মোটরসাইকেলে কাশ্মীর ভ্রমন অভিজ্ঞতা (পর্ব ৪) বিস্তারিত-বাইকবিডি
This page was last updated on 29-Jul-2024 11:26am , By Saleh Bangla
মোটরসাইকেলে কাশ্মীর ভ্রমন অভিজ্ঞতা
সকালে ঘুম থেকে উঠি রুমের ইন্টারকমের বেজে ঊঠার শব্দে। নিচের রিসেপশন থেকে বলে ভাই আপনাদের পাসপোর্ট গুলি নিয়ে নিচে আসেন। মালিকে পাসপোর্ট দিলাম পাসপোর্ট দেখে উনি বলে স্যার আপনার ভিসা কোথায়। বললাম ভিসা নেই এই পাসপোর্টে ভিসা লাগে না। উনি উনার এক বন্ধু এফ আর ও (ফরেইন রেজিস্টার অফিস) তে সেখানে তার সাথে ফোনে কথা বলার পর বলে উনাদেরকে নিয়ে এফ আর ও অফিসে যেতে। কাশ্মীর যেতে যেতে মনে হয় পুলিশ স্টেশনেই বেশি থাকতে হবে। আমরা পাসপোর্ট আর বাকি ডকুমেন্ট নিয়ে মালিকের গাড়িতে করে অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে পাসপোর্ট দিলাম পুলিশি যেরা করা শুরু হলো। কিভাবে এলেন, কবে এসসেন ? কোথায় যাবেন? নানান প্রশ্ন। পরে তাকে বললাম আপনাদের যদি অফিসিয়াল পাসপোর্টের ব্যাপারে জানা না থাকে তাহলে ইমিগ্রেশন অফিসে ফোন দিয়ে কারও সাথে কথা বলেন। তারপর তারা ইমিগ্রেশন অফিসে ফোন দিয়ে কথা বলার পর আমাকে বলে “সরি ফর দ্যা ইনকনভেনিয়েন্স” বলে আমাকে আমার পাসপোর্ট ফেরত দিল।
আমি তখন সুযোগ পেলাম কথা বলার বলালম আপনারা এফআরও তে আছেন আপনাদের তো জানা উচিত এই বেপার গুলি। তাই না? এভাবে কতক্ষণ ঝাড়ি দেওয়ার পর একজন তার ফোন নাম্বার দিয়ে আমাকে বললেন অন্য কোথায় কোন সমস্যা হলে ফোন দিয়েন। আর আমাদেরকে চা নাস্তা খাওইলো বাহ সকালের নাস্তার টাকা বেচে গেলে। মনে মনে ভাবলাম এইভাবে প্রত্যেক জায়গায় এমন হলে তো খারাপ হয় না। কাশ্মীর যেতে যেতে মন হলে ভালই হতো।
যাক সকালের নাস্তা হয়ে গেলো এখন আবার কাশ্মীরে যাওয়ার পালা। ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে হোটেলের নিচে এলাম সেডেল ব্যাগ বাইকের উপরে রাখতেই দেখি বাইকের ক্যারিয়ার এর এক পাশ ফাটল ধরেছে। এমনি দেরি হয়ে গেছে তার উপর এখন এই অবস্থা। কি আর করার রিসেপশনের ছেলেটাকে দেখিয়ে বললাম যে ভাই ঝালাই করা লাগবে আসে পাশে কোথায় পাব? তারপর সেই ক্যারিয়ার ঝালাই করে এসে রউনা দিতে দিতে ৩টা বেজে গেলো। ভেবেছিলাম একটু সময় নিয়ে আজকে সময় নিয়ে যাব রাস্তায় বেশি বেশি ব্রেক দিব আর ইচ্ছা মতন ছবি তুলবো।
৩০ মিনিট পর থেকেই মনের মাধুরি মিশানো সেই রাস্তা শুরু হলো। একদম আলকাত্রা মারা মসৃণ রাস্তা দুই পাশে পাহাড় রাস্তা গুলি সাপের মত পেচিয়ে সেই পাহাড়ের উপর দিয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ব্রিজ আহা কি রাস্তা। মন ভরে যাচ্ছে। রোদ্র উজ্জ্বল দিন। তেমন একটা ঠান্ডাও লাগছে না। আহা কিইইইই আনন্দ আকাশে বাতাশে। কিছু ছবি তোলা হলো মন মত হচ্ছে না সময়ও নেই হাতে আলো ফুরিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলে তাড়াতাড়ি সূর্য দূবে যায়।
এখনও ৫৫-৬০ কিঃমিঃ বাকি। ইচ্ছা ছিল যে চেনানির টানেল ক্রস করে ঐ পারে গিয়ে রাস্তার আসে পাশে কোন হোটেল/ হোম স্টে করব। হিমাচল আর জাম্মু কাশ্মীরের অনেক জায়গাতেই হোম স্টে করতে পারবেন। এর জন্য শুধু বাড়ির মালিককে আপনার কনভিন্স করা লাগবে যে আপনি আসলেই একজন ট্রাভেলার। তাতে খুব অল্প খরচেই সব পেয়ে যাবেন। এরকম পরিকল্পনা নিয়েই যাচ্ছিলাম উধামপুর পার করার পর শুরু হলো অফ রোড, চার লেনের রাস্তার কাজ চলছে। কোথাও কোথাও কাঁদা মাটি কোথাও ভাঙ্গা। সর্বপরি গতিবেগ ২০-৪০ এর বেশি যাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে আস্তে আস্তে ঠান্ডা বাড়তেছে। কোথায় থাকবো আজকে অন্যদিনের মত আর আগে থেকে ঠিক করা হয় নি কারন আমার কাছে যেই পোস্ট পেইড সিম আছে সেইটা টে ইন্টারনেট অন করা হয় নি। শুধুমাত্র ইনকামিং আর আউটগোয়িং। দুপুরে কিছু খাইনি এখনও খাব কিভাবে এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে এলে কি আর খাওয়া দাওয়ার কথা মনে থাকে ভাই। পেটের মধ্য ক্ষুধার আগুন যেন দিকি দিকি করে জ্বলছে। সামনে রাস্তার কাজ করছে রাস্তার পাশেই কিছু মেকানিক শপ, আর রেস্টুরেন্ট এর মত দেখে বাইক থামালাম। গিয়েই জিজ্ঞেস করলাম যে ভাই “চায়ে মিলেগা?” প্রতিউত্তরে এল হ্যা মিলেগা। বসার পর চা নিয়ে এল তখন জিজ্ঞেস করলাম ভাই “ভাইসাব বহোত ভুগ লাগিহে, খানে ম্যা কেয়া মিলেগা?” বলো আপাতত ম্যাগি নুডলস আছে। মানে পাহাড়ি এই দোকান গুলিতে খাবারের সময় ছাড়া হালাকা কিছু পাওয়া যায়। এরা সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর রাতের খাবার ছাড়া অন্য সময় হাল্কা খাবারের মধ্য চা, নুডলস এই এই গুলিই করে থাকে। রেস্টুরেন্টার জায়গাটা ছিল অসাধারন, ভিতরে চেয়ার টেবিলের পাশে যেই জানালাটা সেটা দিয়ে দূরে বরফের পাহাড় দেখা যাচ্ছিল। এর আগে কাশ্মীর যাওয়ার পথে তেমন ভালো রেসট্রুরেন্ট আর পাইনি। আর সন্ধ্যা নেমে আসছে সূর্যাস্তের আলো যেন ছিল কুসুমের মত। মনে হচ্ছিল যে দূরের পাহাড়ের চুড়াটা একটা সিদ্ধ ডিম এর কাটা অংশ। আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে সেই কমল কুসুম। এরকম কবি কবি ভাবে থাকতে থাকতেই চলে এল নুডলস। খেয়ে আবার রওনা দিলাম কাশ্মীর এর পথে। এভাবে কিছু দূর পর পর একটু চা বিরতি দিতে দিতে চেনানিতে টানেলের কাছে পৌছেগেলাম। ৮ টার মত বাজে। টানেল ক্রস করার আগে রাস্তার এক লোককে ডাক দিয়ে বললাম ভাই আসে পাশে থাকার জন্য হোটেল আছে ? উনি হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিল যে ভাই এই তো এই রাস্তাতে গেলেই রাস্তার সাথেই পেয়ে যাবেন। চেনানি শহর টা হচ্ছে টানেলের আগে ডান দিকের রাস্তায় নিচে চেনানি শহর। ডান দিকে রাস্তায় ১০০ মিটার গেলেই একটা হোটেল আছে প্রেম গেস্ট হাউজ। হোটেল টা ভালই ছিল। দরদাম করে শুধুরাতের জন্য ৭০০ রুপিতে পেয়ে যাই। আর ২৪০ রুপিতে দুই জনের রাতের খাবার চলে আসে। বাহ চমৎকার ।
এবার সবতো হলো। কালকে যে আমরা শ্রীনগের উদ্দেশ্য রওনা দিব যে রোড ওপেন হয়েছে কিনা সেটার খবর নেওয়া লাগবে। টানেলের পাশেই হোটেল হওয়ার সুবিধায় রাস্তায় চলে গেলাম একটু পর গাড়ির ড্রাইভার দের সাথে কথা বলি ভাই রাস্তার কি অবস্থা ? পরে রুমে এসে ইমরান ভাই আর অঞ্জনদার সাথে কথা হল। অঞ্জনদার কথা ছিল পাহাড় ধশ হলেও ওরা রাস্তা পরিস্কার করে ফেলে খুব দ্রুত তারপরও যাওয়া যাই বাইক দেখলেই নাকি ওড়া খুব আন্তরিকতার সাথে পার করে দেয়। দাদার কথায় বেজায় সাহস চলে এলো মনের মধ্য এখন আমার চিন্তা একটাই আবহাওয়া যেহেতু ভালো আছে আমরা যাব যা আছে কপালে পড়ে দেখা যাবে এর মাঝেই উর্মি বলে উঠলো সমস্যা নাই আমরা বাইক থেকে নেমে নেমে পাথড় সরিয়ে সরিয়ে তারপর যাব “চলো যাই আমি, আমি বরফ দেখবো” । বৌ আমার মেলা লক্ষি কখনও আবদার করে কিছু চায় না। এইবার একটা জিনিস চাইলো আর আমি না দিতে পারি চেষ্টাও করব না তা কি করে হয়? ব্যস হয়ে গেলেও প্ল্যান। লিখেছেনঃ সাজেদুর রহমান মাহি