Suzuki Gixxer 155 ৭,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - কাওসার রহমান খান
This page was last updated on 13-Jul-2024 02:33pm , By Ashik Mahmud Bangla
আমি কাওসার রহমান খান। টাংগাইল সদরের ফতেপুর গ্রামে থাকি। আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ার এ অধ্যয়নরত আছি। আমার বয়স ২২ বছর। আজ আমি শেয়ার করবো আমার জীবনের ১ম বাইক Suzuki Gixxer 155 এর সাথে ১ বছরে ৭০০০ কিলোমিটার পথ চলার গল্প ।
Suzuki Gixxer 155 ৭,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - কাওসার রহমান খান
আমার আসলে ছোট বেলায় বাইকের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ ছিলো না। কারন আমার বাবা একজন কৃষক। তাই সাইকেল কেনাই ছিলো আমার জন্য অনেক বড় স্বপ্ন। তাই স্বপ্নেও ভাবিনি আমি কোন দিন বাইক কিনতে পারবো। যখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি ২০১৩ সাল । তখন আমার মামা প্রথম বাইক ক্রয় করে Honda CD 80cc। আমি তখন মামার সাথে সাথে থাকছি আর ভাবছি কখন বাইকে একটু চড়তে পারবো। কিন্তু ৪/৫ মাস ব্যবহার করার পর হটাৎ বাইকটি বিক্রি করে মামা চলে গেলে দেশের বাহিরে। ঠিক বলতে পারেন তখন থেকেই অন্য রকমের ভালবাসা কাজ করতো বাইকের প্রতি। আমি SSC পাশ করেই একটা কোচিং এ পড়ানোর জন্য যোগদান করি। তখন বেতন খুবই কম পেতাম। এভাবে ইন্টার পাশ করলাম। আস্তে আস্তে ভালোই টাকা উপার্জন করতে লাগলাম টিউশনি করে। আর তখন থেকেই বাইকের জন্য পাগল হতে লাগলাম।
Click To See Suzuki Gixxer 155cc Review
বাইক এমন একটা শক্তি যা মানুষকে অনেক মানুষের সাথে নতুন বন্ধুত্বের সৃষ্টি করতে সাহায্য করে আবার যেখানে ইচ্ছে সেখানে ঘুরতে চলে যাওয়া যায়। কিছু টাকা হওয়াতে বাড়িতে বললাম বাইক কিনবো কিন্তু একটা ছেলে হওয়াতে এক্সিডেন্টের ভয়ে কিনে দিতে রাজি হয়নি। আমি বাবা মায়ের কাছে শুধু বলতাম আমি টিউশনি করাবো আর ভার্সিটিতে যাবো এর জন্য বাইক কিনবো।
সালটা ছিলো ২০১৭,তখন আমি টিউশনি করে মাসে তাও ২০ হাজার ইনকাম করতাম। এভাবে তখন থেকে নিজের টাকা দিয়ে বাইক কেনার জন্য টাকা জমাতে থাকি। প্রথম প্রথম পছন্দ করি TVS Apache RTR বাইকটি। যখন Apache RTR বাইকটি আমার সামনে দিয়ে যেতো, আমি শুধু চেয়ে থাকতাম। ইস! আমার যদি এমন একটা বাইক থাকতো। একদিন ফেসবুকে বাইকবিডি গ্রুপটি দেখে জয়েন হলাম। তখন দেখি RTR এর চাইতেও আরও ভালো বাইক আছে। তারপর গ্রুপে পোষ্ট করি কয়েকবার কোন বাইকটা নিলে ভালো হবে। সবাই বললো Yamaha FZS আর Suzuki Gixxer এর কথা।
সালটা ছিলো ২০১৮, টিউশনি করে এতো টাকা হলো না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম Apache RTR কিনবো। টাকা আমার বাড়িতে রেডি করেছি। ঠিক এমন সময় একটা বড় ধরনের বিপদে পড়ে গেলাম, যেখানে আমার বাইকের গোছানো দেড় লাখ টাকা শেষ হয়ে গেল ২ দিনের ভেতরে। আমার বাইক কেনা যেন স্বপ্নই রয়ে গেল, হলো না আর বাইক কেনা। অনেক স্বপ্ন ছিলো, বন্ধুদের সারাদিন বলে বেড়াতাম আর কয়দিন পর আমি বাইক কিনবো। বাড়িতে সবাইকে বলতাম আমার বাইকটা অনেক যত্ন করবো। কিন্তু ভাগ্য আমাকে বাইক থেকে দূরে নিয়ে গেল।
তারপরও ভেংগে না গিয়ে আবার টাকা জমানো শুরু করি। টিউশনির পরিমানটা বাড়িয়ে দেই। আর টিউশনে করে ১ বছরে ১লাখ ৭০ হাজার টাকা আবার জমিয়ে ফেলি। তারপর বাড়িতে একটা ষাড় গরু ছিলো যেটা কুরবানির ইদের ৪ দিন আগে বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা পাই। সালটা ছিলো ২০১৯, তারপর কুরবানির ইদের ২ দিন আগে আমি বাইকটা আমার করে পাই।
আমি আসলে বাইকটা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই BikeBD গ্রুপের মাধ্যমে। সবার কমেন্টে Suzuki Gixxer 155 বাইকটি অনেক বার দেখার পর ভাবলাম এটাই নিবো। তার পর আশেপাশে কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে ভালোই মনে হলো। বাইক কেনা হয়েছিলো টাংগাইল থেকে যেহেতু আমার গ্রামের বাড়ি টাংগাইল। ২লাখ ১৫ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। আর পেপার্স ১০ বছরের করেছি টাংগাইল এর নাম্বার। শোরুম থেকে বাইক কিনে বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু আমি তো বাইক চালাতে পারি না, তাই মামা চালিয়ে নিয়ে এসেছিলো। আসার পথে নতুন বাইক পিছনে বসে থাকার অনুভূতিটা ছিল অসাধারন। অনেক আনন্দ ছিল মনে। আসার পথে ব্রেকিং এর কথা চিন্তা করে আরপিএম লিমিটের মধ্যে রেখে চলে আসা হয় গন্তব্যে।
১০ মিনিটে আমি মামার কাছ থেকে খোলা মাঠে গিয়ে বাইক চালানো শিখে যাই। ইচ্ছে ছিলো নিজে কেনার পর বাইক চালানো শিখবো আল্লহুর রহমতে সফল হয়েছি। আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে চাই।
আমি সুজুকির দেওয়া ইন্জিল ওয়েল ব্যবহার করি। প্রথমে ৫০০ কিলোমিটার এ ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করি তারপর থেকে ৯০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করি আর প্রতি ২ টা ইঞ্জিন ওয়েল এরপর অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি। আমি প্রতিবার ৮৫০ মিলিলিটার করে ইঞ্জিন ওয়েল দেই এবং ওয়েল ফিলটার চেঞ্জ করলে ৯০০ মিলিলিটার করে দেই
বাইকটির যা যা পরিবর্তন করেছি - প্রথমে কিনেই ১ সপ্তাহ পড়েই পরিবর্তন করি হর্ণ। কারন বাইকের সাথে থাকা হর্ণের সাউন্ড কোয়ালিটি একদম কম। তারপর ইন্জিন ওয়েল ফিল্টার ২ বার ড্রেন দেওয়ার পর পরিবর্তন করি। তারপর এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করছি।
মডিফাই - আমার হলো Suzuki Gixxer 155 ডাবল ডিস্ক বাইক। মডেল ২০১৮ সালের,নীল কালার। আরও এক্সট্রা ভালো দেখার জন্য সামনে নিচে ইন্জিন কিট লাগিয়েছি। ব্রেক ধরলে পেছনে লাইট জ্বলে। সামনে হেডলাইটে ডিজাইন করছি।
Suzuki Gixxer 155 বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- লুকস সব বাইকের থেকে আলাদা
- পেছনের দিকটা খুব ভালো লাগে । বিশেষ করে সাইলেন্সর পাইপ আমায় বেশি আকৃষ্ট করেছে।
- বাইকের অসাধারণ কন্ট্রোলিং। আমি বাইকের ব্যালেন্স আর কন্ট্রোলিং এ পুরোপুরিভাবে সন্তষ্ট।
- মাইলেজ নিয়ে আমি খুশি, সিটিতে ৩৮+ কিলোমিটার প্রতি লিটার পেয়েছি,আর হাইওয়ে তে ৪১+ কিলোমিটার প্রতি লিটার।
- বাইকটির সাসপেনশন অনেক ভালো লেগেছে। ভাংগা রাস্তায় কোন ঝাঁকি লাগে না।
- বাইকের পেছনের চাকা ভালো লেগেছে যথেষ্ট মোটা। যার জন্য কর্নারিং কোন সমস্যা ফিল করি না।
- রেডি পিক আপ যথেষ্ট ভালো।খুব তাড়াতাড়ি দ্রুত গতি তোলা যায়।মনে হয়েছে ১৫৫ সিসি বাইকের মধ্যে জিক্সার সেরা।
- টপ স্পিড যথেষ্ট ভালো তবে আমি ১১৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত পেয়েছি । এরপর আর চেষ্টা করিনি। হয়তো ভালো বাইকার হলে আরও উঠাতে পারতো।
- ডিজিটাল মিটারটা দারুণ, ঘড়ি, গিয়ার, স্পিড এন্ডিকেটর, আরপিএম সব আছে।
- আলহামদুলিল্লাহ্,সব দিক দিয়েই অনেক ভালো একটা বাইক।
Suzuki Gixxer 155 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- সামনের লুকটা আমার কাছে তেমন ভালো লাগে না
- পিলিয়ন সিট কম্ফোর্ট না
- বিশেষ করে স্টক হর্ণ টা ভালো না
- গিয়ার শিফটিং এখনো শক্ত মনে হয়,আর গিয়ার দিলে অনেক শব্দ হয় যা বিরক্তকর লাগে
- শো-রুমে বাইকের পার্টস এর দাম অনেক বেশি রাখে
আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে ৫০০০ হাজার কিঃলো চালানোর পর হঠাৎ করে ফর্ক ওয়েল সিল কেটে যায় যেটা এতো তাড়াতাড়ি যাবে আশা করি নাই। কোম্পানির সব ফ্রি সার্ভিস সময়মতো করি। এখনো বাইরে থেকে কোন কাজ করাইনি। এখন পর্যন্ত ইঞ্জিন খুলিনি।
বাইকটি নিয়ে লং ট্যুর -Suzuki Gixxer 155 নিয়ে আমার বেশি দূর যাওয়া হয় নি। তবে বাড়ি থেকে যমুনা সেতু টানা ১০০ কিলোমিটার রাইড করেছি কোন সমস্যা ফিল করি নাই। যমুনা সেতু অনেক স্মৃতি রয়ে গেছে। আর বন্ধু দের সাথে বের হলেই কোথায় থেকে কোথায় চলে যাই ঠিক থাকেনা। কোন সময় সমস্যায় পড়তে হয় নি,ভালো পার্ফরমেন্স পেয়েছি। বর্তমানে বাইকের বয়স প্রায় ১ বছরের উপরে,আল্লাহর রহমতে এখনো বড়ো কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। বাইকটা নিয়ে আমার চূড়ান্ত মতবাদ হলো ,আপনার বাজেট যদি ২ লক্ষ টাকা হয়,তাহলে কোন চিন্তা ছাড়াই নিয়ে নিন। এক কথায় বলতে গেলে বাইকটা সব দিক দিয়েই জোস। সব সময় হেলমেট পরে রাইড করবেন,হোক না কিছু দূরুত্ব। দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে যেতে পারি, যদি দেই গুরত্ব। সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
লিখেছেনঃ কাওসার রহমান খান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।