ফিউরিয়াস ট্র্যাক ট্রেইল (FTT) – সিজন ০২ – কেমন ছিল বাংলাদেশের অন্যতম এক্সট্রিম অফরোড ইভেন্ট?
This page was last updated on 11-Jan-2025 05:27pm , By Badhan Roy
কুমিল্লা জেলার লালমাই লেকল্যান্ডে সদ্য শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশি বাইকারদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পিং ইভেন্ট “বাইকারস মেগা ক্যাম্পিং ফেস্ট সিজন ০৯”। ফিউরিয়াস মটোক্লাব কুমিল্লার এই জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ফিউরিয়াস ট্র্যাক ট্রেইল (FTT) অফরোড রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপ।
ফিউরিয়াস ট্র্যাক ট্রেইল (FTT) – সিজন ০২
“রাস্তায় নয়, ট্র্যাকে আসুন” স্লোগানের সাথে আন্তর্জাতিক মটোক্রস ইভেন্টগুলোর আদলে তৈরী করা ফিউরিয়াস ট্র্যাক ট্রেইল (FTT) এই ইভেন্টের ট্র্যাকটি ছিল যেমন এক্সাইটিং তেমনই রোমাঞ্চকর। রোড বাইক এবং ডার্ট বাইক – এই দুই সেগমেন্টে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। ২ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত এই ট্র্যাক ট্রেইলে প্রাথমিক বাছাইপর্ব শেষে ২৫ জনের মতো বাইকার ফাইনালের জন্য কোয়ালিফাই করেন।
প্রায় ৯২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ট্রেইল ট্র্যাকটি ফিউরিয়াস মটোক্লাব কুমিল্লা, বাইকবিডি, রোড রাইডার্জ (RRz) এবং বিশিষ্ট অফরোড এন্থুসিয়াস্টদের তত্ত্বাবধানে যথেষ্ট পর্যালোচনা ও বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমে বেশ কয়েকদিন সময় নিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ট্র্যাকটির বর্ণনা যদি বিস্তারিত আকারে দেই তবে এখানে ১১টি টাইট টার্ন এবং ১০টি বিশেষ বাধা বা Obstacle এর মুখোমুখি হতে হয়েছিলো রেসারদের।
প্রথমে ছোট দুইটি টার্নের পরে বেশ কিছুটা জায়গা সোজা আসার পরে ৩য় টার্ন ছিল, এরপর চতুর্থ টার্ন থেকে ঢাল শুরু হয় এবং ৫ম টার্নের পর বিশাল একটি গর্ত আসে যা বালি দ্বারা পূর্ণ করা ছিল। ৬ষ্ঠ টার্নে কিছুটা আপহিল ছিল যাতে বালি ছিল এবং এই অবস্ট্যাকল বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। এরপর ৭ম টার্নের আগ পর্যন্ত বাঁশ, গাছের গুড়ি এবং ছোট ড্রেন টাইপের গর্ত রাখা হয়েছিল।
ট্র্যাকটির ৭ম টার্নের পরপরই ছিল ট্রেঞ্চ, যেটা পার করা চোখের দেখায় বেশ সহজ মনে হলেও এই অবস্ট্যাকলটি পার করা ছিল সবচেয়ে জটিল। এটিতে ৬ নম্বর গ্রাউন্ড মার্শালদের অবস্থানের কারনে অনেকেই ৬ নম্বর পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অধিকাংশ বাইকার এইজায়গায় বাইক নিয়ে ক্র্যাশ করেছেন।
তবে বুদ্ধিমত্তার সাথে যারা জাম্প করে সতর্কতার সাথে ড্রিফট টার্ন নিয়েছেন তারা বেশ ভালভাবে এই অবস্ট্যাকল পার করতে পরেছেন। ৮ম ও ৯ম টার্নটি ছিল ঘাস এবং বাঁশের অবস্ট্যাকলের সাথে। ১০ টার্নটা ছিল বেশ এক্সাইটিং, এখানে বাইকারদের একটা নির্দিষ্ট আয়তনে জিগজ্যাগ করতে হয়েছিল এবং আপহিল, ডাউনহিল, গর্ত ও বাঁশের বাধার মধ্যে দিয়ে জিগজ্যাগ বেশ এক্সাইটিং ব্যাপার ছিল তা বলতেই হয়।
সর্বশেষ ১১ নাম্বার টার্ন টি তে জিগজ্যাগ শেষ করা মাত্রই বিশাল আপহিল ছিল, যেটা সাপোর্ট ছাড়া কমপ্লিট করা ছিল এই ট্র্যাকের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পার্ট। এই আপহিলের শেষ প্রান্তেই ছিল এই রোমাঞ্চকর ট্র্যাকের ফিনিশ লাইন। মোট কথায়, স্পিডের চেয়ে প্র্যাক্টিকাল থিংকিং এবং টেকনিক্যাল রাইডিং স্কিল এইধরণের ট্র্যাক কমপ্লিট করার জন্য জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ।
হেলমেটসহ প্রয়োজনীয় সেফটি গার্ড ব্যাবহার এই রেসে বাধ্যতামূলক ছিল। আর তাই ছোটখাটো সামান্য কিছু ঘটনা এই ট্র্যাকে ঘটলেও কোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা কিংবা ক্ষয়ক্ষতি এখানে হয়নি। রেস ক্রু হিসেবে ট্র্যাকে সার্বক্ষণিকভাবে রোড রাইডার্জ (RRz), বাইকবিডি ও ফিউরিয়াস মটোক্লাব কুমিল্লার প্রশিক্ষিত ও ডেডিকেটেড ভলেন্টিয়ার ও মার্শাল টিম সচেতনতার সাথে ডিরেকশন সাপোর্ট থেকে শুরু করে সকল ধরনের সাপোর্ট রেসারদের দিয়েছিলো।
ফিউরিয়াস ট্র্যাক ট্রেইল (FTT) – সিজন ০২ ফলাফল
মজার বিষয় হলো রোমাঞ্চকর ফিউরিয়াস ট্র্যাক ট্রেইল FTT তে রোডবাইক ও ডার্টবাইকের সাথে সাথে REVOO ব্র্যান্ডের ২টি মডেলের EV ও অংশগ্রহণ করে এবং বেশ ভালভাবেই ট্র্যাকটি কমপ্লিট করে। রোডবাইক ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হন খান হাসান, উনি ২ মিনিট ২২ সেকেন্ডে ট্র্যাক কমপ্লিট করেন। প্রথম রানারআপ হন বাবলু আহমেদ বাবু, তার টাইমিং ছিল ২ মিনিট ২৮ সেকেন্ড। ২ মিনিট ৩১ সেকেন্ড সময় নিয়ে ২য় রানারআপ হন শাহরিয়ার জাহান তূর্য্য।
ডার্ট ক্যাটাগরিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছিল মোট ৩টি ল্যাপের গড় টাইমিং হিসাব করে। ডার্ট সেগমেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন “জ্বীনের বাদশা” খ্যাত বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও জনপ্রিয় অফরোড রেসার আবু সাঈদ। তার টাইমিং ছিল ১৪৫.৬ সেকেন্ড। ১ম রানারআপ হন বাউন্ডুলে বুলবুল, ১৭১.৬ সেকেন্ড সময়ে তিনি ট্র্যাক টি কমপ্লিট করেন। ১৭৫.৬ সেকেন্ড টাউমিং এ ২য় রানারআপ হন জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফ উদ্দিন রাহাত, যিনি “দ্যা আউটসাইডার” নামে বেশি পরিচিত।
FTT – সিজন ০২ এর প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরষ্কার ছিল ৩০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরষ্কার ছিল ২০ হাজার টাকা ও তৃতীয় পুরষ্কার ছিল ১০ হাজার টাকার সাথে অ্যাপোলো টায়ারের সৌজন্যে একজোড়া টায়ার।
এবছর অনেক নতুন বাইকার ট্র্যাক ট্রেইলে অংশগ্রহণ করেন এবং সবাই এই রেস ট্র্যাক আয়োজনের জন্য আয়োজকদের সাধুবাদ জানান এবং সাধারণ বাইকারদের সড়কে রেস করার মানসিকতা পরিহার করে এরকম রেসিং ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করার জন্য আহবান করেন।
আমরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে এরকম আরো রোমাঞ্চকর ট্র্যাক রেসিং এর আয়োজন হবে এবং বাইকারদের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় হবে। হয়তোবা এর মধ্য থেকেই সেরা কিছু রাইডারকে আমরা আন্তর্জাতিক মটোক্রস ইভেন্টগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখব- সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়।