Bajaj Discover 125 ১৪,৫০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - মিনহাজ

This page was last updated on 20-Nov-2023 08:42am , By Shuvo Bangla

আমার নাম মিনহাজ উদ্দিন ।আমি ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ৩ তারিখ Bajaj Discover 125 সিসির বাইকটি ফুলবাড়িয়া বাজাজ এর শোরুম আনিস বাজাজ হতে ক্রয় করি।


Bajaj Discover 125 ১৪,৫০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ 


এখন জুন মাস চলছে সব মিলিয়ে বাইকটির বয়স ৩ বছর। এই দীর্ঘদিনে বাইকটি চলেছে মাত্র ১৫,৪০০ কিলোমিটার। আমি বর্তমানে ময়মনসিংহের ভালুকা থানার উথুরা ইউনিয়নে বাস করি। আর হ্যা এটাই আমার জিবনের প্রথম বাইক।

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমি যখন এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হই তখন আব্বুকে বললাম দেখো আব্বু সবার তো বাইক আছে তাছাড়া তুমি মসজিদে ইমামতি করো দৌড়াদৌড়ির জন্য একটা বাইক দরকার। সাইকেল নিয়া আর কত? এরপর আব্বু ভাবল হ্যা ঠিকি তো।

আব্বু জানি কার থেকে মতামত নিয়ে আমার সাথেও পরামর্শ করে বাজাজ এর শোরুম থেকে বাজাজ ডিসকাভার ১২৫ সিসি (নন ডিস্ক) বাইকটি ক্রয় করে। আমি তখন মটর সাইকেল চালাতেও পারিনা ওইটা দিয়েই আমার প্রথম বাইক চালানে শিখা। যাইহোক এই বাইক ক্রয় করার কারনে খরচ অনেক কমে গিয়েছে যেখানে প্রতিদিন ১২০ টাকা ভাড়া লাগতে সেখানে ১০০ টাকার তেল নিলে ২ দিন আসা যাওয়া করতে পারি।

কলেজের আসা যাওয়ার জন্যই আমার বাইকটি কেনা ও আব্বুও মাঝেমধ্যে মসজিদে আসা যাওয়া করে । আমি বাইকিং আর আমার বাইকটাকে ভালবাসি একারনে যেখানে আমার কলেজে আসা যাওয়া যেখানে অনেক টাইম ও খরচ বেশি পড়ত সেখানে টাইম ও বেচে গেছে + আব্বুও একটু খরচের হাত থেকে বেচে গেছে ও তিন ওয়াক্ত বাইক নিয়েই যেতে পারে একটু কষ্ট কম হয়।


তাছাড়া এই ছোট বাইক দিয়ে অনেক প্রকৃতি প্রেমি হতে পাড়ছি অনেক ভ্রমন করেছি। আর বাইক একটা আত্তার শান্তি। আমি আমার বাইকটা বেছে নেওয়ার কারন কলেজে আসা যাওয়া খরচের চিন্তা করে ও আব্বু কষ্ট যাতে একটু লাগব হয় এই কারনেই মূলত বেছে নেওয়া। আর বাইক কেনার পেছনে একমাত্র কারন ছিল কলেজে আসা যাওয়া ও আব্বু বলত খুব কষ্ট সাইকেলে যাওয়া তা শুনেই হুট করে পরামর্শ করে ক্রয় করে ফেলা।

বাইকটি কোথা থেকে কিনেছি উপরেই একবার বর্ননা করেছি এরপরেও আবার বলছি ফুলবাড়িয়া আনিস বাজাজ থেকে কেনা। যার দাম নিয়েছিল এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। বাইকটি কিনতে যাওয়ার দিন মন প্রচুর আনন্দে ছিল। কারন আমার প্রচুর ইচ্ছে ছিল ডিসকাভার ১২৫ সিসি বাইকটি কেনার কারন মন চাইলেও বড় বাইক আব্বুর পক্ষে কেনে সম্ভব ছিলনা তাছাড়া আব্বুও চালাবে সব চিন্তা করে ডিসকাভার আমাদের জন্য বেষ্ট চয়েজ ।

Also Read: Bajaj Discover 125 Discount Offer By Uttara Motors!

বাইকটি যখন কিনে বাড়িতে আনার পর আমি যখন চালানের ট্রাই করি তখন নিজের কাছে মনে হচ্ছিল আমি আকাশে উড়ছি। এর আগে জীবনে কেনদিন অন্য কারো বাইক ধরেও দেখছিনা চালানোর উদ্দেশ্যে। বাইকটি যখন আমি প্রথম বারা রাইড করি আমার মনে হইছিল এই যেনো পড়ে কিছু হয়ে গেল আমার। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ ১ ঘন্টা চালানোর পরেই সব যেনো কিরকম ঠিকঠাক হয়ে গেল আর আব্বু আগে থেকেই পারত মুটামুটি ।

এর আগে কখনো বাইক চালানোর ট্রাই করা হইনি। এই বাজাজ ডিসকাভার বাইকটি আসলে বলতে গেলে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। বাইকটির ইন্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট ১২৪সিসি। বাইকটি চালাতে গেলেও মুটামুটি কমফোর্টেবলই লাগে। যেমন এইচ পাওয়ার গাড়ি গুলো থেকে অনেক বেটার। গাড়িটিতে রয়েছে ইলেকট্রনিক স্টার্ট।

ফুয়েল ট্যাংক ৮ লিটার বলা থাকলেও ১০ লিটার পেট্রোল ধরে। গাড়িটির ওজন ১২০ কেজি। যা সত্যিই অনেক ভালো একটি ওজন দিয়েছে বাজাজ কোম্পানি আমি মনে করি। ওজন নিয়ে কোন কমপ্লেইন থাকার কথা না করো। বাইকটির ইন্জিন অয়েল লাগে ১০০০ মিলি।

আমার বাইকটি ৩ বার ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি ফুলবাড়িয়া আনিস বাজাজ হতেই। ওখানের সার্ভিস সেন্টারে মটর সাইকেল ইন্জিনিয়ারিং হিসাবে থাকতো আমার আপন ফুফাতো ভাই ওনিই আমার মটর সাইকেল টা বারবার সার্ভিস করিয়ে দিয়েছে।


ওখানের সুপারভাইজার ও স্টাফ গনের ব্যাবহার ছিল অনেক ভালো। আর ওরা প্রতি বারই বাইক ওয়াশ সহ যাবতীয় এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার ব্রেক ঠিক আছে কিনা ও গাড়ির যা প্রবলেম এককথায় সব সলভ করে দিছে। আর সার্ভিস গুলো আমি করিয়েছিলাম ওয়ারেন্টি পাওয়ার জন্যই মুল কিন্তুু আমি কিছুদিন পর ঢাকাতে আসাই সবগুলো সার্ভিস করা হয়নাই ।

মাইলেজ মূলত ২৫০০ কিলোমিটারের আগে ৪৩ + পেয়েছি। এই মাইলেজের কারনে প্রথম হাতাশ হয়েছিলাম অনেক কারন এই মাইলেজ আশংকাজনক নয়। ২৫০০ কিলোমিটার এর পরে আলহামদুলিল্লাহ ৫৫+ মাইলেজ পাইতেছি এখনও হাইওয়েতে ৫৬-৫৭ এর মতো পাওয়া যায়।

আমি বাইকের যত্ন যেভাবে নেই মাঝেমধ্যেই কার ওয়াশে নিয়ে ধৌত করাই। তাছাড়া নিজে বাড়িতে শ্যাম্পু দিয়ে ধৌত করিয়ে মাসে একবার পলিশ করি। আর বাইকটি আমি প্রচুর যত্ন সহকারে চালাই। পিলিয়ন সহ সাধারনত খুব কম রাইড করি। আর ইন্জিন অয়েল টা নিয়মিত পাল্টাই। কোন সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত তা মেকানিক দিয়া সলভ করে নেই।

আমার বাইকে শুরুতে Super 4t ইন্জিন অয়েলটাই ব্যাবহার করছিলাম শুরুম থেকে এটাই দিতো যার দাম নিছিলো ৫০০ টাকা ড্রেন দেওয়া সহ।একবছর পর থেকে ওরাই আবার Bajaj Dtsi(20w-50w) দেওয়া শুরু করে আমি কখনো শোরুম ছাড়া ইন্জিন অয়েল চেন্জ করিনাই। এই ইন্জিন অয়েল ব্যাবহারে বাইকের পারফরম্যান্স মুটামুটি ভালোই। যা দিয়ে অনায়াসেই ১০০০ কিলোমিটার রাইড করা যায়। যদিও এটি দিয়ে সবাই দিয়ে ১৫০০ চালাতে বলে এরপরেও আমি কখনো ১০০০ কিলোমিটার এর উপরে চালাইনা।

পার্টস পরিবর্তন বলতে গেলে কিছুই করিনি। টুকটাক যেগুলো করা হয়েছে এগুলে সিম্পল ব্যপার যেমন অয়েল ফিল্টার, এয়ার ফিল্টার এগুলো আমি ২০০০ কিলোমিটার পরপর পরিবর্তন করে ফেলি। প্লাগ দুটো ৮ হাজার কিলোমিটার এ পরিবর্তন করেছিলাম। পার্টস পরিবর্তন করেছিল আব্বু গাড়ির মিটার কেবল নষ্ট হয়ে গেছিল আর হচ্ছে ড্রাম ব্রেক যেহুতু দুটোই সেহুতু ড্রাম ব্রেক প্যাড পরিবর্তন করেছিল । সবকিছু শোরুম থেকেই পরিবর্তন করা হয়েছিল ।

কোন মডিফাই করিনি তবে পেছনে দুইটা ফগ লাইট লাগোনো হয়েছিল হেডলাইটের আলে কম বলে। বাইকটি দিয়ে আমার তোলা সর্বোচ্চ স্পিড ১০৯ সিঙ্গেলে।

Bajaj Discover 125 বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • তেল শাশ্রয়ী ।
  • টপ স্পিড মুটামুটি ভালোই ।
  • পার্টস এভেইলেভল ।
  • ড্রাম ব্রেকের মাঝে সবথেকে ভালো ব্রেকিং সিষ্টেম মনে হয়।
  • অনায়াসে তিনজন চলা যায় ।

Bajaj Discover 125 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • ৬০ + স্পিড তুললে প্রচুর ভাইব্রেশন হয় ।
  • হেডলাইটের আলো একবারে কম হাইওয়ে তে প্রচুর প্যারা হয়।
  • টিউবলেস টায়ার না হয়ওয়ার কারনে ঝামেলা পোহাতে হয় ভ্রমনে গিয়েও।
  • নন ডিস্ক এ পেছনের টায়ার চিকন যারা কর্নারিংয়ে অনেক ভয় করে।
  • প্রচুর চেইন লুজ হয় ।


বাইকটি নিয়ে একদিনে ৩০০ কিলোমিটার + রাইড করেছি। আমার বাড়ি থেকে কিশোরগন্জ নিকলি আবার ওখান থেকে অন্য জায়গায়। সবথেকে মজার বিষয় হলো এই বাইক নিয়ে ভ্রমন অনেকটা মজার কারন ৫০০ টাকার পেট্রোল দিয়ে অনেক লং টাইম বাইকটি চালানো যায়। চলতেই থাক অনবরত।

তবে লং রাইড করেও তেমন পেইন হয়নি আমার যেমন - কব্জি, কোমর হাটুতে ব্যাথা হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই সম্পন্ন করতে পারছিলাম। আর টাপ স্পিড একবারে খরাপ না থাকায় অন্যদের সাথে যাইতে পারছি।এজন্য বাইকটা ১২৫ সিসির হলেও আমার কাছে ১৫০ সিসির মতোই কারন আমি মধ্যবিত্ত।

অবশেষে বলব যে যারা আমার মতো ফ্যামিলির মানুষ অথবা বাব- বেটা মিলে চালাবে নতারা বাইকটি পছন্দ করতে পারেন।অন্যথায় বড় বাইক কিনবেন। বাইকটির সার্ভিস আলহামদুলিল্লাহ আশানুরূপ। আমি ৩ বছরের অভিজ্ঞতায় বলললাম। ভূল ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ ।

 

লিখেছেনঃ মিনহাজ উদ্দিন

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।