রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থান । জানুন বিস্তারিত
This page was last updated on 28-Jul-2024 08:02am , By Raihan Opu Bangla
আমরা সব সময় পাহাড় অথবা সাগর অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরি,কিন্তু আজ আমরা আপনাদের রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থান নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে যে সব দর্শনীয় স্থান আছে তার মধ্যে যেগুলো বেশি জনপ্রিয় এমন কিছু স্থান আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।
রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থানঃ
১-পুঠিয়া রাজবাড়ীঃ (puthia rajbari)
পুঠিয়া রাজবাড়ী বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ী হচ্ছে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী অন্যতম। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন।
ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলংকরন, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে ও দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ীর ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল।
dhaka to puthia rajbari distance >> 222.2 km
রাজশাহী জেলা সদর হতে ৩২ কিঃমিঃ উত্তর- পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে পুঠিয়া অবস্থিত। বাসে করে দেশের যে কোন স্থান হতে পুঠিয়া আসা যায় এবং ট্রেনে করে নাটোর অথবা রাজশাহী নেমেও সড়কপথে সহজে আসা যায়।পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশে পাশে ছয়টি রাজদিঘী আছে। প্রত্যেকটা দিঘীর আয়তন ছয় একর করে। মন্দিরও আছে ছয়টি। সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। এ ছাড়া আছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ। জোড়বাংলা মন্দির, বাংলো মন্দির, পঞ্চরত্ন অর্থাৎ চূড়াবিশিষ্ট মন্দির অর্থাৎ বাংলার বিভিন্ন গড়নরীতির মন্দিরগুলোর প্রতিটিই আকর্ষণীয়। এ ছাড়া রানির স্নানের ঘাট, অন্দর মহল মিলিয়ে বিশাল রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ।
Also Read: বিডিমটরসাইক্লিস্ট এর মিশন সেন্টমারটিন দ্বীপ
কিভাবে পুঠিয়া রাজবাড়ী যাওয়া যায়?
পুঠিয়া রাজবাড়ী যেতে হলে আপনাকে ঢাকা থেকে রাজশাহী আসতে হবে। রাজশাহী এবং নাটোর থেকে সড়ক পথে পুঠিয়া রাজবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ এবং ১৮ কিলোমিটার। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজবাড়ি যেতে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে।
২- আলপনা গ্রাম টিকইলঃ (alpona gram)
রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে চাপাইনবাগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের টিকোইল গ্রাম। মানুষ এই গ্রামকে চেনে ‘আলপনা গ্রাম’ হিসেবে। দেশে এবং দেশের বাইরে এই গ্রামের নাম ছড়িয়ে গেছে এখানকার মানুষের অসাধারণ শৈল্পিক কর্মের মাধ্যমেই। এই গ্রামে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মনে হবে লাল, নীল, আকাশি, সবুজ অজস্র রঙের ছটায় চারপাশ যেন হঠাৎ রঙিন হয়ে উঠেছে। আর পূজা-পার্বণের সময় তো কথাই নেই, যেন রং-তুলিতে আঁকা বর্ণিল একটি ছবি! গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেয়াল যেন এক একটি ক্যানভাস। মাটির দেয়াল জুড়ে সবসময় শোভা পায় নানান রঙে আঁকানো নানান কারুকার্যের আলপনা। প্রতিটি বাড়িতেই মেলে গ্রামবাসীর রুচি আর মননশীলতার চিহ্ন। যেকোনো পূজা বা উৎসবে, পহেলা বৈশাখে গ্রামবাসী সবাইকে স্বাগত জানায় নতুন আঁকা আলপনার মাধ্যমে। নিজেদের বাসস্থান তো বটেই, এমনকি তারা ভোলে না রান্নাঘর কিংবা গোয়াল ঘরের দেয়ালেও আলপনা আঁকতে।
আলপনা গ্রামের চিত্রশিল্পী কারা?
চারুকলার শিক্ষার্থীরা বা কোনো পেশাদার চিত্রশিল্পী না; আলপনা গ্রামের আলপনার রূপকার মূলত এই গ্রামের নারীরা। প্রথমদিকে আলপনা আঁকার কাজটি প্রধানত তারা করে থাকলেও, দিনে দিনে এই গ্রামের সবাই হয়ে উঠেছেন আর্টিস্ট। নারী-পুরুষ তো বটেই, গ্রামের শিশুরাও খেলাচ্ছলে মেতে ওঠে রং নিয়ে। আলপনা আঁকতে যেন এই গ্রামের মানুষের কোনো ক্লান্তি নেই। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ সব মৌসুমেই গ্রামের দেয়ালে দেয়ালে ফুটে থাকে আলপনা। শরীরে বয়সের ভার, কিন্তু মন যেন সেই শৈশবের মতই রঙিন। বাড়ির দেয়ালে আঁকা আলপনা যেন বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে না যায়, তাই ঘরের চাল থেকে পলিথিন বেঁধে রাখেন অনেকেই। বৃষ্টি এলেই খুলে দেন, আবার বৃষ্টি চলে গেলে পলিথিন গুটিয়ে রাখেন। গ্রামের সবাই আলপনার কারিগর। বংশপরম্পরায় তারা আলপনার ঐতিহ্যকে এতদূর নিয়ে এসেছেন, টিকিয়ে রেখেছেন। বধূরা, জননীরা তাদের হাতের মমতাময় ছোঁয়ায় এই ঐতিহ্যকে চলমান রেখেছেন যুগের পর যুগ।
দেয়ালজুড়ে কেন আলপনা চর্চা?
এই গ্রামের প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে আলপনা। তাই, আলপনা আঁকার তাৎপর্য খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় তাদের শিল্পময় জীবনের প্রতিচ্ছবি। তারা দেয়ালে দেয়ালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলেন আলপনার মাধ্যমে। ফুল, লতা-পাতা, গাছ, নদী, নৌকা, পাখি, আকাশ, মানুষ- কী নেই তাদের আলপনার উপাদানে। তাদের যাপিত জীবন এবং গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবিই যেন চিত্রিত হয় মাটির দেয়ালে। এই গ্রামেরই এক বধূ ‘দেখনবালা বর্মণ’ এর ভাষায়, ‘পূজোর আগে বাড়ির দেয়ালে আলপনা আঁকলে দেখতে যেমন ভালো লাগে তেমনি মনও থাকে প্রফুল্ল। আর মন ভালো থাকলে পূজোর আনন্দও বেড়ে যায় বহুগুণে।
কিভাবে আলপনা গ্রাম টিকইল যাওয়া যায়?
রাজধানী ঢাকা থেকে আপনাকে সড়ক পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর দূরত্ব ৩১৭ কিলোমিটার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে আলপনা গ্রামের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার।
৩- মুঘল তাহখানাঃ (Mughal Tahakhana)
বঙ্গ সুলতান শাহ সুজা তার মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শীতকালীন বাসের জন্য ফিরোজপুরে তাপনিয়ন্ত্রণ ইমারত হিসেবে এ ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। সময়ে সময়ে শাহ সুজাও এখানে এসে বাস করতেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ হতে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পু্ত্র শাহ্ সূজা বাংলার সুবাদার থাকাকলে ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিঃ মতান্তে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ তার মুরশিদ হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তোহাখানা নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে যে-শাহ সুজা যখন ফিরোজপুরে মোরশেদ শাহ নেয়ামতউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসতেন তখন উক্ত ইমারতের মধ্যবর্তী সুপ্রশস্ত কামরাটিতে বাস করতেন। তোহাখানা কমপ্লেক্সের ভেতরে আরো নাম না জানা অনেক সমাধি দেখা যায়। যাদের পরিয় এখনো জানা যায় নি। তবে এদেরকে হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর খাদেম বা সহচর বলে ধারনা করা হয়।
dhaka to mughal tahkhana distance >> 331.3 km
গৌড়ের মত সুপ্রাচীন স্থাপত্যকর্ম তাহখানা ছাড়া অন্যত্র তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। এর ছাদ এবং দেয়ালগুলো কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে তৈরি। মসজিদ এবং তাহখানা উভয়েই 'দাফে-উল-বালাহ' নামক জলাধারের পাশে অবস্থিত। দুটি বাধানো সিড়ি জলাধারের পানির নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। মূল প্রাসাদের উত্তর পশ্চিম দিকে আরও দুটি ভবন রয়েছে।
এদের মধ্যে নিকটস্থটি হলো তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ এবং অন্যটি হলো বাঁধানো বারান্দা সহ একটি গম্বুজবিশিষ্ট সমাধি। ভবনগুলো প্রায় একই সময়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এদের একত্রে একটি কমপ্লেক্স হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ভবনটি মূলত ইট দ্বারা নির্মিত। তবে দরজার চৌকাঠের জন্য কালো পাথর এবং সমতল ছাদের জন্য কাঠের বিম ব্যবহৃত হয়েছে।ভবনটিকে পশ্চিম দিক থেকে দেখলে একতলা বলে মনে হতে পারে, তবে পূর্ব দিক থেকে দ্বিতল বলেই মনে হয়। ঘরগুলি থেকে সৃষ্ট সুড়ঙ্গপথ প্রসারিত হয়ে জলাধারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে। ভবনের পশ্চিমে একটি হাম্মাম (গোসলখানা) রয়েছে যাতে পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে অষ্টভূজাকৃতির একটি কূপ। প্রাসাদের উত্তরদিকে একটি ছোট্ট পারিবারিক মসজিদ রয়েছে।
এর পিছনে রয়েছে একটি খোলা ঘর যা অষ্টভুজাকার একটি দুর্গের সাথে সংযুক্ত। এই দুর্গটি সম্ভবত প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত হত। এই অষ্টভুজাকার মিনারটি তাহখানা কমপ্লেক্সকে পূর্ণতা দান করেছে। প্রাসাদটি মূলত মুঘল স্থাপত্যের কারুকার্যের আদলে প্লাস্টার এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে।
কিভাবে মুঘল তাহখানা যাওয়া যায়?
মুঘল তাহখানা আসতে চাইলে আপনাকে প্রথমে শিবগঞ্জ আসতে হবে। এখান থেকে আপনি আপনার গন্তব্যে খুব সহজে যেতে পারবেন।
৪- চায়না বাঁধঃ ( china beri badh sirajganj )
ঢাকার বাইকারদের কাছে চায়না বাঁধ অনেক বেশি জনপ্রিয়। কারন এই ঢাকা থেকে এই বাঁধে খুব সহজেই যাওয়া যায়। এমন অসাধারণ জায়গায় একটা বিকেল পার করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সিরাজগঞ্জের চায়না বাঁধ থেকে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর কূল ঘিরে তৈরি করা হয়েছে এই বাঁধ। বাঁধের মূল ফটক থেকে নদীর ২ কিলোমিটার গভীরে চলে গেছে বাঁধের শেষ প্রান্ত। মূল গেট থেকে পিচ ঢালা রাস্তা সহজেই যেতে পারবেন বাঁধের শেষ প্রান্তে।
dhaka to china beri badh sirajganj distance >> 127.9 km
৫- মহাস্থানগড়: ( mohastangor )
রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় । বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি. উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷।
dhaka to mohastangor distance >> 214.6 km
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়।
৬- গোকুল মেধঃ ( gokul medh )
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তররের মতে, আনুমানিক খৃস্টাব্দ ৭ম শতাব্দী থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে গোকুল মেধ নির্মিত হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় এখানে বেহুলার বাসর হয়েছিল। যা সেন যুগের অনেক আগের ঘটনা। তবে বর্তমান গবেষকদের মতে, এ কীর্তিস্তম্ভ ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৌদ্ধমঠ। এখানে বহু গর্তযুক্ত একটি ছোট প্রস্তর খণ্ডের সঙ্গে ষাঁড়ের প্রতিকৃতির একটি স্বর্ণ পত্র পাওয়া গিয়েছিল।
dhaka to gokul medh distance >> 207.6 km
বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে এটাকে বৌদ্ধ মঠ রূপে উল্লেখ করেছিলেন বলে জানা যায়। আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিক গ্রন্থে এই মেধকে একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রূপে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি নির্মাণ করা হয়েছিল পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানীকে বাইরের শত্রু থেকে রক্ষা করার জন্য।
৭- হার্ডিঞ্জ ব্রীজঃ ( hardinge bridge )
১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত ভারত সরকার অসম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে পদ্মা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব করে। পরবর্তীতে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে সেতু নির্মাণের মঞ্জুরী লাভের পর ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইলস সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে সেতু নির্মাণের সমীক্ষা শুরু হয়। ১৯১০-১১ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মার দুই তীরে সেতু রক্ষার বাঁধ নির্মাণ হয়। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে সেতুটির গাইড ব্যাংক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি সেতুর গার্ডার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গার্ডার নির্মাণের জন্য কূপ খনন করা হয়। ২৪ হাজার শ্রমিক দীর্ঘ ৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ।
dhaka to hardinge bridge distance >> 223.3 km
তার নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রীজ। সেতুটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১ শত ৬৪ টাকা। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৮ শত ফুট। ব্রিজটিতে ১৫টি স্প্যান আছে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেতুটিতে বোমা ফেলা হলে ১২ নম্বর স্প্যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেগুলো পরে মেরামত করা হয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঈশ্বরদী ভেড়ামারা সীমানায় পদ্মানদীর উপর অবস্থিত।
সেতুটি দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচল করে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের শতবর্ষ পূর্ণ হয়। জানা যায়, এই সেতু তৈরি করতে ২৪ হাজার শ্রমিকের ৫ বছর সময় লেগেছিল। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলাধীন পাকশি ইউনিয়ন ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মাঝে পদ্মা নদীর উপর অবস্থিত। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভেড়ামারা ও ঈশ্বরদী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। ভেড়ামারা উপজেলা সদর হতে প্রায় ৮.৫ কিমি উত্তরে এবং ঈশ্বরদী উপজেলার সদর হতে প্রায় ৮ কিমি দক্ষিণে পদ্মা নদীর উপর সেতুটি অবস্থিত।
৮- তাড়াশ রাজবাড়ীঃ ( tarash jamidar bari )
ব্রিটিশ শাসনামলে তাড়াশ রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন তাড়াশের তৎকালীন জমিদার রায়বাহাদুর বনমালী রায়। স্থাপত্যের দিক দিয়ে এটির সাথে ইউরোপীয় রেনেসাঁ রীতির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ৮ই জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটিকে সংরক্ষিত ঘোষণার পূর্বে ভবনটি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর হিসেবে ও পাবনা মেডিকেল কলেজের ভবন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে কিছুদিন।
জনশ্রুতি অনুসারে, রায়বাহাদুর জমিদারের বংশধরগণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে এই ভবনটি তাদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করেছিল। তাড়াশ ভবন বা তাড়াশ রাজবাড়ী পাবনা জেলা সদরে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল ১৮শ শতকের কোন এক সময়।
৯- গাজনার বিলঃ ( gajnar bil )
রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে সুজানগর উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ও দর্শনীয় স্থান হলো বিল গাজনা। এ বিলটি সুজানগর উপজেলার মাঝখানে অবস্থিত। বিলের চার ধারে সকল বসতি অবস্থিত। এ এলাকার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় এই গাজনার বিলের মাধ্যমে। বিলগাজনাটি ছোট-বড় ১৬টি বিলের সমন্বয়ে গঠিত। এই বিলের আয়তন ০৭ একর। বিলটি বাদাইস্লুইজ গেটের মাধ্যমে পদ্মা নদীর সাথে সঙযুক্ত রয়েছে। বিলটি বর্ষাকালে অপরুপ সৌন্দর্য ধারন করে। বর্ষাকালে বহু দর্শক বিলটির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এ স্থানে আগমন করেন। বিলে প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যায়।
dhaka to gajnar bil distance >> 121.9 km
শুস্ক মৌসুমে বিলটি শুকিয়ে যায়। এ সময় এ বিলে ইরি ধান ও প্রচুর পেয়াজের চাষ হয়। এ বিলের খালগুলি খনন করলে সারা বছর পানি ও মা মাছ থাকবে। এতে মাছের উৎপাদন অনেক গুন বেড়ে যাবে। সুজানগরের ১০টি ইউনিয়নই এ বিলের সাথে সংযুক্ত।
১০- দিব্যক জয়স্তম্ভঃ ( dback jai stambh )
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন দিবর দিঘীর দিব্যকের জয়স্তম্ভ। এই দিবর দিঘীর দিব্যকের জয়স্তম্ভকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দীঘির চারপাশে মনোরম পরিবেশ। পাল আমলে খননকৃত ৬০ বিঘা দিঘীর মাঝখানে আশ্চর্যজনকভাবে স্থাপিত অখণ্ড গ্রানাইড পাথরের স্তম্ভ সূদুর অতীতের বাঙ্গালীর শৌর্যবীর্যের সাক্ষ্য বহন করছে আজও।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক দিবর দিঘীটি নওগাঁ জেলা সদর হতে উত্তর পশ্চিমে ৫২ কি.মি. এবং পত্নীতলা সদর হতে ১৩ কি.মি. পশ্চিমে নজিপুর- সাপাহার রাস্তার পার্শ্বে দিবর ইউনিয়নের দিবর গ্রামে অবস্থিত। এই দিবর দীঘির মাঝখানের স্তম্ভটির উচ্চতা ৩১ ফুটের মধ্যে পানির উপরিভাগে ১০ ফুট, পানির নিচে ১০ ফুট ও মাটির নিচে ১১ ফুট গ্রথীত আছে বলে জানা গেছে।
১১- বলিহার রাজবাড়িঃ ( balihar rajbari )
নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নে বলিহার রাজবাড়ি নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের পশ্চিমে ও নওগাঁ জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বলিহার ইউনিয়নের কুড়মইল মৌজায় বলিহার রাজবাড়ি অবস্থিত। বলিহারের জমিদার রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার অন্যতম বিখ্যাত জমিদার ছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে নওগাঁর বলিহার এলাকার এক জমিদার জায়গির লাভ করেছিলেন।
dhaka to balihar rajbari distance >> 256.6 km
১৮২৩ সালে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ এখানে একটি রাজ-রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তিনি মন্দিরে পিতলের তৈরি রাজেশ্বরী দেবীর একটি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। মূর্তটি বলিহারসহ এই অঞ্চলের প্রসিদ্ধ ছিল। বলিহার জমিদার পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃসিংহ চক্রবর্তী। সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক জায়গির লাভ করে বলিহারের জমিদাররা এ এলাকায় নানা স্থাপনা গড়ে তোলেন যার মধ্যে বলিহার রাজবাড়ি অন্যতম।
১২- জগদ্দল বিহারঃ
জগদ্দল বিহার বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার এক অতি প্রাচীন নিদর্শন। নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট থানার জয়পুর-ধামুইরহাট সড়কের উত্তর দিকে অবস্থিত এই প্রাচীন কীর্তি। বর্তমানে স্থানীয় জনগণ এটিকে বটকৃষ্ণ রায় নামক এক জন জমিদারের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ বলে মনে করে । ইতিহাস থেকে জানা যায় যে রাজা রামপাল গৌড় রাজ্য পুনরুদ্ধারের পর রামাবতী নগরে রাজধানী স্থাপন করেন।
আইন-ই-আকবর রচয়িতা আবুল ফজল এ স্থানটিকে রমৌতি বলে উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন বাংলার ধর্মমঙ্গল কাব্যগুলিতে রামাবতীর উল্লেখ আছে। রাজা রামপালের পুত্র মদনপালের তাম্র শাসনেও রামাবতী নগরীর উল্লেখ আছে। দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছেন যে, এই রামাবতী নগরে রাজা রামপাল জগদ্দল মহাবিহারের প্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহাসিক রামপ্রাণগুপ্ত জগদ্দল বিহার দিনাজপুরে অবস্থিত বলে উল্লেখ করেছেন। রামপ্রাণগুপ্তের জগদ্দল বিহার যে নওগাঁ জেলার আলোচ্য বিহার তা সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ পূর্বে এ জেলা দিনাজপুর জেলার অংশ ছিল।
১৩- হালতি বিলঃ ( halti bill )
উত্তরাঞ্চলে কোনো সমুদ্র নেই, তাই এ অঞ্চলের মানুষের কাছে সমুদ্রসৈকত এক স্বপ্ন। তবে নাটোরের হালতি বিল এখন সমুদ্রের অভাব অনেকটাই পূরণ করছে এই এলাকার সাগরপিয়াসী মানুষদের। হালতি বিলের উত্তাল জলরাশি আর ঢেউ যে কারো মন নিমেষেই ভালো করে দেয়ার মত। বর্ষায় অথৈ পানি আর শীতে ফসলি জমির এই বিলের মাঝ বরাবর ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণ করা হয় ২০০৪ সালে।
dhaka to halti bill distance >> 217.9 km
হালতির বিল বা হালতি বিল নাটোর সদর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে নলডাঙ্গা থানার অন্তর্গত বিল। এটি অত্র অঞ্চলের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে এখানে পাটুল থেকে খাজুরা পর্যন্ত যে রাস্তা আছে সেটাই বেশি আকর্ষনীয়। বর্ষায় যখন পানিতে পরিপূর্ণ হতে থাকে বিল, তখন এই রাস্তার সৌন্দর্য বাড়তে থাকে।
১৪- চলন বিলঃ ( chalan beel )
সরদার আব্দুল হামিদ তাঁর 'চলনবিলের ইতিকথা'য় চলনবিল নামকরনের প্রসংঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেখানে চলনবিলের নামকরণের সাথে চোল সমুদ্রের কথাটি এসেছে। চলনবিলের এই নিচু এলাকার সাথে যুক্ত ছিল ছোটো বড়ো বেশ কিছু নদী। নদীর সংযোগের কারণে চলনবিলের পানি সবসময় চলমান থাকতো। প্রাচীনকালে উরিষ্যা অঞ্চলে চোল রাজবংশ এবং চোল সমুদ্র বা চোল হ্রদ ছিল বলে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। ফলে চোলা রাজবংশ বা চোলা বিল থেকেও চলনবিলের নামকরণ হতে পারে ধারণা করা হয় ।
dhaka to chalan beel distance >> 173.4 km
বাইক নিয়ে ভ্রমণে বের হলে সব সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। ভালো মানের হেলমেট এবং সেফটি গার্ড ব্যবহার করুন। সব সময় নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন।
কৃতজ্ঞতাঃ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন , ভ্রমণ গাইড , কালের কন্ঠ , উইকিপিডিয়া