Shares 2
সু্যুকি জিক্সার ওনারশীপ রিভিউ-সিফাত
Last updated on 03-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
মোটরসাইকেলের অর্থ একেক জনের কাছে একেক রকম। আমার কাছে এর অর্থ মুক্তি। ব্যাস্ততার চাপ থেকে মুক্তি পেতে মাঝে মাঝেই মোটরসাইকেল নিয়ে হাইওয়েতে বের হয়ে পরতাম। এই হাইওয়েতে চালাতে চালাতে একসময় মনে হল কিছু একটা নেই আমার বর্তমান মোটরসাইকেলে। হ্যাঁ, মোটরসাইকেলটার ইঞ্জিন শক্তি একটু বেশী এবং নিয়ন্ত্রণ ভাল হলে মুক্তির স্বাদ একটু বেড়ে যায় বৈকি। যেই ভাবা সেই কাজ, ০৭/০৫/২০১৫ইং এ কিনে ফেল্লাম বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনসম্মত সিসির মোটরসাইকেল সু্যুকি জিক্সার (১৫৪.৯ সিসি)।
সু্যুকি জিক্সার ওনারশীপ রিভিউ-সিফাত
কেন সু্যুকি জিক্সার?
আমারা বেশিরভাগ মানুষই কিছুটা বিভ্রান্ত থাকি মোটরসাইকেল কেনার সময়। আমিও ছিলাম। শুরু করলাম বিভিন্ন মোটরসাইকেল এর পর্যালোচনা পড়া। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে বেশি সিসির মোটরসাইকেল ব্যাবহারকারীদের অভিজ্ঞতা পড়লাম। সেই সাথে আলোচনা করলাম তাদের সাথে যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। ইউটিউবেও ঐ মোটরসাইকেল গুলোর পরীক্ষামূলক চালনা দেখলাম। কষ্ট করে আয় করা টাকা থেকে কিনব এই মোটরসাইকেল, চাহিদার কিছু একটা বাদ পরে গেলে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে নিজের কাছেই। নিম্নের কিছু বিষয় ঠিক করলাম যা দরকার আমার নতুন মোটরসাইকেল এ।
১। ইঞ্জিন এর ক্ষমতা অবশ্যই বেশী হতে হবে।
২। টিউব ছাড়া মোটা চাকা থাকতে হবে।
৩। বডি, গ্রাফিক্যাল ও এরো-ডায়নামিক ডিজাইন ভাল হতে হবে।
৪। ড্যাস বোর্ড পুরোটা ডিজিটাল এবং তাতে গিয়ার নির্দেশক থাকতে হবে।
৫। ইঞ্জিন থামানোর আলাদা সুইচ থাকতে হবে।
৬। মোটরসাইকেলের ওজন তুলনামূলক বেশি হতে হবে।
৭। দেশব্যাপী খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য হতে হবে।
৮। ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়ের পরের সেবা ভাল হতে হবে।
এই পয়েণ্ট গুলোর সাথে মিল রেখে ৩ টা মোটরসাইকেল পছন্দের তালিকায়ও আনলাম। সেগুলো ছিল ইয়ামাহা ফেজার, হোন্ডা ট্রিগার এবং হিরো হাংক। ঠিক এসময়ই একটা নতুন মোটরসাইকেল বাংলাদেশের বাজারে আসল যার নাম সুজুকি জিক্সার। শুরু করলাম এর তথ্য সংগ্রহ করা।
সব তথ্য পর্যালোচনা করে দেখলাম, এটা বাজারে নতুন আসায় আমার চাহিদার ৭ এবং ৮ নং পয়েন্টের আংশিক এর সাথে মিলছে না। কিন্তু প্রথম ৬ টা পয়েন্টই এই মোটরসাইকেলের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। জ্বালানি স্বাশ্রয়ী ইঞ্জিনের তথ্যটা ছিল যেন বোনাস।
ইয়ামাহা ফেজার, হোন্ডা ট্রিগার এবং হিরো হাংক এই বিষয় গুলোতে সুজুকি জিক্সার থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে। সুতরাং আর দেরি করলাম না। আমার বাজেট ছিল ২,৮৫,০০০/- টাকা (মোটরসাইকেল + রেজিস্ট্রেশন)। সুজুকি জিক্সার কিনতে যেয়ে দেখি ২,৬০,০০০ টাকায় মোটরসাইকেলের সাথে রেজিস্ট্রেশনও সম্পন্ন হয়ে গেল। সুতরাং টাকাও কিছুটা বেঁচে গেল।
সুযুকি জিক্সার - সবিস্তার বিবরণীঃ
সুযুকি জিএসএক্স-আর১000 মডেলের আদলে তৈরী করা হয়েছে সুযুকি জিক্সার মোটরসাইকেল। বলার অবকাশ রাখে না, কিছুটা সুপার মোটরসাইকেলের স্বাদ দিতেই যেন এর জন্ম। নিচে জিক্সারের সবিস্তার বিবরণী দেয়া হল -
Engine
Engine: Type4-stroke, 1-cylinder, Air-cooled
Valve System: SOHC, 2 Valve
Displacement: 154.9 cm3
Bore x Stroke: 56.0 mm x 62.9 mm
Engine Output: 14.8ps@8000 rpm
Torque: 14 Nm @ 6000 rpm
Fuel System: Carburetor
Starter System: Electric / Kick
Transmission Type: 5 Speed, MT
Brake
Front: Disc
Rear: Drum
Suspension
Front: Telescopic
Rear: Swing Arm, Mono Suspension
Dimensions and Weight
Wheels: Cast
Overall Length: 2,050 mm
Overall Width: 785 mm
Overall Height: 1,030 mm
Wheel Base: 1,330 mm
Ground Clearance: 160 mm
Seat Height: 780 mm
Kerb Mass: 135 kg
Fuel Capacity: 12 Ltrs (with 2 Ltrs Reserve)
Tyre Size
Front: 100/80 - 17 - Tubeless
Rear: 140/60R - 17 - Radial Tubeless
Electrical
Battery: Maintenance free 12V, 3Ah
Headlight: 12V 35/35W
Tail Light: LED
সুযুকি জিক্সার চালানোর অভিজ্ঞতাঃ
এই মোটরসাইকেলের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য টানা এক বছরের ওপর বিভিন্ন রস্তায় (গ্রামের কাঁচা রাস্তা থেকে পাহাড়ি উঁচু রাস্তা) এবং বিভিন্ন আবহাওয়ায় (প্রধাণত শীত-গ্রীস্ম-বর্ষা) এটা চালিয়েছি।
এই পর্যালোচনা লেখা শেষ করা পর্যন্ত ১২,৫০০ কি. মি. চালিয়েছি এই মোটরসাইকেল। সর্বোচ্চ গতি পেয়েছি ১১৮ কি.মি./ঘণ্টা। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত এমন কোন মোটরসাইকেল আবিষ্কার হয়নি যা কিনা ১০০% সন্তুষ্টি দিবে তাঁর রাইডারকে। সুযুকি জিক্সারও এর বাইরে না। এই মোটরসাইকেলের যেমন ভাল দিক আছে, তেমনি আছে কিছু খারাপ দিকও। এগুলো নিচে পয়েন্ট আকারে দেয়া হল ।
সুযুকি জিক্সার এর ভাল দিকঃ
১। ইঞ্জিনের শক্তি এবং সঞ্চালন এত ভাল। অনেক সময় স্পীডোমিটারে না তাকালে বোঝাই যায় না কতটা দ্রুত চলছে এই মোটরসাইকেল। যেমন, ০-৬০ কি.মি./ঘণ্টা উঠতে সময় নেয় মাত্র ৫ সেকেন্ড এবং ০-১০০ কি.মি./ঘণ্টা উঠতে সময় নেয় মাত্র ১৫ সেকেন্ড। সর্বোচ্চ গতিতে চালানোর সময়ও ইঞ্জিনের কম্পন খুব একটা অনুভূত হয় না।
২। চেসিস এবং বডির এরো-ডাইনামিক ডিজাইন খুব ভাল, যার দরুন এই মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
৩। এর মোটা চাকা ও এই চাকার রাস্তা আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা খুব ভাল। ফলে গ্রামের কাঁচা রাস্তা থেকে শুরু করে পাহাড়ি রাস্তায় এই মোটরসাইকেল খুব সহজেই চালানো যায়। কর্ণারিং ও টার্নিং এ ভাল সহায়তা পাওয়া যায় এটা থেকে।
৪। ডিজিটাল ড্যাস বোর্ড এর অপশন গুলো খুব কাজের। স্পীডোমিটার ও জ্বালানি মিটারের সাথে গিয়ার নির্দেশক, টেকোমিটার, আর.পি.এম. নির্দেশক, টার্ন সিগনাল নির্দেশক, বিম নির্দেশক ও ঘড়ি খুব উপকারে আসে। ড্যাস বোর্ড এ অডো মিটার এর সাথে আরো দু’টা অতিরিক্ত ট্রিপমিটার আছে, যার সাহায্যে ভ্রমণের দূরত্ব ও সেই ভ্রমণে কতটুকুতে তেল শেষ হয়েছিল তা নির্ণয় করা যায়।
৫। এর সমনের ও পিছের সাসপেনসন এর মান খুব ভাল। যার ফলে উঁচুনিচু ভাঙ্গা রাস্তাতেও খুব ভালভাবে চালানো যায়। এমনকি মোটরসাইকেল যদি রাস্তার ভাঙ্গা অংশে বা অল্প উঁচা জায়গা থেকে পড়ে লাফও দেয়, রাস্তায় পরার সময় খুব সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
৬। সমনের ও পিছের ব্রেকিং সিস্টেমের কথা না বললেই না। দু’টার মান খুবই ভাল, ফলে খুব অল্প সময়েই অধিক স্পীড নিয়ন্ত্রণে এনে মোটরসাইকেল কে সহজেই থামানো যায়।
৭। এটা জ্বালানী স্বাশ্রয়ী মোটরসাইকেল। (বিস্তারিত “জ্বালানি ও লুব্রিকেন্ট অভিজ্ঞতা” অংশে দেয়া আছে)
৮। চালকের সিটের ডিজাইনটা ভাল ও আরামদায়ক, যেকারণে বেশি দূরত্বের ভ্রমণে পিঠে/কোমরে ব্যাথা সৃষ্টি হয় না।
সুযুকি জিক্সার এর খারাপ দিকঃ
১। এর লোহার অংশগুলোর পেইন্টিং ও অ্যালুমিনিয়ামের প্রলেপ ভাল মানের না। লোহার অংশে জং ধরবেই, তাই বলে কেনার এক মাসের মধ্যে জং ধরলে তা মেনে নেয়া যায় না।
২। এর বডির কিছু কিছু অংশে ভাল মানের লোহা ব্যাবহার করা হয়নি, সামান্য চপেই বেকে যেতে নেয়।
৩। এর ইলেকট্রিক তারের জয়েন্ট গুলো খুব একটা ভালভাবে পানি-প্রতিরোধী করা হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতে ভিজলেই সমস্যা শুরু করে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ইঞ্জিন থামানোর লাইন, হর্ণ এর লাইন, হেড-লাইটের লাইন (আপার-ডিপার সহ) আমাকে ঠিক করাতে হয়েছে।
৪। মোটরসাইকেলটার সামনের ডিস্কে বাইব্রি কোম্পানির ব্রেক, কিন্তু সামান্য বৃষ্টি-কাদার পানিতে চালালেই এটা জ্যাম হয়ে যায়। অথচ আমার আগের মোটরসাইকেল এর সামনের ডিস্কে লোকাল ব্র্যান্ডের ব্রেক ছিল, খুব একটা সমস্যা করেনি যতটা করেছে বাইব্রি কোম্পানির ব্রেক।
৫। গ্রাইন্ড ক্লিয়ারেন্স কম থাকায় খুব সমস্যা হয়। পিলিয়ন রাইডার নিয়ে স্পীড-ব্রেকার এর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলের নিচে ঘসা লাগে। এটা খুবই বিরক্তিকর।
৬। যতই এর বয়স বাড়ছে, মোটরসাইকেলটা ষ্টার্টিং এ সময় বেশি নিচ্ছে (কিক ও ইলেকট্রিক, দু’টাতেই)। সুযুকি সার্ভিস সেন্টারে সমস্যাটা জনিয়েছি, সঠিক সমাধান পাইনি।
৭। পুরো সিটের দৈর্ঘ্য কম। যে কারণে পিলিয়ন রাইডার বসে খুব একটা আরাম পায় না। আর বিপদে পড়ে যদি ৩য় কেউ এই মোটরসাইকেলে উঠতে চায়, চালক সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মূখীন হবে।
৮। সু্যুকি জিক্সার এর প্লাস্টিক অংশের মান ভাল না। হালকা চাপ লাগলেই ভেঙ্গে যেতে পারে। এমনকি কিছু কিছু প্লাস্টিক অংশগুলোর জয়েন্টও ভালভাবে করা হয়নি।
সুযুকি জিক্সার এ আরো যা যুক্ত করা যেতঃ
১। পেছনের চাকার উপর মাডগার্ড থাকলে ভাল হত। বৃষ্টি-কাঁদার মাঝে মোটরসাইকেলের মাঝের অংশে প্রচুর কাঁদা ঢুকে পড়ে, যা সবসময় পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে যায়। মাডগার্ড না থাকায় পেছনের মনোসক অ্যাবসরবারেও প্রচুর কাঁদা লেগে যায়, ফলে এটা নষ্টও হতে পারে।
২। চেইন কাভার থাকলে ভাল হয়। চেইন কাভার না থাকায় চেইনে প্রচুর ময়লা আটকে যায়, যা চেইন এর সঞ্চালন নষ্ট করার পাশাপাশি পুরো চেইন নষ্টের কারণ হতে পারে।
৩। সু্যুকি জিক্সার এর নিজস্ব মডেলের বাম্পার থাকলে ভাল হয়। দুর্ঘটনাক্রমে মোটরসাইকেলটা যদি পড়ে যায়, তাতে বডি এবং ইঞ্জিনের ওপর বাজে আঁচড় পড়তে পারে।
৪। আর.পি.এম. লক অপশন থাকলে ভাল হত। নিরাপদ চালনার ক্ষেত্রে এটা ভাল কজে আসত।
৫। অ্যান্টি থেফট যন্ত্র লাগানো থাকলে ভাল হত। মোটরসাইকেলের নিরাপত্তায় এটা ভাল কাজ করত।
৬। অ্যান্টি ব্রেকিং সিষ্টেম রাখা যেত। শুস্ক ও বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় এটা ভাল নিরাপত্তা দিত। চাকা সহজে পিছলে যেত না।
৭। সু্যুকি জিক্সার এর শাড়ি-গার্ড এর সাথে পা রাখার অতিরিক্ত অংশ রাখলে অনেক নারী পিলিয়ন রাইডার উপকৃত হতেন। কারণ শাড়ি পড়ে একপাশে পা রাখাটা কষ্টকর হয়ে যায় তাদের জন্য।
৮। সামনে প্রজেক্টর হেড-লাইট ব্যাবহার করা যেত। রাতে হাইওয়েতে চালনার ক্ষেত্রে এটা গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা রাখত।
সুযুকি জিক্সার এর মাইলেজ:
অনেকেই বলেন বেশি সিসির বাইকে মাইলেজ ভাল পাওয়া যায় না। কিন্তু আমি বলব এটা ভুল কথা। একটা মোটরসাইকেলের মাইলেজ সেই মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি নির্ভর করে তার চালকের ওপর। কিছু বিষয় যেমন ভাল জ্বালানি ব্যাবহার, সঠিক টায়ার প্রেসার, সঠিকভাবে থ্রোটল চালনা, সময়মত স্পার্ক প্লাগ ও এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন এবং সঠিক মাপে ব্রেক ব্যবহার দিতে পারে ভাল মাইলেজের নিশ্চয়তা।
সুযুকি কোম্পানিও কিন্তু বসে নেই। সু্যুকি জিক্সার এর ইঞ্জিনে তারা বসিয়েছে সুযুকি ইকো পারফরমেন্স (সেপ) টেকনোলজি। এই টেকনোলজি কম জ্বালানি ব্যাবহার করে অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী ত্বরণ সৃষ্টি করতে পারে। এবং তাদের এই কাথাটা পুরোপুরি সত্যি। আমি সুযুকি জিক্সার এ প্রতি লিটার অকটেন হতে গড়ে ৪১.৬০ কি.মি. পাচ্ছি। নিম্নে ছক আকারে এর বিষদ বর্ণনা দেয়া হল ।
সুযুকি জিক্সার এর লুব্রিকেন্ট ও সার্ভিসিং অভিজ্ঞতাঃ
সু্যুকি জিক্সার এর ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড 10W40 API(SG) JASO(MA)। কিন্তু এই গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল বাংলাদেশের সব জায়গায় পাওয়া যায় না। আমার মতে ইঞ্জিনের জন্য একটা নির্দিষ্ট অয়েল গ্রেড ব্যাবহার করা ভাল। বাংলাদেশের সব জায়গায় প্রাপ্তির উপর ভিত্তি করে আমি 20W40 API(SL) JASO(MA2) গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করছি। বেশ কয়েকটা ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল পরীক্ষা করে “শেল” ব্র্যান্ডকেই জিক্সারের জন্য ভাল মনে হয়েছে।
আর সু্যুকি জিক্সার এর জন্য সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার না করাটাই ভাল। আমি একবার ব্যাবহার করেছিলাম, ইঞ্জিন থেকে পোড়া গন্ধ বের হয়েছিল ও গিয়ার শিফট কিছুটা জ্যাম/শক্ত হয়ে গিয়েছিল। এর সঠিক ব্যাখ্যা সুযুকি সার্ভিস সেন্টারে চেয়েছিলাম, তারা কোন ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। প্রতি ১,০০০ কি. মি. পর পর ইঞ্জিন অয়েল এবং ২,০০০ কি. মি. পর পর ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি। নিম্নে ছক আকারে এর বিষদ বর্ণনা দেয়া হল ।
একটা মোটরসাইকেল তখনই আপনাকে ভাল কর্মক্ষমতা দেখাবে, যখন আপনি এর পরিপূর্ণ পরিচর্যা করবেন। আমিও সেটাই করার চেষ্ঠা করেছি। ১০,০০০ কি.মি. পর সমানের ব্রেক-সু, এয়ার ফিল্টার ও স্পার্ক প্লাগ ছাড়া আর কোন বড় পার্টস পরিবর্তন করতে হয়নি। প্রতি ১৫০০-২৫০০ কি.মি. পর পর মোটরসাইকেলের সম্পূর্ণ যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করিয়েছি।
প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর ওয়াস এক্সপার্ট দ্বারা এটাকে পরিষ্কার করেছি। চেইনে ১৫-২০ দিন পর পর চেইন লুবরিকেন্ট দিয়েছি। ১০,০০০ কি.মি. পর সামনের ব্রেক ফ্লুয়িড (ডট-৪ গ্রেড) একবার পরিবর্তন করেছি। নিম্নে ছক আকারে এর বিষদ বর্ণনা দেয়া হল ।
বর্তমানে সু্যুকি জিক্সার এর স্পেয়ার-পার্টস মোটামুটি ঢাকার সব জায়গায় পাওয়া যায়। আশা করছি এগুলো একসময় বাংলাদেশের সব জায়গায় পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ সুযুকির বর্তমান সার্ভিস সেন্টারটা খুব একটা উন্নতমানের না, কিন্তু এরা চেষ্ঠা করছে উন্নতি করার।
উপসংহারঃ
বাইরের দেশে ২০১৪ সনের সেপ্টেম্বর এ যখন সু্যুকি জিক্সার প্রথম বাজারে আসে, তখন প্রথম দেখাতেই এর প্রেমে পড়ে যাই। মনে মনে আফসোসও করতে থাকি যে এই বাইক বুঝি আর বাংলাদেশে আসবে না। এমনকি অন্য বাইক কিনব বলে ঠিকও করে ফেলি, ঠিক তখনই এটা বাংলাদেশে আসে। এ যেন সপ্নে দেখা রাজকণ্যার দেখা পাওয়া। দীর্ঘ ২ মাস এটা নিয়ে গবেষণার পর এটা কিনি। যে আশা নিয়ে এটা কিনেছিলাম, তার ৮০% ই পেয়েছি এটার কাছ থেকে। অতএব এটা নিয়ে আমি ভীষণ খুশি।
আর আমি আমার এই লেখায় যতটুকু জানি বা পারি, চেষ্ঠা করেছি সঠিক তথ্য দিতে এই পর্যালোচনায়। যদি কোন ভুল তথ্য এখানে এসে থাকে, সবাইকে অনুরোধ করব ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে। মোটরসাইকেল নিয়ে খুব বাজে দু’টা দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম, কিন্তু দু’বারই মাহান সৃষ্টিকর্তা এবং হেলমেট-সেফটি গিয়ারের কল্যাণে বেঁচে গিয়েছি। তাই সবাইকে অনুরোধ করব মোটরসাইকেল চালনার সময় হেলমেট ও সেফটি গিয়ার পরিধান করতে।
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ সিফাতুর রহমান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Shuvo Bangla