RTR নিয়ে ২০,০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ লিখেছেন সুদিপ সরকার
This page was last updated on 08-Jul-2024 09:29am , By Saleh Bangla
ছোটবেলা থেকে বাইকের প্রতি তেমন আকর্ষন ছিলোনা আমার। বাবার তখন বাইক ছিলো হিরো হোন্ডা সি ডি ১০০.ক্লাস এইটে থাকতে ২০০৮ সালে প্রথম বাবার বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখি। খুব ভিতু প্রকৃতির ছিলাম এজন্য নতুন শিখেও তেমন ড্রাইভ করতাম না। তারপর পড়াশুনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় থাকার কারনে মাঝে মাঝে বন্ধু ভাই ব্রাদার দের বাইক টুকটাক চালানো পড়তো।যে বাইক গুলো চালানো পড়ত (ডিস্কভার ১২৫/১০০, হিরো আই স্মার্ট,পালসার,হাংক, হিরো হোন্ডা সি ডি ডন, প্লাটিনা ইটিসি)।২ ০১১ সালে আমাদের বাসার পাসের এক বড় ভাই RTR 150 yash কালার এর বাইক কিনে,বাইক টা দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিলো কিন্তু কখন ও ড্রাইভ করার সৌভাগ্য হইনি। কিন্তু পরবর্তিতে TVS Apache RTR 150 বাইকটি আমার জীবনের অন্যতম অংশ হয়ে যায়।
২০১৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার বাইক টা বাড়িতেই ফেলানো ছিলো। এরপর ২০১৬ সালে আমার মাথায় ভুত চাপে যে একটা ১৫০ সি সি বাইক কিনবো, বাজেট ২লাখ। ১৫০ সি সি বাইক সম্পর্কে আমার ধারনা তখন শুন্যের কাছাকাছি। শুধু কিছু ১৫০ সিসি বাইক চালিয়েছি কিন্তু ভালোমন্দ কিছু বুঝতাম না। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখে গিয়েছিলাম বাইক কিনতে হাংক।কিন্তু শোরুমে রেড কালারের আগের মডেল টা না থাকায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে বড়ভাই দের পরামর্শে অবশেষে Apache RTR Red glossy বাইকটি নিলাম। রেজিসট্রেশনস সহ 194500+14000 টাকা লাগে ছিল। তখন ব্রেক ইন পিরিয়ড কি জানতাম না,শোরুম থেকে বললো ২০০কিমি চালানোর পর মবিল ড্রেইন দিতে। আর ৪৫০০ আর পি এম এ ড্রাইভ করতে।মজার ব্যাপার হলো যখন RTR বাইক কিনেছি তখন ও পর্যন্ত আমি চালিয়ে দেখিনি বাইকটা কেমন।
তারপর আমি ধীরে ধীরে বাইক চালানো শুরু করলাম ২০০ কি মি চালানোর পর মোবিল ড্রেইন দিলাম এর ভিতর অনেকটা হাতের সাথে অ্যাডজাস্ট হয়ে গেছিলো প্রথনে হাতের কবজি আর আর পিঠে খুব ব্যাথা হয়েছিলো। অ্যাডজাস্ট হয়ে যাওয়ার পর কে শোনে কার কথা বাইক ঊড়াধুড়া চালানো শুরু করলাম। প্রথমে মাইলেজ ৫২ কি মি এখন বর্ত্মানে সিটি তে ৩৭-৩৮ এবং হাইওয়ে তে ৪৪-৪৫ কি মি যায়। বাইকের লুক টা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। RTR বাইক কেউ ড্রাইভ করলে চালক কে অনেক সুন্দর দেখা যায়। TVS Apache RTR সুবিধা:- ১.এর রেডি পিকাপে আমি সন্তুষ্ট ২.হেড লাইটের দুই চোখে ২টা LED লাইট আধারে দূর থেকে মনে হয় ডেভিল দাঁড়িয়ে আছে ৩.স্পিডো মিটারে টপ স্পিড সেভ হয়ে থাকে যার কারনে টপ স্পিড ভিডিও করা লাগেনা। ৪.এর ফুয়েল ট্যাংক এ ১৬লিটার ফুয়েল ক্যাপাসিটি যেটা লং ট্যুরের জন্য ভালো ৫.স্পিডো মিটারে টাইম ও কত সেকেন্ডে ৬০ স্পিড ওঠে সেটা সেভ হয়ে থাকে। ৬.মাইলেজ নিয়ে আমি অনেক সন্তুষ্ট ৭.হর্ন এর সাউন্ড টা অনেক সুন্দর। ৮.স্টান করার জন্য ভালো। আমি বাইকের টপ স্পিড পেয়েছি মাত্র ১২১,এর প্রধান কারন হলো আমার ওয়েট ৯৫ কেজি আর কোনো মডিফাই করা নাই। আর সেরকম রোড নাই আমাদের এদিকে ১৩০ টাচ করার মত।
TVS Apache RTR অসুবিধা:- ১.ভাইব্র্শন বাইক ৬০+ হইলে ভাইব্রশন হয়ে থাকে এর কারন হলো মবিল বাইকের চেইন আর টায়ার এর প্রেশার। ১০w30 গ্রেডের মবিল ইউজ করে চেইন ক্লিন করে আমি গিয়ার ওয়েল দি এবং ফ্রন্ট টায়ারে ২৮ এবং রেয়ার টায়ারে ৩৫ প্রেসারে বাইকের ভাইব্রেশন প্রায় শুন্যের কাছা কাছি। ২.ব্রেক ক্নট্রোল আমি প্রথমে পিছনের ব্রেক নিয়ে খুব প্রবলেম ফেস করতাম ব্রেকে পা দিলেই পিছনের চাকা স্কিড করত।তখন আমি পিছনের ব্রেক ঢিলা করে দিলাম তখন সমস্যা অনেকটা সলভ হয়ে গেলো।আমি অনেক সময় বাইক যখন ৮০+ স্পিডে থাকে হঠাত সামনে কিছু চলে আসলে সামনের আর পিছনের ব্রেক কম্বিনেশন করে প্রেস করলে বাইক আপনাকে বিপদে ফেলবেনা বরং সেফলি স্টপ হয়ে যাবে। ৩.টায়ার নিয়ে অনেকে অসুন্তুস্ট, এরকম রেডি পিকাপ বাইকে ১২০ সাইজের সফট টায়ার দেওয়া উচিত ছিলো যার কারনে দক্ষ ড্রাইভার রা ছাড়া এটা কে কন্ট্রোল করা খুব মুশকিল। ৪.হাইওয়ে তে এর হেড লাইট অনেক কম। ৫.কিছুদিন পর পর চেইন ঢিলা হয়ে যায়
যে সকল পার্টস বাদ দিয়েছি ১.ঘাড়ের বর রেসার ২.চেইন স্পোর্কেট ৩.প্লাগ ৪.এয়ার ফিল্টার খুব সাবধানে বাইক ড্রাইভ করি। এই পর্যন্ত ২বার দুর্ঘটনায় পড়েছি রাতের বেলা কুকুর চাপা দিয়ে নিজেও পড়ে গেছিলাম, আর একবার এক বাচ্চা ইঞ্জিন ভ্যান আমার বাইকে ঝেড়ে দিয়েছিলো তবে মেজর কোনো ক্ষতি হইনি।ধীরে ধীরে বাইক টা কে অনেক ভালোবেশে ফেলেছি। মেজর প্রবলেম ছাড়ায় এতটা রাস্তা তার সাথে পাড়ি দিয়েছি।
বাইক বিডির বড় ভাই দের সাজেশন ক্লাব RTR এর বড় ভাইরা অনেক হেল্প করেছে বাইক মেইন্টেইন্স এর ব্যাপারে । তারা না থাকলে বাইক সম্পর্কে এতটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম না।এজন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ। আর আমার জন্য দোয়া করবেন TVS Apache RTR সাথে বাকিটা পথ যেনো এভাবে সেফলি পাড়ি দিতে পারি। ভুল কিছু লিখে থাকলে ধরিয়ে দিবেন।
লিখেছেনঃ Shudip Sarker