মোটরসাইক্লিং কি পুরুষ বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে?

This page was last updated on 17-Oct-2024 04:48pm , By Saleh Bangla

বিশ্বব্যাপী মোটরসাইক্লিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি আউটডোর এক্টিভিটি হিসেবে স্বীকৃত। মোটরসাইক্লিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলাচলের স্বাধীনতা দেবার সাথে সাথে এ্যাডভেঞ্চার ও ওপেন রোড প্যাশন অনুভব করার চমৎকার একটি সুযোগ দেয়। তবে কথিত রয়েছে যে, হার্ডকোর মোটরসাইক্লিং প্রায়শ:ই বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকির তৈরীর সাথে সাথে পুরুষ বন্ধ্যাত্বেরও সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। তো বিষয়টি আসলে কতটুকু গুরুতর বা আদৌ এর কোন সত্যতা রয়েছে কিনা চলুন আমাদের আজকের আলোচনায় সেটি খুঁজে দেখার চেষ্টা করি।

 

মোটরসাইক্লিং কি পুরুষ বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে?

যেকোনো আউটডোর বা এ্যাডভেঞ্চার এক্টিভিটির মতো অপরিশিলিত মোটরসাইক্লিংও মানবদেহের উপর কিছু প্রভাব ফেলে। আর হার্ডকোর মোটরসাইকেল রাইডারদের জন্য এই ঝুঁকির পরিমান স্বাভাবিকভাবেই  কিছুটা বেশি। তো সেইসূত্রে, হার্ডকোর মোটরসাইকেল রাইডারদের তাদের শারিরিক অবস্থা সঠিক অবস্থায় রাখার জন্য কিছু বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। 

তবে হার্ডকোর মোটরসাইক্লিংয়ের সাথে পুরুষ বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কিত উদ্বেগগুলি বিশেষভাবে দুটি বিশেষ বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। এ দুটি বিষয় হলো অত্যধিক তাপ এবং অবিরত ও অত্যধিক কম্পন। তো, আসুন জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি এই বিশেষ বিষয়গুলো বিবেচনায় হার্ডকোর মোটরসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে পুরুষের প্রজনন উর্বরতার কতটা ঝুঁকি রয়েছে, আর সেটি আসলেই তেমন উদ্বেগজনক কিনা।

অতিরিক্ত তাপের প্রভাব

আমরা জানি, পুরুষের প্রজনন উর্বরতার সাথে পুরুষের অণ্ডকোষের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এগুলি পুরুষের শুক্রাণু তৈরি করে। আর অণ্ডকোষগুলি পুরুষের শরীরের মূল তাপমাত্রার চেয়ে সামান্য কম তাপমাত্রাতেই সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। কিন্তু কোন কারণে পুরুষের অণ্ডকোষের ওপর দীর্ঘসময় ধরে অধিক তাপের প্রবাহ চলতে থাকলে তা শুক্রাণুর উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং শুক্রাণুর গুণমান ও পরিমাণও হ্রাস করতে পারে।

সুতরাং, যখন একজন পুরুষ রাইডার দীর্ঘ সময়ের জন্য মোটরসাইকেল চালান ও টাইট ট্রাফিক দীর্ঘ সময় ধরে মোকাবেলা করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার বিশেষ অঙ্গে মোটরসাইকেল ইঞ্জিনের তাপ প্রবাহিত হয়। ফলে, এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে পুরুষদের প্রজনন উর্বরতার উপর সম্ভাব্য বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। তবে আশ্বস্ত হবার বিষয় হলো, এটি স্পষ্টতই একটি অস্থায়ী অবস্থা এবং চরম প্রতিকুল অবস্থাতেও এটি শুক্রাণু উৎপাদনে কেবল অস্থায়ী হ্রাস ঘটাতে পারে। আর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটি এখনও প্রতিষ্ঠিত কোন সত্য নয়।

অতিরিক্ত কম্পনের প্রভাব

মোটরসাইকেল চালানোর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত আরেকটি অবিচ্ছেদ্য ধ্রুবক হলো কম্পন, যা পুরুষের প্রজনন উর্বরতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কেননা, দীর্ঘসময় ধরে বা ক্রমাগত অসম চরম কম্পন মানবদেহের প্রজনন অঙ্গের উপর মোটামুটি নেতিবাচক কিছু প্রভাব ফেলে। কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা বর্ণনা করে যে, বিশেষ করে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে কম্পনের দীর্ঘায়িত এক্সপোজার প্রজনন অঙ্গের ভিতরের রক্ত সঞ্চালনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আর পুরুষ অণ্ডকোষে অপরিমিত ও অনিয়মিত রক্তপ্রবাহ ঘটতে থাকলে তাতে মাইক্রোট্রমা হতে পারে এবং এটি শুক্রাণুর গুণমান এবং উৎপাদনশীলতাকে অনেকাংশে হ্রাস করতে পারে। তবে গবেষণায় আরও বলা হয় যে, পুরুষ উর্বরতার উপর কম্পনের প্রভাবও অস্থায়ী একটি বিষয়। এছাড়া, মোটরসাইক্লিং ততটাও কম্পন সৃষ্টি করে না, যা পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদনকে চরমভাবে বিঘ্নিত করতে পারে। তাই হার্ডকোর মোটরসাইক্লিংয়ে এর তেমন সম্ভাব্য কোন প্রভাব দেখা গেলেও তা অবশ্যই অস্থায়ী।

মোটরসাইক্লিংয়ের কারণে পুরুষ বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি কতটুকু?

তো সবমিলিয়ে মোটরসাইক্লিং অবশ্যই একটি যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং এক্টিভিটি। তা্‌ই মোটরসাইকেল রাইডের জন্য অবশ্যই রাইডারদের শারীরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট সবল স্বাস্থ্যের হওয়া প্রয়োজন। এবং নিঃসন্দেহে প্রত্যেক রাইডারকে তাদের নিজস্ব নিরাপদ সীমা এবং শারীরিক সামর্থ্যের মধ্যে থেকে রাইড করা উচিত। সেইসাথে রাইডারদের নিজেকে সর্ব অবস্থায় ফিট রাখতে স্ট্যান্ডার্ড রাইডিং ম্যানারগুলিও মেনে চলা উুচিৎ।

তবে মোটরসাইক্লিংয়ের কারণে বিশেষকরে হার্ডকোর মোটরসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ প্রজনন উর্বরতায় কিছু প্রভাব পড়ার সমস্যাগুলি তাত্ত্বিকভাবে অনুমেয়। তবে এই বিষয়টিতে যথাযথ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কিন্তু এখনও যথেষ্ট সীমিত এবং সেগুলি চূড়ান্ত কিছু নয়।

অতএব, আপনি যদি একজন রাফ এন্ড টাফ রাইডার হন, তাহলে নিজের স্বাস্থ্যের বিশেষ করে প্রজননতন্ত্রের যথাযথ যত্ন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সঠিক রাইডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত এবং দীর্ঘ রাইডিংয়ের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অসম আবহাওয়ায় ও পারিপার্শ্বিকতায় শারীরিক সুস্থতা রক্ষায় পর্যাপ্ত বিরতি নেওয়া উচিত। অধিকন্তু, পেশাদার রাইডিংয়ের ক্ষেত্রে পেশাদার বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা মেনে চলা উচিৎ। আর এছাড়াও, মদ্যপান, ধূমপান, মানসিক চাপ ইত্যাদির মতো প্রজনন উর্বরতাকে প্রভাবিত করে এমন ক্ষতিকারক বিষয়গুলি সচেতনভাবে এড়ানো উচিৎ।