স্পোর্টবাইক একটি অ্যাড্রেনালিন রাশের নাম – স্পোর্টবাইকের সুবিধা ও অসুবিধা
This page was last updated on 25-Jun-2024 10:21am , By Saleh Bangla
মোটরসাইকেল রাইডারদের কাছে স্পোর্টবাইক মূলত: একটি অ্যাড্রেনালিন রাশের নাম। রাইডাররা নজরকাড়া লুক, ডিজাইন, এবং চরম পারফরম্যান্সের জন্যই মূলত: স্পোর্টবাইক পছন্দ করেন। ফলে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ও বিভিন্ন ফিচারের স্পোর্টবাইকের সুবিস্তৃত একটি বাজার রয়েছে। তাই প্রতিটি মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারারই তাদের স্পোর্টবাইকগুলিতে আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং উন্নত প্রযুক্তির সমাহার ঘটিয়ে কাষ্টমারদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন।
তবে স্পোর্টবাইকগুলিতে আধুনিক টেকনলোজি ও ফিচার যাই থাকুক না কেন স্পোর্টবাইকগুলির সেসব আকর্ষনীয় আবেদন ছাপিয়ে তাদের বিশেষ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, যা একজন রাইডার স্পোর্টসবাইক কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গভীরোবে বিবেচনা করা উচিত। তো আজকের আলোচনায় আমরা তারুণ্যের অ্যাড্রেনালিন রাশ হিসেবে পরিচিতি স্পোর্টবাইকের বিশেষ সুবিধা ও অসুবিধা গুলিতে আলোকপাত করবো।
স্পোর্টবাইক - একটি অ্যাড্রেনালিন রাশের নাম
স্পোর্টবাইক হলো মূলত: ফুল বডি-ফেয়ারিংযুক্ত এক বিশেষ ক্যাটাগরীর হাই-পারফর্মেন্স মোটরসাইকেল, যা ট্র্যাক-রেসিং ডিজাইন এবং অত্যাধুনিক ফিচার সমন্বয় করেই তৈরী হয়। এসব মোটরসাইকেলের ফুল ফেয়ারড বডিওয়ার্ক মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলিকে চমৎকারভাবে কভার করে সেগুলিতে এয়ার-ড্র্যাগ কমিয়ে অত্যন্ত অ্যারোডাইনামিক করে তোলে।
ফলে স্পোর্টবাইকগুলি তাদের হাই-পারফরম্যান্স ইঞ্জিনের সাথে অ্যারোডাইনামিক বডি মিলে চমৎকার এক্সিলারেশন, স্পিড, ও স্ট্যাবিলিটি নিশ্চিত করে। আর একারনে স্পোর্টবাইকগুলিতে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকা একটি রাইডিং পজিশন দেয়া হয়, যা একজন রাইডারকে সামনের দিকে হেলে থেকে চালাতে প্রভাবিত করে। তো সবমিলিয়ে স্পোর্টবাইক একটি স্টাইলিশ বাহন হলেও এতে কিছু অস্বস্তির বিষয়ও রয়েছে। তো চলুন দেখে নেয়া যাক স্পোর্টবাইকের সেই বিশেষ সুবিধা্ ও অসিুবিধার দিকগুলি।
স্পোর্টবাইকের বিশেষ সুবিধাসমূহ
>> স্পোর্টবাইকগুলি স্বাভাবিকভাবেই চমৎকার পারফরম্যান্স, স্পিড এবং এক্সিলারেশন নিশ্চিত করে। শক্তিশালী ইঞ্জিন, উন্নত সাসপেনশন সিস্টেম, সুপারিওর কন্ট্রোলিং ও সেফটি ফিচার, এবং এরোডাইনামিক ডিজাইনের কারণে স্পোর্টবাইকগুলি সবসময়েই অসাধারণ পারফর্ম করে। তাই সলিড রোড সারফেস এবং রেসট্র্যাকে হাই-স্পিড রাইডিংয়ের জন্য স্পোর্টবাইক অবশ্যই আদর্শ পছন্দ।
>> স্পোর্টবাইকগুলি ফুল বডি-ফেয়ারিংসহ ব্যাপকভাবে ডিজাইন করা হয়। যার ফলে এর বডি-ফেয়ারিং এয়ার-ড্র্যাগ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে হাই-স্পিড রাইডিংয়ে উচ্চতর এরোডাইনামিকস নিশ্চিত করে। এই অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্যের ফলে স্পোর্টবাইকগুলিতে বিশেষ করে এ্যাগ্রেসিভ রাইডিং কন্ডিশনে অত্যন্ত ভালো স্ট্যাবিলিটি, সুপারিয়র কন্ট্রোল ও পারফর্মেন্স পাওয়া যায়।
>> স্পোর্টবাইকগুলি মূলত: ট্র্যাক পারফরম্যান্স ফোকাস করেই ডিজাইন করা হয়। এগুলি হাইলি অ্যারোডাইনামিক এবং ওজনেও বেশ হালকা হয়। এছাড়াও এসব মোটরসাইকেলে অ্যাডজাস্টেবল সাসপেনশন সিস্টেম, হাই-পারফরম্যান্স ব্রেক, অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS), ট্র্যাকশন কন্ট্রোল, কুইক-শিফটার, রাইডিং মোড ইত্যাদির মতো উন্নত ফিচার থাকায় তা সাধারন স্ট্রিট রাইডের সাথে সাথে রেসট্র্যাকেও রাইডারদের তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতায় রাইডে সাহায্য করে।
>> স্পোর্টবাইকগুলি তীক্ষ্ণ অ্যারোডাইনামিক বডি-লাইন এবং মসৃণ এক্সটেরিয়র প্রোফাইলসহ বেশ এ্যাগ্রেসিভ রাইডিং স্টাইল ফোকাস করে। যা মুলত: রাইডিংয়ে সত্যিকার অর্থে স্টাইল, স্পিড, ও অ্যাথলেটিসিজমের অনন্য এক সমন্বয় ঘটায়। সুতরাং হার্ডকোর রাইডার, যারা অনন্য স্টাইলিং এবং স্পোর্টি হাই-স্পিড রাইডিংয়ের ফ্যান তাদের জন্য স্পোর্টবাইকই হতে পারে একমাত্র পছন্দ।
স্পোর্টবাইকের অসুবিধাজনক দিকসমূহ
>> স্পোর্টবাইকের প্রধান ত্রুটি বা সবচেয়ে দুর্বল দিকগুলির মধ্যে একটি হলো তাদের অসুবিধাজনক এ্যাগ্রেসিভ রাইডিং পজিশন। এটি লো-মাউন্টেড হ্যান্ডেলবার, এ্যাগ্রেসিভ ফুটপেগ পজিশন, ও ফ্রন্ট-লিন রাইডিং পশ্চার নিয়ে একজন রাইডারকে সামনের দিকে বেশ ঝুঁকে বসে চালাতে বাধ্য করে। ফলে এই রাইডিং স্টাইল হাই-স্পিড রাইডিংয়ের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত হলেও সাধারণ রাইডারের জন্য তা অবশ্যই অস্বস্তিকর। বিশেষকরে একারনেই লং-রাইড এবং প্রাত্যহিক চলাচলের ক্ষেত্রে স্পোর্টবাইক ভালো কোন পছন্দ হতে পারে না।
>> স্পোর্টবাইকগুলি মূলত: প্রাত্যহিক ব্যবহার উপযোগীতার চেয়ে হাই-স্পিড পারর্ফম্যান্সকেই অগ্রাধিকার দিয়ে ডিজাইন করা হয়ে থাকে। ফলে এসব মোটরসাইকেলে ট্র্যাক ডেডিকেটেড ফিচার ছাড়া কমিউটিং ফিচারে তেমনভাবে নজর দেয়া হয় না। তাই সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্পোর্টবাইকগুলির উপযোগীতা যথেষ্ট কম। আর এছাড়া অসম ব্যাকরোডেও এসব মোটরসাইকেলের চলার সক্ষমতা কম হওয়ায় তা ভ্রমণ ও গ্রামাঞ্চলে যাতায়াতের জন্যও কম উপযুক্ত।
>> হাইয়ার মেইনটেন্যান্স কস্ট স্পোর্টবাইকের আরেকটি বড়ো দুর্বলতা। স্পোর্টবাইকগুলো তাদের হাই-পারফরম্যান্স ফিচার ও কমপ্লেক্স মেকানিজমের কারনে স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলকভাবে বেশ জটিল ধরনের হয়ে থাকে। ফলে এসব মোটরসাইকেলে যেমন ঘন ঘন মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন হয়, তেমনি এসবের মেইনটেন্যান্স, সার্ভিস, ও রিপেয়ার সাধারণ মোটরসাইকেলের তুলনায় যথেষ্ট ব্যায়বহুল।
তো বন্ধুরা, এটি সত্যি যে, স্পোর্টবাইক একটি স্টাইলিশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় ক্যাটাগরীর মোটরসাইকেল যা তরুণ রাইডারদের খুবই পছন্দ। আর এসব মোটরসাইকেল মূলত: পারর্ফম্যান্স ওরিয়েন্টেড। তবে সবমিলিয়ে এসব মেটরসাইকেলের বিশেষ কিছু সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি বেশ কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। তাই যে কেউই স্পোর্টবাইক কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এই বিষয়গুলিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। তবে যারা নিশ্চিতভাবেই হাই-পারর্ফম্যান্স, হাই-স্পিড, এবং এ্যাগ্রেসিভ স্টাইলিং পছন্দ করেন তারা স্পোর্টবাইক নেবার কথা নি:সন্দেহে ভাবতে পারেন।