অকটেনচালিত ও ইলেক্ট্রিক মোটরসাইকেলের তুলনা – কোন বাইকটি সেরা?

This page was last updated on 22-Mar-2025 02:08pm , By Badhan Roy

সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে ইলেক্ট্রিক বাইক ব্যাবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। তুলনামুলক নতুন ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির এই বাইকগুলো একদিকে যেমন আরামদায়ক অপরদিকে বেশ কিছু সুবিধাও প্রদান করে থাকে। অপরদিকে গতানুগতিক অকটেন ইঞ্জিনের বাইকগুলো শক্তিশালী এবং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাবহার হয়ে আসার কারনে ইতিমধ্যে বাইকারদের কাছে নির্ভরযোগ্য ও আপোষহীন হিসেবেও বিবেচিত বটে। 

আজ আমরা অকটেনচালিত এবং ইলেক্ট্রিক বাইকগুলোর দৈনন্দিন মাইলেজ ও জ্বালানীর খরচ, মেইন্টেইনেন্স খরচ এবং সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে কোনটি সেরা এবং আপনার জন্য কোন ধরনের বাইক উপযোগী সেরকম তুলনা উপস্থাপন করব।

 অকটেনচালিত ও ইলেক্ট্রিক মোটরসাইকেলের তুলনা

অকটেনচালিত ও ইলেক্ট্রিক মোটরসাইকেলের তুলনা – কোন বাইকটি সেরা?

মাইলেজ ও জ্বালানীর খরচঃ মোটরসাইকেল ব্যাবহারকারীদের মনে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হচ্ছে বাইক মাইলেজ কত দিবে এবং মাসিক বা সাপ্তাহিক আনুমানিক জ্বালানীর খরচ কত আসতে পারে। বর্তমানে পেট্রোলের মূল্য ১২১ টাকা এবং অকটেনের মূল্য ১২৫ টাকা প্রতি লিটার। 

বিভিন্ন অকটেন ইঞ্জিনের বাইকগুলো সিটি তে সিসি ভেদে অর্থাৎ ৮০ থেকে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত সাধারণত সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ কি.মি পর্যন্ত প্রতি লিটারে মাইলেজ দিয়ে থাকে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও তেলের মান অনুযায়ী। সেই হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ২০ কি.মি যদি বাইক চালানো হয় তবে মাসে ২৫০০ টাকার কাছাকাছি ফুয়েল কস্ট পড়ে যায়। 

অপরদিকে ইলেক্ট্রিক বাইকগুলো একবার ফুল চার্জ দিতে খরচ পরে সর্বোচ্চ ১৩ থেকে ১৫ টাকার মত এবং একবার ফুল চার্জে মোটর ও ব্যাটারির ক্যাপাসিটি ভেদে ৮০-১২০ কি.মি পর্যন্ত রেঞ্জ বা মাইলেজ দিতে সক্ষম। সেই হিসেবে মাসে মাত্র ১০০ টাকার কমে আপনি সিটির ভিতরে ইলেকট্রিক বাইক ব্যাবহার করতে পারবেন। 

সিটিতে ব্যাবহারের জন্য প্রতিদিন চার্জ করার আবশ্যকতা কিন্তু নেই এবং আপনার বাসার ২ পিন সকেট থেকেই সহজে এটি চার্জ করতে পারবেন। অতএব, জ্বালানীর খরচ সাশ্রয় এবং মাইলেজের দিক থেকে ইলেক্ট্রিক বাইকগুলো নিঃসন্দেহে এগিয়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

 

মেইনটেইনেন্সঃ অনেকের মুখে একটি প্রবাদ বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়, সেটি হচ্ছে বাইক পালা আর হাতি পালা সমান কথা। একটি অকটেন ইঞ্জিনের বাইক সচল রাখার জন্য শুধুমাত্র জ্বালানী তেলই নয়, এর সাথে ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক প্যাড, চেইন লুব, স্পেয়ার পার্টস, টুকটাক সার্ভিসিং ইত্যাদি প্রয়োজন পড়ে। এবং সব মিলিয়ে মেইনটেইনেন্স এর জন্য কত খরচ আসে এটা নিশ্চয় নতুন করে ব্যাখা করার প্রয়োজন পড়ে না। 

অপরদিকে ইলেক্ট্রিক বাইকে শুধুমাত্র প্রতি ৫-৬ হাজার কি.মি পর পর ব্রেক প্যাড পরিবর্তন ব্যাতিত মেইনটেইনেন্স এর জন্য তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে। হ্যাঁ, এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে ইলেক্ট্রিক বাইকের মেইন কম্পোনেন্ট হচ্ছে এর ব্যাটারি, ব্যাটারি তে সমস্যা হলে বা পরিবর্তন করতে হলে নতুন বাইকের কাছাকাছি দাম পড়ে যায় কি না – যেটা আমাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা। 

ইলেক্ট্রিক বাইকগুলোতে ব্যাবহার করা ব্যাটারির নাম গ্রাফিন ব্যাটারি এবং এ ধরনের ব্যাটারি গুলো কমপক্ষে ১০০০ বার রিচার্জ করার পর এদের হেলথ বা চার্জিং ক্যাপাসিটি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। ব্যাটারি গুলোর দাম খুবই রিজনেবল এবং মোটেও তা নতুন বাইকের দামের সমপরিমাণ হয় না। 

তাছাড়াও যদি আপনি একটি ব্র্যান্ডেড ইলেক্ট্রিক বাইক কেনেন তবে কোম্পানি ভেদে ১৫-১৮ মাসের ভিতরে ব্যাটারিতে কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিলে কোম্পানিগুলো তাদের পলিসি অনুযায়ী আপনাকে ফ্রি ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট করে দিবে। মেইনটেইনেন্স এর দিক থেকেও ইলেকট্রিক বাইক অনেক সাশ্রয়ী সেটাও হাতে কলমে প্রমাণিত। 

 

সীমাবদ্ধতাঃ তুলনা করতে গেলে দেখা উভয় বাইকেরই কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অকটেন ইঞ্জিনের বাইক নিয়ে ফুল ট্যাংক লোড করে আপনি লং রাইডে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবেন এবং বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় ৫ কি.মি দূরত্বের মধ্যে অন্তত একটি পেট্রোল পাম্প আপনার চোখে পড়বেই। অকটেন রিফুয়েলিং করতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়। 

অপরদিকে ইলেক্ট্রিক বাইকগুলো ফুল চার্জ করতে অন্তত ৪-৬ ঘন্টা সময় প্রয়োজন হয়ে থাকে, তার উপর বাংলাদেশে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন না থাকায় ইলেক্ট্রিক বাইকগুলো নিয়ে লম্বা দূরত্ব পাড়ি দেওয়া বেশ কঠিন। আবার বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তাভাবনা করলে অধিকাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন এবং সাধারণত বাসার নিচে বা অন্য কোথাও পার্কিং স্পেস নিয়ে বাইক রাখতে হয়। 

সেক্ষেত্রে বাইক চার্জিং এর ব্যাবস্থা করা অনেক ক্ষেত্রেই কষ্টসাধ্য হতে পারে যদি পার্কিং স্পেসে চার্জিং সকেট না থাকে। অনেক বাড়ি অথবা গ্যারেজের মালিকের সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতা না থাকলে তারা অতি অল্প খরচ হওয়ার পরেও বৈদ্যুতিক সংযোগ বা চার্জের অনুমতি দিতে চান না।
 অপরদিকে অকটেন ইঞ্জিনের বাইকের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা হচ্ছে ইলেক্ট্রিক বাইকগুলোর মত স্টোরেজ স্পেস থাকে না এবং ইলেক্ট্রিক বাইকের তুলনায় এই বাইকগুলো তুলনামূলক ভারী এবং নিয়ন্ত্রণ কঠিন। 

 

সবশেষে, এই বিস্তারিত আলোচনায় আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি যদি আপনি শুধুমাত্র শহরের ভিতরে যাতায়াতের জন্য একটি বাইক ক্রয় বা ব্যাবহার করতে চান তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় অবশ্যই ইলেক্ট্রিক বাইক আপনার জন্য সেরা বাহন হতে পারে। 

ইলেক্ট্রিক বাইক আপনার সময়, পরিবেশ দূষণ, জ্বালানী এবং মেইন্টেইনেন্স খরচ এবং ঝামেলা থেকে বাঁচাবে। অপরদিকে আপনি যদি বেশির ভাগ সময় লং রাইড দিয়ে থাকেন তবে জ্বালানী ও মেইন্টেইনেন্স খরচ বেশি হলেও একটি অকটেন ইঞ্জিনের বাইক আপনার জন্য সেরা বাহন হবে। 

যে বাইকই ব্যাবহার করুন না কেন, সর্বদা সার্টিফাইড হেলমেট ব্যাবহার করুন এবং বাইক বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যের জন্য বাইকবিডির সাথেই থাকুন।