বাইক নিয়ে আমের রাজ্য জয়

This page was last updated on 04-Jul-2024 12:53pm , By Shuvo Bangla

ঈদের পরপর প্রতিবছর ই একটা ভালো রকমের ছুটি পাওয়া যায়।একেবারে লম্বা ছুটি যাতে নিশ্চিন্তে দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বাইক নিয়ে যাওয়া যায়। তাই ঈদের আগেই ভেবে চিনতে ঠিক করে রেখেছিলাম এবারের ছুটিতে হয়তো চায়ের দেশ সিলেট যাবো।বর্ষাকালে সিলেটের সৌন্দর্য কেমন যেন বেড়ে যায় আর সব কিছু আরো আকর্ষণীয় লাগে। ভাবনা অনুযায়ী প্রস্তুতি ও নিচ্ছিলাম আমরা বেশ কয়েকজন।

বাইক নিয়ে আমের রাজ্য জয়

এর মধ্যে আমাদের বাকী টিমমেট দের সাথে হিলট্রেক ও যাওয়া বাদ দিয়েছি এই ট্যুরের জন্য।ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আবহাওয়া ও তত বৈরী হতে লাগলো। ইতোমধ্যে প্রায় সকল প্রস্তুতি কমপ্লিট কিন্তু আকাশ যেন ফুটা হয়ে অঝোর ধারা ঝরছে। এরি মাঝে আমাদের এক ভাই আমার সাথে দেখা করে রাজশাহী যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। আমি উনাকে রোড প্ল্যান এবং প্রস্তুতির ব্যাপারে সাহায্য করলাম।

এদিকে আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে আমার সিলেট যাওয়ার পার্টনার গন পিছপা হতে লাগলো। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না তাদের ইচ্ছা সম্পর্কে।ভাবলাম কি করা যায় এতদিনের প্রস্তুতি এভাবে নষ্ট করা যাবে না। এরি মাঝে যোগাযোগ হলো Md Arian Ahmed Sumon ভাই এর সাথে যিনি কিনা রাজশাহীর ব্যাপারে পরামর্শ করেছিলেন। উনি বললেন একা এত বড় ট্যুর উনার কাছে ভালো লাগবে না তাই উনার সাথে ট্যুর পার্টনার হতে। ভাবলাম সিলেট আর হিলট্রেক যেহেতু মিস হচ্ছে সুতরাং এটাই ভালো হবে।

আমি ও রাজি হয়ে গেলাম। যেহেতু লং ট্যুর তাই পিলিয়ন ছাড়া একা একা লাগবে। যোগাযোগ হলো AR Rahman Mohasine এর সাথে। ট্যুর এর ব্যাপারে ওর ও কিছুটা আগ্রহ ও প্রস্তুতি ছিলো তাই তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় নি।পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ইদের পরদিন সকাল ৬:৩০ মিনিটে মিরের বাজার সবাই হাজির হলাম।

সুমন ভাই পিলিয়ন হিসেবে উনার পরিচিত এক ভাই ‪#‎Riyad‬ ভাইকে নিলেন। যদিও পিলিওন হিসেবে রিয়াদ ভাই কিছুটা আনফিট ই বলা চলে তবে মানুষ হিসেবে অত্যান্ত মনোমুগ্ধকর। আমরা ঈদের দিন রাতেই ট্যাংক ফুল করে রেখেছিলাম তাই সকাল সকাল ই রাইড শুরু করলাম। ধীরাশ্রম গাজীপুর বাইকার্জ পয়েন্ট থেকে আমাদের সাথে জয়েন করলো মহাসীন। হাল্কা চা খেয়ে শুরু হলো মুল রাইড।আমরা ভোগড়া চৌরাস্তা হয়ে চন্দ্রা পৌছাই এখান থেকে সোজা টাংগাইল রাস্তা ধরে বংগবন্ধু সেতু।

যদিও ৯০ কিলো পার হয়েই সুমন ভাই নাস্তা করার কথা বললেন কিন্তু আমরা না থেমে চলে গেলাম সিরাজগঞ্জ মোরের কাছাকাছি হানিফ হোটেলে। দুভাগ্যবশত খাওয়ার মত কিছুই না পেয়ে হাল্কা কেক, বিস্কিট আর কলা খেয়েই রাইড করতে হলো।এদিকে রাজশাহীতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আমাদের অত্যান্ত প্রিয় বড়ভাই Rasheduzzaman Khan ভাই। এরপর কয়েকটা ছোটখাটো ব্রেক দিয়ে আমরা দুপুরবেলা পৌছে যাই রাজশাহী আম চত্তর।

যাওয়ার সময় বাইপাস রোড সত্যি অসাধারণ যা বলে কাউকে বোঝানো অসম্ভব। চার পাশের দৃশ্য মন জুড়িয়ে যায়।আম চত্তরের পাশেই উনার শশুর বাড়ী।রাশেদ ভাই মুলত ঢাকায় থাকেন এবং কেন্দ্রীয় ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত। উনার শশুর রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস এর ভিতরে সরকারী কোয়াটার এ থাকেন। তাই আমাদের ও আশ্রয় হলো কোয়াটার এর ভিতরে। বেশ ভালো রকমের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলাম। সবাই বেশ খাওয়াদাওয়া করে ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট নিয়ে বিকেলে বের হলাম।

আজকের জন্য আর লম্বা ঘোরাঘুরি করবো না ভেবে পুরো রাজশাহী শহরেই ঘুরে বেড়ালাম। রাজশাহী শহর এত সুন্দর আর ঘোছানো যা আমার দেখা বাংলদেশের অন্য সব শহর থেকে বেশী। এরি মাঝে আমরা রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও জাতীয় ৪ নেতার এক নেতার ছেলে জনাব খায়রুজ্জামান লিটন সাহেবের সাথে দেখা করলাম।

শুনেছি শহর এত সুন্দর করে সাজানোর পিছনে সবচেয়ে বেশী ভুমিকা উনার। যাইহোক এতক্ষণ রাশেদ ভাই আমাদের সাথেই ছিলেন এবার পারিবারিক কাজে উনি চলে গেলেন আর আমাদের পরামর্শ দিলেন ঘোরাঘুরির ব্যাপারে। আমরা সুন্দর বিকেল উপভোগ করতে চলে গেলাম রাজশাহীর পাশ দিয়ে বহমান পদ্মা নদীর তীরে। বেশ সুন্দর আর চমতকার পরিবেশ। সন্ধ্যাকালীন সময় সেখানে থেকে আমরা কোয়াটার এ ফিরে আসলাম।

বাইরের মেইন গেটে সিকিঊরিটি পাহারায় পার্কিং এ বাইক রেখে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার শেষ করেই ঘুম। রাতে হাল্কা বৃষ্টি হওয়ায় সাবার ই ঘুম আরো বেরে গেলো।ফলাফল সকালে উঠতে সবার ই দেরী। উঠেই ফ্রেশ হয়ে সব গুছিয়ে নিলাম। কিন্তু এখনো ভাবির প্রানঢালা আপ্যায়ন। পিঠা,হাসের মাংস, চিকন চালের ভাত আর রাজশাহীর স্পেশাল ডাল ভুনা। বেশ ভালো খাওয়া দাওয়া করে বিদায় নিয়ে আল্লাহর নামে যাত্রা শুরু।গন্তব্য চাপাই নবাগঞ্জ।

খুব ফুরফুরে মেজাজে বাইক রাইড করে পৌছে গেলাম চাপাই।তবে এই একটা জায়গায় সম্ভবত রাস্তা আমাদের বাইকের ভয়ংকর রুপ দেখেছে। রাজশাহী থেকে চাপাই রাস্তা এতটাই ভালো যে পুরোটা রাস্তা জুরে আমাদের বাইক গর্জন করেছে।এবং খুব সহজেই আমরা ভালো একটা গতি ধরে রাখতে পেরেছি।তবে আমাদের চাপাই পৌছানোর পরে মনে হলো এখানে সময় নষ্ট না করাই উত্তম। তাই হাল্কা টি ব্রেক দিয়েই রওনা দিলাম কানসাট আম বাজারের দিকে।এতক্ষন যত সৌন্দর্য দেখছিলাম তা হঠাত করেই কেন যেন সাদা কালো মনে হতে লাগলো কেননা এবার মনে হচ্ছে আসল সৌন্দর্য দেখছি।

দুই পাশে সারি সারি আমের বাগান, আর মঝখান দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা। রাস্তার বাক গুলো মনে লেগে থাকার মত।আর আম বাগানের রোদ ঝিলমিলি পরিবেশ যেন স্বর্গীয় কোন দৃশ্য। মাঝে মঝে বেশ কয়েকটা বাগান আমে পরিপুর্ন। দেখতে দেখতে আমরা পৌছে গেলাম কানসাট আমের বাজারে। বিশাল বাজার চারিদিক থেকে ভ্যান,রিকশা আর সাইকেলে করে বড় বড় টুকরী ভরে আম আসছে। চারিদিকে মিষ্টি আমের মৌ মৌ ঘ্রাণ, এখনো কল্পনায় যেন সেখানে পাওয়া সেই ঘ্রান পাচ্ছি।

এরি মাঝে আমদের সাথে দেখা করতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূর থেকে জনাব মোঃ হাসেম অালী হৃদয় ভাই ও আরো দুইজন ভাই বাইকে করে কানসাট বাজারে আসলেন।তারা এই প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে আমাদের নিয়ে গেলেন ঐতিহাসিক সোনামসজিদ এলাকায়। সেখানে ঐতিহাসিক নিদর্শন সোনামসজিদ ও বীর শ্রেষ্ট মতিউর রহমানের কবর ও আরো কয়েকটি নিদর্শন দেখলাম।এরি মাঝে আমাদের সাথে ৭/৮ কিলো দুরের পথ পারি দিয়ে যোগ দিলো আরেক হিরো Amdad Arfin। ছেলেটা সত্যি অনেক অনেক প্রতিভাবান। দেখলেই বোঝা যায় ভেতরে কিছু একটা আছে। হাসেম, এমদাদ আর অন্য ভাইরা মিলে আমাদের নিয়ে গেলো। স্থলবন্দর এলাকায়। সেখানে পরিচয় হলো আরেক ভাই‪#‎বুলবুল‬ ভাইয়ের সাথে।

সত্যিকার ভালোমনের মনুষ উনি এবং যথেষ্ট অতিথিপরায়ণ অনেক রিকোয়েস্ট করার পরেও যথেষ্ট চা-নাস্তা না করিয়ে ছাড়লেন না। এমনকি দুপুরের লান্স করার জন্য বেশ জোড়ালো তাগিদ দিলেন। যেহেতু সময় সল্প তাই বিদায় নিয়ে চলতে শুরু করলাম যেহেতু একটাই রাস্তা তাই এসে থামলাম কানসাট বাজারে। এর মাঝে আম বাগানে হাল্কা ব্রেক দিলাম কিছুসময় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করলাম। কানসাট বাজারে আমাদের ভাইয়েরা অত্যান্ত জত্ন সহকারে আমাদের বিশাল বিশাল সাইজের আম কেটে কেটে খাওয়ালেন। আমরা যার যার মত পেট ভরে আম খেয়ে নিলাম।

এবং পাশাপাশি ব্যাগ ভরে আম দিয়েও দিলেন।যেহেতু দূরের পথ সুতরাং বাধ্য হয়ে অল্প করেই আম নিতে হলো। এবার আমাদের ভাইদের বিদায় দিয়ে আমাদের ঢাকার পথ ধরার পালা।খুব খারাপ লাগছিলো সবাইকে বিদায় দিয়ে আসতে কিন্তু কিছু করার ও ছিলো না। এবার সবাইকে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলাম ঢাকার দিকে। হাসেম ভাই একটু বেশি এগিয়ে দিলেন।পথিমধ্যে সুমন ভাই ফুয়েল নিলেন সাথে আমি ও নিয়ে নিলাম। এবার সরাসরি চলে আসলাম চাপাইয়ে এখানে Md Ziaul Haque Zia ভাই আমাদের জন্য অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছিলেন।

উনার সাথে দেখা করলাম উনি আমাদের উষ্ণ অভ্যার্থনা দিলেন। এবং আমরা রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য হাল্কা গ্লুকোজ পানি খেলাম। এবার উনাকে বিদায় দিয়ে কাছের পাম্প থেকে দুইটা ইঞ্জিন অয়েল নিলাম। শুরু করলাম রাইড পথিমধ্যে ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ সহ হাল্কা কয়েকটা ছোট খাট ব্রেক দিয়েই পৌছে গেলাম রাজশাহী। মাঝখানে হাল্কা বৃষ্টি ঝাপটা দিলেও তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি।এবার রাজশাহী থেকে হাল্কা টি ব্রেক শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এরি মাঝে সন্ধ্যা প্রায় ছোয় ছোয় অবস্থা। সবাই মোটামুটি ক্লান্ত কিন্তু গন্তব্য বহুদূর, তাই না থেমে চলতেই লাগলাম।

এভাবে প্রায় নাটোরের বনপারার কাছাকাছি আসতেই হঠাত শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বাইক সাইড করতে করতেই প্রায় ভিজে গেছি অবস্থা।বহুদুরের পথ তাই থেমে থাকলে চলবে না। রেইনকোর্ট পরে আবার রাইড শুরু। তবে এবার রাস্তা খুব ভয়াবহ অবস্থা তাই খুব বেশি স্পিড ও ধরে রাখা যাচ্ছে না। বেশ ধীর গতিতেই আমাদের পারি দিতে হলো অনেকটা রাস্তা। সবাই খুব ক্ষুধার্ত কিন্তু চাইলেই দাঁড়ানো যাচ্ছে না। এভাবে চলতে চলতে আমরা সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল মোড়ে পৌছালাম। এখানে বেশ কয়েটা হাইওয়ে হোটেল রয়েছে। এখানে আমরা রাতের খাবার হিসেবে গোসত আর রুটি খেলাম।

এবার সবাই কেমন যেন প্রান সঞ্চার করলো। আমরা এতক্ষণ রেইনকোর্ট পরা ছিলাম এবার তা খোলার প্রয়োজন বোধ করলাম। সবাই রাতের খাবার শেষ করে হাল্কা চা খেয়ে রওনা দিলাম। তবে এবার আর কোন থামাথামি নেই। সরাসরি গাজীপুর চন্দ্রার কাছাকাছি পৌঁছতেই সুমন ভাই পিছন থেকে টি ব্রেক এর জন্য বললেন। এখানে আমরা প্রায় ৯০ কিলো একটানা রাইড করে এসেছি তাই বাইক গুলোর রেস্ট দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। ১০ মিনিট বিরতির পর একটানা বাইক রাইড করে আমাদের বাইকার পয়েন্টে রাত ১২ টার দিকে পৌছাই। এবার মহাসিন কে ওর বাসার কাছে পৌছে দিয়ে যে যার যার মত বাসায় পৌছে যাই।

যদিও ট্যুরটি ছিলো খবই সল্প সময়ের কিন্তু এর থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা, ভালোবাসা আর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সত্যি অকৃত্তিম যা কখনোই কল্পনা করা সম্ভব না।

বি:দ্র:-এই পোষ্টে আমি আমার ব্যাক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছি এবং বিশেষ কারনে সকল কিছুর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া সম্ভব হয়নি, সুতরাং কেও কষ্ট পেয়ে থাকলে বা ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ASIK GBz Gazipur Bikerz

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

CFMoto 125NK

CFMoto 125NK

Price: 0.00

Liban Wind

Liban Wind

Price: 0.00

Liban Phoenix Plus

Liban Phoenix Plus

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Liban Wind

Liban Wind

Price: 0.00

Liban Phoenix Plus

Liban Phoenix Plus

Price: 0.00

Liban Phoenix

Liban Phoenix

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes