Triumph Daytona 660 – ইনলাইন থ্রি সিলিন্ডারের চমক

This page was last updated on 05-Sep-2024 09:32am , By Badhan Roy

যুক্তরাজ্যভিত্তিক Triumph ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে এবং উন্নত বিশ্বে খুবই জনপ্রিয় তাদের শক্তিশালী ইঞ্জিন, বিল্ড কোয়ালিটি এবং রিলায়বিলিটির জন্য। Triumph Motorcycles LTD ভিন্ন ভিন্ন সিরিজ ও ক্যাটাগরি অনুযায়ী রাইডার ধরণ অনুযায়ী বাইক বানিয়ে থাকে। তাদের Daytona সিরিজের বাইক গুলো স্পোর্টস বাইক যা তরুণ প্রজন্ম ও এক্সট্রিম এড্রেলিন রাশ লাভারদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরী করা। 

যদিও দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের সিসি লিমিটের ভিতরে শতবর্ষী এই ব্র্যান্ড টির কোন বাইক নেই, তারপরেও সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে এবং গত সপ্তাহে ভারতের বাজারে লঞ্চ হওয়া Daytona 660 মডেলটি নিয়ে ইতিমধ্যেই সারাবিশ্বের বাইক এন্থুজিয়াস্ট দের মধ্যে বেশ হইচই যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। এই লেখায় আমরা Triumph Daytona 660 বাইকটি সম্পর্কে সামগ্রীক ধারণা, মূল্য এবং এর বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। 

 

Triumph Daytona 660 – ডিজাইন 

অত্যান্ত এগ্রেসিভ লুকের Triumph Daytona 660  এই বাইকটি আকর্ষণ টেনে নিবে নিমেষেই। বাইকটির সামনের বিশাল ডুয়াল হেডল্যাম্প নামীদামী সেডান কারের মত শুধু দেখতেই নয়, প্র্যাক্টিকাল ও বটে। বাইকটির সাইড ও ব্যাক লুক অত্যান্ত এগ্রেসিভ ও স্পোর্টি। স্পোর্টি এরোডায়নামিক শেপ বাইকটিতে বেশ প্রিমিয়াম একটি ফিল দেয়। 

বাইকটির বডিকিট যথেষ্ট ডিউরেবল ও দেখতে বেশ বড়সড় বা বাল্কি ফিল দেওয়ার পাশাপাশি খুবই চমৎকার ভাবে সেন্ট্রাল এয়ার ইন্টেক এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যা এক দিকে এরোডায়নামিক এবং অপরদিকে কুলিং সিস্টেমকেও কিছুটা সাহায্য করে। 

সিটিং পজিশন গতানুগতিক স্পোর্টস বাইকের মতই, সাথে চওড়া লুকিং গ্লাস বাইকের সৌন্দর্য্য যেমন বাড়ায় তেমন রিয়ার ভিউ ভিজিবিলিটি ও অনেক চমৎকার। আন্ডারবেলি এক্সহস্ট এর প্লেসমেন্ট ও ডিটেইলিং অনেক চমৎকার ভাবে করা হয়েছে। Jet Black, Snowdania White ও Carnival নামের আকর্ষণীয় সিম্পল কালার গ্রাফিক্স যে খুবই উন্নতমানের তা আলোর প্রতিফলনেই নজর কাড়ে। 

Triumph Daytona 660 – ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশন

Daytona 660 বাইকটিতে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাল্টিপয়েন্ট সিকুয়েন্টাল ইলেক্ট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেক্টেড (EFI) লিকুইড কুলড ইনলাইন ৩ সিলিন্ডার, DOHC ৬৫৯ সিসির ১২ ভাল্ভ ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিন যা ১১২৫০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ৯৫ হর্সপাওয়ার শক্তি ও ৮২৫০ আরপিএম এ ৬৯ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। 

কাগজে কলমেই যদি এত পাওয়ার থাকে, একজন রাইডার তবে কি পরিমাণ পাওয়ার বাইকটি থেকে ফিল করবেন তা কল্পনা করতেই অবাক লাগে। ওয়েট মাল্টিপ্লেট স্লিপ এন্ড এসিস্ট ক্লাচ এবং ৬ স্পিড গিয়ারবক্স এর সাথে কুইক শিফটার স্মুথ এবং প্রতি গিয়ারেই ইনিশিয়াল রেসপন্স দিতে সক্ষম। বাইকটির ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড 10w40, ক্যাপাসিটি ২.৬০ লিটার, কুলার ক্যাপাসিটি ২.২০ লিটার। বাইকটির সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ২১০-২২০ কিমি প্রতি ঘন্টায়। 

Triumph Daytona 660 – ফিচারস 

Daytona 660 এর কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচারস হলো:

সিট হাইট, ওজন ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স- ৮১০ মি.মি এর সিট হাইটের সাথে ১৪০ মি.মি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রয়েছে বাইকটিতে। ২০১ কেজি ওজনের কার্ব ওয়েট থাকায় বাইকটি বেশ ভারি, কিন্তু হায়ার সিসির বাইকের ব্যালান্সিং এর জন্য এর এই ওজন যথাযথ। 

ইগনিশন সিস্টেম- সেলফ ইলেক্ট্রিক ইগনিশন।

ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার: সম্পূর্ণ ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারটি আকারে ছোট হলেও বেশ ইনফরমেটিভ। বিভিন্ন সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি এটা আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শন করে যেমন তাপমাত্রা, ম্যাপ নেভিগেশন, একাধিক ট্রিপ মিটার, স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, গিয়ার, সার্ভিস ইন্ডিকেটর, এবিএস ইন্ডিকেটর, সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর, টায়ার প্রেশার মনিটরিং, ল্যাপ রেকর্ডার, টিসিএস স্ট্যাটাস, রাইডিং মোড, লঞ্চ এন্ড এন্টি হুইলি কন্ট্রোল, ঘড়ি ইত্যাদি। ক্লাস্টার টি ট্রায়াম্ফ কানেক্টিভিটি অ্যাপ দ্বারা সহজেই বিভিন্ন তথ্য বাইকার তার নিজের স্মার্টফোনে দেখতে যেমন পারবেন তেমনই ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারে সিংক করতে পারবেন।

৩ টি রাইডিং মোড: রাইডার তার পছন্দমত রেইন, স্পোর্ট, এবং রোড মোডে বাইকটি সেট করে তার নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী পাওয়ার আউটপুট নিতে পারবেন, যা সাধারণত আধুনিক গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়। মোড গুলোর কারনে নির্দিষ্ট আরপিএম এ যথাযথ টর্ক আউটপুট এবং সর্বোচ্চ স্পিড অটোমেটিক লক হয়ে যায়, যা বিভিন্ন রোড কন্ডিশনে যথেষ্ট হেল্পফুল এবং দরকারি। নিঃসন্দেহে এটি একটি অত্যাধুনিক ফিচার বটে।

ট্র্যাকশন কন্ট্রোল ও কুইক শিফটার- প্রতিকূল রাস্তার জন্য ট্র্যাকশন কন্ট্রোল এবং বেটার ইনিশিয়াল রেস্পন্স এর জন্য কুইক শিফটার দেওয়া হয়েছে বাইকটিতে। 

টায়ার প্রেশার মনিটরিং সিস্টেম- বাইকের সঠিক টায়ার প্রেশার নিশ্চিত হয়েছে কিনা এবং বর্তমান টায়ার প্রেশার কত আছে তা নির্ণয়ে ফিচারটি যথেষ্ট কার্যকরি। 

আন্ডারবেলি এক্সহস্ট- বাইকটির এক্সহস্ট সিস্টেম আন্ডারবেলি হওয়ার কারনে বেটার বেজ এর সাউন্ডের পাশাপাশি বাড়তি ওজন হ্রাস করা হয়েছে।

টিউবলেস টায়ার: বাইকটির টায়ার সাইজ- সামনের টায়ার 120/70-17, পিছনের টায়ার: 180/70-17. টিউবলেস radial sports টায়ার বাইকটির সাথে আসে যা সহজে পাংচার বা লিক হওয়ার ঝুঁকি কম। 

ব্রেক: Daytona 660 বাইকটিতে ৪ পিস্টন ক্যালিপারের ৩১০ মি.মি এর টুইন ফ্রন্ট ও ২২০ মি.মি এর সিঙ্গেল রিয়ার ডিস্ক ব্রেক ব্যাবহার করা হয়েছে। বাইকটির ব্রেক ডুয়াল চ্যানেল এবিএস ভার্শনের। এত পাওয়ারফুল বাইকের ব্রেকিং ও পাওয়ারফুল সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা।  

সাসপেনশন সিস্টেম: বাইকটির সামনে বিশ্বসেরা শোয়া ব্র্যান্ডের আপসাউড ডাউন (USD) ফর্ক ও পিছনে মাল্টি এডজাস্টেবল মনোশক অ্যাবজর্বার ব্যাবহার করা হয়েছে যা একটি স্মুথ রাইডিং নিশ্চিত করবে বলে ধারণা করা যায়।

মাইলেজঃ ১৪ লিটারের ফুয়েল ক্যাপাসিটির সাথে প্রতি লিটার জ্বালানী তেলে বাইকটি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটারের মাইলেজ দিতে সক্ষম। হায়ার সিসি বিবেচনায় সেগমেন্টের অন্যান্য বাইক থেকে এটি কিছুটা ভাল মাইলেজ দেয় বলাই যায়। তবে জ্বালানীর মান ও রাইডিং স্টাইলের উপরে মাইলেজ কম বেশি হতে পারে। 

 

Triumph Daytona 660 – ভাল-মন্দ 

প্রত্যেকটি বাইকেরই ভাল এবং মন্দ দিক আছে। সেই বিবেচনায় Daytona 660 এর ভাল দিকের মধ্যে রয়েছে এর ইনিশিয়াল রেস্পন্স, কুইক থ্রটল, টর্ক, টপ স্পিড, ব্রেকিং, এবিএস, তুলনামূলক কম মেইনটেইনেন্স এর ঝামেলা ও আন্তর্জাতিক বাজারে স্পেয়ার পার্টস এর এভেইলিবিলিটি। 

বাইকটির মন্দ দিক বিবেচনা করলে নজরে আসে এই বাইকটির অন্যতম অসুবিধা হচ্ছে এর মেইনটেইনেন্স। বাইকটি অত্যান্ত সাবধানে এবং যত্নের সহিত চালানো উচিৎ কারন কোন সমস্যা হলে তা সাধারণ মেকানিক দ্বারা সমাধান করা মোটেও সহজ কাজ নয়। সার্ভিসিং ও স্পেয়ার পার্টস অফিসিয়ালি এভেইলেবল হলেও যথেষ্ট ব্যয়বহুল ও জটিল বটে। 

পাশাপাশি Triumph ব্র্যান্ডের সকল বাইক যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং এগুলো সাধারণ বাইকারদের সামর্থ্যের বাইরে। সবচেয়ে জরুরী বিষয়, হায়ার সিসি বিষয়ে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক জ্ঞান সম্পন্ন রাইডার ব্যাতিত বাইকটি রাইড ও মেইন্টেইনেন্স করাতে গেলে একদিকে যেমন ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটতে পারে অপর দিকে বাইকটি মেইনটেইনেন্স ম্যালফাংশনের শিকার হতে পারে।

এই ছিল এক নজরে Daytona 660 এর বিস্তারিত। শুরুতেই যেমনটা বলা হয়েছে, বাইকটির টার্গেট বায়ার তরুণ প্রজন্মের এক্সট্রিম এড্রেনাল রাশ যারা ফিল করতে চান কেবল তারাই। ভারতের বাজারে বাইকটি ৯ লাখ ৭২ হাজার রুপি তে লঞ্চ হয়েছে, মানে বোঝাই যাচ্ছে এটি সাধারণ বাইকারদের জন্য নয়। 

Daytona সিরিজের অসাধারণ সাফল্যের উত্তরসূরি হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে এন্থুজিয়াস্ট ও প্রফেশনাল রাইডারদের মধ্যে অন্যতম সেরা জনপ্রিয়তা অর্জন করে Triumph Daytona 660 মার্কেটে অন্যান্য জাপানি ও জার্মান ব্র্যান্ড গুলোর সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দিতা তৈরি করবে আশা করা যায়। পাশাপাশি আমরা আশাবাদী, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সিসি লিমিট আরো শিথিল করলে বাংলাদেশ বাইকাররাও হয়তো এই বাইকগুলোর এক্সপিরিয়েন্স নিতে পারবেন। 

দেশি ও বিদেশি বাইক বিষয়ক সব রকম তথ্য সবার আগে পেতে বাইকবিডির সাথেই থাকুন।