ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন ব্যতিক্রম এই সাগর থেকে -Adventure
This page was last updated on 31-Jul-2024 03:12am , By Ashik Mahmud Bangla
শুরু হতে চলেছে ৩ দিনের ছুটি , আর এই ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন ভিন্ন রকম এই সাগর থেকে । আমরা সবাই জানি বন্ধের দিনে কক্সবাজার , সাজেক , সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান এই জায়গাগুলোতে কি অবস্থা হয়। তাই যারা এডভেঞ্জার পছন্দ করেন তারা এই জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। আর আমরা বাইকাররা অনেক বেশি এডভেঞ্জার প্রেমী , তাই যারা যাবেন তাদের এই জায়গা আশাকরি ভালো লাগবে।
ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন ভিন্ন রকম এই সাগর থেকে
তাডুয়া সৈকত এবং লাল কাঁকড়ার মিছিল
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে নদীবেষ্টিত একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। পূর্বে মেঘনা, উত্তরে ইলিশা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এর মাঝে ৩ হাজার ৪০৩ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে ব-দ্বীপ জেলা ভোলা। জেলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় দেড়শ' বছর আগে জেগে যঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর। এই চরের তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকতটি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে না আসলে অনুভব করা যাবে না এর সৌর্ন্দয্য।
বিচ্ছিন্ন এই ঢালচর থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার নদীপথ ট্রলারে পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরের একেবারে দক্ষিণের মোহনায় মনোরম ম্যানগ্রোভ বন সমৃদ্ধ তাড়ুয়া চর দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন সারি সারি কেওড়া গাছ। তাড়ুয়ার সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদা বালি আর লাল কাঁকড়ার মিছিল। পাশাপাশি দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। কর্মচাঞ্চল্য জীবনের মাঝে কিছুটা সময় অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা ইচ্ছে করলেই এ চরে এসে ঘুরে যেতে পারেন।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। সেই বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা তাড়ুয়ার সাদা বালির বিশাল সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলবে নোনা পানির ঢেউ। সেখানে সাদা বালি আর নোনা পানিনে স্বাদ মিলবে কক্সবাজার অথবা কুয়াকাটা সৈকতের। পাশাপাশি সৈকতে দেখা মিলবে লাল কাকড়ার। বালির ওপর ছোট ছোট পা দিয়ে দৌড়ে চলে এসব লাল কাঁকড়ার দল। মানুষের অবস্থান টের পেলে এরা চোখের নিমিষেই লুকিয়ে পড়ে বালির গর্তে।
দিনের প্রথম প্রহরে তাড়ুয়া সৈকতে দাঁড়ালে দেখা যাবে সমুদ্র থেকে ভেসে ওঠা লাল টকটকে সূর্য সিঁড়ি বেয়ে একপা দুপা করে আকাশের পথে যাচ্ছে। আবার সন্ধ্যায় দেখা মিলবে সমুদ্রের ঢেউ, সেই সূর্যের মিশে যাওয়ার দৃশ্য।
তাডুয়া সৈকতের ইতিহাস
বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় বঙ্গোপসাগর এর পাশে আজ থেকে প্রায় ৪২ থেকে ৪৮ বছর আগে একটি চর জেগে উঠেছিল। যা অনেকে তারুয়া দ্বীপ নামে চিনেন। এই তারুয়া সমুদ্র সৈকতে যেতে হলে আপনাকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার নৌ-পথ পেরি দিয়ে যেতে হবে।
তাডুয়া সৈকতে যাওয়ার উপায়
ঢাকার সদরঘাট থেকে ফারহান ৫ অথবা ৬ এবং তাশরিফ ৪ অথবা ৩ একই দিনে যথাক্রমে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫মিনিটে এবং রাত ৮টা ৩০মিনিটে বেতুয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ডেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। নাস্তা সেরে অটোতে চেপে চলে যেতে হবে চর কচ্ছপিয়া, ভাড়া জনপ্রতি ১০০ – ১২০ টাকা।
বাইক নিয়ে গেলে ২০০ – ২৫০ টাকা ভাড়া পড়বে। এক বাইকে ২জন যেতে পারবেন। চর কচ্ছপিয়া থেকে ট্রলারে করে যেতে চর কুকরি মুকরি, ভাড়া ৪০ টাকা। তবে লোকাল ট্রলারে যেতে চাইলে সকাল ১১:৪৫ এর মধ্যে ঘাটে থাকতে হবে। চর কুকরি মুকরিতে পৌছানোর পরে ট্রলারে করে ঢাল চর যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন খুব সহজেই সহজেই। এছাড়া কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে বিকেল ৩টায় সারাদিনে মাত্র ১টি লঞ্চ ঢালচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা।
আপনি চাইলে চর ফ্যাশন থেকেও যেতে পারেন। চর ফ্যাশন বাজার থেকে কচ্ছপিয়া ঘাট বাস কিংবা অটোতে যেতে হবে, সময় লাগবে ঘন্টা দেড়েক। এরপর কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে ২.৩০ ঘন্টায় তারুয়া/ঢাল চর। নৌকা ভাড়া ৩৫০০-৪৫০০ টাকা। সময় বুঝে যে কোন কিছুর ভাড়া পরিবর্তন হতে পারে।
কোথায় থাকবেন
আপনি এখানে ক্যাম্প করে থাকতে পারেন। এখানে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত ঘাস এর সবুজ মাঠ। এছাড়া স্থানীয় মানুষজন খুবই অতিথিপরায়ণ। চাইলে এমন কোন পরিবারের সাথে কথা বলে তাদের সাথে থাকতে পারেন। একটু দূরে চর কুকরি মুকরিতে ইউনিয়ন পরিষদের একটি গেস্ট হাউজ রয়েছে। আগের থেকে অনুমতি নিয়ে এখানেও থাকতে পারবেন।
চর কুকরি মুকরি
ঘন বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়ায় সরুখাল হয়ে যখন পর্যটকদের নৌকা- ট্রলার ছুটে চলে তখন দু’পাড় থেকে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে তাদের স্বাগত জানায় চিত্রাহরিণ, শিয়াল- বানরসহ বন্য প্রাণীরা। আর সবুজের বুকচিরে এগিয়ে গেলেই সাগরতীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে নারিকেল বাগান, তাড়ুয়া বিচসহ অসংখ্য ডুবোচর। এসব চর থেকে পূর্ব-পশ্চিমে তাকালেই মনে হয় সাগর পাড়ের শুভ্রসাদা মেঘ আর দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ আলিঙ্গন করছে। এর মাঝে কিছু সময়ের জন্য হলেও অতিথি পাখির জলকেলি ভ্রমণ পিপাসুদের মন কেড়ে নিবে।
এই ভ্রমণে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
১- এখানে রাতে একা ক্যাম্প করে না থাকাই ভালো।
২- সাঁতার না জানলে বেশি দূর কখনো যাবেন না।
৩- ভ্রমণ স্থানকে ময়লা ফেলে নোংরা করবেন না।
৪- জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন।
৫- সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
৬- একজন ভ্রমণ কারীর সাথে ক্যামেরা থেকে শুরু করে মোবাইল, ল্যাপটপ, ড্রোন ইত্যাদি থাকে। তাই নিরিবিলি স্থানে ভ্রমণ করার সময় সদা সতর্ক থাকা উচিত।
৭- ভ্রমণে পান করার জন্য সাথে ফ্রেশ পানি নিয়ে নিবেন। সাথে শুকনো খাবার নিতে ভুলবেন না।
অপরিচিত কারো দেওয়া কিছু খাবেন না।
৮- মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন।
পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই , এই জায়গার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব বেশি উন্নত না। আর ভ্রমণে গেলে অনেক কিছুর সাথেই নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। আপনি যদি নিজেকে সেভাবে মানিয়ে নিতে পারেন তাহলেই আপনি এই জায়গায় ভ্রমণ করুন।