Lifan KPR 150 V1 মালিকানা রিভিউ - আব্দুল্লাহ আর সুমন
This page was last updated on 25-Jul-2024 04:58pm , By Raihan Opu Bangla
আমি আব্দুল্লাহ আর সুমন। আমার বাড়ি মাগুরা জেলার মহম্মাদপুর থানার মৌশা গ্রামে। আমি ডিপ্লোমা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ৮ম পর্বের একজন ছাত্র। বর্তমানে আমি Lifan KPR 150 V1 বাইকটি রাইড করছি। আজ আমি আপনাদের বাইকটি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করব।
Lifan KPR 150 V1 মালিকানা রিভিউ
বাইক কেনো ভালবাসি বলতে পারবো না কিন্তু খুব বেশি ভালোবাসি। ছোটবেলা থেকেই বাইক এর উপর একটা গভীর ভালোবাসা ছিলো। শুধু ভাবতাম কবে আমার নিজের একটা বাইক হবে নানান যাইগা ঘুরতে যাবো এইরকম অনেক ভাবনা ছিলো বাইক নিয়ে। বাইক কেনার জন্য আমার বাজেট ছিলো ৬০ - ৭০ হাজার বিক্রয় ডট কমে সারাদিন বাইক এর পোস্ট দেখতাম কোনটা আমার বাজেটের ভিতরে একটু স্টাইলিশ বলে রাখি আমার কখনই নেকেড টাইপ এর বাইক মনে ধরতো না।
কিন্তু ৬০ - ৭০ হাজারে স্পোর্টস টাইপ বাইক কোথায় পাবো এর মাঝে একটা এড দেখলাম মেঘলি নামে একটি বাইক ৯০ হাজারে আমি তো ওইটা নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম সারাদিন নেটে যত রিভিউ আছে সব দেখতে থাকি। কিন্তু বড় ভাই কিন্তু ফ্রেন্ড এর মত সম্পর্ক তাকে বলার পর সে আমাকে বোঝায় এটা নেওয়া ভালো হবেনা। পরে আমিও বুঝতে পারলাম এই রকম দেখতে বাইক এর এত কম দাম তাহলে ভালো না(আমি ওটার নেগেটিভ রিভিও দিচ্ছি না)। এমন কি আমি TVS Apache RTR, Bajaj Pulsar এ Yamaha R15 এর কিট লাগানো বাইক কম দামে এড দেখে ওই গুলো নেওয়ার জন্যও অনেক বার মাথা নষ্ট করছি।
আমাকে সব সময় ভালো সাজেশন দেওয়া বড় ভাই তার নাম আব্দুল্লাহ ভাই, আমাকে হঠাৎ বলে ৬০-৭০ থেকে আর ৩০ হাজার মত বাড়ালে এক লাখ টাকায় ভালো বাইক খুঁজে দিতে পারবে। কিন্তু আরো ৩০ হাজার টাকা কিভাবে জোগাড় করবো বাড়ি থেকে বাইক কেনা বারণ তারা ভাবে তাদের ছেলে ঢাকায় বাইক কিনলে পড়াশোনা না করে সারাদিন বাইক নিয়ে ঘুরবে। যাইহোক অনেক ভালোবাসার অনেক আবেগের ডিএসএলআর ক্যামেরাটা শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে ২৮ হাজার টাকা মত পাই। তারপর আসে বাইক কোনটা নিবো সেই ব্যাপারে। এই ব্যাজেটে আরটিআর, পালসার, অনেক পুরাতন বাইক ছাড়া মিলাতে পারিনা হঠাৎ ভাইয়া বলে Lifan KPR বাইক এর কথা আমাকে KPR পাব্লিক গ্রুপে এড করে অনেক বাইকের রিভিও দেখতে বলে।
হটাৎ একটা সেল পোস্ট দেখি সাদমান নামে একটা ভাইয়া তার বাইকটা সেল পোস্ট দিয়েছে দাম ধরেছেন ১লক্ষ ২৫ হাজার ইনবক্সে নক করি সাথে সাথে দামাদামির পর ১ লক্ষ ৮ হাজার ঠিক হয়। বলে রাখা ভালো এর আগে কখনও আমি KPR সামনে থেকে দেখিনি ইউটিউবের সব রিভিও আমি দেখেছি শুধু আর ফেসবুক গ্রুপে সারাদিন পরে থেকে ভালো ভালো রিভিও দেখে পছন্দ করেছি। বাইক কেনার আগে একদিন ধানমন্ডি দেখতে গেলাম দেখেই একটা অন্য রকম অনুভূতি হলো যেটা বলে বোঝাতে পারবো না।এর আগে যেহেতু কেপিয়ার চালাইনি তাই আমি টেস্ট রাইড দিলাম না, দিলো সাথে যে ভাই গেছিলো সে যখন স্টার্ট দিলো সাউন্ড শুনেই আরেকবার প্রেমে পড়ে গেলাম বাইকটার।
তারপরের দিন বাইক নিবো বলে কথা দিয়ে আসলাম। কিন্তু বাকি ৮ হাজারে সর্ট যে যার যার থেকে টাকা ধার নেওয়া যায় আর নিজের জমানো টাকা নিয়েই ১লক্ষ টাকা আমার তারপরও গেলাম আনতে ভাইয়া বললো নাম ট্রানেসফার তো করায় লাগবে ওইদিন বাকি টাকা ভাইয়া ধার দিবে। সাদমান ভাইয়াকে বললাম। তিনি রাজি হলেন (পূর্ব পরিচিতি নেই) নিয়ে আসলাম আমার আবেগ। এই হলো আমার বাইক বেঁছে নেওয়া।
আমি বাইকটি সেকেন্ড হ্যান্ড নিয়েছিলাম ১ লক্ষ ৮ হাজারে নিয়েছিলাম ধানমন্ডি ৩২ থেকে। বাইকটি কিনতে যাওয়ার দিন আব্দুল্লাহ ভাইয়ার সাথে যাওয়ার কথা তিনি তার কাজে যায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায় সারাদিন অপেক্ষায় ছিলাম ভাই কখন আসবে কখন বাইক আনতে যাবো প্রত্যেকটা সেকেন্ড আমার কাছে কয়েক ঘন্টার মত লেগেছিলো।
আমি ক্লাস ৭ থেকে আব্বুর হিরো হোন্ডা চালিয়েছি আর ক্লাস ৯ থেকে ভাইয়ার টিভিএস আপাচি আরটিআর তাই বাইক চালাতে পারা নিয়ে কোন সমস্যা ছিলো না। প্রথম যখন বাইকে উঠলাম বুকটা কেমন যেনো খুশিতে ভরে গিয়েছিল আর বারবার ভাবতেছিলাম বাইকটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। মূল কারন বলতে একদিন ভাইয়ার বাইক নিয়ে বাজারে গেছিলাম আসতে দেরি হয়ছিলো দেখে বকা দিয়েছিলো সেখান থেকেও একটা জেদ কাজ করছিলো না হলে হয়তো পড়া শেষ করে বাইক নিতাম। আমার ১৫০ সিসি বাইক Lifan KPR 150 V1 ।
Click To See Lifan KPR 150 Test Ride Review
প্রতিদিন বাইক চালানো হয়না তবে মন খারাপ হলেই বাইক নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে যায় ভালো লাগে মন ভালো হয়ে যায়। আমি বাইকটা ১বার সার্ভিস করিয়েছি লিফান সার্ভিস সেন্টার থেকে আমার বাইক এর বয়স ৮মাস। সার্ভিস সেন্টারের দ্বায়িত্ব এ যারা ছিলেন তাদের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো লেগেছে। সার্ভিস করানোর পরের মাসেই গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি কোভিট ১৯ এর জন্য। অনেকে পরামর্শ দিয়েছে এখানের লোকাল গ্যারেজ থেকে ফুল সার্ভিস না করাতে ফুল সার্ভিস শুধু একবারই করানো হয়েছে। তবে নানা জায়গা থেকে ছোটখাটো মেরামত করিয়েছি। সত্যি বলতে আমি মাইলেজ কখনো চেক করিনি। তবে আনুমানিক লিটারে ৩৫কিলোমিটার হবে। বের হওয়ার আগে প্রতিদিন ভালো করে কাপড় দিয়ে মুঁছে নিই। ভিতরে কাটা, ময়লা, ধূলা জমাট হলে কোন গ্যারেজ থেকে ফুল ওয়াস করি।
আমি কয়েকজনের পরামর্শ মনে আমার Lifan KPR 150 V1 বাইকে 10W40 গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েল ইউজ করি সেমি সিন্থেটিক। আমার কাছে এটার জন্য আমার বাইক খুবই স্মুথ প্যারফমেন্স দেয়। আমি যেহেতু সেকেন্ড হ্যান্ড নিয়েছি তাই এখনও কোন পার্টস আমাকে চেঞ্জ করতে হয়নি। তবে আমি বাইকের পা-দানি, সিট কভার, রিং ফিটা চেঞ্জ করেছি আমার পছন্দ মত। আমার বাইকের লুকিং গ্লাস শুধু চেঞ্জ করে R15 এর লুকিং গ্লাস লাগানো তাছাড়া আর কোন মডিফাইড করিনি। আমার সর্বোচ্চ তোলা গতি ৯৬ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।
ভালো দিক -
- লং রাইড করার সময় কোন ব্যাক পেইন হয়না
- খুবই স্মুথ
- ব্রেকিং
- কন্ট্রোলিং
- সিটং পজিশন
খারাপ দিক -
- মাইলেজ কম
- পিলিওন সিট কম্ফোর্টেবল না
- টার্নিং রেডিয়াস বেশি
- ওজনে ভারী
- মিটারের সামনের প্লাস্টিক ভাল না
Lifan KPR 150 V1 বাইক নিয়ে ঢাকা থেকে মাগুরা ১৫০ কিলোমিটার প্লাস এটাই আমার লং জার্নি তবে আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম পারবো কিনা। বড়দের পরামর্শ মত এসেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ কোন সমস্যা হয়নি আসতে এবং কনফিডেন্স বেড়েছে। আমার বাইক আমার কাছে একটা আবেগ একটা ভালোবাসা আমার সব থেকে প্রিয় আর ভাল লাগার জিনিস হচ্ছে এই বাইক। এমনকি আমার মন খারাপ থাকলে ফাকা রাস্তায় বা কোন গ্রামের ভিতর একটু রাইড করলেই মন ভাল হয়ে যায় । অন্যদিকে, বাইকে টুকিটাকি সমস্যা দেখা দিলে আমার মন খারাপ হয়ে যায়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠিক করে ফেলি এটাই ছিলো আমার ভালবাসার গল্প।
লিখেছেনঃ আব্দুল্লাহ আর সুমন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।