ইলেকট্রিক বাইক – আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ

This page was last updated on 06-May-2024 06:35pm , By Saleh Bangla

বিশ্বব্যাপী নগরায়ণ বাড়ার সাথে সাথে বিশ্বের অনেক শহরেই পরিবহন ব্যবস্থা একটি ক্রমবর্ধমান চাপের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ব্যস্ত শহরগুলিতে যানজট, বায়ু দূষণ, এবং শব্দ দূষণ বৃদ্ধির সাথে সাথে, এটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে পুর‍াতন পেট্রল-ইঞ্জিন চালিত বাহনগুলির উপযুক্ত বিকল্প প্রয়োজন। আর এখানেই এখনকার ইলেকট্রিক বাইকগুলি বেশ সম্ভাবনা নিয়ে আসছে, যা শহুরের পরিবহন ব্যবস্থায় একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে পারে। তো আজকের আলোচনায় আধুনিক ইলেকট্রিক বাইক কিভাবে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারে তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করবো।

 

ইলেকট্রিক বাইক – আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ

বন্ধুরা, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইলেকট্রিক বাইক, তথা ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল ও স্কুটারগুলি বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যাক্তিগত পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি নতুন বিকল্প হিসাবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। অনেক কারণেই, বিশেষ করে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ কমানো, এবং বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কমাতে, এখনকার ইলেকট্রিক বাইকগুলি শহুরে জীবনযাত্রায় প্রচলিত গ্যাসোলিন চালিত টু-হুইলারগুলির একটি কার্যকরী ও জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে উঠছে। তাই, বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ইলেকট্রিক বাইকগুলি ব্যাক্তিগত পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি টেকসই বিকল্প হিসাবে ধরে নেয়া হচ্ছে।

ফলশ্রুতিতে, এখন অনেক দেশেই তাদের বড় বড় শহরগুলিতে প্রচলিত গ্যাসোলিন-ইঞ্জিন-চালিত টু-হুইলারগুলির বদলে ইলেকট্রিক বাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সেইসূত্রে, ম্যানুফ্যাকচারাররাও আধুনিক জীবনযাত্রার প্রয়োজনের সাথে মিলিয়ে নতুন নতুন হাই-ফিচারের ইলেকট্রিক বাইক তৈরিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে প্রশ্ন ওঠে, আসলেই কি ইলেকট্রিক বাইকগুলি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারে? আর যদি হয় তবে তা কিভাবে? চলুন সেই সম্ভাবনাটুকু তলিয়ে দেখা যাক।

ইলেকট্রিক বাইকগুলি আধানিক পরিবহন ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ হতে পারে কিনা তার উত্তর পেতে হলে সেগুলির সুবিধা ও সম্ভাবনা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ৷ তো ইলেকট্রিক বাইকের সুবিধা আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই চলে আসে, এগুলি প্রচলিত পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেল বা স্কুটারের  তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশ-বান্ধব। কেননা, ইলেকট্রিক বাইকের মোটরগুলির ইমিশন শূন্য; ফলে এগুলির কার্বন ফুটপ্রিন্ট প্রায় নেই বললেই চলে। একারনে এসব বাহন শহুরে এলাকায় বায়ু দূষণের বিপরীতে বাহন হিসেবে দুর্দান্ত। তাই নীতিনির্ধারকরাও এখন গুরুত্বের সঙ্গে ইলেকট্রিক ভেহিকলের ওপরই নির্ভর করছেন।

দ্বিতীয়ত, ইলেকট্রিক বাইকগুলি গ্যাসোলিন চালিত বাইক, মোটরসাইকেল, ও স্কুটারের তুলনায় প্রায় একদমই শব্দহীনভাবে চলে। কেননা, এসবে ইন্টারনাল-কম্বাশ্চন ইঞ্জিন ও শব্দযুক্ত একজষ্ট না থাকার ফলে ইলেকট্রিক বাইকগুলি বলা চলে কোন শব্দই উৎপন্ন হয় না। ফলে ব্যস্ত শহুরাঞ্চলগুলি যেখানে শব্দ দূষণ একটি ব্যাপক সমস্যা, সেখানে ইলেকট্রিক বাইকগুলি একটি আকর্ষণীয় এবং কার্যকর বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে স্থান করে নিতে পারে।

তৃতীয়ত, ইলেকট্রিক বাইকগুলি ওজনে যথেষ্ট হালকা, আকারে বাহুল্য বর্জিত, পাওয়ার এফিশিয়েন্ট, কন্ট্রোল করা সহজ, এবং পেট্রল-চালিত বাইকের তুলনায় হ্যান্ডেলিংও অত্যন্ত চমৎকার। সুতরাং এগুলি জনাকীর্ণ ও আঁটসাঁট শহুরে এলাকায় এবং যানজটপূর্ণ রাস্তায় চলাচলের জন্য একটি উপযুক্ত বাহন হতে পারে। এছাড়াও, ইলেকট্রিক মোটরগুলি ইন্টারনাল-কম্বাশ্চন ইঞ্জিনের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়ার এফিশিয়েন্ট। ফলে এগুলি কম শক্তি খরচ করে বেশি গতি তৈরী করতে পারে। আর এসব মোটরের কুইক এক্সিলারেশন একটি রেসপন্সিভ ও স্মুথ রাইডিংয়ের অভিজ্ঞতা দিতে পারে। ফলে, ইলেকট্রিক বাইকগুলি শহুরে যাতায়াতের জন্য যথেষ্ট কার্যকর বাহন হতে পারে।

সবশেষে, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল বা স্কুটারগুলি পেট্রল-চালিত বাইকের তুলনায় যথেষ্ট প্র্যাকটিক্যাল ও সস্তা। এসব বাহনের ব্যাটারি চার্জ করার খরচও পেট্রোল-চালিত বাইকের পেট্রোল খরচের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। উপরোন্তু, ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল ও স্কুটারগুলি পাবলিক চার্জিং স্টেশনগুলিতে তো বটেই,  বাড়িতেও সাধারন ইলেকট্রিক আউটলেটে কানেকশন দিয়ে চার্জ করা যায়। সেইসাথে এসব ইলেকট্রিক বাহনে কম মুভিং পার্টস থাকায় এগুলি কম জটিল, আর এসবের মেইনটেন্য‍ান্সও  পেট্রোলচালিত বাইকের তুলনায় অনেক কম। ফলে সবমিলিয়ে এখনকার ইলেকট্রিক বাইকগুলি আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থায় সুবিধাজনক বাহন হিসেবে বেশি উপযুক্ত।

 

ইলেকট্রিক বাইক – কিছু দুর্বল দিক

আধুনিক উরবান ট্রান্সপোর্ট হিসেবে ইলেকট্রিক বাইক তথা ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল ও স্কুটারের চমৎকার সুবিধা ও সম্ভাবনা থাকলেও এতে এখনো বেশ কিছু দুর্বল দিক রয়েছে। এসব বাহনের বড় সীমাবদ্ধতাগুলির মধ্যে একটি হলো তাদের সীমিত রাইডিং রেঞ্জ। যার কারনে এসব বাহন লং-রাইড বা লম্বা রোড ট্রিপের জন্য এখনো পুরোপুরি উপযুক্ত না। কেননা, ইলেকট্রিক বাইকের চার্জিং ইনফ্রাষ্ট্রাক্চার এখনও সবস্থানে পেট্রোল স্টেশনের মতো বিস্তৃত নয়, যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ।

দ্বিতীয়ত, যদিও ইলেকট্রিক বাইকগুলিতে প্রচলিত পেট্রোল-চালিত বাইকের মতো ঘন ঘন মেইনটেন্য‍ান্সের প্রয়োজন হয় না, তবে একটা সময় পর এসবের ব্যয়বহুল ব্যাটারী বদলানোর খরচও গড়পড়তা ইউজারদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, যদিও স্ট্যান্ডার্ড রেঞ্জের ইলেকট্রিক বাইকগুলি মোটামুটি একই রেঞ্জের পেট্রোল-চালিত বাইকের তুলনায় কিছুটা সস্তা, তবে হাইলি-ফিচারড ও হাই-পারফর্মেন্স ইলেকট্রিক বাইকগুলি যথেষ্ট দামী, যা একজন গড়পড়তা কাষ্টমারের ক্রয়ক্ষমতার অনেকটাই বাইরে।

তো বন্ধুরা, সবশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্রতিদিনের সাধারন জীবনযাত্রায় এখনকার সময়ে আধুনিক ইলেকট্রিক বাইকগুলির প্রচলিত পেট্রোল-চালিত বাইকের সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হবার যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। কেননা তাদের লো-নয়েজ অপারেশন, জিরো ইমিশন, খরচ-সাশ্রয়, ও সহজ ব্যবহারযোগ্যতার কারনে এসব বাহন শহুরে ব্যবহারের জন্য অনেক বেশি উপযুক্ত। তবে যদিও এসব বাহন ব্যবহারে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবু আশা করা যায় ইলেকট্রিক বাইকই হয়ে উঠতে পারে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ।