Bajaj Platina Comfortec ES ২৩০০০ কিলোমিটার রাইড - এখলাস জামী
This page was last updated on 27-Jul-2024 10:26pm , By Raihan Opu Bangla
আমি এখলাস জামী, ব্যাংকিং পেশায় আছি। আমার স্থায়ী ঠিকানা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা। বর্তমানে আমি আমার স্থায়ী নিবাসেই বসবাস করছি। আমি গত তিন বছর যাবৎ Bajaj Platina Comfortec ES বাইকটি রাইড করছি। ২৩ হাজার কিলোমিটার রাইড করার পর আমি আমার রাইডিং অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
যদিও কম সিসির এসব কমিউটার বাইকের প্রতি বাইকার্সদের আগ্রহ যথেষ্ট কম, তবুও আমি আজ আপনাদের বলব কেন আমি এধরনের একটা বাইক কিনলাম এবং আনন্দের সাথে এখনো পথ চলছি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
Bajaj Platina Comfortec ES ২৩০০০ কিলোমিটার রাইড - এখলাস জামী
প্রথম বাইকঃBajaj Platina Comfortec ES বাইকটিই আমার প্রথম বাইক। আমি বাইক চালানো শিখেছি দশ বারো বছর আগে আমার বন্ধু সুজনের জংশেন ১০০সিসি বাইক দিয়ে। টুকটাক দুই একবার বাদে বলতে গেলে বন্ধুর এই জংশেন ১০০ সিসি বাইক ছাড়া আমি তেমন কোন বাইক আগে রাইড করিনি। আমার শেখা বা রাইডিং স্কিল ডেভেলমেন্ট যেটাই বলি না কেন আমি ঔ বন্ধুর জংশেন বাইক দিয়েই শিখেছি এবং আমি সেই বন্ধু ও তার বাইকটির প্রতি কৃতজ্ঞ।
বাইকের প্রতি ভালোবাসাঃ একটা বাইকের শখ ছিল বহুদিনের, আর অন্য দশটা তরুন বা যুবকের মতই। ছাত্র জীবনে বন্ধুদের বাইকে চড়তাম, ছুঁয়ে দেখতাম, ভাবতাম নিজের একটা থাকলে কেমন মজা হত, এইসব আরও কত কি। বাইক কেনার কথা বাড়ীতে বলার মত সাহস আমার ছিলনা। শুধু ভাবতাম যদি থাকত। অনেক সময় অবান্তর ভেবেছি, মনে হত কেও যদি হুট করে উপহার দিয়ে বসে।
কেউ তেমনটি করেনি, আমারও বাইক নিয়ে ছোটাছুটি করা হয়ে ওঠেনি। যতই সময় গড়িয়ে গেছে ততই বাইকের প্রতি ভালোবাসা বেড়েছে। না পাওয়া জিনিসের প্রতি আগ্রহ ক্রমাগত বাড়তে থাকে এটাই স্বাভাবিক। এরকম স্বাধীন একটা বাহন যেটা দিয়ে যেখানে খুশি সেখানে, যখন খুশি তখন যাওয়া যায় এর চেয়ে আকর্ষণীয় আর কি হতে পারে।
বাইকের প্রতি ভালোবাসার আরো একটা কারন হলো, আমি মাষ্টার্স পড়াকালীনও বাইক চালাতে পারতামনা। আর আমার বেশীরভাগ বন্ধুরাই এটা নিয়ে তামাশার ছলে কথা বলতো, কিন্তু কখনো বাইক চালানো সেখাতো না। আজ না কাল, কাল না পরশু এমন করে শুধু সময় গড়িয়ে গেছে।
ফলে আমার বাইক চালানো শেখা না হলেও বাইকের প্রতি ভালোবাসার আরো বেড়েছে। আমি একটা সময় সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেললাম যে নিজের বাইক দিয়েই চালানো শিখবো, কারো কাছে অনুরোধ করবো না। পরবর্তীতে সুজন বাইক কিনলো এবং আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হলাম, কারন সুজনই স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাকে বাইক চালানো শিখিয়েছিল। তবে গভীর ভালোবাসার কারণ উল্লেখ করা খুব কঠিন, যেহেতু এই ভালোবাসা মন থেকে প্রবাহিত হয় তাই অনেকটাই ইলজিক্যাল।
কেন আমি Bajaj Platina Comfortec ES বাইকটি কিনলামঃ প্লাটিনা কেনার পর বন্ধু বান্ধব অনেকেই বলতে শুরু করলো এ বয়সে প্লাটিনা কেনা ঠিক হয়নি, পালসার না কিনি অন্তত বাজাজ ডিসকভার বা হিরো গ্ল্যামার কেনা উচিত ছিল। বন্ধুদের সাথে আমিও একমত। কিন্তু আমি অনুভব করি যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শখ গুলো কমতে থাকে আর দায়িত্বগুলো বাড়তে থাকে ক্রমাগত। তবে Bajaj Platina Comfortec ES কেনার আরো অনেক কারনের মধ্যে অন্যতম হলো এর মাইলেজ ও কমফোর্ট।
ডেইলি কমিউটের জন্য কম দামে এর চেয়ে ভালো অপশন খুব একটা নেই। বাজাজ অন্যতম একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড, এর রিসেল ভ্যালু বেশ ভালো। তাছাড়া এটা একটা লো-কষ্ট মেইনটেন্যান্স বাইক। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের যে রাস্তা তাতে প্লাটিনার সাসপেনশন ফিডব্যাক খুব ভালো। এই তফাৎটা টের পাওয়া যায় সমগোত্রীয় অন্য বাইক চালানোর সময়।
Also Read: Bajaj Platina 100 Price in Bangladesh
কিভাবে, কোথা থেকে, কত টাকায় আমি বাইকটি কিনলামঃ ঈশ্বরদীতে কাছাকাছি দুরত্বে আছে টিভিএস, হিরো এবং বাজাজ শো রূম। হোন্ডার কোন আউটলেট তখন ছিলনা, তাই আমি মোটামুটি প্রি-ডিটারমাইন্ড ছিলাম যে বাজাজ অথবা হিরো কোন একটা কিনব। সব গুলো আউটলেটই আমার বাসা থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে।
২০১৭ সালের মে মাসের ছয় তারিখ সকালবেলা দুলাভাইকে সাথে নিয়ে ঈশ্বরদীর বাজাজ অথোরাইজড থ্রিএস ডিলার পয়েন্ট, মেসার্স মনসুর ট্রেডিংয়ে প্রথমে গেলাম। বাজাজ ভি-১৫ বাইকটা বেশ মনে ধরলো কিন্তু বাজেটে ছিলনা, আবার ডিসকভার ১০০সিসি তখন ষ্টকে নেই। তিন-চারদিন দেরী হবে আসতে। অন্য কোন ব্র্যান্ড দেখার আগ্রহও বোধ হলোনা তাই একটা লাল রঙের Bajaj Platina Comfortec ES বাইক ১,১৭,৫০০/- টাকায় ক্রয় করেছিলাম।
প্রথম চালানোর অনুভূতিঃ সার্ভিস সেন্টার থেকে যখন বাইক রেডি করে আমাকে বলা হলো চালিয়ে দেখুন সব ঠিক আছে কিনা। আমি ছোট্ট এক চক্কর দিয়ে কিছুই না বুঝে বললাম, চলবে, সব ঠিক আছে। আমি এত এক্সাইটেড ছিলাম যে কিছুই দেখিনি। যদিও কি কি বিষয় খেয়াল করতে হয় আমি তার তেমন কিছুই জানতাম না তখন। বাসায় ফিরে এসে দেখি হেড লাইট অফ হয়না, সুইচ খুঁজে পাচ্ছিনা।
অগত্যা আবার সার্ভিস সেন্টারে গেলাম, ওরা বললো এটা AHO টেকনোলজি, হেড লাইট সবসময় অন থাকবে, বন্ধ করার কোন সুইচ নেই। বুঝে নিয়ে ফিরে আসছি আর মানুষের হেড লাইট অফ বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। আমি সত্যিই দুঃখিত যে অনুভূতি ব্যক্ত করার ভাষা আমার নেই, শুধু বলতে পারি প্রথম প্রেমের মত আবেগপ্রবন ছিলাম।
কেন আমি Bajaj Platina Comfortec ES বাইকটি চালাইঃ চাকুরীসূত্রে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকা থেকে বদলী হয়ে নিজ এলাকা পাবনার ঈশ্বরদীতে চলে আসি। আমার অফিস বাড়ী থেকে সাত কিলোমিটার দুরে। প্রতিদিন ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সাতে অফিসে যাতায়াত করতে গিয়েই একটা বাইকের প্রয়োজন অনুভব করতে থাকি। দৈনিক ঠিকঠাক মত অফিসে যাবার জন্য বাইকটা তখন শখ থেকে প্রয়োজনে রুপান্তরিত হয়েছে। বাইকের প্রতি ভালোবাসা, অবাধ স্বাধীন ভাবে চলাফেরার সুবিধা আর দৈনিক অফিসে যাবার প্রয়োজনে আমি বাইক চালাই। প্লাটিনা চালাই এর দারুন মাইলেজ ও কমফোর্টের কারনে।
Bajaj Platina Comfortec ES বাইকটির ফিচারসঃ
- বাইকটির ফ্রন্টে আছে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং রিয়ারে আছে টুইন স্প্রিং সাসপেনশন। যা এই সেগমেন্টের যেকোন বাইকের থেকে ভালো সাসপেনশন ফিডব্যাক দেয়। রাস্তার অবস্থা যেমনই হোক, সিঙ্গেল বা পিলিয়ন নিয়ে কখনোই বিরক্ত হতে হয় না।
- এর ফ্রন্ট টায়ার সাইজ ২.৭৫-১৭” এবং রিয়ার টায়ার সাইজ ৩.০০-১৭” । দুটিই টিউব সম্বলিত টায়ার।
- সামনে এবং পেছনে উভয় ক্ষেত্রেই ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।
- এর টুইন স্পার্ক DTSI ১০২ সিসি ইঞ্জিন খুবই জ্বালানী সাশ্রয়ী।
- প্রশস্ত সিট হওয়ায় পিলিয়ন নিয়ে রাইডে বেশ আরামদায়ক।
- এটিতে রয়েছে AHO প্রযুক্তি।
- হেড ল্যাম্প এবং টেইল ল্যাম্প হ্যালোজেন লাইট। সহ সব গুলো ইন্ডিকেটরই ক্লিয়ার বাল্ব সম্বলিত।
- এর মিটার প্যানেল পুরোটাই এনালগ। এতে স্পিডোমিটার, ওডোমিটার, ফুয়েল গজ থাকলেও কোন আরপিএম মিটার নেই।
Also Read: Bajaj Bike Price In Bangladesh
প্রতিদিন চালানোর অনুভূতিঃ প্রতিদিন সাত সাত চৌদ্দ কিলোমিটার রাইড। সকালে অফিসে যাই বিকালে ফিরি। ছুটির দিন গুলোতে আশপাশে একটু আধটু ঘোরাঘুরি, এভাবেই প্রথম পাঁচশত কিলোমিটার রাইড করি। যতই দিন যেতে থাকে ততই যেন বাইকটা আপন হতে থাকে। ধীরে ধীরে বাইকটা আমার প্রয়োজন মিটিয়ে অবসরে আমার ভ্রমনসঙ্গী হয়ে ওঠে। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি আশপাশের জেলা গুলোর দর্শনীয় স্থান ভ্রমনে।
বাইকটির সার্ভিসিং বিষয়ক তথ্যঃ আমি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাজাজ অথোরাইজড ডিলার পয়েন্টের সার্ভিসিং সেন্টার থেকে বাইক সার্ভিস করাই। ম্যানুয়াল অনুযায়ী প্রথম চারটা ফ্রি সার্ভিস এবং পরবর্তী চারটা পেইড সার্ভিস করাই। প্রথম সার্ভিস করিয়েছিলাম ৫১০ বা ৫২০ কিলোমিটারে। পরের তিনটা ফ্রি সার্ভিসিং করিয়েছি প্রতি ১০০০ বা ১২০০ কিলোমিটার পরপর। অর্থাৎ প্রতিবার ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জের সময়ই আমি সার্ভিসিংটা করিয়ে ফেলি। পরবর্তী চারটা পেইড সার্ভিসের সময় এই গ্যাপটা ছিল ২০০০ বা ২৫০০ কিলোমিটার পর পর। এর মধ্যে অবশ্য আমি মোট চারবার ফুল সার্ভিস বা মাষ্টার সার্ভিসিং করিয়েছি।
২৫০০ কিলোমিটারের আগে ও পরে বাইকটির মাইলেজঃ আমি এখন পর্যন্ত খুব সন্তুষ্ট এর মাইলেজ নিয়ে। ২৫০০ কিলোমিটার রাইডের আগে প্রতি লিটারে ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাওয়া যেত। ২৫০০ কিলোমিটার রাইডের পরে, ইনফ্যাক্ট আমার বাইকের ক্ষেত্রে এটা ৩০০০ কিলোমিটার রাইডের পর হতে এখন পর্যন্ত প্রতি লিটারে ৬৫ থেকে ৬৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছি। এখানে একটা কথা অবশ্যই বলতে হবে যে, আমি সিটি রাইড তেমন দেইনি, এই মাইলেজ হাইওয়েতে পেয়েছি। এর বড় কারণ হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে সিটি রাইড দেবার তেমন যথেষ্ট সুযোগ নেই, তাই আমি সিটি রাইডের মাইলেজ উল্লেখ করতে পারছিনা।
বাইকের যত্ন ও মেইনটেন্যান্সঃ আমার এই ২৩,০০০ কিলোমিটার রাইডে বাইকের বাহ্যিক যত্নের চেয়ে ইঞ্জিনের যত্ন সবসময় বেশী গুরুত্ব পেয়েছে। ব্রেক ঠিক মত কাজ করে কিনা। সঠিক টায়ার পেশার আছে কিনা, স্পার্ক প্লাগ নিয়মিত চেক, ক্লাচের ফ্রি-প্লে ঠিক আছে কিনা, চেইন লুবিং, সঠিক মাত্রায় চেইন টাইট আছে কিনা এ সকল বিষয় আমি সবসময় খেয়াল রাখি। এসব বিষয়ে একটু উনিশ বিশ হলেই সার্ভিসিং সেন্টারে দৌড়াই। এছাড়া বাহ্যিক যত্নের মধ্যে নিয়মিত বাইক ওয়াশ করি, কিন্তু বাইক রেগুলার মোছা হয়না। এ ব্যাপারে আমি একটু অলস।
আমার বাইকে ব্যবহৃত ইঞ্জিন ওয়েলঃ আমি প্রথম এক বছর রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী Moblie Super 40T 20w50 ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করি। পরে Visco 20w50 ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করি। এখন আমি Total 20w50 ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করছি। সব গুলোই মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করেছি। ব্র্যান্ড পরিবর্তন করলেও কখনো কোম্পানী রিকমেন্ডেড ইঞ্জিন ওয়েল গ্রেড পরিবর্তন করিনি।
বাইকটির স্পেয়ার পার্টস পরিবর্তন ও মডিফিকেশন বিষয়ক তথ্যঃ যখন এই রিভিউটি লিখছি তখন আমার বাইকের মিটার রিডিং হচ্ছে ২৩,২৬২ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটা লং ট্যুর দেবার পরও তেমন খুব বেশি কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি। আমি এক্ষেত্রে ভাগ্যবান বলা যায়। যেগুলো পরিবর্তন করেছি তা হলোঃ
- তিনবার বল রেসার
- একবার সামনের ও পেছনের ব্রেক সু
- একবার পেছনের টিউব
- দুইবার স্পার্ক প্লাগ
- চারবার এয়ার ফিল্টার
- ছয়বার ওয়েল ফিল্টার
ফুল সেট চেইন স্পোকেট (চেইন সহ) বদলানোর ঘোষনা এসেছে কিন্তু লকডাউনের কারনে স্থগিত আছে। খুব দ্রুত বদলে ফেলবো। বাইকটিতে কোন প্রকার মডিফিকেশন করা হয়নি, এমনকি প্রচলিত ইঞ্জিন ডাষ্ট গার্ডও লাগানো হয়নি।
আমার বাইকে তোলা সর্বোচ্চ স্পীডঃ সাধারনত আমি ষাট স্পীডে কমফোর্টেবল থাকি, এবং আমি এটা মেইনটেইন করি। আমার ধারনা ছিল প্লাটিনা বাইকে ঘন্টায় আশি বা তার বেশী আশা করা যায়না। তবে আমি একবার ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে পিলিয়ন সহ এবং আরেকবার বনপাড়া-হাটিকুমড়ো–লং রোডে পিলিয়ন ছাড়া স্পীড চেক করেছি, প্রতি ক্ষেত্রেই ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার পেয়েছি। তবে ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার কন্টিনিউ করা যায়না বাইকে খুব ভাইব্রেশন ফিল হয় এবং কন্ট্রোল করতে একটু সমস্যা হয়।
বাইকটির ৫ টি ভালো দিকঃ
- এক্সিলেন্ট মাইলেজ
- রিয়ারের টুইন স্প্রিং সাসপেনশন, যা এই সেগমেন্টের যেকোন বাইকের থেকে ভালো সাসপেনশন ফিডব্যাক দেয়
- প্রশস্ত সিট হওয়ায় পিলিয়ন নিয়ে রাইডে বেশ আরামদায়ক
- বিল্ট কোয়ালিটি বেশ ভালো
- কম সিসির বাইক হওয়া স্বত্ত্বেও এর ইঞ্জিন সাপোর্ট বেশ ভালো, অর্থাৎ দীর্ঘ যাত্রায় এটি সহজে বসে পড়ে না।
বাইকটির ৫ টি খারাপ দিকঃ
- হেড লাইটের আলো খুবই কম যা দিয়ে নাইট রাইডিং করা খুব কঠিন। বেশ ভালো রকম সমস্যায় পরতে হয়।
- ৬০+ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পীডেই ভাইব্রেশন ফিল হয় এবং ৭৫+ স্পীডে কন্ট্রোলে একটু সমস্যা হয়
- চিকন টায়ারের কারনে অল্পতেই স্কীড করে
- টিউব টায়ার হওয়াতে যখন তখন লিক হয়ে বিড়ম্বনার ভয় আছে
- ফুল এনালগ মিটার প্যানেল যাতে কোন আরপিএম মিটার নেই ফলে থ্রোটল কন্ট্রোলে অভিজ্ঞতাই একমাত্র ভরসা
আমার বাইকে করা লম্বা দুরত্বের ভ্রমণঃ আমি সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি আশপাশের জেলাগুলোর দর্শনীয় স্থান ভ্রমনে। এই বাইকে আমি এখন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলা সহ মোট ৩২টি জেলা ভ্রমণ করেছি। আজ আমি সংক্ষেপে বলব ঈশ্বরদী থেকে বান্দরবন-থানচি-আলীকদম হয়ে কক্সবাজার যাওয়া এবং কক্সবাজার থেকে ফেনী হয়ে ফিরে আসার। ঈশ্বরদী থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় রওনা হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে দুপুর দেড়টায় ঢাকা পৌঁছাই। মাঝে সিরাজগঞ্জ রোড, টাঙ্গাইল, কালিয়াকৈরে যাত্রা বিরতি করি। ঢাকা থেকে পূর্বাচল হয়ে দাউদকান্দি পৌঁছাতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো।
আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল রাতে রাইড করবনা কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে চলতে চলতে মনে হল যতদুর যাওয়া যায় ততদুর এগিয়ে যাই। রাত সাড়ে দশটায় চট্টগ্রাম পৌঁছাই। চট্টগ্রামে রাত কাটিয়ে সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে পতেঙ্গা আসি। দুপুরে বান্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হই এবং বিকাল সাড়ে চারটা-পাঁচটার মধ্যে বান্দরবনে পৌঁছে গেলাম। পরদিন সকালে প্রথমে গেলাম নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে।
নীলাচল থেকে ফিরে না এসে নীলাচলের পাশের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলাম নীলগিরির পথে। নীলগিরি থেকে থানচি বাজারে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে আলীকদমের পথে রওনা হলাম। দুপুরে খাবার সময় টং মা হং রেস্টুরেন্টের ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করলাম সামনের রাস্তাতেও কি এমন খাড়া পাহাড়? উত্তরে সে খুব ধীর স্থীর ভাবে জানালো, সামনে আরো বড় পাহাড়, আরো বড় বড় ঢাল। সত্যি বলতে কি থানচি থেকে আলীকদম পর্যন্ত কোন ছবি তুলতে পারিনি ভয়ে। বিভিন্ন যায়গায় বিরতি নিতে নিতে রাত আটটার সময় কক্সবাজার পৌঁছে সরাসরি গিয়েছি সুগন্ধা বীচে।
পরদিন সারাদিন ইনানী, হিমছড়ি, মেরিন ড্রাইভ ঘুরে বিকেলে ফেরার পথে রওনা হই। চকোরিয়া পার হয়ে বরইতলী মোড় থেকে পেকুয়া-বাঁশখালী রোডে যাত্রা করে আনোয়ারা হয়ে চট্টগ্রাম আসি রাত দশটায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে চলতে থাকলে রাত দিন মাথায় থাকেনা। রাত তিনটায় একটানা কুমিল্লা এসে আর শরীরে সায় দিলনা। একটানা এত পথ চলেছি এরকম একটা কম সিসির বাইকে ভাবা যায়? প্লাটিনা কখনোই পথে হতাশ করেনি। পরদিন সকালে ঢাকা হয়ে বাড়ী ফিরে আসি।
আমার বাইকটি নিয়ে আমার চুড়ান্ত মতামত ও পরামর্শঃ সাধারনত বাইকটি ডেইলি কমিউটার হওয়া স্বত্তেও আমি সর্বক্ষেত্রে পিলিয়ন নিয়ে বাংলাদেশের ৩২টি জেলা ভ্রমণ করেছি কোন ঝামেলা ছাড়া। এটি এমন একটা বাইক যা আপনাকে পথে বিড়ম্বনায় ফেলবেনা। প্লাটিনা নিয়ে পাহাড়ে যাবার সময় অনেকেই ভয় দেখিয়েছে, আবার ফেরার পরও অনেকে বলেছে এই বাইক নিয়ে পাহাড়ে ওঠা ঠিক হয়নি।
আমি বলব আপনার যদি সাহস এবং মনোবল থাকে তাহলে বাইক কোন ম্যাটার না। আমি যদি পিলিয়ন নিয়ে এই বাইক দিয়ে ডিম পাহাড় উঠতে পারি তাহলে আপনারাও পারবেন। দীর্ঘ ভ্রমনে ক্লান্তির ছাপ তেমন অনুভব করিনি। যারা কম বাজেটের মধ্যে এমন একটা বাইক খুঁজছেন যা দিয়ে দৈনিক প্রয়োজন মেটানো যায় এবং অবসরে কিছু ভ্রমন করা যায়, তাদের জন্য এটা একটা ভালো অপশন। সবাইকে ধন্যবাদ, মনযোগ দিয়ে আমার কথা পড়ার জন্য। লেখার ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আমার এই রিভিউ থেকে আপনি যদি ন্যুনতমও উপকৃত হন তবে আমার লেখা সার্থক হবে।
লিখেছেনঃ এখলাস জামী
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।