হিরো গ্ল্যামার বনাম হোন্ডা সিবি শাইন : কোনটি হবে আপনার বাহন

This page was last updated on 04-Jul-2024 05:18pm , By Shuvo Bangla

পাঠক, এর আগে আমরা বিভিন্ন সময়ে ১৫০ সিসি ক্যাটাগরির বেশকিছু বাইকের মধ্যে তুলনামূলক রিভিউ প্রকাশ করেছি। এর প্রতিক্রিয়ায় আপনাদের অনেকেই কম সিসির মূলত কমিউটার বাইকগুলোর মধ্যে এমন রিভিউ চেয়েছেন। আপনাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে এবার তাই আমরা হাজির হয়েছি হিরো গ্ল্যামার ও হোন্ডা সিবি শাইন এর মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ নিয়ে। আশা করছি এই বিশ্লেষণ আপনাকে বাইক দুটির মধ্য থেকে নিজেরটি বেছে নিতে সহায়তা করবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

আলোচনার শুরুতেই বাইক দুটি সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা বলে নেওয়া দরকার। হিরো গ্ল্যামার বাইকটি মূলত ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে হিরো ও হোন্ডার যুগপৎ প্রচেষ্টার ফসল। যেজন্য আগে এটি হিরো হোন্ডা গ্ল্যামার নামে বাজারে ছাড়া হয়েছিলো। কিন্তু পরে হিরো ও হোন্ডা আলাদা হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বাইকটিকে শুধু হিরো গ্ল্যামার নামে অভিহিত করা হয়।

অন্যদিকে হোন্ডা সিবি শাইন সরাসরি হোন্ডার তত্ত্বাবধানে ভারতে তৈরি করা হয়েছে, যা ২০০৬ থেকে বাজারে রয়েছে। শুরুতে এটা হোন্ডা শাইন নামে বাজারে আসে, পরে সেটিকে হোন্ডা সিবি শাইন নাম দেওয়া হয়। মূলত ১২৫ সিসি ক্যাটাগরিতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতেই হোন্ডা একে বাজারে এনেছে।

বাহ্যিক গঠন – হিরো গ্ল্যামার বনাম হোন্ডা সিবি শাইন

অভ্যন্তরীণ পার্থ্যক্যের তুলনায় যাওয়ার আগে আমাদের উচিৎ হবে প্রথমেই বাইক দুটির বাহ্যিক গঠন বা আসলে বাইক দুটি দেখতে কেমন তার তুলনা করে দেখা। আপনারা নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, কোনো বাইককে মূল্যায়নের জন্য তার বাহ্যিক দিকটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমেই আসি হিরো গ্ল্যামারের কথায়। এটি দেখতে খুবই সুন্দর একটি কমিউটার বাইক। তবে এই কৃতিত্বের দাবিদার পূর্বের হিরো হোন্ডা’র রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট টিম। আর এখন হিরো শুধু কিছু নতুন ফিচার ও গ্রাফিকের পরিবর্তন এনেছে। তবে এটা ঠিক যে, বর্তমানের গ্ল্যামার আগেরটির চেয়ে দেখতে অনেক বেশি অ্যাগ্রেসিভ।

অন্যদিকে হোন্ডা সিবি শাইন দেখতে অনেক পরিমার্জিত। এটা দেখতে অ্যাগ্রেসিভ না হলেও মনোমুগ্ধকর। আসলে এটা যেকোনো শ্রেণির রাইডারের সঙ্গেই মানানসই।

এখন এই বাইক দুটির মধ্যে বাহ্যিক দিক নিয়ে তুলনা করতে গেলে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। অবশ্য এগুলো এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও নয়। সেজন্য এই তুলনায় না গিয়ে আমরা বলে দিতে পারি, দুটি বাইকই দেখতে সুন্দর এবং ব্যক্তিভেদে এর আকর্ষণ আলাদা। তাই পছন্দটা আপনার নিজেকেই করতে হবে।

টেকনিকাল পার্থক্য– হিরো গ্ল্যামার বনাম হোন্ডা সিবি শাইন

তাহলে পাঠক, এখন দেখা যাক হিরো গ্ল্যামার বনাম হোন্ডা সিবি শাইনের অভ্যন্তরীণ পার্থক্যগুলো কোথায়। তবে টেকনিকাল বিশ্লেষণে ঢোকার আগে এক নজরে বাইক দুটির টেকনিকাল স্পেসিফিকেশন দেখে নেওয়া দরকার। তাহলে আপনারা সহজেই বাইক দুটির মধ্যে পার্থক্য ও সমতার দিকগুলো সহজে বুঝতে পারবেন।

স্পেসিফিকেশনহিরো গ্ল্যামারহোন্ডা সিবি শাইন
ইঞ্জিনএয়ার কুলড, ৪-স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ওএইচসিএয়ার কুলড, ৪-স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এসআই ইঞ্জিন
ডিসপ্লেসমেন্ট১২৪.৭ সিসি
বোর x স্ট্রোক৫২.৪ মিমি x ৫৭.৮ মিমি
কম্প্রেশন রেশিও৯.১:১৯.২:১
ভাল্ব সিস্টেম২ ভাল্ব
অ্যালাইনমেন্টঅনুভূমিকউলম্ব
সর্বোচ্চ ক্ষমতা৬.৭২ কিলোওয়াট (৯.১ পিএস) @ ৭০০০ আরপিএম৭.৮৮ কিলোওয়াট (১০.৫৭ বিএইচপি) @ ৭৫০০ আরপিএম
সর্বোচ্চ টর্ক১০.৩৫ নিউটন মিটার @ ৪০০০ আরপিএম১০.৩০ নিউটন মিটার @ ৫৫০০ আরপিএম
জ্বালানি সরবরাহকার্বুরেটর
ইগনিশনএএমআই –অ্যাডভান্সড মাইক্রোপ্রসেসর ইগনিশন সিস্টেমপাওয়া যায়নি
স্টার্টকিক/সেল্ফ
এয়ার ফিল্টারড্রাই, পেপার প্লিটেড টাইপ
ট্রান্সমিশন৪ স্পিড, ১-নিউট্রাল-২-৩-৪
ক্লাচমাল্টিপল ওয়েট

ফ্রেম টাইপটিউবুলার ডাবল ক্রেডল টাইপডায়মন্ড
আয়তন (দৈর্ঘ্যxপ্রস্থxউচ্চতা)(২০০৫ x ৭৩৫  x ১০৭০) মিমি(২০১২ x ৭৬২ x ১০৯০)মিমি
হুইল বেজ১২৬৫ মিমি১২৬৬ মিমি
ভূমি থেকে উচ্চতা১৫০ মিমি১৫৭ মিমি
স্যাডল উচ্চতা৭৯০ মিমিপাওয়া যায়নি
কার্ব ওজন১২৫ কেজি (কিক)/ ১২৯ কেজি (সেল্ফ)১২৩ কেজি
জ্বালানি ধারণক্ষমতা১৩.৬ লিটার (সর্বনিম্ন)১০.৫ লিটার

সাসপেনশন(সামনে/পিছনে)টেলিস্কোপিক হাইড্রলিক শক অ্যাবসরভার / স্প্রিং লোডেড হাইড্রলিক টাইপ
ব্রেক (সামনে/পিছনে)সামনে ড্রাম ১৩০ মিমি / ডিস্ক ২৪০ মিমি পিছনে ড্রাম ১৩০ মিমি
টায়ার (সামনে /পিছনে)সামনে ২.৭৫ x ১৮ – ৪২পি / ৪পিআর; পিছনে ৩.০০ x ১৮ – ৫২পি/ ৬পিআর  সামনে ৮০/১০০ -১৮; পিছনে ৮০/১০০ -১৮ উভয়টিই টিউবলেস

ব্যাটারি১২ ভোল্ট –৩ অ্যাম্পিয়ার, এমএফ ব্যাটারি
হেডলাইট১২ ভোল্ট –৩৫ ওয়াট/৩৫ ওয়াট – হ্যালোজেন বাল্ব (মাল্টি রিফ্লেক্টর টাইপ)
স্পিডোমিটারডিজিটাল ডিসপ্লে সহ অ্যানালগ স্পিডোমিটারডুয়েল পিট অ্যানালগ স্পিডোমিটার




*এখানে প্রদত্ত যেকোনো স্পেসিফিকেশন যেকোনো সময় কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন হতে পারে। এমন কোনো পরিবর্তনের জন্য বাইকবিডি দায়ী থাকবে না।

তাহলে এখন এই তুলনামূলক ছকের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যেতে পারি আমরা। প্রথমেই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, দুটি বাইকই প্রায় একই কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। দুটিরই ইঞ্জিন সমান সিসির এবং বোর-স্ট্রোকও একই।

এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, উভয় ইঞ্জিনই কিন্তু হোন্ডার ডিজাইন করা। তারা যদিও গ্ল্যামারকে হিরোর কাছে হস্তান্তর করেছে, কিন্তু একই সময়ে সিবি শাইনেরও কাজ চালিয়ে গেছে। তবে দুই ইঞ্জিনের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্যও রয়েছে বটে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে ইঞ্জিন অ্যালাইনমেন্টে। হিরো গ্ল্যামারের ইঞ্জিন অনুভূমিক বরাবর। যার ফলে এটি কম জ্বালানি সাশ্রয়ী কমিউটারে পরিণত হয়েছে। কারণ ইঞ্জিন অনুভূমিক হওয়ায় পিস্টন ও কানেক্টিং রডের চলাফেরায় অভিকর্ষীয় বাধা কম অনুভূত হয়। ফলে কম শক্তি ক্ষয় হয়।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ ধরনের ইঞ্জিনকে অধিক ক্ষমতা উৎপন্ন করতে হলে পিস্টন ও সিলিন্ডারের আয়ু কমে যায়। সেজন্য এসব ইঞ্জিনকে অধিক ক্ষমতায় চালানো হয় না, বরং জ্বালানি সাশ্রয়ী কমিউটার হিসেবেই বেশি কার্যকরী এটা।

অন্যদিকে হোন্ডা সিবি শাইনের ইঞ্জিন উলম্ব বরাবর অ্যালাইন করা। এ ধরনের ইঞ্জিন অধিক ক্ষমতা উৎপন্ন করতে পারে এবং অনুভূমিক ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে এটাতে আবার জ্বালানি বেশি খরচ হয়!

আপনারা উপরের ছকে দেখতেই পাচ্ছেন হিরো গ্ল্যামারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা হোন্ডা সিবি শাইনের চেয়ে কম। তবে উভয় বাইকই কিন্তু সমান পরিমাণ টর্ক উৎপন্ন করে।

এখানে তুলনামূলক কম কম্প্রেশন, অনুভূমিক ইঞ্জিন, কম আরপিএম নির্ভররতা হিরো গ্ল্যামারকে জ্বালানি সাশ্রয়ী কমিউটার করে তুলেছে। কিন্তু এটা এর প্রতিযোগী হোন্ডা সিবি শাইনের চেয়ে ক্ষমতার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

উল্টোদিকে তুলনামূলক বেশি কম্প্রেশন, উলম্ব ইঞ্জিন, উচ্চ আরপিএম, সংক্ষিপ্ত ইনটেক চ্যানেল হোন্ডা সিবি শাইনকে শক্তিশালী কমিউটারে পরিণত করেছে। তবে এতোসব গুণের কারণে এর জ্বালানি খরচের হারটাও বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাও ঠিক এতে রাইডার অধিক শক্তি ব্যবহার করতে পারবেন।

মূলত এগুলোই হলো বাইক দুটির তুলনার জায়গা। ইঞ্জিনের পার্থক্য ছাড়া বাকি সব দিক থেকে দুটি বাইকই আপডেটেড ও বাজারে সফল। আবার আয়তনের দিক থেকেও দুটিকে সমকক্ষই বলা চলে।

উপরন্তু উভয় বাইকই একই ধরনের হুইল, সাসপেনশন, ব্রেক, সিটিং পজিশন, হ্যান্ডেলবার সমৃদ্ধ। তবে টিউবলেস টায়ার থাকায় হোন্ডা সিবি শাইন এক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে।

তাহলে পছন্দ করতে হবে আপনাকেই--জ্বালানি সাশ্রয়ী বাইক নিবেন নাকি অধিক শক্তিশালী বাইক। আবার টিউবলেস টায়ারের মতো নিরঝঞ্ঝাট রক্ষণাবেক্ষণ ও নিশ্চিন্তে কমিউটিং কোনটা আপনার পছন্দ! আবারো বলছি, উভয় বাইকের মূল ভিত্তি কাটামোই কিন্তু হোন্ডার ডিজাইন করা। তাই আপনার উদ্দেশ্য ও চাহিদা অনুযায়ী ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।

তাহলে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি হিরো গ্ল্যামার বনাম হোন্ডা সিবি শাইনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ। তবে আশা রাখছি, আপনারা আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ, পেজ ও এখানের ম্যাসেজ বক্সে আপনাদের অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনা চালু রাখবেন। ধন্যবাদ।

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Upcoming Bikes

KTM Duke 250 (2024)

KTM Duke 250 (2024)

Price: 0.00

VOGE SR150GT

VOGE SR150GT

Price: 0.00

Revoo C03

Revoo C03

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes