Yamaha FZS FI V3 ১১,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - শামিম

This page was last updated on 29-Jul-2024 05:37am , By Shuvo Bangla

আমি শামিম । আমি একটি Yamaha FZS FI V3 বাইক ব্যবহার করি । আমার বাইকটি ১১,০০০ কিলোমিটার রানিং । আজ আমি আমার বাইকটি নিয়ে আমার রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

yamaha fzs fi v3 bike pic

Yamaha FZS FI V3 ১১,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - শামিম

ফ্যান্টাসি আর এডভেঞ্চারের প্রতি বরাবরই অনেক ঝোঁক আমার। বছর খানেক আগে একটা হরর মুভি দেখেছিলাম। নাম ছিল ‘’প্রিস্ট’’। সেখানে মুভির হিরো একটা খুব এডভান্সড বাইক চালিয়ে ভ্যাম্পায়ার হান্টিং এ বের হত। দেখে মনে হয়েছিল কোন একসময় এরকম কোন ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরে মাইলের পর মাইল একা বাইক চালানোর ফিল নিতে পারলে মন্দ হত না। সেই সময় যে এ ত দ্রুত চলে আসবে ভাবতেই পারিনি।

সম্ভবত ২০১৮ সালের মোটরবাইক ফেয়ারে আমি সর্বপ্রথম Yamaha FZS FI V3 দেখি। মাস্কুলার বডি, FI ইঞ্জিন, সিঙ্গেল চ্যানেল ABS, অ্যাগ্রেসিভ লুকিং দেখে এক নজরেই আমার ভালো লেগে যায়। তখন আমি চালাতাম হিরো গ্ল্যামার ১২৫। মনে মনে ডিসশন নেই কখনও বাইক পরিবর্তন করলে এই বাইকটাই কিনব আমি।

yamaha fzs fi v3 bike

এছাড়াও ইয়ামাহার প্রতি আগে থেকেই একটা দুর্বলতা ছিল আমার। ২০১৯ সালে ছোটখাট একটা এক্সিডেন্ট করার পরে আমি আর আমার হিরো গ্ল্যামারটা চালাতে সাছন্দ্য বোধ করছিলাম না ফলে সেটা বিক্রি করে দেই। আর তখন আমার বাইক নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে যায়। 

নতুন বাইক কেনার ক্ষেত্রে কিছু জিনিষ আমি মাথায় রেখেছিলাম। সর্বপ্রথম ছিল ব্রেকিং এন্ড ব্যালেন্সিং। গতির তুলনায় সেইফ রাইডিংকেই আমি বেশি প্রাইওরিটি দেই। আর FZ সিরিজ বিখ্যাতই হচ্ছে ব্রেকিং এন্ড ব্যালেন্সিং এর জন্য। এরপরে ছিল কমফোরট। 

Yamaha FZS FI V3 কে বলা হয় The Comfort King এছাড়াও আমি কোথায় চালাব, কি পারপাসে বাইক ইউজ করব, মাইলেজ কতটুকু দরকার এগুলাও মাথায় ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার ছিল আফটার সেলস সার্ভিস।

এই ব্যপারগুলো মাথায় রেখে আমি বেশ কয়েকটা বাইক নিয়ে রিসার্চ করি এবং যতটুকু সম্ভব টেস্ট রাইড দেয়ার চেষ্টা করি। এমনকি গ্রে মার্কেটেও আমি বেশ কয়েকদিন ঘুড়াঘুড়ি করি তবে আফটার সেলস সার্ভিসের কথা চিন্তা করে আমি অফিশিয়াল বাইক নেয়ার ডিসিশন নেই এবং আমার ডিসিশন সঠিক ছিল। 

আমার দরকার ছিল এমন একটা বাইক যেটা নিয়ে সিটিতে ইজিলি কমিউটিং করা যাবে, মাইলেজ বেশি দিবে পাশাপাশি টুকটাক ট্যুরও দেয়াও যাবে। সবচেয়ে বড় কথা অফিস আওয়ারে ঢাকায় যেই বিশাল ট্র্যাফিক জ্যাম থাকে সেটা যেন মোকাবেলা করার মতন ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষেত্রে টপ স্পিড কিংবা ইঞ্জিনের র পাওয়ার দিয়ে আসলে আমার তেমন কোন কাজ নেই।

 আর এর সবগুলাই আমি Yamaha FZ V3 তে পেয়েছি। অবশেষে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আমি বাইকটি কিনে ফেলি। এবং এখন পর্যন্ত আমি টোটাল ১১,১০০ কিলোমিটার চালিয়েছি। বাইকটি কেনার কিছু দিন পরেই আমাদের দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে যায়।

yamaha fzs fi v3 black colour

আর যার কারণেই ২ বছর হলেও আমি মাত্র ১১,০০০ কিলো চালাতে পেরেছি। পেশায় আমি একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার। করোনাতে সব বন্ধ হয়ে গেলেও ইন্টারনেট জরুরী সেবার আওতায় পরায় আমার জন্য অফিস চালু ছিল। ৩ মাস আমাকে অফিসে থেকে কাজ করতে হয়। মাঝে মাঝে বাসায় যাওয়ার সুযোগ পেতাম। 

লিখার শুরুতে বলেছিলাম সেই মুভির হিরোর মতন আমারও একা একা মানুশবিহীন রাস্তায় বাইক চালানোর সুযোগ হয়ে যায়

আর সেটা হয় এই করনাতেই। করোনা যখন নতুন অবস্থায় তখন স্বভাবতই মানুষের মনে অনেক ভয় কাজ করত কারণ রোগটা নিয়ে কারোরই সুস্পষ্ট ধারণা ছিলনা। 

যার কারণে আমি বের হলে প্রচন্ড গরমেও ভাইসরটা আপ করতেও ভয় পেতাম। আরও একটা কারণ ছিল সারটিফাইড হেলমেটে মাস্ক পরা যায় না সো ভাইসর আপ করাটা আমার জন্য কিছুটা রিস্কি ছিল। সময় যেহেতু খুব কম পেতাম তাই খুব দ্রুত চলাতে হত। কিন্তু FI ইঞ্জিনের যেই স্মুথনেস সেটা আমাকে বুঝতে দিত না। 

একবার রামপুরা রোডে স্পিডো মিটারের দিকে তাকিয়ে দেখি ৯০+ এ চালাচ্ছি পরে দ্রুত স্পিড কমিয়ে আনি। এটাই হচ্ছে ইয়ামাহার বাটারস্মুথ FI ইঞ্জিনের কারিশমা। চেনা শহর কিন্তু জনমানবহীন। মৃত্যুর ভয়। তার মধ্য দিয়ে বাইক চালানোর যে কি অনুভূতি সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না।

এইবার চলে আসি আসল কথায়। ১১,০০০ কিলোমিটারে আমি এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার লং ট্যুর দিয়েছি। পানাম সিটি, বরিশাল, কুয়াকাটা, কুমিল্লা, লাকসাম, আলী কদম, ডিম পাহাড়, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, খাগড়াছড়ি ঘুড়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত সামনের ব্রেক প্যাড ১ বার আর পিছনের ব্রেক প্যাড ২ বার পরিবর্তন করতে হয়েছে। 

ক্ল্যাচ ক্যাবল পরিবর্তন করতে হয়েছে ২ বার। যেহেতু আমাকে ঢাকা সিটির জ্যামে অনেক বেশি চালাতে হয় তাই ঘন ঘন ক্লাচ আর ব্রেক চাপতে হয় না। তাই এই পরিবর্তন বলে আমি মনে করি। আর ১০,০০০ কিলোমিটার চলার পরে একবার এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করতে হয়েছে। 

এছাড়া এখন পর্যন্ত আমার মেজর কিছু করা লাগে নি। ব্রেইক ইন পিরিওড আমি মেইনটেন করেছি ২,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এর মধ্য প্রথম ৩০০ কিলোমিটারে একবার আর পরবর্তী ১৭০০ কিলোমিটার এ ৩ বার ইঞ্জিন অয়েল ড্রেইন দিয়েছি এবং সেটা মিনারেল। 

yamaha fzs fi v3 black

৫,০০০ এর পর থেকে আমি সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি এখন পর্যন্ত। বলা বাহুল্য আমি সবসময় ইয়ামা লুব ব্যবহার করি। এখন পর্যন্ত আমি কোন রকম সমস্যা পাইনি তাই আর পরিবর্তন করারও প্রয়োজন মনে করিনি। সবসময় চেষ্টা করি ভালো কোন পাম্প থেকে ফুয়েল নিতে যদিও ট্যুরে গেলে সেটা সম্ভব হয় না।

মডিফিকেশন বলতে আমি ফগ লাইট ইনেস্টল করেছি যেটা হাইওয়ে আর ট্যুরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। এছাড়া সামনে FZ V2 এর উইন্ডশিল্ড ইনেস্টল করেছি । যেটাতে হালকা হলেও সামনের স্পিডোমিটারটা কিছুটা প্রটেকশন পায়।

আমার সম্পূর্ন বাইক সিরামিক কোটিং করা। যেটা বাইক কেনার ৬ মাস পরে করিয়েছিলাম। অনেকেই সিরামিক কোটিং নিয়ে ভয় পান চাইলে তারা আমার বাইকটি দেখতে পারেন। ২ বছর হয়ে গেলেও এখনও নতুনের মতন। তবে অবশ্যই সেটা করাতে হবে স্বনামধন্য কোন প্রতিস্টান থেকে।

এবার আসি মেইন্টেনেন্স নিয়ে। টুকটাক কিংবা ছোটখাট কাজ বাদে আমি আমার সব ধরণের সার্ভিস করাই ACI Motors থেকে। আমি টোটাল ৫টা ফ্রি সার্ভিস আর ৩টা পেইড সার্ভিস করিয়েছি এবং এখন পর্যন্ত ১০০% সন্তুস্ট। অনেকেরই ট্যাংক এর সাইড প্যানেল খোলার কমপ্লেইন দেখেছি তবে আমার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এমন কোন সমস্যা পাইনি। 

এছাড়া অথরাইজড সার্ভিস সেন্টার নিয়ে অনেকের অনেক ধরণের অভিযোগ আছে। আমি নিজেও আগের বাইকে এই ধরণের সমস্যারর সম্মুখীন হয়েছি তবে এইবার এই ধরনের কোন কিছুই আমি পাইনি। তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো আমি সবসময় একটা জায়গা থেকেই সার্ভিস করাই।

ঢাকাতে ACI এর কয়েকটা সার্ভিস সেন্টার আছে তবে আমি বাইক যেখান থেকে কিনেছি সেখান থেকেই সার্ভিস করাই। এক জায়গা থেকে করালে আমার মতে টেকনিশানদের সাথে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাড়ে এবং ওদেরও একটা আইডিয়া চলে আসে কি কি করা লাগবে কিংবা আপনি কি কি চাচ্ছেন।

আমার মতে Yamaha FZS FI V3 বাইকের ৫টি ভালো দিক -

  • ব্রেকিং এবং ব্যালান্সিং
  • কন্ট্রোলিং
  • মাইলেজ
  • স্মুথনেস
  • কম্ফোরটনেস

আমার মতে Yamaha FZS FI V3 বাইকের ৫টি খারাপ দিক -

  • রেডি পিক আপ নাই
  • পাওয়ার ল্যাকেজ
  • হেড লাইটের আলো কম
  • বডির তুলায় হেড ছোট
  • স্পিডোমিটারে ইনফরমেশন কম

পরিশেষে কিছু কথা বলি। মার্কেটে অনেক ধরণের বাইক আছে। সব বাইকই ভালো আবার সব বাইকের সব কিছুই ভালো না। সব কিছুর মধ্য থেকে আপনাকে বাছাই করতে হবে আপনার জন্য কোনটা সঠিক হবে। শুধুমাত্র পরিচিত কেউ কিনেছে কিংবা দেখতে সুন্দর বলেই সেই বাইক কিনতে হবে এমন ডিসিশন নিলে পরে আপনাকেই পস্তাতে হবে। 

yamaha fzs fi v3

নিজের প্রয়োজন বুঝে বাইক সিলেক্ট করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমার যেই প্রয়োজন সেটার ৮০% ই FZ পূরণ করতে সক্ষম। আগেই বলেছি কোন কিছুই পারফেক্ট না। আর তাই হাইওয়েতে রেডি পিক আপ কিংবা রাতের বেলা হেড লাইটের আলোটা আরও ভালো হলে ভালো হত। 

তাই বলে হয়েওয়েতে আমি কয়দিন চালাই সেটাও মাথায় রাখতে হবে। FZ এর ইঞ্জিন মিড রেঞ্জে মারাত্মক পারফর্ম করে। ৭০-৯০ তে হাইয়েতে চালাতে কোনরকম প্রবলেমই হয় না। জাস্ট বাইকের ভাষা আপনাকে বুঝতে হবে। এছাড়া আমি টপ স্পিড পেয়েছি ১১৪ মাওয়া হাইওয়েতে। 

আর মাইলেজের কথা যদি বলি লাস্ট ট্যুরে আমি হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৪৫ এর মতন আর সিটিতে সেটা নেমে যায় ৩৫ এর কাছাকাছি যেহেতু আমাকে বেসিরভাগ সময় অফিস আওয়ারের জ্যামে চালাতে হয়। এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি রাস্তাতেও চালাতে আমাকে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি। 

এই বাইক নিয়ে যেহেতু ডিম পাহাড়ে উঠতে পেরেছি তাইলে যে কোন যায়গাতেই যাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। আশা করি আমার এই রিভিউ Yamaha FZS FI V3 সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে সবাইকে সাহায্য করবে। ধন্যবাদ । 

লিখেছেনঃ শামিম

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।