রানার নাইট রাইডার এর মালিকানা রিভিউ - লিখেছেন নাইমুল
This page was last updated on 07-Jul-2024 01:59pm , By Shuvo Bangla
অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম যে রানার নাইট রাইডার এর সার্ভিস সম্পর্কে রিভিউ লিখবো। অপেক্ষা করছিলাম ৫০০০ কিমি পূরন হবার, তারপর রিভিউ লিখব। তবে, ৩০০০ কি.মি চালিয়ে আমার যা অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তাতে সন্দেহ হচ্ছে যে আমি ৫০০০ কি.মি পর্যন্ত এই বাইকটি চালাতে পারব কিনা। কারণ এই ৩০০০ কিমি চালানোর পর মনে হচ্ছে বাইকটি কিনে ভুল করেছি। বাইকটিতে অনেক সমস্যা রয়েছে, তবে কিছু ভালো দিকও আছে।
মে-২০১৭ এর ২৩ তারিখ মালিবাগ শো-রুম থেকে অনেক আশা নিয়ে রানার নাইট রাইডার ক্রয় করি। বাইক এর সাউন্ডও বেশ ভালো, দেখতেও চকচকে-তকতকে। নতুন কিনেই রেজিস্ট্রেশন করতে টাকা দিয়ে দিলাম শোরুমে, এবার বাধলো বিপত্তি। ১৫ দিন পর ব্যাংক জমার স্লিপ পেলাম যেখানে নিজে দিলে এক দিনেই সম্ভব। তারপরেও মেনে নিলাম, উনারা অনেক বাইকের পেপার একসাথে করতে দেয় তাই দেরি হয়েছে। ব্যাংক স্লিপ এর ১০ দিন পর বাইক এর নাম্বার এবং বাকি পেপার গুলো পেয়েছি ।
এবার আসি নাইট রাইডার বাইক এর কথায়। প্রথম ৩-৪দিন খুব ভাল সার্ভিস দিয়েছে, সাউন্ড বেশ ভালো, ৪০-৫০ স্পীড এ বাইক চালিয়েছি। আর.পি.এম ৪-৫ এর মধ্যে রেখে চালাই, ব্রেইক ইন পিরিয়ডের সকল নিয়ম মেনে রাইড করি তাই কোন টানা-টানি হবে না। কিন্তু ৫-৬ দিন পরেই বাধল বিপত্তি বাইক থেকে মৃদু আওয়াজ আসে। রাস্তায় ৩/৪ জন নাইট রাইডার চালক ভাইদের কে জিজ্ঞাস করলাম “ভাই আপনাদের বাইকে কি শব্দ হয়”। তারা বললেন তাদেরও এই সমস্যা ছিল তবে ১ম সার্ভিসিং এর পর ঠিক হয়ে গেছে। তাদের কথা শুনে আশ্বস্ত হলাম।
অপেক্ষা করতে লাগলাম ১ম সার্ভিসিং এর সময় পর্যন্ত। কিন্তু বেশি দিন আর বাইকটি সার্ভিসিং এর অপেক্ষায় থাকল না, একদিন হঠাৎ রাস্তায় থেমে গেল। “গিয়ার বক্স ব্লক” ১ম গিয়ার থেইকা ২য় গিয়ার আর বাইক নিতে পারি না। বাধ্য হয়েই রানারের সার্ভিসিং সেন্টার এ গেলাম। সার্ভিসিং করালাম, শব্দ বন্ধ হল (এখন আর নেই) গিয়ার বক্স এর সমস্যা ও ঠিক হল, তবে পুরাপুরি না। সার্ভিসিং যতটা আশানুরূপ হবে ভেবেছিলাম ততটা সুবিধার মনে হল না।
রানার নাইট রাইডার প্রথম সার্ভিসিং এর পর ৫-৬ দিন কোন ঝামেলা হয় নাই। একটা ব্যাপারেই সমস্যা মনে হচ্ছিল যে বাইক এ তেল একটু বেশী যাচ্ছে। আগে চালিয়েছি ১২৫ সি.সির বাইক লিটারে ৪৫-৪৮কি.মি পেয়েছি এখন ১৫০ সি.সি লিটারে যায় ২৮-৩০ কি.মি, সার্ভিসিং সেন্টার এর একজন ভাই এর সাথে কথা বললাম, উনি বলল ভাই কয়েক দিন একটু বেশী তেলে চালান ইঞ্জিন ভালো থাকবে,উনার কথা শুনে চিন্তা করলাম থাক একটু বেশী তেলে চালাই ভবিষ্যৎ ভালো হবে। কিন্তু ভালো বেশী দিন থাকল না, সার্ভিসিং এর ৫-৬ দিন পর থেকেই বাইক এর খালি “স্টার্ট ছেড়ে দেয়”, ভাবলাম ক্লাচ-রেইস এডজাস্ট হচ্ছে না ।
আবার নিয়ে গেলাম সার্ভিসিং সেন্টারে, গিয়ে আগের ভাই কে পেলাম বললাম ভাই এই সমস্যা। উনি দেখলাম ক্লাচটা একটু টাইট করে দিল আর রেইস ও একটু বাড়িয়ে দিল। ১-২ দিন বাইক চালিয়ে মনে হল এই অবস্থায় ঢাকা সিটির রাস্তায় এভাবে বাইক চালালে আমার বাম হাত দিয়ে কাজকর্ম করতে সমস্যা হবে, ক্লাচটা এইবার নিজেই একটু লুজ দিয়ে নিলাম। বার বার কি সার্ভিসিং সেন্টার এ যাওয়া সম্ভব? তাই এই “স্টার্ট ছেড়ে দেয়া” সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। একটু হাল্কা পিকআপ এ রেখে বাইক চালাইতে হয় এই আরকি।
রানার নাইট রাইডার কেনার পর থেকে প্রথম থেকেই একটা সমস্যা হচ্ছিল প্রতিনিয়ত, সেটা নিয়ে ততটা ভাবিনি। আসলে সমস্যাটা হচ্ছিল “চেইন বার বার লুজ” হয়ে, তাও ২-৩ দিন পর পর। টাইট দেয়ার পর ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু একদিন আর টাইট দিয়ে দেখি চেন টাইট হচ্ছে না। অনবরত চেইন স্পকেট থেকে শব্দ হচ্ছে, বুঝলাম চেইন স্পকেট ২৯০০ কি.মিতেই শেষ। এর সাথে আবার যোগ হয়েছে সেই পুরনো গিয়ার বক্স সমস্যা। এ বার আর আগের বারের মত গিয়ার বক্স ব্লক হয়নি।
তবে, বাইক দ্বিতীয় গিয়ার থেকে নিউট্রালে নেয়া অনেক কষ্টের, অনেক সময় নিউট্রাল এর আলো জ্বলে ঠিকই কিন্তু বাইক নিউট্রাল হয় না। আর ওই যে ক্লাচ টাইট সমস্যার কথা বলে ছিলাম ওইটা ও আস্তে আস্তে প্রকট হয়ে উঠে। গেলাম সার্ভিসিং সেন্টার এ সব সমস্যার কথা বললাম, ‘বললাম আমার চেইন সেট চেঞ্জ করে দিন’ ‘ক্লাচ ক্যাবল টাইট হয়ে যায় এটা ও চেঞ্জ করে দিন’- এখন বলে চেইন সেট টাকা দিয়ে কিনতে হবে, এটা নাকি ওয়ারেন্টির মধ্যে পরে না, ওনাদের কাছে স্পেয়ার পার্টস ও নাই ৩-৪ দিন পর যোগাযোগ করতে বলে।
এবার আপনারাই বলেন আমার কি করা উচিৎ। রানার নাইট রাইডার বাইকটি চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি (ভুল হলে ক্ষমা করবেন) ৫০০০-৬০০০ কি.মি তেও যদি চেইন সেট বাদ দিতে হত তবে খারাপ লাগত না, ৩০০০কি.মি এর আগেই চেইন সেট পালটাতে হবে তাও আবার সেটা কোম্পানি দিবে না।
ইয়ামাহার নতুন বাইক কিছু বাইকের নাকি চেইন সেট খারাপ ছিল ১০,০০০ কি মি তে যাদের সমস্যা হয়েছে, কোম্পানি নিজের খরচে সেটা ঠিক করে দিয়েছে, আর রানার নাইট রাইডার ৩০০০কি.মি. যায় না এমন নিম্ন মানের চেন দিয়ে বলে এটা ওয়ারেন্টির মধ্যে পরে না।
তবে হ্যাঁ ইঞ্জিন এ এখন পর্যন্ত সমস্যা পাই নাই, আল্লাহ জানে এর ভবিষ্যৎ কি। বাইক এখন পর্যন্ত সর্বচ্চ স্পীড ৭৫ তুলেছি তাও ১বার। এখনও ৫০-৬০ স্পীড এ বাইক চালাচ্ছি তাতে যদি এত সমস্যা হয়, পরে না জানি কি হবে।