Hero Hunk ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - নাহিদ শাহরিয়ার
This page was last updated on 16-Jul-2024 10:47am , By Ashik Mahmud Bangla
Hero Hunk ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ
আমি নাহিদ শাহরিয়ার। আমি যশোর জেলায় বসবাস করি। বর্তমানে আমি অনার্স শেষ করে একটি ব্যবসার সাথে জড়িত আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার ব্যবহার করা Hero Hunk বাইকটি নিয়ে ৩০ হাজার কিলোমিটার চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো।
ছাত্র জীবনে আমার ভার্সিটি আমার বাসা থেকে বেশ দূরে অবস্থিত হওয়ায় আমার একটি বাইকের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন আমি চিন্তায় পরে যাই এ ব্যাপারে যে কোন বাইক আমাকে সবচেয়ে কম মূল্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করবে। তাই আমি অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করে দেখলাম একজন ছাত্র হিসেবে আমার জন্য সবচেয়ে ভাল বাইক হওয়া উচিৎ Hero Hunk ।
তাই আমি আমার জীবনের প্রথম বাইক হিসেবে হিরো হাংক ক্রয় করি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ২ বছর বাইকটি ব্যবহার করেছি। আজ আমার অভিজ্ঞতা থেকে হাংক নিয়েই কিছু মতামত ও ভাল-মন্দ দিক নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব ২০০৯ সালে প্রথম হিরো হোন্ডা কোম্পানি হাংক নামে ১৫০ সিসি একটি বাইক বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসে।
এর পরে ধাপে ধাপে সামান্য কিছু আপডেটের সাথে এখনও সেই একই মডেল ধারন করে বাংলাদেশের বাজারে হিরো হাংক চলছে। বর্তমানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দামে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে একমাত্র হাংক এর মাধ্যমে। ১৯ থেকে ৩৫ বছর বয়সী বাইকারদের অন্যতম পছন্দ Hero Hunk ।
Hero Hunk 2019 - First Impression Review
Hero Hunk ফোর স্ট্রোক ১৪৯.২ সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট ২ টি ভালভ ও সর্বোচ্চ 14.4 BHP সমৃদ্ধ ইঞ্জিনের একটি বাইক। বাইকটিতে ৫ স্পিডের একটি গিয়ার বক্স সংযুক্ত করা আছে। বাইকটির ইঞ্জিন খুবই রিফাইন্ড ও নিরব প্রকৃতির। আমার দেখা সকল বাইকে মধ্যে হাংকেই আছে সবচেয়ে আরামদায়ক পিলিয়ন সিট। এই পিলিয়ন সিটের মাধ্যমে আপনার ফ্যামিলি মেম্বারকে নিয়ে লম্বা লম্বা ট্যুর করতে পারবেন অনায়াসে, এতে পিলিয়নের কোমর বা ঘাড় ব্যাথা হওয়ার মত কোনো ইস্যু থাকবেনা।
সব বাইকেরই ভাল ও খারাপ দিক আছে, তাই এই বাইকেও ভাল ও খারাপ দিক বিদ্যমান। এবার এর কিছু ভাল খারাপ দিক নিয়ে কথা বলি।
বাইকটির কিছু ভাল দিক-
- এর লুকিং এক কথায় জোস
- খুবই সুন্দর এরোডাইনামিক ডিজাইন ও মাসকিউলার ফুয়েল ট্যাংক দেয়া হয়েছে
- এর পাওয়ার আপনাকে কখনোই হতাশ করবে না। বিশেষ করে ওভারটেকিং এর সময় আপনি খুব ভাল কনফিডেন্স পাবেন।
- বাইকটি সারাদিন রাইড করেও আপনি মোটেও ক্লান্ত হবেন না। এর সিটিং পজিশন আপনাকে খুবই আরামদায়ক ফিল দিবে।
- বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি খুব ভালো।
এবার আসি খারাপ দিকে। প্রত্যেক বাইকেই খারাপ কিছু দিক থাকে। Hero Hunk এরও খারাপ দিক আছে। তাই এখন আমি হাংক নিয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- এতে আছে এসি অপারেটেড হেডল্যাম্প, যা অফ রোডের জন্য বেশ অসুবিধা সৃষ্টি করে। হাইওয়েতে আলো সল্পতা অনুভব করি ।
- নিম্ন আরপিএমে ততটা ভাইব্রেশন ফিল না করলেও হাই আরপিএম বা টপ এন্ডে বেশ ভাল রকমের ভাইব্রেশন ফিল করা যায়। ইঞ্জিনটি বেশ রিফাইন্ড হওয়া সত্বেও এতে ভাইব্রেশন থাকাটা খুব হতাশাজনক।
- বাইকের ওজন বেশি হওয়াতে এর চেইন খুব ঘন ঘন সার্ভিস করতে হয়। ৮ হাজার কিলোমিটার যেতে না যেতেই চেইনে সমস্যা দেখা দেয়। অবশ্য লোকাল মার্কেটে কিছু ভাল মানের চেইন পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করে আমি বেশ শান্তি পেয়েছি।
- আমি ৩০ হাজার কিলোর ভেতরে ৩ বার ক্লাচপ্লেট চেঞ্জ করেছি। বাইকটি কালার কোয়ালিটি উন্নত মানের নয়।
এর টপ স্পিড আমি পেয়েছি ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। বাইকটি ইনিশিয়াল পিকআপ বা রেডি পিকআপ খুবই ভাল মানের। যদিও এর টপ স্পিড নিয়ে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না কখনোই। টপ এন্ডে আরো কিছু পাওয়ার প্রডিউস করাতে পারলে হয়ত আরো বেশি টপ স্পিড পাওয়া যেত। যদিও দৈনন্দিন ব্যবহারে টপ স্পিড কোনো প্রভাব ফেলে না।
আপনি যেকোনো বাইকের সাথে ছোটখাটো রেস দিতে পারবেন। কিছুদিন চালানোর পরে আপনি এই বাইকটিকে নিজের একটি একটি অংশ হিসেবে ভাবতে শুরু করবেন এর বিল্ড কোয়ালিটির কারনে। এক কথায় এই বাইক কখনোই আপনাকে হতাশ করবেনা। এর ইঞ্জিনের শব্দ এতই মনকাড়া যে আপনার শুধু শুনতেই ইচ্ছা করবে।
যেটি সবচেয়ে বেশি উপকারী সেটা হচ্ছে এর কন্ট্রোল। বাংলাদেশের রাস্তায় হাংক নিয়ে এক্সিডেন্ট করেছে এমন লোক আমি খুব কমই দেখেছি। এর কারন আমি যেটা মনে করি তা হচ্ছে এর চাকার সাইজ। অনেকেই এই ব্যাপারে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন। এই বাইকের ভাল ব্যালেন্সের পেছনের কারন হিসেবে আছে এর চাকা, এর কারন হচ্ছে এতে আছে ১৮ সাইজে রিম।
যা এই সেগমেন্ট এর অন্যান্য অনেক বাইকে নেই। এই ১৮ সাইজের রিমের কারনে বাকটি তার নিজের ভারসাম্য খুব ভাল ভাবে রক্ষা করতে পারে। সহজে যদি বলি তাহলে বলব আমরা জানি যে গাড়ির চাকা যত বড় সে গাড়ির ভারসাম্য তত ভাল। কোম্পানি ইচ্ছা করলেই চাকা মোটা দিতে পারে কিন্তু তাতে অনেক সমস্যা আছে। প্রধান সমস্যা মাইলেজ কমে যাওয়া।
আমি কখনো বাইকের মাইলেজ টেস্ট করিনি তবে ৫০০ টাকার পেট্রলে আমি ২৫৭ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করেছি। এতে ৪৭ এর আশেপাশে মাইলেজ ছিল যা বেশ স্বস্তিকর।
আমি বাইকটি দিয়ে বেশ কতগুলো লং ট্যুর করেছি, এরমধ্যে যশোর-ঢাকা (৫ বার), যশোর-কুয়াকাটা, যশোর-কক্সবাজার। লং ট্যুরে এই বাইক আমার পয়সা উসুল করে দিয়েছে। এক কথায় অসাধারণ! ভাল মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে আপনার বাইক আপনাকে ভাল মানের সার্ভিস দিবে এটাই স্বাভাবিক। আমি প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি।
আমি 10w-30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। আমি ৩০ হাজার কিলোর ভেতরে ৩ বার ক্লাচপ্লেট চেঞ্জ করেছি। আমি খুবই স্বাভাবিকভাবে বাইক চালানো সত্বেও ঘনঘন ক্লাচ প্লেট পালটানোর প্রয়োজন হয়। এটা খুবই বিরক্তিকর। হয়তো আমার চালানোর ধরন ভাল ছিলোনা বিধায় আমি এরকম সমস্যায় পড়েছি। অনেকে আছে যাদের হাংক ৫০ হাজার কিলো চলার পরেও ক্লাচপ্লেট পালটাতে হয়নি। এটা নির্ভর করে আপনার রাইডিং এর ধরনের উপর।
ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে এর স্পিডোমিটারটা খুব একটা ভাল লাগেনি৷ এটি বেশ ইনফরমেটিভ হলেও আরেকটু সুন্দর, বড় ও ফুল ডিজিটাল হতে পারতো। বাইকটি কালার কোয়ালিটি উন্নত মানের নয়। এর কারন হচ্ছে এখনকার বাইক কোম্পানিগুলো দামের কথা চিন্তা করে বাইকের কালার কোয়ালিটিতে ছাড় দিচ্ছে। এরপরে কোম্পানি যা দিচ্ছে তা যথেষ্ট ভাল।
Hero Hunk আপনাকে অসাধারণ রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দিবে। এই বাইক আপনি প্রায় সব রকমের রাস্তায় আরামসে চালাতে পারবেন। আপনি অফিসে যাওয়া আসা করতে পারবেন, লং ট্যুর দিতে পারবেন, সঙ্গীকে নিয়ে একটি সুন্দর ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন। কিছু খারাপ দিক সেক্রিফাইস করলে এই বাজেটে হাংকই সেরা। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ নাহিদ শাহরিয়ার
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।