Lifan KPT150 4V এই বাইকটা কেনা উচিত নাকি উচিত না ? - মাসুদ

This page was last updated on 30-Jul-2024 08:24am , By Shuvo Bangla

আমি মাসুদ হক । আজ আপনাদের সাথে আমার Lifan KPT150 4V বাইকটি নিয়ে রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

lifan kpt 150 4v

"চায়না বাইক" ট্যাগের কারনে অনেকের ইচ্ছা থাকার পরেও অজানা ভয়ে Lifan Bike কিনতে ভয় পান, বিশেষ করে অসাধারণ লুকের "KPT 4V" মডেলটা। যারা নতুন এই মডেলটা নিয়ে অনেক কিছু চিন্তা করছেন কিনবেন কি কিনবেন না তাদের আজ সব কিছু বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো ।

আমার এই আর্টিকেলটা পড়লে আশা করি অনেক কিছুই ক্লিয়ার হবেন, বুঝতে পারবেন যে আপনার এই বাইকটা কেনা উচিত নাকি উচিত না।

নিশ্চিত থাকেন, যা বলছি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শতভাগ সত্যই বলছি । বাংলাদেশের বহুল জনপ্রিয়, কথিত প্রিমিয়াম বাইক "R15 V3 BS6" ছেড়ে চাইনিজ লিফানে শিফট করার সাহসটা বোধহয় খুব বেশি কেউ দেখাবে না।


আমিও দেখাতাম না কিন্তু বাধ সাধলো মেরুদন্ডের সমস্যা । সত্যি কথা বলতে R15 বাইকটা আগামী ৩-৪ বছর চালানোর ইচ্ছা ছিল কিন্তু স্পোর্টি লিন সিটিং পজিশনের কারনে মেরুদন্ডের সমস্যা হয়ে গেছে অলরেডি তাই একটা ট্যুরিং এডভেঞ্চার টাইপ বাইক ক্রয় করা ফরজ হয়ে গেছিলো আমার জন্য।

প্রথম চয়েস ছিল "HONDA CB 150X" কিন্তু এবিএস না থাকাতে বাদ দিয়েছি। আমার কাছে তাড়াতাড়ি গতি তোলার থেকে তাড়াতাড়ি গতি কমানোটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ । ঠিক করেছি না ভুল করেছি এটা বুঝতে পারবো আরো কয়েকমাস গেলে।

এদিকে KPT'র এই মডেলটার লুকের প্রেমে পড়েছিলাম বাংলাদেশে লঞ্চ করার পর থেকেই। বাইকের টেকনিক্যাল বিষয়ে আমার ওস্তাদ Sahed Ahsan Abir ভায়ের এক কথাতেই এই বাইকটা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যদিও লিফানের শোরুম এ যাওয়ার আগে বাইকটাকে একটা বারের জন্যও সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি!!

মূল কথায় আসি - 
যারা Lifan KPT150 4V কিনবেন কেনার আগে এ জিনিসগুলো পরিবর্তন করার মেন্টাল+ফিন্যান্সিয়াল প্রি-পারেশন নিয়েই কিন  বেন।
১৫ হাজার মতো আলাদা বাজেট রাখবেন এসব কাজের জন্য। এমন না যে পরিবর্তন না করলে চলবেই না তবে বেটার পারফরম্যান্স চাইলে পরিবর্তন করার বিকল্প নাই।

lifan kpt 150 4v bike

মাত্র অল্প কিছু কিলোমিটার চালালাম, ভালো মন্দের বিচারে এখনই যাচ্ছি না । লুক একেকজনের কাছে একেকরকম।

Lifan KPT150 4V বাইকটি নিয়ে কিছু কথা - 

  • সব মিলিয়ে বিল্ড কোয়ালিটি এভারেজ।
  • ইন্ডিয়ান বা "কথিত জাপানি" বাইকগুলোর মতোই মনে হয়েছে।
  • ইঞ্জিন ডিউরিবিলিটি নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই।এই ব্যাপারটাতে লিফানকে ট্রাস্ট করাই যায়।
  • তবে কিছু কিছু জিনিসের কোয়ালিটি আরেকটু বেটার করতে পারতো কোম্পানি।
  • কালার ফিনিশিং আর মেটাল কোয়ালিটি ভালো।
  • থ্রটল রেসপন্স ১০০/১০০।
  • ট্যুরিং এডভেঞ্চার বাইকে এরকমই হওয়া উচিত।
  • সিটিং পজিশন জোশ
  • টার্নিং রেডিয়াস ভালো।
  • সুইচগুলার কোয়ালিটি ভালো না।
  • হেডলাইটের আলো সিটির জন্য পারফেক্ট,হাইওয়েতে ফগ মাস্ট।
  • হ্যান্ডেল বারটা ভালো লেগেছে।
  • মিটারের কোয়ালিটি পছন্দ হয়নি,খেলনা খেলনা মনে হয়।
  • বডি কিট গুলা প্রাইস অনুযায়ী ঠিক আছে।
  • টায়ারও ঠিক ঠাক আছে।
  • স্প্রোকেটের কোয়ালিটি ঠিক থাকলেও চেইন একদম বাজে।
  • সিট যথেস্ট সফট এবং আরামদায়ক। অনেকেই বলতেন সিট শক্ত,তাদের সাথে আমি একমত না।

এবিএস এর পারফর্মেন্সে আমি মোটেও সন্তুষ্ট না। জানিনা পরে কিছুটা ইমপ্রুভ হবে কিনা। এটাতে আফটার মার্কেট কিছু লাগিয়ে ইমপ্রুভ করা গেলে অবশ্যই করতাম। এবিএস আমি ইয়ামাহার মতো না হলেও এটার থেকে বেটার আশা করেছিলাম।

মাইলেজ,টপ এগুলা এখনই চেক করা সম্ভব না। ইঞ্জিন সাউন্ড এখন খুব ভালো না লাগলেও ৩-৪ হাজার পরে এর আসল কেরামতি দেখাবে বলে শতভাগ বিশ্বাস করি। তবে দূর থেকে এক্সহস্ট সাউন্ড খুব ভালো লাগে।

আমি কি কি পরিবর্তন করলাম সেটা বলি -

১। মেইন ইস্যু আমার কাছে মনোশক,প্রচুর হার্ড। আগেই জানতাম তাই ইন্ডিয়া থেকে মেরুদন্ডের চিকিৎসা করে আসার সময় (বাইক কেনার আগেই) সাথে করে HORNET 160 এর মনোশক নিয়ে এসেছিলাম। দাম৩ হাজার রুপি,বাংলাদেশে দাম ৫ হাজার টাকা।

কিছুদিন চালালে সটকটা হয়তো কিছুটা সফট হতো কিন্তু আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব নয় কেননা আমি মেরুদন্ডের পেশেন্ট। হরনেটের সাসপেনশনে অনেক বেটার ফিল পাচ্ছি।

২। চেইন খুবই বাজে কোয়ালিটির। জিক্সারের চেইন ১৯০০ টাকা দিয়ে কিনে লাগালাম। কম দামের মধ্যে ভালোই মনে হচ্ছে।স্প্রোকেটগুলা জিক্সার ইউজার কাজিন নিয়ে নিয়েছে কেননা ওগুলা আর আমার কাজে লাগবে না। চেইনটা আরেকটু ভালো কোয়ালিটি দিতেই পারতো লিফান।

৩। মাস্টার সিলিন্ডার,ব্রেক লিভার এবং ব্রেক সুইচ লাগালাম নিসিন, Fzs V3 এর ফুল সেট। ব্রেক হোস পাইপ চেঞ্জ করার প্রয়োজন মনে করি নি। কেউ চাইলে RCB ও লাগাতে পারেন। ব্রেক বাইটে সন্তুস্ট ছিলাম না,এখন সন্তুস্ট। ব্রেক লিভার আর ক্লাচ লিভার খুবই নিম্নমানের। আরেকটু ভালো দিলে কি হতো?

পেছনের ব্রেকে হাত দেইনি। কিছুদিন গেলে বাইট হয়তো কিছুটা ভালো হবে, না হলে অন্য ব্যাবস্থা নিবো।। বিশেষ করে ব্রেকের মতো সেনসিটিভ একটা বিষয়ে নিম্নমানের মাস্টার সিলিন্ডার, লিভার না দিলেই পারতো।

ব্রেক ফ্লুইড দিয়েছি Liqui Moly Dot4 সিন্থেটিক। ফ্লুইড দেয়ার সময় যেনো কোন বাবল যেন না থাকে এটা অবশ্যই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। কেউ ব্রেকের বেপারে হেলাফেলা করবেন না প্লিজ।

নিসিনের এই সেটাপের সাথে ডানদিকের স্টক ভিউ মিররের প্যাঁচ মিলবে না, লেদে থ্রেড কেটে ঠিক করা লাগবে এই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। RCB এর সাথে থ্রেড মিলবে কিনা জানা নাই। শীঘ্রই ক্লাচ লিভার সেটও চেঞ্জ করে ফেলবো।

৪। ইঞ্জিন যথেস্ট স্মুথ,নো ভাইব্রেশন কিন্তু স্টক ইঞ্জিন ওয়েলের সাউন্ডে সন্তুস্ট ছিলাম না। লিকুই মলি সিন্থেটিক 10W40 এক লিটার আর এটারই 15W50 ২০০ মিলি দিলাম। এটাতে গ্রেড ঠিক থাকলো বাট থিকনেস একটু বেড়ে সাউন্ড এখন আগের থেকে বেটার।

অয়েল ফিল্টার বাজাজ ডিস্কোভারের। অয়েল ফিল্টার লাগানোর পর অবশ্যই গ্যাসকিট আঠা দিবেন।

৫। যদিও ইঞ্জিন যথেস্ট স্মুথ তারপরও স্টক স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করে NGK Laser Iridium ইন্সটল করেছি বেটার স্মুথনেস আর বেটার এক্সিলারেশনের জন্য। আমি এই জিনিসটার বিগ ফ্যান।

৬। FNM M20 ফগ লাইট কিনেছি কিন্তু লাগানো হয়নি এখনো।

যা হোক,সঠিক মেইনটেইনেন্স আর যত্ন করে চালানোর মেন্টালিটি থাকলে চোখ বন্ধ করেই নেয়া যায় এই বাইকটা। প্রাইস রেঞ্জ অনুযায়ী ওভারঅল ঠিকই আছে সবকিছু। আমি বাইক কিনব আমার কষ্টার্জিত পয়সা দিয়ে নিজের স্যাটিসফেকশনের জন্য,কে কি বললো সেটা দেখে লাভ নাই ভাই।

অনেকেই চায়না বাইক বলে হেলা করবে,জাস্ট ইগ্নোর দেম । এককথায়,বাইকের ব্যাপারে আপনার প্যাশন থাকলে, একটু এক্সেপশনাল কিছু চাইলে আর রিসেল ভ্যালুর ব্যাপারে মাথা ব্যাথা না থাকলেই বাইকটা আপনার জন্য।

Nurul Abser Rasel ভাইকে বলবো, আপনারা যদি এই বাইকটার কিছু কিছু জিনিসের কোয়ালিটির দিকটায় নজর দেন,স্পেয়ার পার্টসের সহজলভ্যতা আর সার্ভিসের ব্যাপারটা নিশ্চিত করেন তাহলে এটাই হতে পারে এই সেগমেন্টের গেইম চেঞ্জার বাইক।

কস্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ, সবাই ভালো থাকবেন আর অবশ্যই হেলমেট পরে বাইক চালাবেন। Bikers_Are_Brothers

লিখেছেনঃ মাসুদ হক
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।