আম্মুর দেওয়া উপহার পছন্দের Yamaha Fzs Fi V3 - রাসেল রেজা
This page was last updated on 31-Jul-2024 05:18pm , By Shuvo Bangla
আমি মোঃ রাসেল রেজা। আমার বাসস্থান যশোর জেলার মনিরামপুর থানার চাকলা গ্রামে। আমি আপনাদের সাথে আমার ব্যবহার করা Yamaha Fzs Fi v3 বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
আম্মুর দেওয়া উপহার পছন্দের Yamaha Fzs Fi V3
ছোট থেকে বাইকের প্রতি অন্যরকম একটা আগ্রহ ছিল। বাসা থেকে কোথাও গেলে বাইকে যেতে চাইতাম। আমি যখন দশম শ্রেনীতে পরাশুনা করি তখন প্রথম বাইক চালানো শিখি।
যশোর থেকে বাসায় ফেরার পথে এক ছোট ভাইয়ের সাথে তর্ক করে বাইক চালানো শিখেছিলাম। তবে আমি যেভাবে বাইক চালানো শিখেছি ঐ ভাবে বাইক চালানো শেখা একদম ঠিক না। ছোট ভাই বলে এত বড় হয়েছো এখনো বাইক চালাতে পারোনা আর আমি তোমার ছোট হয়েও বাইক চালাতে পারি। আমি ওকে বাইক থামতে বলি। ওর কাছ থেকে বাইক নিয়ে বাইকে উঠি। ছোট ভাইকে বললাম তুমি শুধু বল কোনটার কি কাজ, ও আমাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো কোনটা ক্লাস, কোনটা পিকাপ, কোনটা ব্রেক। এগুলো বুঝে নিয়ে ওকে পিছনে বসিয়ে আমার প্রথম বাইক চালানো শুরু। প্রথমে অবশ্য হাত কাঁপতেছিলো , পিকাপ বেশি ধরা হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু কোনো বিপদ ছাড়াই প্রথম বাইক চালানো সম্পূর্ন হয়। আমার বন্ধুদের বাবার বাইক ছিলো। ওদের সাথে বাইক এ ঘুরতাম। মাঝে মাঝে ওদের বাইক চালাতাম। বাইক চালাতে দেখতাম ভালোয় লাগতো।
Yamaha FZS FI V3 Review By Team BikeBD
বাসায় বলতাম আমি যখন উপার্জন করব তখন একটা বাইক কিনবো। এই ভাবে বাইক এর প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। YouTube এ সব সময় বাইক এর ভিডিও দেখতাম। দীর্ঘ দিন পরে ২৭-০২-২০২০ সালে আমি প্রথম বাইক ক্রয় করি। মা আমাকে না বলে চলে আসে যশোরে। কারণ আমি যশোরে থেকে পড়াশোনা করি। আমাকে নিয়ে বাইক এর শোরুমে যায়। বলে বাইক কিনবো তুই পছন্দ কর। আমিতো খুশিতে আত্মহারা। বেশ কয়েকটা শোরুম ঘুরে দেখলাম। অনেক ভেবে চিন্তে M/S KHAN AUTO থেকে Yamaha FZS Fi V3 ABS মডেল এর বাইকটি ক্রয় করি। Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি নেওয়ার প্রথম কারন এবিএস ব্রেকিং এবং ২য় কারণ কমফোর্ট। বাইকটিতে কোন ব্যাক পেইন নাই।
Yamaha Fzs Fi V3 বাইকটিতে রয়েছে FI সিস্টেম। যার কারণে বাইকটা আমার খুবই পছন্দ হয়। বাইকটি আমি ২,৭২,০০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করি পেপার্স এর টাকাও একত্রে দিয়ে দেই । বাইকটি নিয়ে আমি শোরুম থেকে বেরিয়ে তেল পাম্পে যাই। সেখানে ট্যাঙ্ক ফুল করি। এর পর আমি আমার নতুন বাইকটিতে মাকে নিয়ে বাসায় চলে যাই। এই প্রথম নিজের বাইক রাইড করে অন্যরকমের অনুভূতি পেলাম, যেটা কখনো ভুলার নয়। আমার বাইকে প্রথমে পিলিয়ন হিসেবে আমার মা উঠসে।
আমার বাইক চালানো মূল কারণ ভ্রমন করা । আমি ভ্রমন করতে খুব ভালোবাসি। ছোট থেকে একটাই স্বপ্ন ছিলো নিজের বাইক নিয়ে সারা দেশে ঘুরে দেখার। আমি প্রতিদিন সকালে নিজ হাতে বাইকটা পরিষ্কার করি। সারাদিন ঘোরাঘুরির পর রাতে আবার বাইক পরিষ্কার করে ঢেকে রাখি। প্রতিদিন রাইড করার সময় একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। আমি আমার বাইকটি এখন পর্যন্ত ৫ টা সার্ভিস করিয়েছি সার্ভিস গুলো আমি ইয়ামাহার অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার M/S KHAN AUTO থেকে করিয়েছি । মেকানিক রিপন ভাই খুব যত্ন সহকারে আমার বাইকটি সার্ভিস করে দেন।
Yamaha FZS V3 User Review By Tushar [Team BikeBD]
আমি Yamalube optima prime 10w40 গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করি। যার মূল্য ৪৯৫ টাকা। এখনো পর্যন্ত আমার বাইকটির কোনো পার্টস পরিবর্তন করি নাই। আমার বাইকটিতে কোন রকম মোডিফায় করি নাই। কারন এই লুকটাই আমার ভালো লাগে। প্রথম ২৫০০ কিলোমিটারে আমি ১ লিটার অকটেনে ৩৮ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি। ২৫০০ এর পরে এখন হাইওয়েতে ৫০ এবং সিটিতে ৪৫ কিলোমিটার পার লিটারে মাইলেজ পাচ্ছি ।
Yamaha Fzs Fi V3 বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম
- কম্ফোর্ট
- মোটা চাকা
- কম্ফোর্ট পিলিয়ন সিট
- স্মুথনেস
- এফ আই সিস্টেম
বাইকটি নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। প্রতিটি জিনিসের ভালো মন্দ দিক আছে। আমার বাইকটি চালিয়ে যে দিকগুলো চোখে পড়েছে, যে গুলো আরো ভালো হওয়ার দরকার ছিলো তা নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো ।
Yamaha Fzs Fi V3 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- রেডি পিকাপ কম
- হেডলাইটের আলো হাইওয়ের জন্য যথেষ্ট নয়
- এই বাজেটে লিকুইড কুল অথবা ওয়েলকুল সিস্টেম এর দরকার ছিল
- মিটারে গিয়ার ইন্ডিকেটর দরকার ছিল
- টপ স্পিড কম
Yamaha Fzs Fi V3 বাইকটি নিয়ে আমার প্রথম টুর সাজেক ভ্যালি, রাঙামাটি, বান্দরবান। যশোর থেকে ৮ টা বাইকে মোট ১৬ জন বের হয় ভোর ৪ টায় নড়াইল হয়ে কালনা ঘাট পার হয়ে মাওয়া হাইওয়েতে উঠি। সেখানে আমি প্রথম আমার বাইকটির টপ স্পিড চেক করি। আমি ১১৬ পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি। সেখান থেকে ঢাকা হয়ে খাগড়াছড়ি পৌঁছাই রাত ৮ টার সময়। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর হোটেলে ঘুমাই। সকাল ৭ টায় আবার রওনা দিলাম সাজেকের পথে। দুপুর ১ টায় পৌঁছাই সাজেক। মেঘ ছুঁয়ে দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা সাজেক ভ্যালিতে। যেটা আমি কখনো ভুলবোনা। ওখান থেকে পর দিন সকালে রওনা দি রাঙামাটি হয়ে বান্দরবান। অসম্ভব সুন্দর একটা রোড। বান্দরবানে Hotel Hill View তে রাত যাপন করি।
পরের দিন সকাল ৭ টায় বের হই দেবতাখুমের উদ্দেশ্যে। এত সুন্দর জায়গা আগে দেখি নাই। দেবতাখুমকে কেনো খুমের রাজা বলা হয় তা পৌঁছানোর পর বুঝতে পারলাম। গুরুপ টুরে যে কি মজা এই প্রথম বুঝলাম। খুবই সুন্দর ভাবে ট্যুরটা সম্পন হয়। সব দিক বিবেচনায় আপনারা বাইকটি নিতে পারেন। টপ স্পিড কম থাকলেও ইঞ্জিনটা স্মুথ,ও শক্তিশালী। সবসময় মনে রাখতে হবে, বেশি গতি বেশি ক্ষতি । সব দিক বিবেচনায় বাইকটি নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ রাসেল রেজা
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।