ছোট বাইক এ দূরপাল্লাঃ শ্রীমঙ্গল
This page was last updated on 06-Jul-2024 09:11am , By Shuvo Bangla
ছোট বাইক এ দূরপাল্লাঃ শ্রীমঙ্গল
ভ্রমনের তৃতীয় দিন ( See the Earlier Story) অর্থাৎ ২১শে জুন আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রউনা হই । প্লান ছিলো শ্রীমঙ্গল এর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দেখে ঢাকা ফিরবো । কিন্তু বিভিন্ন কারনে আমাদের বাসা থেকে বের হতে হতে প্রায় বেলা ১১ টা বেজে যায় । তাই বেশ আশঙ্কিত ছিলাম যে সন্ধার আগে ঢাকা যেতে পারবো কিনা । আমরা চাচ্ছিলাম রাতের বেলা হাইওয়ে তে রাইড না করতে ।
সেদিন ও ঘোর বৃষ্টি ছিলো সকাল থেকেই । তাই রেইন কোট পরেই বের হই । সিদ্ধান্ত নিলাম যে এতগুলো ব্যাগ বহন করা খুব ঝামেলার এবং বৃষ্টি তে আরো ঝামেলা সৃষ্টি করবে । তাই সেগুলো একটা কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে ঢাকা পাঠিয়ে দেই , এর সিদ্ধান্তের কারনে সত্যি আমাদের ঝামেলা অনেক কমে গিয়েছিলো এবং আমরা অনেক ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম ।
মধ্যম গতিতে আমরা ঢাকা- সিলেট হাইওয়ে ধরে আগাতে থাকি । মাঝে মাঝে থেমে চা ইত্যাদি খাচ্ছিলাম । আমরা কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম যে এবার কি লাউয়াছড়া যাবো কিনা । কারন এই গতিতে ঢাকা যেতে এমনিতেই আমাদের অনেক সময় লাগবে , তাই আরো সময় এখানে কাটাবো কিনা সেটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম । শেষ মেশ সিদ্ধান্ত হলো লাউয়াছড়া হয়েই ফিরবো । ঢাকা যেতে ভোর হয় হোক , তাই সই । জীবনে আছে কি , পান্তা ভাত আর কাঁচা মরিচ , অবশ্য লাউয়াছড়াও আছে । :P
শ্রীমঙ্গল এর লাউয়াছড়া পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় দুপুর ১.৩০ বেজে যায় । সেখানে চা বাগান এর পাশ দিয়ে রাইড করা এবং বিশেষত লাউয়াছড়া বনের ভেতর দিয়ে ছুটে চলার অভিজ্ঞতাটা অসাধারন । মনে হচ্ছিলো আমরা অন্য কোনো দেশে চলে এসেছি । একটা অজানা আশঙ্কাও কাজ করছিলো তখন ।
শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত সাত রঙ এর চা খেয়ে আমরা ঢাকার দিকে রউনা হই বিকেল ৩ টায় । পথে আরো বেশ কয়েকবার থামি বিশ্রাম এবং ছবি তোলার জন্য ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কিছু আগে একটা হাওড় এলাকা পরে । ( নাম টা আমার সঠিক মনে নেই ) । আমরা যখন এলাকা টা পার হচ্ছিলাম বেশ ঝড়ো হাওয়া দিচ্ছিলো , আর বৃষ্টি তো নাছোড়বান্দার মত লেগে আছেই । সেই বাতাস এর ধাক্কা এতোটাই শক্তিশালী ছিলো যে মনে হচ্ছিলো হ্যান্ডেল হাত থেকে ছুটে যাবে । বেশ শক্তি দিয়ে ধরা সত্ত্বেও বার বার আঁকাবাঁকা হয়ে যাচ্ছিলো । বেশ ভয় পেয়েছিলাম জায়গাটা তে ।
রাস্তার পাশে গাছ পালা না থাকার দরুন বাতাস সরাসরি আঘাত করে । সেই এলাকা পার হবার পর শান্তি পাই । একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ি সবাই । তারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া গোল চক্কর এর একটা হোটেল এ হালকা নাস্তা সেরে আবার যাত্রা শুরু করি । নারায়ণগঞ্জ এ আরেকটা বিরতি দিয়ে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় রাত ১২ টা । আলহামদুলিল্লাহ্ , কোনো ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়াই একটা আনন্দময় ভ্রমন আমরা শেষ করেছি । একনো আড্ডায় সেই কথা উঠলে আবারো মন চায় জাফলং চলে যাই । পাহাড়ের মাথায় মেঘের খেলা আর বুকে ঝর্নার বয়ে চলা দেখি দু চোখ ভরে ।