ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের সুবিধা এবং অসুবিধা
This page was last updated on 01-Jun-2024 09:10am , By Saleh Bangla
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অটোমোবাইল ইন্ডাষ্ট্রিতে ইলেকট্রিক ভেহিকল (EV) এর উত্থান একটি বিপ্লব হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং টু-হুইলার সেগমেন্টও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা প্রকট হওয়ায় সবাই এখন পরিবেশ-বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার উপর বেশ জোর দিচ্ছে। ফলে অটোমোবাইলের অন্যান্য সেগমেন্টের সাথে সাথে টু-হুইলার সেগমেন্টে এখন ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুতরাং, আধুনিক ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলি এখন প্রচলিত পেট্রল-চালিত মোটরসাইকেলের একটি মোটামুটি কার্যকর বিকল্প হিসাবে বাজারে উপস্থিত হয়েছে। যাইহোক, অন্যান্য যেকোনো ধরনের বাহনের মতোই ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলেরও বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। আর তাই আজ আমরা এখানে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের বিভিন্ন সুবিধা এবং অসুবিধা তুলে ধরছি, যাতে বাস্তবতার নিরীখে ই-মোটরসাইকেলের উপযুক্ততা মূল্যায়ন করা যায়।
ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের সুবিধা এবং অসুবিধা
ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল আধুনিক টু-হুইলার ইন্ডাষ্ট্রিতে একটি নতুন সংযোজন, যা বাজারে বেশ নিঃশব্দেই তাদের জায়গা করে নিচ্ছে, এবং যাতায়াতের বিকল্প উপায় হিসাবে বেশ দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে। ফলস্বরূপ, ইলেকট্রিক বাইকগুলিকে এখন পরিবেশ বান্ধব বিকল্প বাহন হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা একইসাথে উদ্ভাবন এবং স্থায়িত্বেরও প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বাহন হিসেবে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলেরও বেশকিছু সুবিধা ও দুর্বলতা রয়েছে। চলুন তবে সেসব বিচারে দেখে নেয়া যাক ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলি কিভাবে নতুন প্রজন্মের বাহন হতে পারে।
ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের সুবিধা
>> ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলি অত্যন্ত পরিবেশ-বান্ধব ধরনের বাহন, যাতে একজষ্ট ইমিশন একেবারেই নেই। ফলে এসব মোটরসাইকেল কোনভাবেই বায়ু দূষণ ঘটায় না এবং জলবায়ু পরিবর্তনেও কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। মূলত: একারনেই ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলি পরিবেশ বান্ধব বাহন হিসাবে আগামী দিনের বাহন বলে বিবেচিত হতে পারে।
>> প্রচলিত পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেলের তুলনায় ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের পরিচালনার খরচ অত্যন্ত কম। এসব মোটরসাইকেলে প্রচলিত মোটরসাইকেলের তুলনায় কম জটিল ও চলমান পার্টস থাকায় তাদের মেইটেন্যান্স কম, এতে লুব্রিকেন্ট পরিবর্তন করতে হয় না, এবং এতে খরচ করা বিদ্যুতের দামx পেট্রোল খরচের তুলনায় অনেক কম। ফলে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল অত্যন্ত সাশ্রয়ী।
>> ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলির মোটরগুলি ইন্সট্যান্ট টর্ক ডেলিভারি করতে পারে। এই ইন্সট্যান্ট টর্ক ডেলিভারির ক্ষমতা ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলির রাইডিংয়ে অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল এবং চটপটে বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। ফলে, ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলি ইন্সট্যান্ট পাওয়ার ডেলিভারীর সাথে সাথে কুইক এক্সিলারেশন নিশ্চিত করে একজন রাইডারকে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর রাইডিং অভিজ্ঞতা দিতে পারে।
>> এছাড়াও প্রচলিত পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেলেরর তুলনায় ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলির অপারেশন একদমই শব্দহীন। প্রচলিত ইন্টারনাল-কম্বাশ্চন ইঞ্জিন না থাকায় ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলি সামগ্রিকভাবে যেমন শব্দহীন ও শান্তিপূর্ণ রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারে, তেমনি এসব বাহন কোনো শব্দ-দূষণই ঘটায় না। এই কারণে, ই-মোটরসাইকেলগুলি শহরাঞ্চলে, ইনডোর পরিবেশে, এবং আবাসিক ও ওয়াইল্ড-লাইফ টেরিটরিতে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত আদর্শ ধরণের বাহন।
ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের অসুবিধা
>> ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের অনেক সুবিধাজনক ফিচার থাকলেও এসব বাহনের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো তাদের সীমিত রাইডিং রেঞ্জ। যদিও, আধুনিক ব্যাটারি প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলি এখনও পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেলের তুলনায় বেশ কম দূরত্বে যেতে পারে। ফলে এসব মোটরসাইকেল নিয়ে দুরপাল্লার রাইডে ঘন ঘন রিচার্জিং স্টপ নিতে হবে, যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ, আর এখন পর্যন্ত এটি বাস্তবসম্মত নয়।
>> ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের জন্য চার্জিং স্টেশনের প্রাপ্যতা ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল রাইডারদের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে লং-ডিস্টেন্স রাইডের ক্ষেত্রে ও কম উন্নত এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে। এই সীমিত চার্জিং ইনফ্রাষ্ট্রাকচার রাইডারদের যেমন চলাচলের স্বাধীনতা সীমিত করতে পারে, তেমনি দূরপাল্লার যাত্রায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। একারণে, এখনও প্রচলিত পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেলগুলি দৃঢ়ভাবে বাজার দখল করে আছে। কারণ তাদের রাইডিং রেঞ্জ যেমন বেশি, তেমনি পেট্রোল স্টেশনগুলিও সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে।
>> ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলগুলির উচ্চ-প্রযুক্তির ব্যাটারিগুলি বেশ দামী হওয়ায় এসব মোটরসাইকেল কিনতে খরচ যাই হোকনা কেন, একটা সময় পর এসব ব্যাটারি প্রতিস্থাপন এবং চার্জিং মেকানিজম ও মোটর মেরামত করা বেশ ব্যয়বহুল একটি বিষয়। যদিও প্রচলিত পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেলগুলির তুলনায় এসবের অপারেটিং কষ্ট অনেক কম, তবু একটা সময় পর এই খরচ যথেষ্ট পীড়াদায়ক একটি বিষয় হতে পারে।
তো বন্ধুরা, এই হলো সাধারনভাবে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের সুবিধা এবং অসুবিধা। এথেকে দেখা যায় যে, ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের বেশ কিছু দিকে অত্যন্ত আকর্ষনীয় সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি বেশ কিছু গুরুতর সমস্যাও রয়েছে। তো সময়ের সাথে সাথে সেই দুর্বলতা বা সমস্যাগুলো সমাধান করা গেলে ইলেকট্রিক বাইক বা মোটরসাইকেল হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনের বাহন। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কিছু ক্ষেত্রে এসব মোটরসাইকেলের পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেলের বিকল্প হযে ওঠা বেশ চ্যালেঞ্জের।