স্বপ্ন পূরনের গল্প - বুলবুল চৌধুরী

This page was last updated on 10-Jul-2024 01:12pm , By Saleh Bangla

বাইকচালানো শেখাঃ বাইক চালানো শিখেছি ১৯৯৯ সালে, তখন ৯ম শ্রেনীর ছাত্র। স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে নানা বাড়ীতে বেড়াতে গেলে মামার Honda CDI 100 দিয়ে বাইক চালানো শিখলাম। তারপর মাঝে মাঝে আত্মীয়স্বজনের বাইক হাতের কাছে পেলেই লুকিয়ে লুকিয়ে চালাতাম যেহেতু বাবা-মার নিষেধ ছিল। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল নিজের বাইক কেনার । 

 কলেজ ভার্সিটিতে মাঝে মধ্যে বন্ধু-বান্ধবের বাইক চালাতাম শখ করে। হাজার হলেও বাইক চালানোর শখ দমিয়ে রাখা কঠিন ব্যাপার। এমন করে কলেজ-ভার্সিটি পাড়ি দিতে লাগলাম, কিন্তু বাবা-মাকে কখনো বাইক কিনে দেয়ার ব্যাপারে কিছুই বলতাম না কারন একটা সন্তানকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ানো অনেক ব্যয় বহুল ছিল। এরপরে মাঝে মাঝে যখন নানা বাড়ী যেতাম তখন মামার Xingfu, Apache RTR ও Yamaha Fazer v1 টা চালাতাম। মনে মনে ভাবতাম হয়তবা একদিন আমারও সময় আসবে স্বপ্ন পুরনের। 

বাইক কেনার প্রস্তুতিঃ ২০১৭ সালের জুলাই মাসের দিকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বাজেট নিয়ে বাইক কেনার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। বাইকবিডির সুবাদে, ঢাকা বাইক-শো থেকে শুরু করে শো-রুম পর্যন্ত এমন কোন স্থান নেই যেখানে বাইক দেখতে যাইনি। রাস্তায় বাইক দেখলেই তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম কবে যে আমারো এমন একটা বাইক হবে!! যখনই বাইক কিনতে যাই, তখনই মনে হয় আরেকটু টাকা হলে হয়ত আমার মনের মত বাইকটি কিনতে পারতাম। 

 নগদ টাকা নিয়ে বাইক কিনার উদ্দেশ্য শো-রুমে গিয়ে বাইক না কিনে বাসায় ফেরাটা যে কি কষ্টের সেটা কেবল ভুক্তভোগিরাই বুঝে। নিজেকে বুঝালাম এভাবে হবে না, টাকা জমাতে হবে। অতঃপর যেই কথা সেই কাজ, টাকা জমানোর পরিকল্পনা করলাম। চাকরি করে পরিবার মেইনটেন করে, টাকা জমানোটা অতটা সহজ ছিল না। তারপরও চেষ্টা থামিয়ে রাখিনি। 

বাইক সিলেকশনঃ দীর্ঘ ৮-৯ মাস অতিবাহিত করার পর ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে যখন জমানো টাকা হাতে আসলো তখন শুরু হলো “কোনটা কিনলে ভালো হবে, এটা নাকি ওটা” এ জাতীয় পোস্ট দিয়ে বাইকবিডি এডমিন থেকে মেম্বার পর্যন্ত সবাইকে ডিস্টার্ব করেছি স্পেশাল্লি Wasif_Anowar ভাই, Editor in Chief & Test Rider at BikeBD। এবং আবারোও বাইকবিডির সুবাদে, ঢাকা বাইক-শো ২০১৮ থেকে শুরু করে শো-রুম পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেলো। টাকা ব্যবস্থা হওয়ার পর যেটা কঠিন কাজ ছিল সেটা হচ্ছে বাইক পছন্দ করা।  শুধুমাত্র লিফান কেপিয়ার (বন্ধুর) ও জিক্সার (এলাকার ছোট ভাইয়ের) বাইক ছাড়া অন্য কোন লেটেস্ট বাইক টেস্ট ড্রাইভ দেয়ার সৌভাগ্য হয়নি। ২৪০,০০০/- টাকার বাজেটে রেজিস্ট্রেশন সহ জিক্সার ছাড়া অন্য কোন বাইক হিসেবে মিলাতে পারছিলাম না। আমার লক্ষ্য ছিল, কন্ট্রোলিং ও কমফোর্টনেস এই দুইটা জিনিস। যেহেতু আমি মিরপুর থাকি সেহেতু মিরপুর-১০ ও মিরপুরের ৬০ ফিটে কিছু বাইকের শোরুম থাকায় এই যায়গায় ঘন ঘন যাওয়া আসা করি বাইকের জন্য। মিরপুরের ৬০ ফিটে Crescent Enterprise শোরুমটা তখন অনেকটাই নতুন। 

 ওখানে বাইক দেখতে গেলাম, আগেই জানতাম Yamaha এর দাম অন্যান্য বাইকের তুলনায় অনেক বেশী। তাই শুধুমাত্র বাইক দেখার উদ্দেশ্যে যাই, কিনার জন্য না। বাইকগুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো স্পেশাল্লি Fi ইঞ্জিনের Yamaha FZS Fi V2 & Fazer V2 এবং সেই সাথে কাস্টমারদের প্রতি তাদের আন্তরিকতা। কিন্তু ২৪০,০০০/- টাকার বাজেটটাও Yamaha এর কাছে পরাজিত হয়ে গেলো। মন খারাপ করে বাসায় চলে আসলাম। কিন্তু অন্য কোন বাইকের দিকে চোখ ফেরাতে পারছি না Yamaha ছাড়া। 

 বাসায় এসে আমার বউকে কাহিনী বললাম, সে Yamaha বাইক দেখতে আগ্রহী হলো। তারপর দিন আবার তাকে নিয়ে ৬০ ফিটে গেলাম, তারও বাইক পছন্দ হলো। এবার সিদ্ধান্তের পালা, বউ বললো যদি বেশী পছন্দ হয় তাহলে নিয়ে নাও। আমি বললাম, Fzs নিতে গেলে আরো ২৫ হাজার টাকা বেশী লাগবে। সে বলে, এতো দিনের শখ তোমার যাক না ২৫,০০০ টাকা তুমি নিয়ে নাও। এবার Fzs নিয়ে সবার মতামত নিতে থাকলাম। সবাই বললো, কন্ট্রোলিং ও কমফোর্টনেস দুটোই পাবেন এটাতে, যেটা আমি সবসময় খুজছিলাম । শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম Yamaha Fzs fi V2 নিব। 

স্বপ্ন পুরনঃ Yamaha Fzs fi V2 নেয়ার সিদ্ধান্ত ফাইনাল হওয়ার পর ফেসবুকে পরিচিত হলাম মিরপুরের ৬০ ফিটে Crescent Enterprise এর ম্যানেজার মনির ভাইয়ের সাথে। উনাকে কনফার্ম করলাম যে, আজকে আসছি আপনার শোরুমে বাইক কেনার জন্য। অফিস থেকে বাসায় গিয়ে বউকে নিয়ে সরাসরি চলে গেলাম ৬০ ফিটে। যেহেতু বাইক কিনার পর এক্সট্রা আরো কিছু টাকা লাগে হেলমেট, ডাস্ট কভার, সিকিউরিটি লক ইত্যাদির জন্য সেহেতু মোট ২৮০,০০০/- টাকা নিয়ে গেলাম। 

 রিক্সা থেকে নেমে শোরুমে ঢুকেই সরাসরি আমি Fzs এর সামনে গিয়ে দাড়াই, পাশে তাকায় দেখি বউ নাই। খুজতে গিয়ে দেখি সে Fazer এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে বললাম, এদিকে আসো। উত্তরে বউ বলে, দেখো Fzs থেকে Fazer টা বেশী সুন্দর। তাকে বললাম Fazer নিলে আরো ২০,০০০ টাকা বেশী। সে বলে, যাই হোক Fazer টাই সুন্দর। 

 মনে মনে আমিও ফেযারের কথা ভাবসিলাম, কিন্তু বাজেট এমনিতেই ২৪০,০০০ থেকে ২৬৫,০০০ তে চলে গেছে, ফেযার নিলে তো ২৮৫,০০০ তে চলে যাবে সাথে আনুসাঙ্গিক খরচ সহ ৩ লাখ। বউরে বললাম, শখের দাম লাখ টাকা। ইনশাল্লাহ টাকা ভবিষ্যতেও হবে, হয়তবা তখন শখটা থাকবে না। যা আছে কপালে, আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে নিয়েই নিলাম ফেযার ২০১৮ সালের ১২ই এপ্রিল। এতো কিছুর মাঝেও ব্যস্ত শুভ্র সেন দাদার সাথে দেখা হয়েছিল, আর এটাই ছিল আমার জন্য সারপ্রাইস। পরের লেখাটা ফেযারের ২০০০ কিলোঃ পাড়ি দেয়া নিয়ে লিখব ইনশাল্লাহ। ভালো থাকবেন।   লিখেছেনঃ মোঃ বুল্বুল চৌধুরীICT Developer, UCEP Bangladesh