Runner Bullet নিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা ভ্রমন-তানভীর হাসান
This page was last updated on 06-Jul-2024 12:54pm , By Shuvo Bangla
শুভেচ্ছা রাইডার্স। এই মাসের ৮ তারিখ ভোর ৬ টায় আমি ও আমার দুই বন্ধু ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করি। আমরা ৩ টা বাইকে ৬ জন ছিলাম। এর মাঝে আমার বাইক ছিল Runner Bullet 100cc। আর এটা ছিল হাইওয়েতে আমার প্রথম রাইড। তাই একটু ভয় ছিল এবং কনফিউজড ছিলাম যে পারবো কি পারবো না। আর Runner Bullet 100cc দিয়েও এই ট্যুর সম্ভব কি না সেটা নিয়েও ছিল মনে সংশয়।
যাই হোক সব বাধা পেরিয়ে ১২ লিটার তেল নিয়ে যাত্রা শুরু করি। সকাল ৬ টা বাজার সাথে সাথেই যাত্রা শুরু করলাম। আমরা ৪০ মিনিট পর পর ব্রেক নিতে থাকি। আর হ্যা এই ট্যুর নিয়ে এত এক্সাইটেড ছিলাম যে রাতে এক ফোটাও ঘুমাইনি।
Runner Bullet 100cc নিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা ভ্রমন
যদিও রাস্তার কন্ডিশন বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছিল। কারণ মনের মাঝে অনেক ভয় ও কাজ করেছিল। যদি কিছু হয়ে যায়। কিন্তু না তারপরও সাহস নিয়ে এগিয়ে যাই। যত ট্রাক, কার্গো ছিল সবই ওভারটেক করছিলাম। কিন্তু বাস দেখলে স্পিড কমিয়ে ফেলি। কারন আমি জানতাম Runner Bullet 100cc বাইক দিয়ে বাসের সাথে পাল্লা দেওয়া সম্ভব না।
যাই হোক এ নিয়ে কোন সমস্যাই হয়নি কুমিল্লা,ফেনী,চিটাগাং এর মাঝে ৭-৮ বারের মত ব্রেক নিয়েছিলাম। চিটাগাং ক্রস করে যখন কক্সবাজারের রোডে পা দিলাম। তখনই শুরু হল গুড়ি গুড়ি বৃস্টি আর এক লেনের আকা বাকা রাস্তা। রাস্তার অবস্থা দেখে আবারও ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু এবারও থামিনি আমরা। পথ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকি। চিটাগাং থেকে কক্সবাজার যেতে প্রায় ৬ ঘণ্টা লেগেছিল পৌঁছাতে। আর ঢাকা থেকে চিটাগাং আসতে প্রায় ৬ ঘণ্টা লেগেছিল।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে Runner Bullet 100cc বাইকটিতে আমার যেতে প্রায় ১২ ঘণ্টা লেগেছিল। যেহেতু রাতে ঘুমাইনি তাই মানসিক ভাবে একটু অসুস্থতা বোধ করছিলাম। শেষমেষ সন্ধ্যা ৬ টায় হোটেলে অবস্থান করি আমরা। পুরো শরীর যেন একবারে ছেড়ে দেওয়া অবস্থা। পরের দিন কক্সবাজার ঘুরেছিলাম সারাদিন। বাইকটাকে সেদিন রেস্ট দিয়েছিলাম। পরের দিন Runner Bullet 100cc বাইক নিয়ে হিমছড়িতে, তারপর মেরিন ড্রাইভ গিয়েছিলাম।
তারপর আবার আমরা হোটেলে ফিরে আসলাম। কক্সবাজারে আমাদের সময় খুব ভালোই কেটে ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে আসার টাইমে যখন আমরা ব্রেক নেবার জন্য থামি তখন যে দেখে সেই জিজ্ঞেস করে ভাই কই যাবেন,কোথা থেকে এসেছেন,আমরা যখন বলি ঢাকা-কক্সবাজার। তখন তারাও অবাক হয়ে যায় আর বলে যে বাইক দিয়ে এত দূর তাদের সাথে আমি নিজেও অবাক হয়ে যাই। ১১ তারিখ আমরা ঢাকার উদ্দেশ্য কক্সবাজার থেকে যাত্রা শুরু করি সকাল ১১ টায় আসার পথে অনেক বৃস্টি ছিল বলে ব্রেকটা একটু বেশিই নিতে হয়েছে। কারন আমাদের কারো কাছেই রেইনকোট ছিল না।
কক্সবাজার থেকে চিটাগাং আসতে আসতেই প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। এবার তো আরো ভয় কাজ করতে শুরু করলো যে রাত্রে বেলা হাইওয়ে পারবো কিনা। যাক আল্লাহর নামে শুরু করলাম পথ চলা আর নিজ চোখে দেখলাম বাস-ট্রাকের ওভারটেকিং এর খেলা। সেই সাথে আমিও ট্রাক গুলোকে ওভারটেকিং করতে শুরু করলাম, এছাড়া আর উপায় ছিল না। হেডলাইটের আলো খুবি কম বললেই চলে,আল্লাহর অশেষ রহমতে কোন সমস্যা ছাড়াই রাত ১২.৪০ এ ঢাকায় পৌছাই।
সব মিলিয়ে Runner Bullet 100cc দিয়ে প্রায় ৮২০ কিলো চালিয়েছি। আর স্পিড ছিল পিলিয়ন নিয়ে ৮০ (এভারেজ) তেল খরচ প্রায় ১৬০০ টাকার। অনেকে ভাবছেন ১০০ সিসি দিয়ে ট্যুর। আমি তাদেরকে উদ্দেশ্য বলব আপনাদের মত আমার ও অনেক কনফিউশন ছিল। কিন্তু এই ট্যুর দেবার পর সব ক্লিয়ার হয়ে যায়। আর দিনের বেলা থেকে আমার কাছে মনে হয় রাত্রে বেলার ড্রাইভিং সবচেয়ে মজা। তবে সেক্ষেত্রে হেডলাইট আর ডিপারের কার্যকরী পাওয়ার অবশ্যই বেশি হতে হবে। যদিও আমার হেডলাইট ও ডিপার দুটোরই অবস্থা বেশি ভালো ছিল না।
ঢাকায় এসে বাইকে মটো লেড আর ডিপার লাগিয়েছি আলাদা যাতে সামনে আর সমস্যা না হয়। সব কিছুই আপনার কাছে, আপনি চাইলেই পারবেন,তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে,হাইওয়ে বলে কথা। আমি শুধু ১ বার চেইন টাইট দিয়েছিলাম। এছাড়া ট্যুর চলাকালিন সময়ে বাইকে আর কোন কাজ করতে হয়নি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা ট্যুর ছিল অসাধারণ। পরিশেষে একটা কথাই বলবো, Always wear Helmet And safe riding.
লিখেছেনঃ Tarian Hasan Naveen