১৬৫ সিসির মোটরসাইকেল আমদানির অনুমতি দাবি
This page was last updated on 06-Jul-2024 01:09pm , By Shuvo Bangla
দেশের মোটরসাইকেল আমদানিকারকেরা ১৬৫ সিসি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানি করতে চায়। এ ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, বর্তমানে বেশি সিসির ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেলে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে জ্বালানি খরচ কম এবং পরিবেশের ক্ষতি কম হয়।
অবশ্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকদের বেশি সিসির ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানির বিপক্ষে মত দিয়েছে। পুলিশের দাবি, তারা এখন ১৫০ সিসি ক্ষমতার মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। এর চেয়ে বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল রাস্তায় নামতে দেওয়া হলে অপরাধ ও দুর্ঘটনা বাড়বে।
বাংলাদেশে এখন ১৫৫ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানি করা যায়। আমদানি নীতিতে এর চেয়ে বেশি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানি নিষিদ্ধ। তবে পুলিশের বেলায় এ সীমা প্রযোজ্য নয়। ১৫ মে বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বেলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএএমএ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাড়তি সিসির মোটরসাইকেল আমদানির অনুমতি চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে কম সিসির মোটরসাইকেলের প্রচলন কমে যাচ্ছে। অধিক সুবিধাসম্পন্ন উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল গ্রহণযোগ্য মানে পরিণত হচ্ছে। রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করার স্বার্থে এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের আমদানি নীতিতে মোটরসাইকেলের সিসিভিত্তিক সীমা শিথিল করা উচিত।
জানতে চাইলে টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা-প্রধান (হেড অব অপারেশনস) বিপ্লব কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, এখন যে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেলগুলো উৎপাদিত হচ্ছে, তা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত। জ্বালানি খরচও কম। এ গাড়িগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কম হওয়ায় পরিবেশের জন্যও খুব বেশি ক্ষতিকর নয়। তিনি আরও বলেন, যখন বাংলাদেশে বাড়তি সিসির মোটরসাইকেল আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে, তখন আরও ভালো প্রযুক্তির মোটরসাইকেল আসবে।
বিএমএএমএ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে আবেদন পাঠিয়েছে, তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মতামতের জন্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পুলিশের মতামত চাইলে তারা বাড়তি সিসির মোটরসাইকেল আমদানির বিপক্ষে অবস্থান তুলে ধরেছে। ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রান্সপোর্ট) এ কে এম হাফিজ আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, পুলিশ যেহেতু ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল ব্যবহার করে, সেহেতু এর চেয়ে বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে দেওয়া হলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ দেশে নিরাপত্তারক্ষায় হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা কম। এতে ১৫৫ সিসির অধিক ক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানি করা হলে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশের।
অবশ্য বিএমএএমএ জানিয়েছে, পুলিশের এ মতামত পেয়ে তারা মহাপরিদর্শকের (আইজি) সঙ্গে দেখা করেছিল। আইজি সমিতিকে আরেকটি চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানাতে বলেছেন। সে অনুযায়ী তারা আরেকটি চিঠি দিয়েছে। এ বিষয়ে টিভিএসের বিপ্লব কুমার রায় বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে চূড়ান্তভাবে না বলা হয়নি। আর মোটরসাইকেলের সিসির সঙ্গে গতির কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়টিও পুলিশকে জানানো হয়েছে।
মার্কেট রিসার্চ নামের বেসরকারি এক সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন বছরে গড়ে দুই লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। বাজারের আকার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। এ বাজারে ১১০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেলের বাজার অংশীদারত্ব (মূল্যের দিক দিয়ে) প্রায় ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ১২৫ থেকে ১৩৫ সিসি ক্ষমতার মোটরসাইকেল প্রায় ১৭ শতাংশ ও এর পরে ১৫০ সিসি পর্যন্ত ক্ষমতার মোটরসাইকেলের বাজার অংশীদারত্ব প্রায় ৩৩ শতাংশ।
দেশে বাজাজ, টিভিএস, হিরো, হোন্ডা, মাহেন্দ্র, ইয়ামাহা, সুজুকি ও কিছু চীনা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আমদানি করে আমদানিকারকেরা। অন্যদিকে ওয়ালটন ও রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল দেশে তৈরি হয়। মোটরসাইকেলের বাজারের ৮৬ শতাংশ আমদানিকারকদের দখলে, বাকিটা দেশীয় উৎপাদকদের দখলে।