Honda CB Trigger ৩০,০০০ কিলোমিটার রিভিউ – ফাজলে রাব্বি

This page was last updated on 29-Jul-2024 08:07am , By Ashik Mahmud Bangla

আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমি ফাজলে রাব্বি। আমি পাবনা সুজানগরের বাসিন্দা। আমি একজন ছাত্র। আমি ২০১৭ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর Honda CB Trigger বাইকটি কিনি। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার Honda CB Trigger  ১৫০ সিসি বাইক এর ৩০ হাজার কিলোমিটার রাইড এর অভিজ্ঞতা।

Honda-CB-Trigger 

হোন্ডা ট্রিগার ১৫০ ক্রয়ের কারন :

আমি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র। আমার বাসা থেকে আমার কলেজের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলো। মূলত এই জন্যই আমার একটি বাইক খুবই প্রয়োজন ছিল।আমার পছন্দের তালিকায় ছিল ইয়ামাহা এফ জেড, Honda CB Trigger, সুজুকি জিক্সার। কিন্তু বাকি দুইটি বাইকের দাম বেশি হওয়ার কারণে হোন্ডা ট্রিগার আমার বাজেট অনুযায়ী বেস্ট ছিল।হোন্ডা ট্রিগার বাইক টি কিনা আরো বড় একটি কারণ ছিল হোন্ডার ব্র্যান্ড ভ্যালু।

লুক এন্ড ডিজাইন :

হোন্ডা ট্রিগার বাইক দেখতে খুব ভালো। বাইকের ট্যাঙ্কটি মাসকুলার। এবং বাইকের হেডলাইট ঠিক দেখতে এগ্রেসিভ। যা মোট মিলিয়ে বাইকটিকে দেখতে একটি মাসকুলার লুক দেয়।এবং বাইকটির যেকোন বয়সের রাইডারদের সাথে মানানসই।

বিল্ড কোয়ালিটি:

আমারা জানি হোন্ডা পৃথিবীব্যাপী একটি নামকরা ব্র্যান্ড। এবং এই বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটিতে তার পরিচয় পাওয়া যায়।মাইকের বিল্ড কোয়ালিটি দাম অনুযায়ী ভালোর কাতারে পড়বে।এর বডিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকু।বিল্ড কোয়ালিটির ক্ষেত্রে বাইকটিকে ১০ এ ৮ দেওয়া যায়।

Honda-CB-Trigger-30000-Kilometer-Review

  

ইঞ্জিন:

হোন্ডা ট্রিগার বাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫০ সিসির একটি এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি ১৪ বি এইচ পি পাওয়ার এবং ১২.৫ নিউটন মিটার র্টক উৎপন্ন করে ৬৫০০ আর পি এম এ।বাইকের ইঞ্জিন পাওয়ার ফিগার খাতা কলমে কম মনে হলেও রাইডের সময় বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। বাইকের পাওয়ার ডেলিভারি খুব স্মুথ। ৪ হাজার আর পি এম থেকেই এর ইঞ্জিন পাওয়ার টা টের পাওয়া যায়।এর সাথে আছে একটি ৫ স্পিড গিয়ার বক্স। বাইকের গিয়ার বক্সটি প্রথমে একটু হার্ড থাকলেও পরে সফট হয়ে যায়। বাইকটি থেকে আমি ১১০ কিলোমিটার টপ স্পিড পেয়েছি কিন্তু বাইকের একটি প্রবলেম হচ্ছে এর আর পি এম লক। বাইকের আর পি এম ৮ হাজারে লক।তাই টপ স্পিড কম। কিন্তু আর পি এম আনলক করলে এটি থেকে ১২০+ টপ পাওয়া যাবে।

রাইডিং পজিশন:

বাইক রাইডিং পজিশন সম্পূর্ণ আপরাইট। হ্যান্ডেলবারটিও অনেক উঁচু।আমার কাছে এটি একটু বেশি আপরাইট মনে হয়েছে। এবং হ্যান্ডেলবারটিও বাইকের সাথে মানানসই নয়। ফলে আমি পরে চেঞ্জ করে ইয়ামাহা এফজেডএস এর হ্যান্ডেলবার লাগিয়েছি। বাইকে রাইডিং অনেক আরামদায়ক। লং ট্যুরেও কোনো ব্যাক পেইন অনুভব করা যায় না।Honda-trigger-150-cc

ব্রেক,টায়ার এন্ড সাসপেনশন:

বাইকটির সামনে ব্যবহার করা হয়েছে ২৬০মি.মি. একটি ডিস্ক এবং পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে ১৩০মি.মি. ড্রাম ব্রেক। এতে নিশিন কম্পানির ব্রেক কেলিপার ব্যবহার করা হয়েছে। এর ব্রেকিং মোটামুটি ভালো। সাথে আছে সামনে ৮০/১০০ সাইজের টায়ার এবং পিছনে ১১০/৮০ সাইজের টায়ার।টায়ার দুইটি টিউবলেস। টায়ার দুইটির গ্রিপ ভালো। বাইকটির সামনে ব্যবহার করা হয়েছে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে ৩ স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল মনোশক সাসপেনশন। বাইকের সাসপেনশন ভালো।পিছনের সাসপেনশন টি প্রথম দিকে একটু হার্ড থাকলেও প্রথম সার্ভিসের সময় অ্যাডজাস্ট করে নিলে এটি ঠিক হয়ে যায়।

মাইলেজ:

বাইকটি থেকে এখন পর্যন্ত সিটিতে আমি মাইলেজ পেয়েছি ৪৫+কিলো। এবং হাইওয়েতে আমি মাইলেজ পেয়েছি প্রায় ৫৫ কিলো। ১৫০ সিসি হিসাবে বাইকের মাইলেজ সন্তোষজনক।

হেডলাইট এন্ড ইলেকট্রনিক্স:

বাইকের হেডলাইট দেখতে এগ্রেসিভ। কিন্তু এর আলো রাতে হাইওয়ে রাইডের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তার ওপর এটি এসি অপারেটেড। এবং এই বাইকটি সবচেয়ে বাজে দিক হচ্ছে এই বাইকের সুইচ গিয়ার। এই বাইকের সুইচগিয়ার এবং হোন্ডার এন্ট্রি লেভেলের ড্রিম নিও বাইকের সুইচ গিয়ার একি। এবং সুইচ গিয়ার এর কোয়ালিটি ভালো না। হোন্ডার অবশ্যই উচিত ছিল সুইচ গিয়ার এর কোয়ালিটি আরো ভালো করার। এবং অবশ্যই বাইক একটি ইঞ্জিন কিলসুইচ এর প্রয়োজন ছিল।

Honda-Trigger

মেনটেনেন্স:

বাইকটি মেইনটেনেন্স খরচ হাতের নাগালের মধ্যে। এবং এর পার্টস সকল জায়গায় পাওয়া যায়। আমার এই ৩১ হাজার কিলো ব্যবহারের মধ্যে সবচেয়ে বড় মেনটেনেন্স খরচ ছিল এর চেইন স্পোকেট চেঞ্জ। তাছাড়া আমি দুইবার স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করেছি এবং চারবার এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করেছি।

Also Read: Firoz Autos Showroom in Chouhatta, Sylhet, Bangladesh

বাইকটি নিয়ে আমার ভ্রমণ:

বাইকটি নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত অনেকগুলো ছোট বড় অনেক ভ্রমণ করেছি। এর মধ্যে স্মরণীয় ছিল ১ দিনে পাবনা জেলার সব থানা ভ্রমণ।পাবনা টু যশোর বেনাপোল। এছাড়াও পাবনা টু নাটোর, পাবনা টু কুষ্টিয়া ভ্রমণ করেছি।

হোন্ডা ট্রিগার এর ভালো দিকসমূহ:

১.বিল্ড কো়ালিটি খুব ভালো। ২.১৫০সিসি হিসাবে মাইলেজ খুব ভালো। ৩. সাসপেনশন ফিডব্যাক ভালো ৪.স্টক টায়ার এর গ্রিপ ভালো। ৫.গিয়ার বক্স স্মুথ। ৭. মেনটেনেন্স খরচ কম। 

Disadvantages of Honda Trigger

হোন্ডা ট্রিগার এর খারাপ দিকসমূহ:

১.বাইকের সাউন্ড অনেক স্মুথ। হাই স্পিড এ ও ফিল পাওয়া যায়না। ২. বাইকের আর পি এম ৮ হাজারে লক।তাই টপ স্পিড বেশি পাওয়া যায়না। ৩.বাইকের স্টক হেডলাইটের আলো খুবই কম। আবার হেডলাইট এসি ইলেকট্রনিক। ৪. হোন্ডা বাইকের সুইচ গিয়ার গুলোর কোয়ালিটি ভালো হইলেও এই সুইচ গিয়ার এই বাইকের সাথে জাইনা।হোন্ডার উচিৎ ছিল বাইকে ইন্জিন কিল সুইচ দেয়া। প্রতি বাইকের ভালো খারাপ দিক থাকে।কিন্তু সব মিলিয়ে হোন্ডা ট্রিগার ভালো একটি প্যাকেজ।