Yamaha FZS-Fi v2 মালিকানা রিভিউ - সোহেল রানা
This page was last updated on 08-Jul-2024 08:13am , By Saleh Bangla
আমি তখন ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। বই খাতায় খালি বাইকের ছবি আর্ট করতাম কলম দিয়ে। এটার জন্য মার খেতাম কিন্তু আর্ট করা ছাড়তাম না। আমাদের এক স্যার ইয়ামাহা ব্রান্ডের একটা বাইক নিয়ে আসতেন। অনেক ভাল লাগতো বাইকটা। দূর থেকে যখনই দেখতাম স্যার আসতেছে তখনই দৌড়ে যেয়ে স্যার কে সালাম দিতাম। স্যারের বাইকের সাইলেন্সার দিয়ে বের হওয়া ধোয়ার ঘ্রান দামি ব্রান্ডের পারফিউম কেও হার মানায়। আমি বাইক মানেই বুঝতাম ইয়ামাহা। ঐযে শুরু হইলো ইয়াহামার প্রতি টান তা আজ ও রয়ে গেছে এবং থাকবে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে জীবনে প্রথম নিজের কষ্টের টাকায় বাইক কেনার সামর্থ অর্জন করলাম। ইচ্ছে ছিলো Yamaha FZS কেনার কিন্তু টাকা ম্যানেজ করতে পারি নাই তাই Apache RTR নিয়েছিলাম। প্রায় ১২০০০ কিলোমিটার চালানোর পরে সেল করে দিলাম। সেল করার দুদিন পরেই কিনে ফেললাম আমার স্বপ্নের Yamaha FZS-Fi V2 । ঐ যে Yamaha FZS এর প্রতি একটা টান ছিল।
কিছু কথা : Yamaha FZS ২০১৬ গুলোতে চেইন প্রোবলেম ছিলো তাই অপেক্ষা করেছি কখন এই সমস্যার সমাধান হবে। যারা এই সমস্যাতে পড়েছেন এক এক করে সবাইকে ইয়ামাহা চেইন চেন্জ করে দিচ্ছে। বিষয়টা ভাল লেগেছে। আমি ২০১৭ অক্টোবরে কেনা তাই আমাকে উক্ত ঝামেলায় পড়তে হয়নি। এখন চেইন প্রবলেম নেই। আমার সাধারনত লং ট্যুর দেয়া হয় বেশি। অফিস টাইম বেশি হওয়াতে তেমন একটা চালানোর সুযোগ পাইনা। আর যেদিন সুযোগ পাই সেদিন সকালে স্ট্যার্ট করি আর রাতে অফ করি।
>> Click To Know The Latest Price Of Yamaha FZS-Fi V2 <<
লুকস : Yamaha FZS-Fi v2 টা দেখতে আমার কাছে টেইলর সুইফট এর মত সুন্দর লাগে। নাকি আমার চোখে সমস্যা? আরো একটা ব্যপার আছে সেটা হলো Yamaha FZS-Fi v2 এর চাকা। আই এম ইন লাভ উইথ Yamaha FZS-Fi v2 এর চাকা। সাইলেন্সার টা দেখতে সুন্দর এবং এর শব্দও সুন্দর।
কর্নারিং : মোটরসাইকেল হচ্ছে বিপদজনক এবং পাশাপাশি এডভেঞ্চারাস রাইড। মোটরসাইকেল রাইডিং অনেক মজার। তবে আপনি যদি আরো ভালো ভাবে বাইক রাইডিং এর আনন্দ নিতে চান, তাহলে কনারিং এর পুরো মজা নিতে হবে। বর্তমানে বাইকের পারফর্মেন্স অনেকটা এই কর্নারিং এর উপর নির্ভর করে থাকে আর তাই এই ক্ষেত্রে Yamaha FZS-Fi v2 এর চাকাগুলো বেস্ট অপশন।টায়ার সাইজ সামনে 100/80-17M/C আর পেছনে 140/60-R17M/C থাকার কারনে ভাল কর্নারিং হয় আর ভাল গ্রিপ পাওয়া যায়। সিটিং উইথ পিলিয়ন : লং ট্যুরের জন্য Yamaha FZS-Fi v2 বেস্ট বাইক আমার কাছে। সিটিং পজিশন টা এমন করে বানানো যে ঘন্টার পর ঘন্টা চালালেও হাত বা পিঠ ব্যাথা করে না। লংট্যুরের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূন বিষয়। পিলিয়ন পিছনে বসে ঘুমিয়ে যায়। হার্ড ব্রেক করলে তার ঘুম ভাঙ্গে।
০-২৮০০ কিলোমিটার যেমন সার্ভিস পেলাম : ময়মনসিংহ শোরুম থেকে কিনেছিলাম বাইকটা। শোরুম থেকে আমার বাসা ৬০ কিলো দূরে। কিনেই ৪০০০ Rpm এ ৬০ কিলো চালিয়ে আসলাম। AHO (অটোমেটিক হেড লাইট অন) থাকার কারনে সারা রাস্তার আমাকে “ভাই হেড লাইট জ্বলে” “ভাই হেড লাইট জ্বলে” শুনতে হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনে চলেছি। প্রথমে গিয়ার সিফটিং অনেক হার্ড ছিলো তাই চালিয়ে মজা পাচ্ছিলাম না। বেশ কিছুদিন রাইড করার পর আস্তে আস্তে গিয়ার সিফটিং ইজি হয়ে গেলো ।আমি একবার ইয়ামাহালুব আর তিনবার ক্যাস্ট্রল ইউজ করেছি ব্রেকিং পিরিয়ডে। প্রত্যেকবার মবিল ফিল্টার চেন্জ করেছি। ব্রেকিং পিরিয়ড আমার ভালুকা টু ময়মনসিংহ রোডে কেটেছে। ৯৫০ কিলোতে প্রথম সার্ভিসিং করিয়েছি ময়মনসিংহ সার্ভিস সেন্টার থেকে। ২০০০ কিলোমিটার শেষ হবার পরে যিক এম-9 (ফুল সেনথেটিক) ইউজ করতেছি। লংট্যুর : অল্পসময়ের ভিতরে বেশ ট্যুর দেয়া হয়ছে আমার। ময়মনসিংহ-যশোর-বেনাপোল-ফরিদপুর-যমুনা সেতু। আপনি Yamaha FZS-Fi v2 ইউজার কিন্তু লং ট্যুরে যান নাই তাহলে Yamaha FZS-Fi v2 এর আসল মজা পাবেন না। যদিও বড় ভাইয়েরা বলে ৫০০০ হলে Yamaha FZS-Fi v2 এর আসল মজা পাওয়া যাবে।
ব্রেকিং & কন্ট্রোলিং : প্রত্যেক বাইকারের এটা একটা মেজর বিষয়। আপনার বাইক যতই দামি হোক না ব্রেকিং আর কন্ট্রোলিং ভাল না হলে ব্যাপার কেমন জানি বেমানান। যত ভাল ব্রেকিং আর কন্ট্রোলিং তত চালিয়ে মজা। হাইওয়ে রাস্তায় এটার মর্ম হাড়ে হাড়ে বুঝা যায়। মাইলেজ : আমি বাইক কেনার দিন ফুল ট্যাংক অকটেন ভরেছি, ৬১২ কিলো চলার পর শেষ হয়ে গেছে। লিটারে ৫১ কিলোমিটার যাওয়ার পরে আর চেক করতে যায়নি। চেক করতে ভয় লাগে, যদি আগেরমত না পাই। আমি ভালুকা টু ময়মনসিংহ রোডে চালিয়েছি খুব বেশি আর রাস্তা কেমন তা সবারই জানা। Fuel injection ইন্জিনের জন্য আগের Yamaha FZS গুলো থেকে মাইলেজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
টপ স্পিড : আমি ১১৬ পযন্ত টপ স্পিড তুলেছি।তবে মন বলতেছে এর থেকে বেশি উঠবে। পিলিয়ন নিয়ে টপ স্পিড তোলা হয়নি। সাউন্ড : মাঝে মাঝে মনে হয় উড়োজাহাজ স্ট্যার্ট দিলাম। আবার মাঝে মাঝে স্যালোমেশিন। FI এর সাইন্ড নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন তবে একটা সময় পরে ঠিক হয়ে যায় শুনেছি। অপেক্ষায় থাকলাম। খারাপ দিক : সার্ভিসিং সেন্টারে ভাল মানের টেকনিশিয়ান নেই যেটা খুব কষ্ট দেয়।পিলিয়ন নিয়ে উঁচু স্পীড ব্রেকারে উঠালে নিচে ধাক্কা খায়। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অনেক কম। স্টক হেড লাইট গুলো আরও একটু ভাল করা যেত, যাতে স্টকের টা খুলার চিন্তা আমাদের না করতে হয়।
গুরু : সব কিছুরই একটা গুরু লাগে আর এই গুরু যদি আপনার মনের মত পেয়ে যান তাহলে কথাই নেই। বাইক কেনার পর থেকে আমি Sahed Ahsan Abir ভাইয়ের সাথে সব কিছু শেয়ার করতাম। ভাইটাকে আমি সময়ে অসময়ে খুব জ্বালাইছি আর ভবিষ্যতে আরো বেশি জ্বালানোর প্রিপারেশন নিতেছি। আবির ভাই আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর সহজ করে বুঝিয়ে দিছেন। সত্যি বলতে আমার বাইকের স্মুথ পারফর্মেন্সের জন্য আবির ভাইয়ের অবদান অনেক। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
শেষকথা : জীবনে প্রথম Click n Type দিয়ে এত কিছু লিখলাম আর বাইকের প্রতি ভালোবাসা থেকেই লেখা। একজন গ্রুপ মেম্বার হিসেবে এটাকে দায়িত্ব মনে করেছি।ভুল কিছু লিখে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হেলমেট না নিয়ে বাইক চালাতে যাবেন না। সবাই ভাল থাকবেন।
লিখেছেনঃ সোহেল রানা