Runner Kite Plus 110 ২৮,৫০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - অর্নব
This page was last updated on 16-Jul-2024 08:24am , By Raihan Opu Bangla
আমি অর্ণব, পরিচয় হিসেবে প্রথমত মানুষ এবং সাথে একজন বাইক রাইডার। তবে এই বাইক রাইডার হিসেবে পরিচয় দিতে পারতেছি তা খুব বেশি দিন হয়নি। ২০ মাস আগে আমি প্রথম আমার Runner Kite Plus 110 স্কুটারটি কিনতে পারি।
আজ Runner Kite Plus 110 বাইকটি ২৮,৫০০ কিমি রাইডের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
৮ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করারা সময় সাইকেল চালানোর হাতেখড়ির মাধ্যমে বুঝতে পারি দুই চাকার প্রতি একটা তীব্র দূর্বলতা আছে। ছোটবেলায় ইচ্ছাও ছিল বড় হয়ে মটর বাইক কোম্পানিতে চাকরী করব। যাই হোক, পড়াশোনা করেছি স্থাপত্য বিষয়ে। সেই সুবাদে ঘোরাঘুরি বিষয়টা বেশ ভাল ভাবে রপ্ত হয়ে গিয়েছে। চাকরীতে ঢোকার পর থেকে বাইকের শোরুমে যাওয়া আসা হত। অবশেষে একদিন কিনে ফেলি নিজের মটরবাইকটি।
আমি নিজে একজন উদ্যোক্তা। ছোট একটা অনলাইন শপ আর বাইক নিয়ে ভ্রমন করে চলে যাচ্ছে আমার বর্তমান জীবন-যাপন। ছোট বেলায় গাড়ী নিয়ে খেলতাম আর এখন বাইক চালাই এটুকই পার্থক্য।
আমার মোটর বাইকটির নাম Runner Kite Plus 110। বাংলাদেশের Runner Automobiles Limited কোম্পানি এটা বানিয়ে থাকে। ১১০ সিসি ক্ষমতা এই বাইকটির মার্কেট প্রাইস ৮০-৮৫ হাজার টাকার মধ্যে। রেজিস্ট্রেশন সহ ১ লক্ষ টাকার মধ্যে এটি পাওয়া যায়। আমি যদিও টাকার স্বল্পতা থাকার কারণে ১২ মাসের কিস্তিতে স্কুটারটি নিয়েছিলাম। বাইকটি এখন পর্যন্ত আমি চালিয়েছি ২৮,৫০০ কিলোমিটার।
এতটা পথ এই অল্প সময়ে চালানোর কারণ প্রচুর ভ্রমন করা হয় এই বাইকটি নিয়ে। যদিও এটা ট্যুরিং বাইক না। তবে এটা আমার নিজের কাছে অনেক বড় কিছু।
Runner Kite Plus 110 বাইকটি নিয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ঝিনাইদাহ, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, চিটাগাং, ইত্যাদি জায়গায় ভ্রমন করেছি । বাইকটি আকৃতিতে অনেকটা ছোট এবং হালকা।
অনেকের ধরণা যে কম সিসির বাইক বা হালকা বাইক হলে হাইওয়েতে চলতে সমস্যা হয়। তবে আমি এটা দিয়ে নিজে মোটামুটি সব রকম আবহাওয়াতে এবং সকল রকম রাস্তায় চালিয়েছি।
Runner Kite Plus 110 বাতাস কাটানোর ক্ষমতা দারুন। এটা ক্লাচ ছাড়া একটি বাইক, তবে গিয়ার আছে ৪ টা। পিকাপ ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে গিয়ার শিফট করতে হয় । তেলের ট্যাংকি বেশ ছোট, তবে মাইলেজ বেশ ভাল। আর আমি ব্রেক-ইন পিরিয়ড থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এটাকে সঠিক ভাবে মেইন্টেইন করে আসছি।
আমার Runner Kite Plus 110 শুরুতে ৩৮-৪০ করে মাইলেজ দিত। এরপর ২০০০ কিলোমিটার পরে আস্তে আস্তে মাইলেজ বাড়তে শুরু করে। এখন ঢাকার মধ্যে ৫০+ আর হাইওয়েতে ৫৫+ মাইলেজ পাচ্ছি পিলিয়ন সহ। হাইওয়েতে ৬০ মাইলেজও পেয়েছি একা রাইড করার সময়।
যেহেতু হাইওয়েতে চালান হয় প্রচুর, তাই সব কিছু সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিয়েছি। সাদা এল.ই.ডি হেডলাইট, ডাবল হর্ন, এমারজেন্সি সুইচ, পাস সুইচ থেকে শুরু করে লিভার গার্ড পর্যন্ত। পিছনে টপ বক্স লাগিয়ে নিয়েছি ২-৩ দিনের ট্যুরে গেলে জামা-কাপড় নেয়ার জন্য। পিঠে ব্যাগ নিয়ে লম্বা পথ চালানো খুব বিরক্তিকর। টায়ার সামনে ২.৫০ আর পিছনে ২.৭৫ এবং ১৭ ইঞ্চি সাইজের এলয় রিম।
দুটো টায়ারই টিউব টায়ার। তবে ২৩,৫০০ কিলোমিটার চালিয়ে আমি পিছনের টায়ার পরিবর্তন করে টিমসানের টায়ার কিনে ফেলি। এই টায়ারটি টিউবলেস এবং পারফর্মেন্সের দিক থেকে দুর্দান্ত।
শুরু থেকেই আমি রানারের রিকমেন্ডেড ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি না। আমি মার্কেট থেকে Motul ইঞ্জিন অয়েল কিনে ব্যবহার করি। এখন Semi-synthetic 10W40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। এটার বাজার মূল্য ৮৫০ টাকা। তবে Runner Kite Plus 110 এ ইঞ্জিন অয়েল ৮০০ মিলি লাগে। সাধারণত এই ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে ২০০০-২২০০ কিলোমিটার খুব ভাল ভাবে চালানো যায়।
এখন পর্যন্ত অনেকগুলো লং ট্যুর করেছি এই Runner Kite Plus 110 দিয়ে। ৩ দিনে ৮৭০ কিলোমিটার পথ চালিয়েছি ঢাকা-কুষ্টিয়া-খুলনা-ঢাকা ভ্রমনে। একদিনে ৪২০ কিলোমিটার চালানো হয়েছে ঢাকা-মিরসরাই-ঢাকা ভ্রমণে। ইচ্ছা আছে সামনে আরও বেশ কিছু লং ট্যুর করার। Runner Kite Plus 110 এ ক্লাচ প্লেট পরিবর্তন করেছি ২ বার। সামনের ব্রেক প্যাড ৩ বার আর পিছনের ব্রেক প্যাড ২ বার পরিবর্তন করেছি ।
এয়ার ফিল্টার ১বার, প্লাগ ২ বার, বল রেসার ১ বার, থ্রোটল ক্যাবল ১ বার পরিবর্তন করেছি । ব্যাটারি পরিবর্তন করা হয়েছে একবার। ইঞ্জিন ফ্লাশ করেছি ১ বার।
Runner Skooty First Impression Review In Bangla – Team BikeBD
Runner Kite Plus 110 এখন পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার বেগে গতি তুলতে পেরেছি। হাইওয়েতে খুব ভাল ভাবে ৭০-৮০ গতিবেগে চালান যায় । সব মিলিয়ে এই বাজেটের মধ্যে আমার জন্য Runner Kite Plus 110 কেনাটা খুব উত্তম সিধান্ত ছিল। যদিও অনেকে তখন বলেছে, কেন দেশী কোম্পানির প্লাস্টিক বাইক কিনছি। আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের পণ্যকে প্রোমোট করি না। যে ভাল তাকে ভাল বলা, আর যে খারাপ তাকে খারাপ বলা টা আমাদের শেখা উচিত।
Runner Kite Plus 110 এর কিছু ভাল দিক -
- মাইলেজ বেশ ভাল।
- ক্লাচ নেই, তাই চালাতে বেশ সুবিধা।
- ওজনে হালকা এবং উন্নতমানের ফাইবার বডি।
- বাজেটের মধ্যে বেশ ভাল ডিজাইন এবং আরামদায়ক মোটর-বাইক।
- পার্টসের দাম কম এবং সহজ লভ্য।
- সামনে ডিস্ক ব্রেক বলে ভাল ব্রেকিং পাওয়া যায়।
- পিলিয়ন নিয়ে বেশ ভাল ভাবে ভ্রমণ করা যায়।
Runner Kite Plus 110 এর কিছু খারাপ দিক -
- তেল ধারণ ক্ষমতা বেশ কম, লম্বা পথ ভ্রমনের ক্ষেত্রে এটা বেশ অসুবিধার।
- চাকার সাইজ আরেকটু বড় হলে ভাল হত।
- সিটের নিচের জায়গা বেশ অল্প।
- সুইচের কোয়ালিটি ভাল করা দরকার।
- তেলের টাংক সিটের নিচে বলে, প্রতিবার বাইক থেকে নেমে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হয় ।
এই ছোট একটা বাইকে আসলে অসুবিধা খুব একটা আমি দেখি না। বরং সুবিধাই অনেক। অসংখ্য ধন্যবাদ BikeBD টিমকে, আমাকে এই সুযোগটা করে দেয়ার জন্য। সাবধানে রাইড করুন, এবং অন্য বাইকারদের যেকোন প্রয়োজনে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ অর্ণব
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।