Omera 20w40 মোটরসাইকেল ইঞ্জিন অয়েল টেস্ট রিভিউ
This page was last updated on 03-Jul-2024 12:21pm , By Shuvo Bangla
আমরা বাইক বিডি টীম থেকে মোটরসাইকেল ইন্জিন অয়েল এর উপর অনেক গবেষণা চালিয়েছি এবং অনেক রাইডারও আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন যে কোন ইন্জিন অয়েল বাইকের জন্য ভাল হবে ?অবশ্য র্দূভাগ্যের কথা এই যে বেশীরভাগ রাইডাররাই তাদের বাইকের ইউজার ম্যানুয়াল পড়ে দেখেন না এবং সেখানে কোন গ্রেডের ইন্জিন অয়েল রিকমেন্ড করা আছে সেটাও তারা ভালভাবে দেখেন না ।
আমরা আজ ওমেরা মোটরসাইকেল ইন্জিন অয়েল সম্পর্কে একটা বেশ বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাংলাদেশে মূলত অনেক কোয়ালিটির এবং অনেক কোম্পানীর ইন্জিন অয়েল রয়েছে । কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই জানে না যে কোন তার বাইকে কোন বা কোন গ্রেডের ইন্জিন অয়েল ইউজ করতে হবে । কোন ইন্জিন অয়েল আপনার বাইকের ইউজ কতরা উচিৎ হবে কীনা এটা নিশ্চিত হবার জন্য প্রথমে দেখুন ইন্জিন অয়েলের বোতলের গায়ে 4T লেখা আছে কীনা ?যেটা ৪ স্ট্রোক ইন্জিনের জন্য বোঝায় । তারপর আপনার দেখতে হবে যে ইন্জিন অয়েলটি JASO (Japanese Automotive Standards Organization ) এবং API (American Petroleum Institute) সার্টিফাইড কীনা ? যদি এই দুটি বিষয় আপনি ইন্জিন অয়েলের বোতলের গায়ে লেখা থাকে তাহলে এটা আপনার বাইকের জন্য উপযুক্ত । ওমেরা ইন্জিন অয়েল JASO এবং API সার্টিফাইড এবং এটা একটা হাইয়েস্ট স্ট্যান্ডার্ড JASO ইন্জিন অয়েল ।
এখন ইন্জিন অয়েলের ক্যাটাগরিতে আসি । বাংলাদেশে মূলত ৩ টাইপের ইন্জিন অয়েল পাওয়া যায় । সেগুলো হল :
- মিনারেলস
- সেমি-সিনথেটিক
- ফুল সিনথেটিক
সাধারণত ফুল সিনথেটিক ইন্জিন অয়েল এর সান্দ্রতা অন্য গুলোর তুলনায় ২-৩ গুণ এবং এটার দামও অনেক বেশী ।বাংলাদেশে বেশীরভাগ মানুষই মিনারেল ইন্জিন অয়েল তৈরী করে থাকে এবং এটার দামও ৪০০-৫০০ টাকার ভেতর । এবং এই মিনারেল অয়েল একবার চেঞ্জ করে আপনি ৮০০-১২০০ কিলোমিটার রাইড করতে পারবেন ।
ওমেরা মূলত ২ টি গ্রেডের ইন্জিন অয়েল তৈরী করে থাকে । একটা হল 10W30 এবং অপরটা হল 20W40 । এবং আমরা রিসেন্টলি তাদের 20W40 গ্রেডের ইন্জিন অয়েল টেষ্ট করে দেখেছি ।
ওমেরা 20W40 গ্রেড ইন্জিন অয়েল সম্পূর্ণ একটা মিনারেল ইন্জিন অয়েল এবং এটা একটা বেশ হালকা ক্যান এর ভেতর থাকে । আপনি এটা ওমেরা সেলস পয়েন্ট থেকে কিনলে ৪৩০ টাকায় কিনতে পারবেন। অবশ্য আপনি এই ইন্জিন অয়েল অন্যান্য ডিলারের কাছ থেকে কম দামেও কিনতে পারেন , কিন্তু আমরা এটা কোন নির্ভরযোগ্য ডিলার বা ওমেরা সেলস পয়েন্ট থেকে কিনতে বলব কারণ অন্য স্থান থেকে আপনি ভেজাল মিশ্রিত অয়েলও পেতে পারেন ।
ওমেরার নিজস্ব উৎপাদনকেন্দ্র রয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় । এখানে অবশ্য একই প্লান্টে মোবিল সুপার 4T ও তৈরী করা হয় । এই কারখানাটি সব মর্ডান টেকনোলোজির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এবং সেই কারণেই এরা বাংলাদেশী রাইডারদের জন্য সবথেকে ভাল ইন্জিন অয়েল তৈরী করে থাকে।
এই ইন্জিন অয়েলটি টেষ্ট করার জন্য আমরা আসিফ আহমেদের টিভিএস এ্যাপাচি RTR বাইকটি ইউজ করেছিলাম । বাইকটির বয়স ছিল প্রায় ২০০০ কিলোমিটার এবং বাইকটির জন্যও সেম গ্রেডের ইুন্জন অয়েল রিকমেন্ড করা ছিল । তাই বাইকের সাথে অয়েলের কম্বিনেশনটা ছিল মারাত্মক । যেহেতু বাইকটির বয়স খুব বেশী না , তাই এর সব মেক্যানিক্যাল এবং টেকনিক্যাল পার্টসগুলো বেশ ভাল ছিল এবং এগুলোর দ্বারা ইন্জিন অয়েল টেষ্টিং এ কোন ভুল রেজাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না ।
আমরা ইন্জিন অয়েলটি বাইকে ভরে বাইকটি আমরা ঢাকা শহরের ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত টেষ্ট করেছিলাম । যেক্ষেত্রে আমরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন আলাদা আলাদা অংশ রাইড করি । আমরা ইন্জিন অয়েল বাইকটিতে ২০ রমজানের পর ইউজ করি তার ফলে ঢাকা শহরের বেশ জনবহূল এলাকায় ঘনঘন থামা ও বাইক রান করানোর ফলে আমরা বাইকটির ইন্জিনের উপর ও ক্লাচের উপর ম্যাক্সিমাম প্রেশার এপ্লাই করতে সক্ষম হয়েছি ।
বাইকটি সবথেকে বেশী বার টেষ্ট করা হয়েছে ডেমরা থেকে বনানী পর্যন্ত কারণ , আসিফ ভাইকে তার ইউনিভার্সিটি যেতে এটা সপ্তাহে ৪ দিন এই রুটে রাইড করতে হত ।আমাদের মেইন টার্গেট ছিল ইন্জিন অয়েলটি শহর এবং হাইওয়ে ২ স্থানেই টেষ্ট করা । আসিফ ভাই এই ইন্জিন অয়েলের সম্পর্কে বলেন যে এটা বাইকের ইন্জিনের স্মুথনেস বাড়ায় এবং এবং সাউন্ডও বেশ ভাল দেয় । কিন্তু এটা ব্যাবহারের ফলে বাইকের এক্সেলেরেশন পাওয়ার ও টপ স্পীড অন্যান্য দের তুলনায় কিছুটা কমে যায় । আমরা ইন্জিন অয়েলটা নিয়ে ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ইউজ করতে পেরেছি । সিটিতে রাইডিং এর সময় আমরা খেয়াল করেছি যে ইন্জিন খুবই স্মুথ এবং গিয়ার চেঞ্জ করার সময় এটা বেশ ভাল পারফরমেন্সই দেয় ।
৩৫০ কিলোমিটার রাইডিং এর পর আমরা বাইকটি নিয়ে আমরা বাইকটি কিছু হাইওয়েতে টেষ্ট করার জন্য নিয়ে যাই এবং বাইকের সবথেকে বড় যে ইস্যু সেটা হল ইন্জিন গরম হয়ে যাওয়া সেটা টেষ্ট করি । জনবহূল ঢাকা শহরে এই ইন্জিন অয়েল ভালই পারফরমেন্স দিয়েছিল । সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এটা এবারও ইন্জিন হিটিং এর ক্ষেত্রে ভাল ফিডব্যাক দেয় এবং গিয়ার শিফটিং বা ইন্জিন স্মুথনেস বেশ ভালই ছিল । কিরন্তু এক্সেলেরেশন ও টপ স্পীডের সমস্যাটা হাইওয়েতে ও থেকে গেছে ।
বাইকটি রাইড করার সময় আসিফ ভাই অনেকবার রিপোর্টে করেছেন যে কম গিয়ারে বেশী টর্ক নিয়ে ওভারটেকিংটা এই ইন্জিন অয়েলের জন্য অনেকটা কষ্টকর । যেহেতু টিভিএস RTR এর অত্যান্ত দ্রুত পাওয়ার ডেলিভারীর জন্যই বিখ্যাত , সেখানে ওমেরা ইন্জিন অয়েল ইউজ করার ফলে এটার হাই স্পীড প্রায় ৫% হারে কমে যায় ।
সুবিধা :
ইন্জিন হিট : ইন্জিনের তাপমাত্রা সহনীয় সীমার ভেতরই থাকে (4 stars out of 5 stars)
গিয়ার শিফটিং: সুপার স্মুথ গিয়ার শিফটিং (5 stars out of 5 stars)
ক্লাচ : সুপার স্মুথ (5 stars out of 5 stars)
ইন্জিন সাউন্ড : যথেষ্ঠ স্মুথ সাউন্ড (3.5 stars out of 5 stars)
মাইলেজ : বেশ ভাল মাইলেজ (4 stars out of 5 stars)
অসুবিধা :
এক্সেলেরেশন: মোটামুটি (2.75 stars out of 5 stars)
টপ স্পীড : মোটামুটি (2.5 stars out of 5 stars)
এসব তথ্য দেখে আমরা ওমেরা 20W40 গ্রেডের ইন্জিন অয়েল সম্পর্কে যে ধারণা করতে পারি সেটা হল ওমেরা ইন্জিন অয়েল মূলত ইন্জিন রিফাইনমেন্ট ও স্মুথনেসের জন্য তৈরী করা হয়েছে কিন্তু এটা এক্সেলেরেশন বা টপ স্পীডের জন্য তৈরী হয়নি । এই ইন্জিন অয়েলটি হল তাদের জন্য যারা পারফরমেন্সের দিক এর থেকে স্মুথনেসের দিকে বেশী নজর দেন ।
বাইকবিডি নোট:
একটা সাধারণ ঘটনা যেটা হল কোন ইন্জিন অয়েল একটা বাইকে মোট পরপর ৩ বার ইউজ করার পর এটার সম্পর্কে জাজ করা উচিৎ । স্পেশালিস্টরা এই নীতি মেনেই সব ইন্জিন অয়েলের পারফরমেন্স বুঝে থাকেন । তাই , ওমেরা একই বাইকে ৩ বার ইউজ করলে হয়তবা টপ স্পীড এবং এক্সেলেরেশনের সমস্যাটা কেটে যেতে পারে ।
ওমেরা 20W40 নীচের ব্রান্ডের মোটরসাইকের গুলোর জন্য রিকমেন্ডেড :
Yamaha, Suzuki, TVS, Bajaj (excepct for Pulsar 150), Lifan, Zongshen,Keeway.