প্রচলিত পেট্রোল চালিত মোটরসাইকেলের সুবিধা এবং অসুবিধা

This page was last updated on 05-Jun-2024 05:24pm , By Saleh Bangla

মোটরসাইক্লিংয়ের জগতে প্রচলিত পেট্রোল-ইঞ্জিন চালিত মোটরসাইকেলের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। এই মোটরসাইকেলগুলি দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বব্যাপী পথে-প্রান্তরে আধিপত্য বিস্তার করে মোটরসাইক্লিংয়েরর বিভিন্ন সেগমেন্টে এখনো স্বমহিমায় সমুজ্জল হয়ে টিকে আছে। তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্বেগের কারণে মানুষ এখন পরিবেশ-বান্ধব বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।

কিন্তু এখনো একটা বিষয স্পষ্ট যে, প্রচলিত পেট্রল-চালিত মোটরসাইকেলগুলো এখনো নতুন নতুন প্রতিপক্ষের তুলনায় অনেক দিক দিয়েই অগ্রগামী এবং শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তো সেইসূত্রে আজ আমরা প্রচলিত পেট্রোল চালিত মোটরসাইকেলের সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে আরো ভালোভাবে বুঝা যায় এসব মোটরসাইকেল বাহন হিসেবে এখনো কতটা সক্ষম।

 

প্রচলিত পেট্রোল চালিত মোটরসাইকেলের সুবিধা এবং অসুবিধা

মূলত: বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির সীমিত উৎস নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগে বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল সাধারণ মোটরসাইকেলের পাশাপাশি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যদিও এখন পর্যন্ত স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতের ক্ষেত্রে এসব বাহন ব্যবহার হচ্ছে, তবুও প্রচলিত পেট্রোল-ইঞ্জিন মোটরসাইকেলের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তো সেইসূত্রেই এখানে প্রচলিত মোটরসাইকেলের সুবিধা এবং অসুবিধা তুলে ধো হলো। আশকরি এতেই পরিস্কার হয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতে প্রচলিত মোটরসাইকেলের অবস্থান নিয়ে।

প্রচলিত পেট্রোল-ইঞ্জিন চালিত মোটরসাইকেলের সুবিধা

>> প্রচলিত পেট্রল-ইঞ্জিন-চালিত মোটরসাইকেলগুলি সন্দেহাতীতভাবেই এখন পর্যন্ত অনেক দিক দিয়েই অগ্রগামী। কেননা এসব মোটরসাইকেল বিশ্বব্যাপী শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে উন্নত এবং পরিমার্জিত হয়ে আজকের আধুনিক অবস্থায় এসেছে। ফলে, সলিড আ্যাডভান্সড টেকনলোজি ও আধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ হয়ে এসব মোটরসাইকেল এখন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি বাহন। আর নিশ্চিতভাবেই এসব মোটরসাইকেল আনবিটেবল পারফরম্যান্সে বহুল পরীক্ষিত।

>> প্রচলিত পেট্রল-ইঞ্জিন-চালিত মোটরসাইকেলগুলি অত্যন্ত শক্তিশালী ধরনের, যা এমনকি এ্যাডভান্সড লেভেলের ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের তুলনায় অনেক ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারে। সেইসাথে এসব মোটরসাইকেলে অনেক আধুনিক পারফরম্যান্স ও সেফটি ফিচার থাকে। ফলে এই মোটরসাইকেলগুলি অসাধারণ স্পিড ও এক্সিলারেশন দেয়। ফলে পেট্রল-ইঞ্জিন-চালিত মোটরসাইকেলগুলি সাধারণ চলাচলে তো বটেই, স্পোর্টস ট্র্যাকেও আনবিটেবল পারফর্মেন্স নিশ্চিত করে।

>> এছাড়াও পেট্রল-চালিত মোটরসাইকেলগুলি সাধারণত ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের তুলনায় অনেক বেশি রাইডিং রেঞ্জ দেয়। ফলে এসব মোটরসাইকেল দূরপাল্লার রাইডের জন্য অত্যন্ত সহায়ক এবং এসবের রিফুয়েলিংও খুবই সহজ ও ঝামেলামুক্ত, যা ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে সম্ভব না। আর এই বিশেষ সুবিধা ও বর্ধিত রাইডিং রেঞ্জের কারনে পেট্রল-চালিত মোটরসাইকেলগুলি লং-ট্রাভেলার ও অ্যাডভেঞ্চার রাইডারদের জন্যে আদর্শ বাহন।

>> প্রচলিত পেট্রল-চালিত মোটরসাইকেলগুলির লং-রাইডিং-রেঞ্জ ও সহজ রিফুয়েলিংয়ের সুবিধার সাথে সাথে আরেকটি বড়ো সুবিধা হলো বিশ্বের প্রায় সবখানে পেট্রোল স্টেশনের সহজলভ্যতা। ফলে এসব মোটরসাইকেল নিয়ে সবখানেই যাওয়া যায়। আর একটি ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের ব্যাটারি রিচার্জ করার দীর্ঘ সময়ের বিপরীতে সাধারণ মোটরসাইকেল রিফ‍ুয়েল করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। এই সুবিধাটি সর্বক্ষেত্রেই যেকোনো ধরণের রাইডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুবিধাজনক একটি বিষয়। ফলে লং রাইডে তো বটেই, অনুন্নত ও সাধারন এলাকাতেও এসব মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করা যায়।

>> এছাড়াও প্রচলিত পেট্রল-চালিত মোটরসাইকেলগুলির কাস্টমাইজেশন, মডিফিকেশন, ও পারসোনালাইজেশনের সুবিধা প্রায় সবখানেই সহজলভ্য। ফলে একজন রাইডার তার মোটরসাইকেলটিকে আফটারমার্কেট এ্যাক্সেসরিজ ও গ্যাজেট দিয়ে তার পছন্দমতো কসমেটিক মডিফিকেশন থেকে শুরু করে পারফরম্যান্স আপগ্রেড পর্যন্ত নানা রকম কাষ্টমাইজেশন করে নিতে পারেন। আর এছাড়াও এসব মোটরসাইকেলের রিপেয়ার ও মেইনটেন্যান্সের সুবিধা, ডিলারশিপ, মেকানিক্, এবং আফটারমার্কেট সাপোর্ট প্রায় সবখানেই অত্যন্ত সহজলভ্য।

 

প্রচলিত পেট্রোল-ইঞ্জিন চালিত মোটরসাইকেলের অসুবিধা

>> প্রচলিত পেট্রল-ইঞ্জিন-চালিত মোটরসাইকেলগুলি এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সক্ষম ও পারফরম্যান্স ওরিয়েন্টেড বাহন হলেও এসব মোটরসাইকেল পরিবেশের উপর বেশ প্রভাব ফেলে। এসব মোটরসাইকেল বায়ু ও শব্দ দূষণ যেমন ঘটায়, তেমনি গ্যাসেলিন-চালিত অন্যান্য অটোমোবাইলের সাথে সাথে মিলে পরিবেশগত সমস্যাগুলিকেও অনেকটা বাড়িয়ে তোলে। ফলে প্রচলিত পেট্রল-ইঞ্জিন-চালিত মোটরসাইকেলগুলি যথেষ্ট পরিবেশবান্ধব নয়।

>> তেলের দামের বৃদ্ধি ও অন্যান্য কারণে প্রচলিত পেট্রল-ইঞ্জিন-চালিত মোটরসাইকেলগুলির ব্যবহারের খরচ তুলনামূলকভ‍াবে অনেকটাই বেশি। বিশ্ববাজারে তেলে দামের ওঠানামা এসব মোটরসাইকেলের সামগ্রিক অপারেটিং খরচকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে  প্রভাবিত করে। উপরোন্ত, লুব্রিকেন্ট পরিবর্তন এবং টিউন-আপসহ নিয়মিত মেইনটেন্যান্স ও ব্যয়বহুল রিপেয়ার এসব মোটরসাইকেল ব্যবহারের খরচকে সামগ্রিকভাবে আরো বাড়িয়ে তোলে।

>> শহুরে পরিবেশে বিশেষ করে শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে প্রচলিত পেট্রল-চালিত মোটরসাইকেলগুলি প্রকৃতির উপর বেশি প্রভাব ফেলে। এসব মোটরসাইকেলের জোড়ালো একজষ্ট সরাসরি শব্দ দূষণ ঘটায়। ফলে এসব মোটরসাইকেল শহুরে এবং গ্রামীণ পরিবেশে যেমন বিরক্তি উৎপাদন করে, তেমনি বুনো পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর উপরও সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই এসব মোটরসাইকেল বনাঞ্চল ও ইনডোর ইউজের জন্য উপযুক্ত নয়।

>> প্রচলিত পেট্রল-চালিত মোটরসাইকেলগুলির আরেকটি অসুবিধাজনক দিক হলো, এগুলিতে ঘন ঘন মেইনটেন্যান্সের প্রয়োজন হয়। কেননা এসব মোটরসাইকেলে অনেক জটিল ও বেশি মুভিং পার্টস থাকে। আর আধুনিক ফিচারসহ এতে বেশ জটিল ইঞ্জিন মেকানিজম থাকায় ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের তুলনায় এই মোটরসাইকেলগুলির বেশি মেইনটেন্যান্সের প্রয়োজন হয়। ফলে এসবে তুলনামূলকভাবে বেশি খরচ করতে হয়।

 

তো বন্ধুরা, এই হলো প্রচলিত পেট্রোল-ইঞ্জিন চালিত মোটরসাইকেলের সাধারন সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আধুনিক টেকনিক্যালি এ্যাডভান্সড মোটরসাইকেলেরও কার্বন ফুটপ্রিন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু অবদান রয়েছে। কিন্তু একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট, পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেলগুলি এখনও ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে। আর কিছু ক্ষেত্রে এখনো এসব মোটরসাইকেল অপ্রতিরোধ্য। সুতরাং বলা যায়, এখনো পেট্রোল-চালিত মোটরসাইকেলগুলির সামনে চলার মতো অনেক পথ বাকি।