খুব সহজেই বওঝা যায় । শুধু রাইডার নয় পিলিওনের বসার জায়গাও যথেষ্ট আরামদায়ক এবং দুইজনের বসার জন্যে বাইকটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা রয়েছে ।
কন্ট্রোলিং – বাইকটির হ্যান্ডেল পজিশন রাইডারের কনফিডেন্স লেভেলকে আরো গাড় করে তোলে । তবে এর কন্ট্রোলিং এক্সিকিউটিভ কমিউটার হিসেবে পরিমাপ করলে অসাধারণ । এর থেকে স্পোর্টি টাইপ কন্ট্রোল আশা করলে আশাহত হবেন ।
লুক – এর মাস্কুলার লুক একে অনেক আগে থেকে এই পর্যন্ত মার্কেটে এই সেগ্মেন্টের উল্লেখযোগ্য বাইক হিসেবে ধরে রেখেছে । টিউবুলার ডায়মন্ড কাট চেসিসের উপর শার্প এন্ডের মাস্কুলার তেলের ট্যাঙ্ক , সামনের স্টাইলিশ হেডল্যাম্প ও আকর্ষনীয় এল ই ডি ব্যাকলাইট এর লুককে নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায় ।
মাইলেজ – শহরের রাস্তায় ৪০ থেকে ৪৫ মাইলেজ পেয়েছি এবং হাইওয়েতে সর্বোচ্চ ৫২ থেকে ৫৫ পর্যন্ত মাইলেজ পেয়েছি । যা এই বাইকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি সুবিধামূলক গুণ । তবে এই বাইকের এরকম ধারাবাহিক মাইলেজ পেতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে । হূটহাট এক্সিলেরেশন বাড়িয়ে দিলে বা রেড লাইন রাইডিং করলে এই বাইকের মাইলেজ উল্লেখিত মানের চেয়ে কমে যাবে । ৪ থেকে ৫ আর পি এম এর মাঝে ৪০ থেকে ৫৫ কিমি/ঘণ্টায় গতি রেখে চললে এই বাইকের অপটিমাম বা সর্বোচ্চ মাইলেজ পাওয়া যাবে ।
খারাপ দিক
ব্রেক ইন পিরিয়ড – এই বাইকটির ইঞ্জিন হিরো থেকে ৭০০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওয়ারেন্টি প্রদান করা হয় যার ফলে এই বাইকটির ইঞ্জিন এর ব্রেক ইন পিরিয়ড পার করতে ৫ থেকে ৭ হাজার কিলো সময় চলে যায় । এই সময়ের মাঝে রেড লাইন রাইডিং করলে বা হঠাত অনেক এক্সিলেরেশন দিলে বাইকের ইঞ্জিন ডিটোনড এবং সাইন্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে যা আসলে খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং বিরক্তিকরও বটে ।
ব্রেকিং সিস্টেম – ডাবল ডিস্ক হলেও এর সামনের ব্রেকের পার্ফরম্যান্স ভাল কিন্তু এর পেছনের ডিস্ক ব্রেকের পার্ফরম্যান্স মোটেও সন্তোষজনক নয় । স্কিডিং এর জন্যে মোটামোটি কুখ্যাত এর পেছনের ডিস্ক ব্রেকিং সিস্টেমের সমস্যা আরেকটু বাড়িয়ে দেয় এর চাকা ।
চাকা – এমনিতেই ১৭ এর জায়গায় ১৮ সাইজের রিমের চাকা ব্যাবহার করায় এই বাইকের চাকার এভেইলেবেলিটি অনেক কম । তার উপরে এই বাইকের পেছনের চাকা তুলনামূলক ভাবে অনেক চিকন যা দূর্দান্ত গতি থাকা অবস্থায় ব্রেকিং এর সময় কন্ট্রোলিং নষ্ট করে দিয়ে স্কিড করে ফেলে । এই বাইকের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী এর পেছনে চাকার সাইজ নিম্নে ১২০ করা উচিত ছিল ।
হেড লাইট – এর হেড লাইটের আলো অনেক ভাল হলেও তা নির্ভর করে বাইকের আর পি আম এর উপরে কারণ হামগক এখনো আগেরকার বাইকগুলোর মতই ডায়নামোর সাথে কানেক্টেড হেড লাইট ব্যবহার করে । যার ফলে রাস্তায় বিব্রতকর পরিস্থিতি বা বিভিন্ন রকম বিড়মবনায় পড়তে হতে পারে । তবে প্রোজেকশন এল এই ডি লাইট লাগানোর মাধ্যমে মোডিফাই করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব । ওজন – এর ওজন প্রসিদ্ধ বাইকার বা অভিজ্ঞ বাইকারদের জন্যে কিছুই মনে না হলেও বাইক চালানোর বিগিনিং বা শুরুর দিকে যদি এই বাইক নেয়া হয় তাহলে এর সামনের দিকের রাজকীয় ওজন নতুন বাইকারকে এর কন্ট্রোলিং এ সমস্যায় ফেলে দিবে ।
ইঞ্জিন কিল সুইচহীনতা – যেমনটি আমরা জানি যে হিরো এর বেশিরভাগ বাইকেই ইঞ্জিন কিল সুইচ থাকে না তেমনি এই বাইকেও ইঞ্জিন কিল সুইচের অবস্থান নেই যা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সুবিধার জন্যে দরকার ছিল ।
এই ছিল আমার অভিজ্ঞতা এবং আমার চোখে দেখা Hero Hunk । পরিশেষে বলতে চাই ভাল ও খারাপ দিক মিলিয়ে Hero Hunk এই সেগমেন্টের টপ লিস্টেড একটি বাইক যাকে নিয়ে বিতর্ক তুলনামূলকভাবে নেই বললেই চলে । এর পছন্দের মানুষ অগণিত পাওয়া গেলেও এর অপছন্দের মানুষ খুবই কম।
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।