TVS Apache RTR 160 4V রিভিউ - টিম বাইকবিডি

This page was last updated on 28-Jul-2024 05:52am , By Saleh Bangla

২০১৮ সাল ছিলো বাংলাদেশে ৩টি প্রিমিয়াম মোটরসাইকেল এর লঞ্চিং এর বছর। প্রথমে লঞ্চ হয়েছিলো বাজাজ পালসার এনএস ১৬০, এরপরে এসেছিলো হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০আর। এবং, বছরের একদম শেষেরদিকে টিভিএস বাংলাদেশে লঞ্চ করে এই সেগমেন্ট এর সবচাইতে শক্তিশালি মোটরসাইকেল। স্বাগতম সবাইকে,  TVS Apache RTR 160 4V রিভিউ তে!

TVS Apache RTR 160 4V রিভিউ - টিম বাইকবিডি

tvs apache rtr 160 4v review

একদম প্রথম মুহুর্ত থেকেই আপনারা বুঝতে পারবেন যে টিভিএস এই বাইকটিতে অনেক বেশি সময় এবং এফোর্ট দিয়েছে। তারা শুধুমাত্র একটি নতুন বাইকই তৈরী করেনি, একইসাথে আরটিআর১৬০ বাইকটিকে বেটার করে তুলেছে। বাইকটির ডিজাইনটি ধার করে আনা হয়েছে এর বড়ভাই TVS Apache RTR 200 4V থেকে। তারা বাইকটির জন্য একটি সম্পূর্ন নতুন ইঞ্জিন তৈরী করেছে এবং বর্তমান মার্কেট এর কথা ভেবে বাইকটিতে একটি প্রশস্ত রিয়ার টায়ার দিয়েছে।

>>Click To See TVS Apache RTR 160 4V Review<<

TVS Apache RTR 160 4V রিভিউ - স্টাইল ও ডিজাইন

নতুন মোটরসাইকেলটিতে নতুন হ্যালোজেন হেডলাইট, এলইডি ডিআরএল, এলইডি টেইললাইট, ফুয়েল ট্যাংক এর পাশে সাইড এয়ার স্কুপ, ইঞ্জিনে কাওয়েল, ডাবল ব্যারেল এক্সহস্ট, স্প্লিট গ্র্যাব রেইল, রড হ্যান্ডেলবার, এবং আরো অনেক ফিচারস রয়েছে।

apache rtr 160 4v style

বাইকটির সুইচ গিয়ারস এবং রিয়ার ভিউ মিরর আগের আরটিআর ১৬০ থেকে ধার করে আনা হয়েছে, তবে বাইকটির বাকি সবটুকু সম্পূর্ন নতুনভাবে ডিজাইন করা। বাইকটিতে একটি নতুন সম্পূর্ন ডিজিটাল স্পীডোমিটার যুক্ত করা হয়েছে, যেটা টপ স্পীড রেকর্ডার, ০-৬০ কিমি পর্যন্ত সময়সহ আরো অনেককিছু দেখায়। যেই জিনিসটা আমার ভালো লাগেনি সেটা হচ্ছে বাইকটির নিন্মমানের ইঞ্জিন কিল সুইচ, যা বাইকটির বাকি সব সুইচের সাথে যায় না।

বাইকটির রাইডিং পজিশন আগের চাইতে বেশি কমফোর্টেবল, কারন বাইকটিতে রড হ্যান্ডেলবার ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও স্যাডল হাইটটা সামান্য উচি তবে এটা বাইকারদের জন্য কোন সমস্যা করবে না। পেছনের টায়ার গার্ডটা বর্ষাকালে কাদাপানির থেকে রাইডার এবং পিলিয়নকে বাচাবে। এছাড়াও, বাইকটির রিয়ার গ্র্যাব রেইল ব্যাটম্যান এর লোগোর মতো একটা ইমপ্রেশন দেয়।

tvs apache rtr 160 4v

কিছু মানুষ হয়তো ফুয়েল ট্যাংক এর ফিলার ক্যাপ এর অবস্থান নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারে, তবে এটা নিঃসন্দেহে একটা ডিফারেন্ট স্টাইলিং । ব্যক্তিগতভাবে আমি বাইকটির ডাবল ব্যারেল এক্সহস্টটা পছন্দ করিনি, এটা খুবই চিকন দেখায়। কোম্পানি চাইলে হয়তো আরোকিছু এড করে একে একটু মোটা আকারের করতে পারতো।

TVS Apache RTR 160 4V রিভিউ - ইঞ্জিন

এবার কথা বলা যাক ইঞ্জিনটি নিয়ে। এটা একটা সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪ ভালভ, অয়েল কুলড ১৬০ সিসি ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি ৮০০০ আরপিএম এ ১৬.৩ বিএইচপি শক্তি এবং ৬৫০০ আরপিএম এ ১৪.৮ নিউটন মিটার টর্ক উতপন্ন করে। ইঞ্জিনটির ফুয়েল সাপ্লাই হচ্ছে কার্বুরেটর, এবং আশা করা যাচ্ছে এই বছরেই বাইকটির এফআই ভার্শনটি বাংলাদেশে লঞ্চ হবে।

tvs apache rtr 160 4v engine

অয়েল কুলিং সিস্টেমটি গরম ইঞ্জিনকে সাধারন এয়ার কুলড ইঞ্জিনের চাইতে অধিক দ্রুত ঠান্ডা করে। অয়েল কুলড ইঞ্জিনে ইঞ্জিন অয়েলটি একটি রেডিয়েটর এর মাধ্যমে সার্কুলেট হয়ে পুনরায় ইঞ্জিনে প্রবেশ করে, ফলে ইঞ্জিনটি দ্রুত ঠান্ডা হয়।

TVS Apache RTR 160 4V রিভিউ - সাসপেনশন ও টায়ার

নতুন TVS Apache RTR 160 4V তে সামনে ব্যবহার করা হয়েছে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন, যেটাতে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে অয়েল সীল কভার ব্যবহার করা হয়েছে। এই জিনিসটা খুবই উপকারি, কারন, আমাদের দেশে রাস্তায় প্রচুর ছোট ছোট পাথর বা ইটের টুকরো রয়েছে যা অয়েল সীলকে ড্যামেজ করে, ফলে এক্ষেত্রে অয়েল সীল সুরক্ষিত থাকবে। বাইকটির পেছনে ৭ স্টেপের এডজাস্টেবল Showa ব্র্যান্ড এর মনোশক সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে।

rtr 160 4v front suspension

বাইকটির সামনে ২৭০ ইলিমিটার এর ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে ২০০ মিলিমিটার এর ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। উভয় ব্রেকের ডিস্কই পেটাল ডিস্ক।

টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি তে পেছনে দেয়া হয়েছে ১৩০ সেকশন এর রিয়ার টায়ার। বাইকটির উভয় টায়ারই টিউবলেস, এবং চাকাগুলি ১৭ ইঞ্চি সাইজের। বাইকটিতে রয়েছে ডাবল ক্রেডল স্প্লিট সিনক্রো ফ্রেম।

TVS Apache RTR 160 4V রিভিউ - রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স

বাইকটির ইঞ্জিনটি খুবই প্রানবন্ত! ইঞ্জিনটি থেকে ভালো পরিমানের লো এবং মিড রেঞ্জ টর্ক পাওয়া যায়, ফলে বাইকটির রেডি পিকাপ বেশ ভালো। ইঞ্জিনটি রিফাইনড এবং এটা খুবই স্মুথলি ৭০০০ আরপিএম পর্যন্ত উঠে যায়। ৭০০০ আরপিএম এর পরে ফুটপেগ, হ্যান্ডেলবার এবং ফুয়েল ট্যাংকে কিছুটা ভাইব্রেশন টের পাওয়া যায়, তবে এটা এর প্রতিযোগীদের মতোই মানিয়ে নেয়ার মতো।

tvs apache rtr 160 4v rear tire

বাইকটির ৫-স্পীড গিয়ারবক্স খুবই স্মুথ। শুরুর দিকে হয়তো বাইকটি গিয়ার থেকে নিউট্রালে নিতে গিয়ে সমস্যা হতে পারে, তবে প্রথম সার্ভিসিং এর পরে এই সমস্যাটা চলে যায়। বাইকের এক্সহস্ট এর শব্দটা খুব একটা মিষ্টি না, তবে মোটামুটি।

বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস সেগমেন্টের সেরা নয়, বিশেষত সিটি রাইডিং এর সময় এটা এর প্রতিযোগীদের থেকে কিছুটা বড় টার্নিং রেডিয়াস বিশিষ্ট। এটাতে একটা রড হ্যান্ডেলবার আছে, কিন্তু এতে এক্সটেন্ডেড সাইড এয়ার স্কুপ থাকার ফলে টার্নিং রেডিয়াসটা বেড়ে গিয়েছে।

বাইকটির সামনের এবং পেছনের সাসপেনশন এর ভালো ফিডব্যাক আমাকে সন্তুষ্ট করেছে। এমনকি পেছনে ভারী পিলিয়ন নিয়ে রাইড করলেও বাইকটি খুবই কমফোর্টেবলি রাইড করা যায়। পেছনের ১৩০ সেকশন টায়ারটি বাইকটিকে ভালো কর্নারিং করার সক্ষমতা দেয়।

tvs apache rtr 160 4v riding

বাইকটির টুইন ডিস্ক ব্রেক বেশ ভালোই কাজ করে তবে আমি এর মাঝে একটা আচমকা ধাক্কা মিস করেছি। আমার মতে, ব্রেকগুলো ভালো, তবে সেগমেন্টের সেরা নয়। সবমিলিয়ে আমি বাইকটির হ্যান্ডলিং এবং কর্নারিং স্ট্যাবিলিটি নিয়ে খুশি, তবে আমার মনে হয় এটা আরো ভালো হতো যদি তারা কোনভাবে বাইকটিকে ৫ কিলোগ্রাম হালকা করতে পারতো।

ওজন এর কথায় বলা যায়, হালকা এবং খাটো রাইডারদের জন্য এই ১৪৭ কিলোগ্রাম ওজনের বাইকটি নড়াচড়া করা হয়তো কিছুটা সমস্যার হবে। তবে একটা জিনিস মানতেই হবে, যদিও এটা সেগমেন্ট এর সবচাইতে ভারী বাইক, তবে তারা ওয়েইট ডিস্ট্রিবিউশনে বেশ ভালো কাজ করেছে।

tvs apache rtr 160 4v test ride

আমাদের ২৫০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইডে আমরা দেখেছি যে বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি সর্বোচ্চ মানের। এটা এমন একটী জায়গা যেখানে টিভিএস অনেক বেশি কাজ করেছে। শীতের সকালে বাইকটি স্টার্ট দেয়া কঠিক হয়ে যাবে যদি আপনি চোক সুইচ ব্যবহার না করেন।

যেহেতু এটি RTR ব্যাজ সমৃদ্ধ একটী বাইক, আমরা টপ স্পিড পেয়েছি ১৩২ কিমি/ঘন্টা। শহরে রাইডিং এর ক্ষেত্রে মাইলেজ ফিগার ছিলো ৩৫-৩৮ কিমি/লিটার, এবং হাইওয়েতে ছিলো ৪২ কিমি/লিটার।

tvs apache rtr 160 4v speedometer

TVS Apache RTR 160 4V First Impression


TVS Apache RTR 160 4V রিভিউ

ভালো দিকসমূহঃ

  • সেগমেন্ট এর সবচাইতে শক্তিশালি বাইক
  • রিফাইনড ইঞ্জিন
  • ভালো লো এবং মিড রেঞ্জ টর্ক
  • ভালো বিল্ড কোয়ালিটি
  • ভালো সাসপেনশন ফিডব্যাক
  • ভালো কর্নারিং এবং হ্যান্ডলিং এবিলিটি

খারাপ দিকসমূহঃ

  • ইঞ্জিন কিল সুইচটা বেশ সস্তামানের
  • বাইকটির ব্রেকিং সেগমেন্ট এর সেরা না
  • বাইকে ৬ নম্বর গিয়ারের প্রয়োজন ছিলো
  • রড হ্যান্ডেল থাকার কারনে বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস একটু বেশি
  • ডাবল ব্যারেল এর এক্সহস্ট খুব বেশি ভালো দেখায় না (যদিও এটা বাইকার এর উপর নির্ভর করে)

tvs apache rtr 160 4v handlebar

যদি আপনি আগের বাইকটি রাইড করে থাকেন এবং এই বাইকটি চালান, তবে খুব সহজেই অনুভব করতে পারবেন যে TVS ঠিক কতটা সময় এবং এফোর্ট দিয়েছে এই বাইকটিকে যতোটা সম্ভব পারফেক্ট করে তোলার। হ্যা, কোনকিছুই কখনো ১০০% পারফেক্ট হয় না, কিন্তু ২,০৪,৯০০ টাকা প্রাইজ ট্যাগ নিয়ে এই বাইকটি বাংলাদেশের প্রিমিয়াম সেগমেন্টে অসাধারন একটী বাইক!