মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন – কম্ফোর্ট ও কন্ট্রোল বাড়ান
This page was last updated on 03-Jul-2024 10:03am , By Shuvo Bangla
প্রায়ই আমার বন্ধুরা বলে আপনার মোটরসাইকেলটা চালাতে কেমন যেন একটু আলাদা মজা। হয়তোবা এটা একটু বেশি আরামদায়ক অথবা একই মডেলের অন্য বাইক থেকে কিছুটা সহজে নিয়ন্ত্রন করা যায় বলেই। কিন্তু সত্যি বলতে কি বিষয়টা তেমন বিশেষ কিছুই নয়। তবে সময়মতো মেইনটেন্যান্স আর কম্ফোর্ট ও কন্ট্রোল বাড়ানোর জন্য সামান্য কিছু মোডিফিকেশনই এর মূল কারন। তাই আজ আমি আপনাদের জন্যে নিয়ে এসেছি আমার আজকের আলোচনা মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন – কম্ফোর্ট ও কন্ট্রোল বাড়ান । এবার দেখুন তো আপনার মোটরসাইকেলটা আরো খানিকটা আরামদায়ক আর সহজ নিয়ন্ত্রনযোগ্য করা যায় কিনা।
মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন এর ধারনা ও কারন
আপনারা হয়তো জানেন যে আন্যান্য সাধারন ভোগ্যপন্যের মতো মোটরসাইকেলও তৈরি ও বাজারজাত করা হয় কিছু সাধারন স্ট্যান্ডার্ড কে ভিত্তি করে। এইসব সাধারন স্ট্যান্ডার্ড খুব সহজেই প্রায় সকল ধরনের ভোক্তার চাহিদার সাথে মিলে যায়। আর এইসব সাধারন স্ট্যান্ডার্ড পালন করা হয় যাতে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ কম হয় আর পন্যটি সহজে মেরামত ও অন্যান্য সেবা দেয়া যায়্ সহজ হয়।
আপনারা জানেন যে এই পৃথিবীতে কোন মানুষই একই রকম নয়। প্রতিটি মানুষই তাদের ব্যক্তিত্ব, পছন্দ, শারিরীক অবয়ব, আর স্বাচ্ছন্দের বিচারে আলাদা ও স্বকীয়। তাই উৎপাদনকারী নির্ধারিত সাধারন স্ট্যান্ডার্ড সমূহ সবার সাথে মোটামুটি মিলে গেলেও অনেকেরই স্বকীয়তার সাথে পরিপূর্ণভাবে মিলে না।
সুতরাং এখানে হয় তাদের সাধারন স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে অভ্যস্ত হতে হয়, নয়তো পন্যটি কাষ্টমাইজ অথবা মোডিফাই করে নিজের মতো করে নিতে হয়। এটাই হলো পৃথিবীব্যাপী কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন সর্ভিসের মূলকথা।
তাই বেশিরভাগ বিশ্বমানের নামী ব্র্যান্ডগুলো তাদের ভোক্তাদের জন্যে কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশনের সার্ভিস দিযে থাকে। আর মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন শপগুলো একারনেই পৃথিবীব্যাপী খুব ভালো ব্যবসা করছে।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন
সাধারনভাবে বাংলাদেশে আমরা মোটরসাইকেল কোম্পানী বা বিক্রেতাদের কাছে থেকে এধরনের উচ্চমানের সার্ভিস আশা করার তেমন কোন সুযোগ নেই। সত্যিকার অর্থে আমরা অনেকসময়ই তাদের কাছ থেকে সাধারন মেরামতি ও ন্যুন্যতম রক্ষনাবেক্ষন সেবাটুকুও ঠিকমতো পাইনা।
তবে আশার কথা যে রাজধানী ও দেশের বড় বড় শহরে ইদানিং বেশ কিছু মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন শপ গড়ে ওঠছে আর তারা ভালো করছে। তাই হতাশ হবার তেমন কোন কারন নেই। এখনকার দিনে আপনি একটু চেষ্টা করলেই তাদের কাছ থেকে কাষ্টমাইজেশন সেবা পেতে পারেন যাতে করে আপনার বাইকটি আরো সুন্দর, আরামদায়ক ও আরো বেশী নিয়ন্ত্রনযোগ্য হয়ে ওঠে।
তাই বন্ধুরা এখানে আজ আমরা মোটরসাইকেলের খুব সাধারন কিছু কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন নিয়ে আলোচনা করবো। এই কাষ্টমাইজেশন গুলো করার পর আপনার মোটরসাইকেলটি চালানো আরো বেশি আনন্দদায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
Also Read: বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি ট্যুরিং মোটরসাইকেল
এখানকার কিছু কাজ হয়তো মোটরসাইকেলের টুলকিট দিয়ে খুব সহজে আপনি নিজে নিজেও করে ফেলতে পারবেন। তবে কিছু কাজের জন্যে আপনার একজন অভিজ্ঞ মেকানিকের সাহায্য প্রয়োজন হবে। তবে চিন্তিত হবার কোন কারনই নেই কারন, সবগুলি কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশনই খুবই সহজ ও সাধারন মানের তবে বেশ কার্যকরী। আর এসব মোডিফিকেশন কোনভাবেই আপনার প্রিয় মোটরসাইকেলটির কোনরকম ক্ষতি করবে না।
হ্যান্ডেলবার থেকেই মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন শুরু
আমি ব্যাক্তিগতভাবে যখনই কোন মোটরসাইকেল হাতে নেই তখনই আমি নজর দেই এর কন্ট্রোল ও রাইডিং পজিশনের দিকে। আর আমার মনে হয় অধিকাংশ ব্যবহারকারীই তা অবচেতন বা অভ্যাসগতভাবে করে থাকেন। আর আপনিও যদি তা করে থাকেন তবে কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশনের জন্য প্রথমেই নজর দেবেন এর স্টিয়ারিং তথা হ্যান্ডেলবারের দিকে। আর ভালো কন্ট্রোল আর কম্ফোর্ট এর শুরুটাই হয় এই হ্যান্ডেলবার থেকে।
সুতরাং প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করুন যে ফ্যাক্টরী সেট হ্যান্ডেলবার পজিশনটা আসলেই আপনার জন্যে আরামদায়ক কিনা। ইতস্তত করবেননা, হ্যান্ডেলবারের স্ক্রু বা নাটগুলো ঢিলে করে ফেলুন আর বারটি কিছুটা উঁচু করুন। নাট টাইট দিয়ে একটা ছোট টেষ্ট্ রাইড দিন। এরপর আবার নাট ঢিলে করে হ্যান্ডেলবারটি নামিয়ে ফেলুন। আবার নাট টাইট দিয়ে একটা টেষ্টরাইড দিয়ে ফেলুন। ভেবে দেখুন কোন পজিশনটা আপনার জন্যে বেশি আরামদায়ক। বেশি না ভেবে হ্যান্ডেলবারের পজিশন সেই আরামদায়ক জায়গাতেই রাখুন।
লক্ষ্য করবেন কিছু কিছু মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলবার হয়তো চালকের প্রয়োজনের তুলনায় বেশ চাপা, ছোট আথবা একটু বেশীই প্রসারিত। সেসব ক্ষেত্রে তারা সহজেই খোলাবাজার থেকে সুবিধামত হ্যান্ডেলবার কিনে পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
এখানে আমি কখনোই অতি জাঁকজমকপূর্ণ হাইব্রিড হ্যান্ডেলবার কিনতে পরামর্শ দেব না। বরং আপনি নিজে চালিয়ে দেখুন একই ধরনের অন্য কোন মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলবার আপনার জন্যে বেশী মানানসই মনে হয়। ঠিক সেই মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলবারটিই কিনে আপনার বাইকে লাগিযে ফেলতে পারেন। ব্যাক্তিগত উদাহরন দিতে গেলে আমি হোন্ডা ষ্ট্রিটফায়ার মোরসাইকেলে ইয়ামাহা এফযেডের হ্যান্ডেলবার লাগিয়ে দেখবো কেমন লাগে।
এছাড়াও আপনার আরো বেশি কম্ফোর্টের জন্যে হ্যান্ডেলবারে নরম গ্রিপ কভার লাগিয়ে নিতে পারেন। এধরনের গ্রিপ কভার আপনার হাতের তালুকে লম্বা রাইডে অনেকটাই আরাম দিতে পারে। তবে আমার মতো যাদের হাতের তালু ও আঙ্গুল অনেকটা ছোট তারা এসব কভার ব্যাবহার নাও করতে পারেন।
মোটরসাইকেলের কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন - হ্যান্ডেলবার লিভার
আগেই বলেছি মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলবার হলো এর কন্ট্রোলিং এর কেন্দ্র। তাই হ্যান্ডেলবারটির পজিশন সেট করে ফেলার পর আপনার কাজ হবে এর দুপাশের লিভার দুটির পজিশনও ঠিক করা। এক্ষেত্রে লিভার দুটির নাট ঢিলে করে ফেলুন। বাইকের সিটের উপর বসে অনুভব করুন লিভার দুটির কোন অবস্থান আপনার জন্যে বেশি আরামদায়ক ও আঙ্গুলগুলো সাবলীলভাবে ওগুলো পরিচালনা করতে পারে। ঠিক সেই অবস্থান ও উচ্চতায় লিভারগুলোকে সেট করুন। দেখবেন লিভারগুলোর এই নতুন অবস্থান আপনার আরাম ও কনফিডেন্স আরো খানিকটা বাড়িয়ে দেবে।
আর লিভারগুলো সঠিক পজিশনে সেট করার পর আপনার কাজ হবে ওগুলোর প্লে-পজিশন এ্যডজাষ্ট করা। ক্লাচ লিভারের নাট ঢিলে বা টাইট করে আপনি সহজে তা এ্যাডজাষ্ট করে নিতে পারেন। তবে ব্রেকের ক্ষেত্রে নাট ও হাইড্রলিক ফ্লুইড লেভেল এ্যাডজাষ্ট করতে হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আরো ভালো ফলাফলের জন্যে খোলা বাজারের এ্যাডজাষ্ট করা যায় এমন লিভার কিনে নিতে পারেন। এগুলো বেশ সহজেই এ্যাডজাষ্ট করা যায় আর দেখতেও সুন্দর।
যাহোক, এবার আপনার কাজ হবে লিভারগুলোর ফ্রি-প্লে নিশ্চিত করা। ভালো করে লক্ষ করে দেখুন হ্যান্ডেলবারের যেকোন টার্নিং পজিশনে কেবলগুলো ভালোভাবে কাজ করে কিনা। প্রয়োজনে লিভার, কেবল,নাট, পিভট প্রভৃতি ভালোভাবে লুব্রিকেটিং করুন। কেবলে কোথাও ভাঁজ বা মোচড় থাকলে তা অবশ্যই বদলে ফেলুন।
হ্যান্ডেলবারটির লিভার পজিশন ঠিক করার পর এর কন্ট্রোল সুইচ এর পজিশন ও ঠিক করে নিতে পারেন। আসলে ভালো করে নজর না দিলে এর প্রয়োজনীয়তা ও উপকারীতা কোনটাই বুঝবেননা। তাই বাইকের সিটে বসে ভালো করে দেখুনতো কোন জায়গায় সুইচের প্যানেলদুটো আরো বেশী আরামদায়ক হয়। প্যানেলের স্ক্রু গুলো ঢিলে করে ঠিক জায়গামত রেখে তা টাইট দিন। দেখবেন খুব সহজেই সুইচগুলো ব্যবহার করতে পারছেন।
এছাড়াও আপনাদের অনেকের মোটররসাইকেলে হয়তো ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই। কিন্তু শহরের রাস্তায় ঘন ট্রাফিকে চালাতে গিয়ে হয়তো একটা ইঞ্জিন কিল সুইচ অথবা রাতে আলাদা সার্ভিস লাইটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। হতাশ হবার কিছুই নেই আপনি খুব সহজেই এইসব সুইচ আলাদা কিনে লাগাতে পারেন। যেকোন সাধারন মেকানিক আপনাকে এই কাজগুলো করে দিতে পারবে। আর এই কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন গুলোতে যে আপনি আরো আরাম ও আত্মবিশ্বাসী অনুভব করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন - মিরর এডজাস্টমেন্ট
মোটরসাইকেলের মিরর বা আয়না একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ তা অভিজ্ঞ চালক মাত্রই জানেন। তবে অনেকসময়ই দেখা যায় যে বেশিরভাগ মোটরসাইকেলেই মিররগুলো সঠিক পজিশনে থাকে না। সবসময় যে মিররগুলো কেবল তাদের ষ্ট্যান্ডের উপর ঘোরালে তা সঠিকভাবে পেছনের অংশ দেখাবে তা ঠিক নয়। প্রয়োজনে মিরর স্ট্যান্ডের পজিশন ও ঠিক করে নিতে হবে।
সেক্ষেত্রে মিরর স্ট্যান্ডের নাটগুলো ঢিলে করে নিয়ে বাইকের উপর বসুন। ভালো করে দেখে নিয়ে স্ট্যান্ডের পজিশন ঠিক করে নিন। তারপর নাটগুলো আবার টাইট করে দিন। ব্যাস হয়ে গেল আপনার মিরর সেটিং।
নিয়ন্ত্রন ও আরামপ্রদতা বাড়ানোর জন্যে মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন
আপনার মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলবার ও এর অন্যান্য অংশের অবস্থান বদলানোর পর ব্রেকগুলোর দিকে নজর দিন। দুই চাকারই ব্রেক-প্যাড, শু, ড্রাম, ডিস্ক অর্থাৎ পুরো ব্রেকিং সিস্টেমের দিকে নজর দিন। আপনার প্রয়োজন অনুপাতে ব্রেক এ্যাডজাষ্ট করুন। প্রয়োজন হলে পুরাতন অংশগুলো বদলে ফেলুন। দেখবেন আপনি আরো ভালো নিয়ন্ত্রন পাবেন ও আত্মবিশ্বাসী অনুভব করবেন।
ভালো ও সঠিক ব্রেকিং এর জন্য বাইকের টায়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার বাইকের টায়ার ক্ষয়ে গেলে অথবা তা চার বছরের বেশি পুরাতন হলে অবশ্যই তা বদলে ফেলুন। কিছু মোটরসাইকেল উৎপাদক তাদের পন্যের উৎপাদন খরচ কম রাখার জনে খুব ভালো মানের টায়ার ব্যবহার করে না। সেসব ক্ষেত্রে ভালো প্রিপ, কন্ট্রোল, কম্ফোর্ট আর কনফিডেন্স এর জন্য ভালো মানের টায়ার দিয়ে পুরাতন গুলো বদলে নিন।
এবার আসা যাক বাইকের সাসপেনশনের বিষয়ে। এখনকার অনেক মোটরসাইকেলেই পেছনের সাসপেনশন এ্যাডজাষ্ট করা যায়। আপনি আপনার প্রয়োজন, ভার বহন ও রাস্তার ধরন অনুপাতে সাসপেনশন এ্যাডজাষ্ট করে নিতে পারেন।
আর যদি সামনের সাসপেনশন এ্যাডজাষ্ট করতে চান তবে তা খুব ভালো ও অভিজ্ঞ মেকানিক দিয়ে করাবেন। সামনের সাসপেনশন এ্যাডজাষ্ট করতে হলে মেকানিক তার ভেতরের ফ্লুইডের পরিমানের তারতম্য ঘটিয়ে সাসপেনশন এ্যাডজাষ্ট করে দিতে পারেন।
মোটরসাইকেলের সিটিং পজিশনও একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। তবে সিটিং পজিশন কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশনের তেমন কোন ভালো উপায় নেই। তাই চালককে তার বাইকের স্টক সিটিং পজিশন নিয়েই সন্তুষ্ট ও অভ্যস্ত হতে হবে। মোটরসাইকেলের স্যাডল হাইট কমানো না গেলেও মোটামুটি সহজ উপায়ে তা বাড়ানো যেতে পারে।
আপনি চাইলে ফোম প্যাড ও আলাদা সিট কভারের সাহায্যে আপনার বাইকের সিট নরম করতে ও উচ্চতা বাড়াতে পারেন। এছাড়া সাসপেনশন সিষ্টেমের এডজাষ্টমেন্টও আপনার স্যাডল হাইটে কয়েক মিলিমিটারের তারতম্য ঘটাতে পারে।
পারফর্মেন্সের জন্যে মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন
আমি অনেকের কাছেই শুনি যে তার বাইক আগে যেমন পারফর্মেন্স দিত এখন তা দেয়না। অথবা অনেকেই অভিযোগ করেন অমুকের বাইকটা তার বাইকের চেয়ে অনেক স্মুথ। এখানে আসলে তেমন বিশেষ কোন কারন নেই। তবে নিয়মিত যত্ন, মেইনটেন্যান্স, টিউনিং ও সামান্য কিছু কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন এর মূল কারন।
যন্ত্রপাতি ক্ষয়ে ক্ষমতা কমে যাবেই। তবে নিরবিচ্ছিন্ন পারফর্মেন্স পেতে হলে আপনাকে নিয়মিত এর যত্ন নিতে হবে ও মেইনটেন্যান্স করাতে হবে। এসবই আপনার বাইকটাকে দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখবে আর সার্ভিস লাইফ বাড়াবে।
নিয়মিত বিরতিতে বাইকের এয়ার ফিল্টার পরিস্কার করুন। পরিস্কার এয়ার ফিল্টার ইঞ্জিনে পরিস্কার বাতাসের প্রবাহ ঠিক রাখে। এটা তেল খরচ কমায় আর ইঞ্জিনের স্বাভাবিক শব্দ বজায় রাখে। তাই যখনই এয়ার ফিল্টার নষ্ট হয়ে যাবে তখনই তা বদলে ফেলুন। তাহলে ইঞ্জিনের পিস্টন-সিলিন্ডার ভালো থাকবে। আর আপনার বাইক যদি কার্বুরেটর পরিচালিত হয় তবে অবশ্যই এর স্পার্ক-প্লাগ এর দিকে নজর দিন। স্পার্ক-প্লাগ পরিস্কার রাখুন, ক্ষয় দেখা দিলে তা বদলে ফেলুন।
আপনার বাইকটির ইঞ্জিনের আরো ভালো রেস্পন্সের জন্যে এর ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম টিউন করতে হতে পারে। ই.এফ.আই ইঞ্জিনে এরকম কোন টিউনের সুযোগ নেই আর কোন প্রয়োজন ও নেই। তবে বাইক পুরোনো হয়ে গেলে এর ফুয়েল ইনজেকটরের নজেল ও এফ.আই সেকশন পরিস্কার করতে হতে পারে।
আর কার্বুরেটর পরিচালিত ইঞ্জিনের জন্যে ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম টিউন বেশ সহজ একটি কাজ। আপনি সহজেই এর আইডল স্ক্রু, এয়ার-ফুয়েল স্ক্রু এর সাহায্যে কার্বুরেটর টিউন করে নিতে পারেন। আর বাইক বেশি পুরাতন হলে এর পুরো কার্বুরেটর এ্যাসেমব্লী খুলে পরিস্কার ও টিউন করে নিতে পারেন।
তবে আপনার মোটরসাইকেলটি যদি নতুন হয়ে থাকে তবে কোনভাবেই ব্রেক-ইনের আগে এর ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম টিউন করতে যাবেননা। অন্তত ২০০০-২৫০০কিমি এর স্টক সেটিং এ রেখে বাইক চালানো ভালো। কেবলমাত্র প্রয়োজন হলেই এর পর আপনি আইডল স্পিড ও এয়ার-ফুয়েল রেশিও টিউন করতে পারেন। আর কার্বুরেটর টিউন করার আগে অবশ্যই এর এয়ার ফিল্টার ও স্পার্ক-প্লাগ পরিস্কার করে নেবেন।
কুলিং সিস্টেমে মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন নয়
সব ধরনের মোটরসাইকেলেই নিরবিচ্ছিন্ন বাতাসের প্রবাহ অতীব জরুরী একটি বিষয়। আপনার বাইকের ভালো পারফর্মেন্স বজায় রাখার জন্যে এর কুলিং সিস্টেমের দিকে নজর রাখুন। আর বাইকটি যদি এয়ার-কুলড হযে থাকে তবে বাতাসের প্রবাহের দিকে আরো ভালোভাবে নজর রাখুন। বাতাস প্রবাহের পথে কোনভাবেই বাড়তি মাড-গার্ড বা আলাদা কোন বডি কিট কোনভাবেই লাগাবেননা।
বাইকের ইঞ্জিনে রেগুলার ওয়েল লেভেল নিশ্চিত করুন। প্রয়েজনে টপ-আপ করুন ও পুরাতন হলে ড্রেইন দিয়ে দিন। সবসমময়ই কোম্পানী নির্ধারিত ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করুন। ইঞ্জিন ওয়েল নিয়ে নীরিক্ষা ভুলে যান। বাইকের লাইফ টাইমে একই ইঞ্জিনে একই ব্র্যান্ডের একই গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করুন।
ওয়াটার কুলিং ইঞ্জিনে নিয়মিত বিরতিতে রেডিয়েটর কুলিং ফ্লুইড লেভেল চেক করুন। কুলিং ফ্যানের দিকে ভালোভাবে নজর রাখুন ও যত্ন নিন। কোন প্রকার বাজে শব্দ হলে পুরো সিস্টেমটি চেক করে নিশ্চিত হোন যে কুলিং সিস্টেমটি ঠিক আছে। এই কাজটি একটি অভিজ্ঞ মেকানিকের সাহায্যে করুন। ওয়াটার কুলিং ইঞ্জিনেও সবসমময়ই কোম্পানী নির্ধারিত ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করুন। আর ইঞ্জিন ওয়েল নিয়ে যেকোন ধরনের নীরিক্ষা ভুলে যান।
মোটরসাইকেল চেইন-স্প্রোকেট এর যত্ন নিন গতিকে বজায় রাখুন
মোটরসাইকেলের চেইন-স্প্রোকেট সরাসরি এর পারফর্মেন্সকে প্রভাবিত করে। তাই নিয়মিত এর প্রতি নজর দিন। চেইন-স্ল্যাক, ক্ষয়, এ্যালাইনমেন্ট প্রভতিতে ভালোভাবে নজর দিন। নিয়মিত যত্ন নিন।
চেইন সবসময়ই ভেজা রাখুন। শুকনো কড়কড়ে চেইন নিয়ে বাইক চালাবেননা। একটি পরিস্কার, ভেজা চেইন নি:শব্দে নিবিড়ভাবে কাজ করে। এটা ফ্রিকশন কমায়, সঠিক অ্যাক্সেলারেশন ও গতি বজায় রাখে। তাই নিয়মিত চেইন-স্প্রোকেট পরিস্কার করুন, লুবিং করুন, এ্যালাইনমেন্ট ঠিক রাখুন।
তো বন্ধুরা আমি আমার আজকের আলোচনা মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন – কম্ফোর্ট ও কন্ট্রোল বাড়ান এর শেষে চলে এসেছি। পরিশেষে আবারো বলতে চাই আপনার মোটরসাইকেলটি নিয়মিত যত্ন করুন। বাইকটি নিয়মিত পরিস্কার রাখুন, সকল নড়ক্ষম অংশে প্রয়োজনমত লুব্রিকেটিং করুন, নিয়মিত বিরতিতে এর মেইনটেন্যান্স করুন। প্রয়োজনে পুরাতন ও ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ বদলে নিন। তাহলে আশা করা যায় আপনার বাইকটি অন্য যে কারো বাইকের চেয়ে অনেক ভালো সর্ভিস দেবে। আর আমি নিশ্চিত যে, যে কেউ আপনার বাইক চালিয়ে বলবে, বাহ: আপনার বাইকটাতো খুব ভালো চলে!