Suzuki Gixxer নিয়ে আমার ২৮,৫০০+ কিমি পথচলার অভিজ্ঞতা- রিমান
This page was last updated on 10-Oct-2023 07:12pm , By Shuvo Bangla
আমি শামসুজ্জামান রিমান। জিক্সার ক্লাব বাংলাদেশ এর একজন মেম্বার। আজকে আমি আমার Suzuki Gixxer নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করতে চাই সবার সাথে । কিছুদিন আগে আমার জিক্সারের ২৮,৫০০ কিলোমিটার চালানো সম্পন্ন হয়েছে । তাই একটা রিভিও না দিলেই নয়। আমি গত বছর এপ্রিলের ১৯ তারিখে, ওয়ান মটরস থেকে বাইকটি কিনি।
Suzuki Gixxer নিয়ে আমার ২৮,৫০০+ কিমি পথচলার অভিজ্ঞতা
কেনার পর থেকেই মোটামুটি ভাবে ক্লাবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছি।ফলে বিভিন্ন সময়ে জিক্সার ক্লাবের বিভিন্ন ট্যুর সহ অন্য নানারকম ইভেন্টে পাশে ছিলাম।আমার বাইকটি প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেলেছে।এখন আসি আসল কথায়...আমি সম্পুর্ন ব্যাক্তিগত মতামত থেকে এই রিভিউটি দিলাম।অনেকের সাথেই তা অসামঞ্জস্যপুর্ন হতে পারে । ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর নজরে দেখবেন।
প্রথমে বাইকটির কিছু ভালো দিক তুলে ধরা যাক...
অডোমিটারঃ
প্রথমত জিক্সার এর মিটারটি খুবই রিডেবল।এটি সম্পুর্ন ডিজিটাল মিটার। এটিতে রয়েছে গিয়ার ইন্ডিকেটর,আরপিএম ইন্ডিকেটর,আর পি এম এলার্ট লাইট ইন্ডিকেটর,ঘড়ি, স্পিডোমিটার, এর সাথে আছে একটি ওডোমিটার এবং দুটি ট্রিপমিটার।
লুকঃ
বাইকটি আমি কিনেছিলাম ইউটিউব এর সবগুলো রিভিউ দেখে।এটার লুক আমার মতে খুব সুন্দর এবং সহজেই তরুন সমাজকে আকর্ষিত করবে।তাছাড়া বাইকটিতে বসেও একটা সুন্দর লুক পাওয়া যায় সামনের দিকে।আমার জানা অনেকেই আছে যারা জিক্সারের লুক এর জন্যই এটা কিনেছেন।
Also Read: Suzuki Gixxer এ চলছে সর্বোচ্চ ২০,০০০/- টাকার ক্যাশব্যাক অফার!
রাইডিং কম্ফোর্টঃ
আমি জিক্সার দিয়ে নরসিংদি,টাংগাইল,গাজীপুর,মুন্সিগঞ্জ,সিরাজগঞ্জ,ময়মনসিংহ,যশোর,খুলনা,গোপালগঞ্জ,কুমিল্লা,খাগড়াছড়ি,বান্দরবান,কক্সবাজার ট্যুর করেছি।সত্যি একবারের জন্য ও আমাকে হতাশ করেনি জিক্সার।ব্যাক পেইন,আর্ম পেইন কোনকিছুই মনে হয়নি আজ পর্যন্ত।খুবই কম্ফোর্টেবল লেগেছে আমার কাছে।এটার ইঞ্জিন ভাইব্রেশন ও অনেক কম হওয়ায় আরো বেশি কম্ফোর্টেবল লাগে।
মাইলেজঃ
জিক্সারের মাইলেজ নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট । হাইওয়েতে আমি গড়ে প্রায় ৫০কিঃমি/লিটার পেয়েছিএছাড়া সিটি রাইডিং এ ৩৮-৪০ কিঃমিঃ/লিটার পেয়েছি।
স্পিড এবং এক্সালারেশনঃ
আমি জিক্সারের এই গুনটার সবথেকে বড় ভক্ত হয়ে গেছি।আমার টপ স্পিড ১২৮ কিঃমিঃ/ঘন্টা তুলতে সক্ষম হয়েছি।যদিও আমার এক পরিচিত ভাই ১৩১কিঃমি/ঘন্টা তুলতে পেরেছে। এটার এক্সেলারেশন চমৎকার।খুব দ্রুত গতি তুলতে পারে জিক্সার।
ব্রেকিংঃ
আমার মতে একটা বাইকের সবথেকে বড় গুন হলো এটার ব্রেকিং সিস্টেম।জিক্সারের ব্রেকিং সিস্টেম যঠেষ্ঠ ভালো।খুব দ্রুত এটা গতি নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম।ভালোব্রেকিং এর জন্য ভালোমানের ফ্রন্ট শকএবজর্বার,টায়ার,ডিস্ক,পেছনে মনোশক, মোটা রিয়ার টায়ার ইত্যাদি এটিকে করেছে সমৃদ্ধ।প্যানিক ব্রেকিং এর সময়ও অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে আমাকে।
ফুয়েল ট্যাংকঃ
১২ লিটার এর ট্যাংক। এতে ২.৪ লিটার রিজার্ভ রয়েছে । ট্যাংকের ডিজাইন খুবই সুন্দর । এই ট্যাংক এর ডিজাইনের কারনেই জিক্সার এর লুক আরো সুন্দর লাগে।
হেডলাইটঃ
হেডলাইট এর ডিজাইন সুন্দর। সিটি রাইডিং এ এর আলো খারাপ নয়।
ব্যাকলাইটঃ
ব্যাকলাইট টি ওয়েল ডিজাইন্ড।দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়।এল ই ডি বালব থাকায় আলো দারুন।
সাইলেন্সারঃ
সিংগেল এক্সস্ট সিস্টেম এবং পেছনে দুটি নল বের হয়েছে যা বাইকটিকে অন্যান্য বাইক থেকে করেছে আকর্ষণীয়। এটার সাইলেন্সার এর শেষ ভাগে একটি স্টেইনলেস স্টীল কেস রয়েছে যেটি অনেক কম গরম হয়।
সাস্পেনশনঃ
সামনে দুটি টেলিস্কোপিক সাস্পেনশন রয়েছে এবং পিছনে এডজাস্টেবল মনোশক সাস্পেনশন। হাইওয়ে রাইডিং এ খুব ভালো কম্ফোর্ট পাওয়া যায়।
রাইডিং পজিশনঃ
এতে রয়েছে পাইপ হ্যান্ডেল বার যা লম্বাসময় ধরে রাইডিং এর ক্ষেত্রে আমার কাছে কোন সমস্যা মনে হয়নি।রাইডিং পজিশন ভালো। হাতে কিংবা কনুইয়ে কোন ব্যাথা অনুভুত হয় নি।
টার্নিং রেডিয়াসঃ
আমরা সবাই জানি সিটি রাইডিং এর ক্ষেত্রে টার্নিং রেডিয়াস একটা বড় ফ্যাক্ট। এক্ষেত্রে জিক্সারকে অনেকটুকুই এগিয়ে রাখা যায়।খুব অল্প জায়গার ভিতরেই এটি ঘুরানো যায়।
টায়ারঃ
১০০/৮০ ফ্রন্ট এবং ১৪০/৮০ রিয়ার টায়ার রাইডিং এ আপনাকে দিবে অসাধারন স্টাবিলিটি এবং কর্নারিং পাওয়া যাবে আলাদা কনফিডেন্স।
ইঞ্জিনঃ
১৫৪.৯ সিসি একটি single over head camshaft (SOHC) ইঞ্জিন। ১৪.৮ ব্রেক হর্স পাওয়ারের সাথে ১৪ ন্যানোমিটারের টর্ক যা বাইকটিকে করেছে শক্তিশালী। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাইকটি ৮৫০ মিঃলিঃ ইঞ্জিন ওয়েল ধারন করতে পারে। ইঞ্জিন ওয়েল এর লেভেল দেখার জন্য একটি স্বচ্ছ গ্লাস উইন্ডো রয়েছে যা খুব উপকারী ইঞ্জিন ওয়েলের পার্ফেক্ট রিডিং পাওয়ার জন্য। ইঞ্জিনের সাউন্ড ভালো তবে হাই আর পি এম এ ইঞ্জিনের গ্র্যান্টি সাউন্ড চমৎকার ফিল দেয়।
Also Read: Top 5 150cc Standard Bikes In Bangladesh At A Glance
মোটামুটি সবদিক দিয়েই জিক্সার অনেক ভালো একটি বাইক বর্তমান ১৫৫ সিসি লিমিটের মধ্যে। এটির সবচেয়ে ভালো যে জিনিস আমার কাছে মনে হয়েছে সেটা হলো এর এক্সেলারেশন এবং টপস্পিড।হাইওয়েতে ওভারটেকিং খুব কনফিডেন্ট সহকারে করা যায় এবং এটা ১২০+ গতিতেও ভালো স্ট্যাবল।
এবার আসি বাইকটির কিছু খারাপ দিক নিয়ে।ভালোমন্দ মিলিয়েই সবকিছু বিরাজমান।
১.গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অন্যান্য বাইকের তুলনায় কম ফলে সহজেই বড়সড়(যে সকল স্পিডব্রেকার আনপ্লান্ড ভাবে বানানো হয়েছে) স্পিডব্রেকারে ধাক্কা লাগে
২.পিছনের সিট একটু ছোট,ফলে পিলিওনসহ লং রাইডিং একটু আনকম্ফোর্টেবল
৩.বিল্ড কোয়ালিটি একটু দুর্বল (যদিও আল্লাহর রহমতে আমার বাইকে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি)
৪.হাইওয়েতে স্টক হেডলাইটের আলো আশানুরূপ নয়।হাউওয়ে রাইডিং এ এই বাইকে প্রায় সবমসময় এক্সট্রা লাইট ব্যবহার করতে হয়েছে।
৫.লুকিং গ্লাস এর কোয়ালিটি ভালো না ।
সুযুকি জিক্সারের সবথেকে বড় যে সমস্যা সেটি হলো এটি র্যাঙ্কন মোটরবাইক বাংলাদেশ দ্বারা আমদানি হয়। আমি সম্পুর্নভাবে আশাহত কারন বিগত ১বছরের ও অধিক সময় পরেও তারা মানসম্মত একটি সার্ভিস সেন্টার দিতে পারে নি গ্রাহকদের।এজন্য তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিবে আশা করি ।
আমি এ পর্যন্ত আমার Suzuki Gixxer এর ৩ বার ব্রেকশু ,২বার ব্রেক প্যাড, একবার ক্লাচ ক্যাবল, একবার এক্সিলারেটর ক্যাবল,একবার এয়ার ফিল্টার এবং একবার স্পার্কপ্লাগ পরিবর্তন করেছি।
আজ এ পর্যন্তই।সকলে ভালো থাকুন,সাবধানে বাইক চালান,হেলমেট পরুন, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন এই কামনায় শেষ করলাম
ধন্যবাদ,
-শামসুজ্জামান রিমান