মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন অভিজ্ঞতা (পর্ব৩)

This page was last updated on 07-Jul-2024 10:08am , By Saleh Bangla

৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ( কাশ্মীর যাত্রা শুরু )

কাল রাতে আমার স্ত্রী দিল্লী আসে এবার আমাদের টুনাটুনির ভ্রমণ শুরু।জাম্মু ( কাশ্মীর )  আবহাওয়া খারাপ দেখে হিমাচল প্রদেশের চিতকুল, কাল্পা, খাব, তাবো পর্যন্ত যাওয়ার পরিকল্পনা করা হল। আবহাওয়া ভালো না থাকলে আর যাব না, কারন কাশ্মীর তো যাওয়া লাগবে। মানিশ ঢাল ভাইয়ের পরামর্শে রুট ম্যাপ করে ফেললাম। আর রাস্তার কোথায় কোথায় পেট্রোল পাওয়া যাবে তা ঠিক করা হয়ে গেলো। আমাকে অনেকেই বলেছিল এই ডিসেম্বর ঘুরার জন্য উপযুক্ত নয় আর তার উপর বৌ সাথে নিয়ে যাচ্ছো কাজেই অনেক সতর্কতার সাথে চলতে হবে।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন অভিজ্ঞতা (পর্ব৩)

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

একমাত্র মানিশ ভাইয়ের মুখেই শুনলাম যে না আপনি যেতে পারবেন কোন সমস্যা হবে না। আমার কাছে সমস্যা এখন একটাই “সময়” যে করেই হোক ছুটি শেষ করে ২৭ তারিখ অফিসে যোগদান করা লাগবেই লাগবে তা না হলে চাকুরী এদিক সেদিক হয়ে যাবে নির্দেশ দিলেন বাবা আরও বললেন অনেক ঘুরছো এবার ঘরে ফিরে এসে অফিসে যোগদান করো বাবাকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম ঠিক আছে চলে আসবো তুমি টেনশন নিয়ো না। আজকে ০৯ তারিখ কালকে ১০ নভেম্বর। হাতে সময় নেই বললেই চলে। যাই হোক কিছু কেনা কাটা আর ডলার এক্সচেঞ্জ করা লাগবে। সারাদিন ঘুরেও মন মত কোন রাইডিং জ্যাকেট পেলাম না। দিল্লিতে পাওয়া যাবে না এটা মাথায় ছিল না। আসলে যেইটা খুজতে ছিলাম ঐ জ্যাকেটের চাহিদা এতই ছিল যে সবার কাছেই শেষ হয়ে গেছে।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

কি আর করার ৩০০০ কিমি জার্নি হয়ে গেছে জ্যাকেট ছাড়াই আর না হয় বাকিটা পথ এভাবেই গেলাম। রাত হয়ে গেছে এ দিকে ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার ডলার এক্সচেঞ্জ করা লাগবে। সিটি ক্যাসেলের হোটেল ম্যানেজারকে বললাম ভাই আমার ডলার একচেঞ্জ করা লাগবে। ৬৪ রুপি করে দিবে বলল আমার আর কোন অপশন না থাকায় নিয়ে নিলাম কিন্তু সব দিলো ২০০০ রুপির নোট। এত বড় নোট নিতে আপত্তি জানানোর পর উনি বললেন যে কোন সমস্যা নেই আপনি নির্দিধায় নিতে পারেন।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

হোটেল ম্যানেজার বলতেছে আমি আর কোন কিছু চিন্তা না করেই নিয়ে নিলাম। রাতে ঘুমানোর আগেই বাইকের ট্যাঙ্ক ফুল করে নিয়ে রাখলাম যাতে সকালে সময় নষ্ট না হয়। রাতে কেমন যেন একটা অনুভূতি কাজ করছিল। অবশেষে কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে অনেক কাছাকাছি চলে আসসি সেই সাথে মাথাটাও চিন চিন করে প্রচন্ড ব্যাথা করছিল। ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

Also Read: ঢাকার আশেপাশে ৩৪ টি মনোরম জায়গা একদিনে ঘুরে আসার মত

১০ ডিসেম্বর ২০১৭

সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে সব ঠিক ঠাক ভাবেই বের হয়ে গেলাম। নাস্তা করতে ইচ্ছে করছিল না। খুব খুশি খুশি লাগছিল। রাস্তার ট্রাফিক ছিল বেশ। পাঞ্চকুলা যেতেই সময় লেগে গেলো অনেক। দুপুর গরিয়ে বিকাল হয়ে গেছে এখনো নাস্তা ও দুপুরের খাবার কোনটাই খাওয়া হয় নি। পাঞ্চকুলা গিয়ে পর পাহাড়ি একাবাকা রাস্তা শুরু হলো শিমলার নাম কত শুনছি ছবিতে দেখছি বাস্তাবে এই প্রথমবার দেখার সুযোগ হবে তাও আবার বৌকে নিয়ে তার উপর আবার নিজের মোটরসাইকেল সব মিলিয়ে যেন ১৬ কলা পূর্ন হওয়ার মতই। সন্ধ্যায় শিমলা পৌছালাম।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

এ পর্যন্ত ৩৪০ কিমি হয়ে গেছে দিল্লির কারোলবাগ ঐ দিনের প্ল্যান ছিল থিওগ পর্যন্ত যাওয়া তাহলে আমরা আমাদের গন্তব্য এর দিকে এগিয়ে থাকবো যাতে পরের দিন কম জার্নি করা লাগে। কিন্তু শিমলা আসতে আসতে বৌয়ের সাথে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতেই ঝগড়া লেগে গেলো । এখন আজকের মত এখানেই শেষ। পরে শিমলাতেই এক হোটেল বুকিং দিয়ে রাতে উঠে যাই। ঠান্ডা ছিল প্রচন্ড। আমরা গরম দেশের মানুষ আমাদের কাছে ৫-৬ ডিগ্রির ঠান্ডাই অনেক মনে হয়। রাতের খাবার না খেয়েই দুই জন দুদিকে ঘুমিয়ে পরি।

১১ ডিসেম্বর ২০১৭

আজকের প্ল্যান ছিল থিওগ থেকে চিতকুল ২৯০ কিমি কিন্তু এখন আমাদের আরও ৩০ কিমি আরও বেশি যাওয়া লাগবে কারন আমরা এখন শিমলাতে। গত রাতে এমন ঝগড়া লাগছিল চিতকুল যাওয়া তো দূরের কথা পারলে আমরা যে যার মত বাসাই ফিরে যাই। কিসের কাশ্মীর, কিসের আবার ঘুরাঘুরি রে ভাই। এখন আর কোথায় যাব না। আচ্ছা চলো নাস্তা করে আসি আমরা। নাস্তা করতে করতে কাশ্মীর এর ইমরান ওয়ালি ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল হোয়াটস এপে শ্রীনগরে এখন স্নোফল হচ্ছে।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

এখন আর যাওয়া যাবে না রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে হাইওয়ে। হাইওয়েতে নাকি অনেক বড় ধরনের পাহাড়ধশ হয়েছে। শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। যাই হোক তো আমরা আজকে নার্কান্দা যাব তারপর যদি আবহাওয়া ভাল পাই তাহলে সামনে যাব তা না হয় ফিরে আসবো। সকাল থেকেই বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব আকাশটাতে। আমাদের দম্পতির মত সেও যেন বাতাসের সাথে রাগ করে আছে। নার্কান্ডা শিমলা থেকে ৬০ কিমি। যাত্রা শুরু করতে না করতেই বৃষ্টিও শুরু হলো আস্তে আস্তে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই আমরা চলতে থাকি। আসে পাশের প্রকৃতির সাথে মানুষগুলিও দেখতে অনেক সুন্দর। আমার বৌ আমার অবিবাহিত বন্ধুদের জন্য পাত্রি খোজ দ্যা সার্চ শুরু করে দিল।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

শীতের সময় বৃষ্টি মানে ঠান্ডার মাইরে বাপ অবস্থা। তাপমাত্রা নেমে এসেছে ২-১ ডিগ্রিতে। খুব ঠান্ডা তার উপর অঞ্জন দার দেওয়া থারমাল গ্লাবস ওয়াটার প্রুফ না। গ্লাবস খুলে পাতলা আরেক জোড়া গ্লাভস পরে নিলাম যেটা হালকা পাতলা বৃষ্টিতে সমস্যা হবে না। কিছু দূর যেতেই সামনে একটা ভিউ পয়েন্ট এল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সবাই ঐ জায়গাটাতেই গিয়ে গাড়ি থামাচ্ছে সেলফি তুলছে সাথে কুলফি খাচ্ছে। তো আমরাও গিয়ে নামলাম। চা খাওয়া দরকার। দেখি সেখানে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে ম্যাগি নুডলস ও পাওয়া যায়। সিংগেল ডিম সহ ৪০ রুপি।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

এই রকম জায়গায় গরম গরম ম্যাগি নুডলস আহাহ । হাজার হাজার টাকা খরচ করে ফাইভ ষ্টারে খাওয়ার থেকেও বেশি আনন্দ সেই ৪০ রুপির গরম গরম নুডলসে। নুডলস খেতে খেতে কয়েক ধফা বৃষ্টিও খেয়ে নিলাম। কুফ্রি পর্যন্ত এসেছি শিমলা থেকে ২৫ কিমি। উর্মিকে বললাম রেইনকোট পরে চল রওনা দেই এভাবে বসে থাকা যাবে না। সে বল্লল উনি রেইন কোট ভুলে বাসায় রেখে চলে আসসে। কি আর করার।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

এই ঠান্ডায় বৃষ্টিতে ভিজে চালানো যাবে না। অসুস্থ হইলেই সব শেষ। তাই আমরা শিমলার দিকে ফিরার সিদ্ধান্ত নিলাম আর কুফরিতে বৃষ্টী হচ্ছে তার মানে নারকান্ডা তে বরফ পরছে। লো এল্টিচুডে বৃষ্টি মানেই উপরের দিকে বরফ। কাজেই আমাদের ফিরে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। শিমলা আসতেছি কিন্তু শিমলাকে খুব্জে পাচ্ছি না। পাব কিভাবে মেঘের চাদরে পুরো শিমলা যেন ঢেকে গেছে। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যও সে আরেক অন্য রকম অনুভুতি। পুরাই হোয়াইট আউট। এই অবস্থায় যাওয়া যাবে না। সে জন্য আমরা ঐদিন আবার শিমলাতেই থেকে যাই।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

১২ ডিসেম্বর ২০১৭

শিমলা-জাম্মু( কাশ্মীর )

সকালে হয়েছে কিন্তু এখনও সূর্যের দেখা তো দূরের কথা রাস্তা ঘাটই দেখা যাচ্ছে না। কথা হচ্ছিল কাশ্মীর এর ইমরান ওয়ালি ভাইয়ের সাথে। স্নোফলের একটি ভিডিও দিলেন। দেখা মাত্রই উড়ে চলে গেলাম কাশ্মীর (মনে মনে)। উর্মি বলে উঠলো যা হবার হবে চলো যাই আমরা। কখনও বরফ পরা তো দূরের কথা এমনি বরফ ও দেখে নাই। তার উৎসাহ দেখে আমিও মানসিকভাবে অনেক মনে অনেক জোড় পাই। যেই কথা আর সেই কাজ। আমি তাকে অনুরোধ ঠাট্টা করে বললাম যে আর যাই কিছু হোক প্লিজ বাইকে ঘুমাই যাইওনা। দরকার পরে তো বলো তোমাকে বাঞ্জি কর্ড দিয়ে বেধে নেই। ঘন মেঘের চাদর টিপ টিপ বৃষ্টি সব কিছুকে উপেক্ষা করে দুরন্ত পথিকের মত ছুটে চলা শুরু করি আমরা ।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

আকা বাকা পাহাড়ি পথ আর প্রচন্ড রকমের ট্রাফিক। কিছুদূর যেতে না যেতেই শুরু হয় ঊঠলো ঘন মেঘের বর্ষন। রাস্তায় অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপাই নেই। এভাবে পাহাড়ি পথ চলছি আর কিলোমিটারের সাইনবোর্ড গুলির দিকে নজর রাখছি যে কখন এই একাবাকা পথের শেষ হবে আমি তো আর ভেলেন্টিনো রসি না। দুপুর ঘরিয়ে বিকাল পাঞ্চকুলার কাছা কাছি পাহাড়ি রাস্তা শেষ এবার সোজা রাস্তা। সোজা রাস্তা দেখে গতিবেগ কিছুটা বাড়িয়ে দেই। হটাত লাখনোর বাবলা দার ফোন এলো। বলে তোমরা কোথায় এখন বললাম পাঞ্চকুলার কাছা কাছি, উনি বলে তাহলে আজকে আর জাম্মু যাওয়ার কাজ নেই তোমরা হাইওয়ের আসে পাশে কোথায় নাইট স্টে করে নিও। বললাম যে, ভাই আমরা যেতে পারব। উনি অনেক অভিজ্ঞ একজন রাইডার।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

আমাদের ভালোর কথা চিন্তা করেই সব সময় পরামর্শ দিতেন। এবং এতটা আন্তরিক ছিলেন তা আর বলার বাকি রাখে না। প্রতিদিনই একটু পর পর ফোন দিয়ে খোজ নিতেন। মনে হচ্ছিলো আমরা যেন উনার ছোট ভাই বোন। খুব ভাল লাগতো যখন উনি ফোন দিতেন। কথা বলা শেষ করে গুগলে নেভিগেট রিসেন্টার দিয়ে দিখি এখনও মেলা দূর প্রায় ৪১৩ কিমি পথ বাকি বাজে তখন সাড়ে ৪টা। মনকে আম পাতা জাম পাতা বুজ দিলাম যে সোজা রাস্তা একটা ১০০ কিমিঃ চোখ বন্ধ করে চলা যাবে। কোন বেপারই না। ঘন্টায় যদি ৭০-৭৫ ও যাই তাও ৪ থেকে ৫টা বিরতি দেওয়া লাগবেই। গুগল বলে উঠলো যে রাত ১২ঃ৩০ বাজবে ।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

হোটেল একটা বুকিং দিয়ে দিলাম কম টাকায়। এবার চিন্তা শেষ। খালি যেতে পারলেই হইল। এবার খুব হাই রেভ এ টানা শুরু করলাম। হটাৎ সামনে পুলিশের এক চেক পোষ্টে সিগনাল দিলো থামার জন্য। আমি থেমে বাইকে রাস্তার পাশে সাইড করার পর পাঞ্জাবী সরদারদের মত এক ট্রাফিক পুলিশ এসেই বলতেছে এত জোড়ে কেও চালায় ? লাইসেন্স দেন আপনার। তখন তাকে বলি যে ভাই আমি বাংলাদেশ থেকে আসসি শিমলা গিয়েছিলাম এখন জাম্মু যাচ্ছি। তারপর এই কথা শুনে বাইকের পিছনে গিয়ে নাম্বার দেখে না বুঝে বলে “ইয়ে কাহাকি গাড়ি হে”? আমি বললাম ঢাকা কি হে। বলে গাড়িতে স্যার আছে উনাকে গিয়ে বুঝিয়ে বলেন।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

গাড়িতে বসে থাকা ইন্সপেক্টরকে গিয়ে অনুরোধ করালাম যাতে কোন মামলা না দেয়। উনি বলল আপনি লিমিটের ধারের কাছে থাকলেও ছেড়ে দিতে পারতাম এটা আমাদের সিস্টেমে উঠে গেছে কেস আপনাকে দিতেই হবে। ১৪০০ রুপির ফাইন আর পেপারস ৯০ দিনের মধ্য আপনার দেশের ঠিকানায় চলে যাবে। কি মহা মছিবতরে ভাই। পরে তাকে বুঝিয়ে বললাম যে আমার লাইসেন্স আমি দিতে পারব না আর আমার কাছে ১৪০০ রুমি দেওয়ার মত নেই দিয়ে দিলে পরে আমাকে চলতে সমস্যা হবে।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

সে শেষ পর্যন্ত ৪০০রুপির কেস দিয়ে কোন ডুকুমেন্ট না রেখেই ছেড়ে দিলো। আমি কোথায় যাব আর কেইস খাবো না এইটা তো হইতেই পারে না। দেশে থাকা অবস্থায়ও কেসের উপরেই থাকতাম। কি আর করার ৪০০ টাকার একটা বাশ খেয়ে পেট ভরে গেল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনও ৩৭০ কিমি বাকি। উর্মির ব্যাক পেইন হচ্ছিল কিছুটা পাঞ্জাবী এক ঢাবায় গিয়ে রুটি, আর ৭৫ রুপির পাচ মিশালী সবজি নিলাম। সবজিটা ভালো ছিল দুই জনই পেট ভরে খেয়ে নিলাম চা সহ বিল দিলাম ১২০ রুপি। খেয়ে দেয়ে একটু বসারও টাইম নেই হাতে।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

আমার কাছে ভালই লাগছিল। আসলে রাতের রাইডে সিকিউরিটি রিস্ক থাকলেও আমার কাছে রাতের রাইড ভালো লাগে কারন রাস্তায় তুলনামূলকভাবে ট্রাফিক কম থাকে মানুষজন রাস্তার মাঝে দৌড়াদৌড়ি করে না। আলো আধারের মাঝে বাইকের হেড লাইটের লো বিম/হাই বিম দিয়ে পাস পাস খেলতে ভালোই লাগে। উর্মির দিকে টাকিয়ে দেখি অর ব্যাটারি আর একটু পরেই শেষ হয়ে যাবে তারপর পাওয়ার ব্যাঙ্কে চলবে। রাত হলেই উনার চোখে মুখে আমাবশ্বার অন্ধকারের মত ঘম নেমে আসে। এর আগেও অনেক দিন বাইকে সে ঘুমিয়েছে।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

টেনশন একটাই উর্মিকে নিয়ে। পাটানকোট পর্যন্ত রাস্তা ভালই পেলাম তারপর থেকে মাঝে মাঝে শুরু হলো একটু একটু ভাঙ্গা আর ব্রিজ গুলির রাস্তার উপরিভাগ ছিল স্ট্রাইপ শার্টের মত সেখানে স্পীড ধরে রাখা যায় না একটু এদিক সেদিক হলেই পড়তে হবে। আর ছিল গর্ত। আমার বাইকের সাস্পেনশন তুলনামুলকভাবে অন্যান্য বাইকের মত অতটা ভালো না। একটু গর্তে পারলেই পিলিওনের অবস্থা খারাপ। আর এত লোড নিয়ে। এভাবে ঘুমন্ত এক পিলিওন নিয়ে রাত সোয়া একটার দিকে আমরা জাম্মু ( কাশ্মীর )  গিয়ে পৌছাই।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

পাটান কোটের পর খুব ভয় লাগছিল রাস্তা ছিল শুনশান আর অন্ধকার। যাই হোক এবার হোটেল খুজার পালা। ঝামেলা একটাই পাটাকোটের পর নরমাল সিম বন্ধ। মানে নেভিগেশন শেষ। এবার অফ লাইন ম্যাপ ম্যাপ্স ডট মি ওপেন করে নেভিগেট করা শুরু করি। জাম্মু ( কাশ্মীর )  তাওয়ি ব্রিজ ক্রস করে এখন এক গোলক ধাধায় পরি। রাস্তা দুইটা কোন দিকে যাব? ম্যাপের নেভিগেশনে বুঝার উপায় নেই জুম করছি কিন্তু রাস্তা একটাই দেখায়। আর অন্যদিকে আমার হোটেলের লোকেশন আরেকপাশে এভাবে কতক্ষণ ঘুরপাক খেতে খেতে অবশেষে হোটেলের লোকেশনে চলে যাই কিন্তু সেই নামে কোন হোটেল নাই।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

মহাবিপদ বিপদে পরলাম এদিকে উর্মি বাইক থেকে নেমে এক হটেলের নিচেই রাস্তার মধ্যই বসে পড়ছে। নাইট গার্ডকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই এই হোটেল না কোন দিকে। সে আমাকে দেখিয়ে দেওয়ার পর দেখি হোটেলের সব লোক গভীর নিদ্রায় চলে গেছে। দেকে তুল্লাম। আসার পর বললাম ভাই আমার বুকিং ছিল মোঃ রহমান নামে। বলে আমি কোন বুকিং পাই নাই এই নামে। আমি আমার ফোনের স্ক্রিনশট গুল দেখালাম বলে ভাই আমাদেরকে তো কোন কিছু পাঠায় নাই আর আমারা বুকিং ডটকমের মাধ্যমে অনেক আগেই বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন

আচ্ছা বাদদেন এখন বলেন কোন রুম খালি আছে? বলে না নাই। পরে আমাদের অবস্থা দেখে সে বল্ল একটা রুম খালি আছে কিন্তু ঐ লোকের সকালে আশার কথা। আচ্ছা আপনারা আসেন সকালের টা সকালে দেখব। রুমে গিয়ে সব কিছু রাখতে না রাখতেই ইন্টারকমে ফোন দিয়ে বলে ভাই আপনাদের পাসপোর্ট নিয়ে নিচে আসেন এন্ট্রি করা লাগবে। আমি আমার আর উর্মির পাসপোর্ট নিয়ে নিচে লবিতে গেলাম আগে উর্মির পাসপোর্ট টা দিলাম সব কিছু ঠিক আছে আমার পাসপোর্ট দেখে বলে ভিসা কই??? আমি বললাম ভাই এইটা অফিসিয়াল পাসপোর্ট এইটা তে ভিসা লাগে না। তারপর উনার উত্তর ছিল “ ফের ইয়ে তো পাঙ্গা ওয়ালি বাত হোগায়া” । পরে তাকে বললাম যে আপনার যে হোটেলের মালিক উনাকে সকালে জিজ্ঞেস কইরেন উনি জানবে। রুমে এসে কোন মোতে জুতাটা খুলে বিছানার উপর শুতেই গভীর ঘুমের মাঝে হারিয়ে গেলাম।

মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন পর্ব ৩ আজ এ পর্যন্তই।

লিখেছেনঃ সাজেদুর রহমান মাহি