কক্সবাজার ট্যুর টিম সাওয়ারি - চতুর্থ পর্ব
This page was last updated on 15-Jul-2024 04:44am , By Saleh Bangla
কক্সবাজার ট্যুর টিম সাওয়ারি
কক্সবাজার পৌছে আমরা সোজা চলে গেলাম সুগন্ধা বীচে। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন খুলনার হাসিব ভাই। তিনি মেহেদী আর আকাশের প্রতিবেশী এবং খুব কাছের বড় ভাই। বর্তমানে ব্যবসায়ীক কারণে কক্সবাজার থাকেন। তিনি আবার চিটাগাং বাইকার্স ক্লাবের একজন সক্রিয় সদস্য। যাই হোক পরিচয় পর্ব সারা হলো। কিন্তু কিসের শব্দে যেনো কান খাড়া হয়ে গেলো, হুম সমুদ্রের গর্জনের সেই সুমিষ্ট শব্দ। আমাদের যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকছে কক্সবাজার,কুয়াকাটা সহ সাগর সৈকতে অন্তত বিশ বার বেড়াতে এসেছি কিন্তু প্রতিবার-ই মনে হয়েছে এ যেনো প্রথম এসেছি। আপনি কিছুতেই এক অভিজ্ঞতার সাথে আরেকটা মেলাতে পারবেন না। সবাই বীচের ধারে বাইক রেখে বাইকিং স্যুট পড়েই বীচের দিকে দিলাম ছুট। রাতের অন্ধকার চীড়ে সমুদ্রের বিশালকার ঢেউ আছড়ে পড়ছে আর আমরা অথৈ নীল জলরাশির সামনে দাঁড়ানো, একবার চিন্তা করুন তো দৃশ্যটি। সবাই কেমন যেনো আবেগতাড়িত হয়ে পড়লাম। প্রায় কুয়াকাটা যাওয়া হয় কিন্তু শেষবার কক্সবাজার গিয়েছিলাম সেই ২০০৯ সালে। যে যার মত উপভোগ করতে থাকলাম অথৈ নীল জলরাশি। মনে হচ্ছিলো তখন-ই ঝাপিয়ে পড়ি, ভূলে যাই সব বাধা নিষেধ।
হটাৎ খালিদের ডাকে ঘোর ভাঙল। হুম হোটেলে উঠতে হবে, সারাদিনের ভ্রমণের ধকল তো আছেই তাছাড়া আমাদের বাইক গুলোরোতো একটা নিরাপদ পার্কিং সুবিধা চাই। এক্ষেত্রে হাসিব ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তিনি আগের থেকেই আমাদের জন্য রুম বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন। হোটেল এলবেট্রস। পাচ শয্যা বিশিষ্ঠ সুবিশাল রুম। আমাদের সবার আরামেই জায়গা হয়ে গেলো। হোটেল রুমে ব্যাগেজ রেখে ফ্রেশ হয়ে আমরা রাতের খাবারের জন্য বের হলাম। স্থানীয় এক হোটেল থেকে রাতের খাবার শেষ করে আবারো বীচে দৌড়। আমাদের তো আর তর সইছেনা। কিন্তু রাতে সমুদ্রে নামা সমিচীন নয় জেনেও সবাই হাটু জলে নেমে গেলাম। শুরু হলো পানি ছিটানো,দৌড়াদৌড়ি। বেমালুম ভূলে গেলাম আমরা আর সেই ছোট্ট ছেলেটি নই। অন্ধকার রাত, সামনে অসীম নীল জলরাশি,সুবিশাল ঢেউ,ঢেউয়ের তীব্র গর্জন,উপরে সুবিশাল আকাশ। কেমন যেনো ভাবুক হয়ে গেলাম।
নিজেদের অসীম জলরাশির সামনে আর সুবিশাল আকাশের নীচে অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব মনে হলো। ভাবলাম এই হলাম আমরা মানুষ আর আমাদের কি অহংকার। আমরা নিজেদের অক্ষমতার ব্যাপারে এত-ই অজ্ঞ যে এই অসীম জলরাশি কিংবা সুবিশাল আকাশের মালিক মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অমান্য করতেও দ্বিধা করিনা। যাই হোক, জলকেলীতে কত সময় পার হয়ে গেলো টের-ই পেলাম না। পানিতে অনেক্ষন কাটিয়ে সবাই হোটেলের পথ ধরলাম। হোটেলে ফিরে রাত ১২-১ টা পর্যন্ত আড্ডা, গল্পে কাটিয়ে দিলাম।এর পর যে যার মত ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙল কাক ডাকা ভোরে। উঠে দেখি ইমরান তখনো ঘুম। কিন্তু তাজ্জব হয়ে গেলাম যখন দেখলাম খালিদ, আতিক, আকাশ, মেহেদী আর হাসিব ভাই তখনো গল্প করছে! কাহিনী কি? যাদেরকে না ডাকলে ঘুম থেকেই ওঠেনা তারাই এখন গল্প করছে। পরে শুনি আমরা ঘুমানোর পরেই নাকি ওরা বাইক নিয়ে বের হয়ে পড়ে। আর সারারাত মেরিন ড্রাইভ ও কক্সবাজার এলাকা চষে বেড়ায়। আফসোস করতে থাকলাম। হতচ্ছারা ঘুম আসার আর সময় পেলোনা। ওরা নাকি মাত্র-ই হোটেলে এসেছে। যাকগে যা হবার তো হয়েই গেছে। আরো কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে সবাই নাস্তা করতে বের হলাম। এর পর সোজা বীচে, বীচে কিছুক্ষন থেকে আমি আর ইমরান ফিরে আসলাম হোটেলে।ও রা তো সবাই মেরিন ড্রাইভে গিয়েছে আমাদের তো যাওয়া হয়নি। তৈরি হয়ে দু'জনে বের হয়ে হয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ। এক সি এন জি চালকের কাছে শুনতেই দেখিয়ে দিলো মেরিন ড্রাইভের পথ। মেরিন ড্রাইভে উঠেই চক্ষু ছানাবড়া। এ দেখি তেলের চেয়ে মসৃন রাস্তা। একটা রাস্তা এত্ত মসৃন হয় কি করে। ডান দিকে অথৈ নীল জলরাশি, চোখ আটকে গেলো। এত্ত সুন্দর দৃশ্য কিভাবে হয়। বাইক চালাই আর দুজনে দুজনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাই। চমকের তখনো বাকী।
বাম দিকে যে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছি সু-উচ্চ পর্বত সমূহ। আহ, তেলের মত মসৃন প্রায় যানবাহন হীন হাইওয়ে ডানে অপরুপ অথৈ নীল জলরাশি, বামে সু-উচ্চ পর্বতমালা একজন প্রকৃতি প্রেমিকের জন্য আর কি লাগে। বাজি ধরে বলতে পারি নিতান্ত বেরসিক মনও এই পরিবেশে ভাবুক হয়ে উঠবে। আমরা ৪০-৪৫ স্পিডে প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে এগোতে থাকলাম। থুক্কু ভূল হয়েছে। ভেবেছিলাম ৪০-৪৫ স্পিড কিন্তু পরে দেখলাম মিটারে ৮০-৮৫ দেখাচ্ছে। আসলে রাস্তা এতটাই মসৃন যে কখন যে স্পিড উঠে যাবে আপনি টের-ই পাবেন না। আমাদের প্লান ছিলো যাওয়ার সময় কোথাও দাড়াবোনা তাই একটানে টেকনাফ শহরে চলে গেলাম। এর পর কিছুদূর যেয়ে নাফ নদীর পাড়, যেখান থেকে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছেড়ে যায়..(চলবে)
লিখেছেনঃ মঞ্জুরুল আল হাসান মুন্না