Shares 2
সুজুকি জিক্সার এসএফ মটোজিপি নিয়ে সাজেক ট্যুর লিখেছেন মাহমুদ অভি
Last updated on 11-Jul-2024 , By Saleh Bangla
শুক্রবার ভোর ৫.০০ ঘুম ভাঙল মোবাইল এর শব্দে, লিমন ভাই এর কল, "ভাই বাইরে তো অনেক বৃষ্টি। কেমনে যাবেন?? ঊল্লেখ্য আমাদের আজ এক সাথে সাজেক ভ্যালি যাবার কথা। কিন্তু সারারাত বৃষ্টির জন্য সারা ঢাকা শহর এ পানি, সাথে যাবে লিমন ভাই, পাভেল ভাই, রুমানা (স্ত্রি), রাইয়ান (ছেলে)। আমাদের দুই টা বাইক। লিমন ভাই এর বাজাজ পালসার ১৫০ আমি আমার সুজুকি জিক্সার এসএফ মটোজিপি নিয়ে যাব ।
সুজুকি জিক্সার এসএফ মটোজিপি নিয়ে সাজেক ট্যুর লিখেছেন মাহমুদ অভি
সারা দেশে ৩ নাম্বার সিগনাল।মুষলধারে বৃষ্টি। আবার লিমন ভাই এর ফোন, ভাই কি করবেন??একটু অপেক্ষা করেন.....দেখি কি হয়।
১১.০৫ এ আবার লিমন ভাই ফোন দিলেন..ভাই কি করবেন??আপনার ছেলে ত অনেক ছোট.. অরে নিয়া কেম্নে যাবেন?? যে বৃষ্টি!! হাইওয়ের পর পাহাড়ি রাস্তা। মিনিমাম ৪৫০ কিলোমিটার যেতে হবে। ভাবলাম অফিস থেকে ছুটি নিয়া ফেলছি, এরপর তো আর পাব না। লিমন ভাই কে কল দিলাম।বললাম ভাই আমরা যাব। যেভাবে ই হোক।
লিমন ভাই কল্লানপুর আসলেন, আমরা মিট করলাম। টকিয়ো থেকে ৩ টা রেইন কোট কিনলাম। মোহাম্মাদপুর থেকে লিমন ভাই পাভেল ভাই কে নিলেন। ব্যাস শুরু হয়ে গেল আমদের সাজেক টুর।
মুষলধারে বৃষ্টি। সুজুকি জিক্সার এসএফ আর বাজাজ পালসার ১৫০ দুটি বাইক চলছে সাজেকের উদ্দেশ্য। ঢাকা থেকে মতিঝিল হয়ে হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে সাইনবোর্ড হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সাইনবোর্ড এর পর দাউদকান্দির পর থেকেই জ্যাম। সমস্যা হল আমাদের রেইন কোট গুলো ঠিক আছে কিন্ত রাইয়ান এর টা ভিজে যাচ্ছে। বার বার অর গা মুছে দিচ্ছি কিন্তু তারপর ও ভিজে যাচ্ছে। জ্যাম ঠেলে সামনে যাচ্ছি। বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে।
বিকাল ৩.৫৫ তে আমরা কুমিল্লা পউছে গেলাম। লাঞ্চ করলাম। রাইয়ান এর জামা কাপড় চেঞ্জ করে দিলাম। আল্লাহর রহমতে বৃষ্টি থেমে গেল। সবাই খুশি মনে আবার রওনা হলাম। আমাদের পরবর্তী যাত্রাবিরতি ফেনী। কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই পৌছে গেলাম ফেনী। ৬.১৫ তে আমরা ফেণী তে যাত্রাবিরতি এর জন্য থামি। চা এবং বিস্কুট খাই, হাত মুখ ধুই। এখন সবাই ফ্রেশ। কিন্তু এখনো অনেক পথ বাকি। আমরা আমাদের বাইক স্টার্ট করলাম।
কিন্তু হায়!! লিমন ভাই এর পালসার কোন ভাবেই স্টার্ট হচ্চে না। অনেক ট্রাই করা হল কিছুই হল না। এদিকে রাত বাড়ছে। অচেনা যায়গা। কি করব কিছুই বুঝছি না। আমি রুমানা, রাইয়ান এবং পাভেল ভাইকে ওইখানে রেখে আমি আর লিমন ভাই গেলাম বাইক এর মেকানিক খুজতে। অনেক খুজে একজন মেকানিক পাই। অনুরোধ করে নিয়ে ও আসি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে ও বাইক টা স্টার্ট করতে পারল না।
রাত ৮.৩০ বাজে। সিদ্ধান্ত হল আজ আর যাওয়া যাবে না। ফেনী থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে ফেনী মেইন শহর। ওইখানে আজ রাত থাকব। সকালে বাইক ঠিক করে আবার বেড়িয়ে পড়ব। অনেক কষ্টে সৃষ্টে একটা লেগুনা পেলাম। লিমন ভাই এর বাইক টা লেগুনাতে তুলে লিমন ভাই আর পাভেল ভাই মন খারাপ করে লেগুনাতে বসে পড়ল।সহযাত্রী সবার মন খারাপ দেখে নিজের মনটাও খুব খারাপ হয়ে গেল।
লিমন ভাইরা লেগুনাতে সামনে যাচ্ছে আর আমরা সুজুকি জিক্সার এসএফ এ করে ওদের পিছনে পিছনে যাচ্ছি। এর মধ্যে আবার মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। আমি, রাইয়ান,রুমানা সবাই পুরটাই ভিজলাম। কিছুই করার ছিল না। কারন অপরিচিত আকাবাকা রাস্তাঘাট। পুরোটাই অন্ধকার। খারাপ লাগছিল ছেলেটার জন্য। মাত্র তিন বছর বয়স ওর। যাইহোক, ফেনী তে লিমন ভাইয়ের ফ্রেন্ডসরা খুব হেল্প করল। হোটেল থিক করে দিয়া, রাতে ডিনারপার্টি দিল ওরা। সারাদিন ক্লান্তিকর অবস্থার পর একটু শান্তিময় ঘুম দিলাম।
খুব সকালে ঘুম ভাঙল লিমন আর পাভেল ভাই এর ডাকে। উঠে যথারীতি নাস্তা করে চলে গেলাম বাইক এর গারেজে। এখানে ও লিমন ভাই এর ফ্রেন্ডসরা খুব হেল্প করল। খুব দ্রুত বাইক ঠিক করে ১২.০৯ এ ফেনী থেকে খাগড়াছড়ি রওনা হলাম। কিন্তু আবার শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। রেইন কোট পরে আস্তে আস্তে আমরা যাচ্ছি। এর মধ্যে রাইয়ান এর জন্য ভাল আর একটি রেইন কোট কিনছি। এটা অনেক ভালো।
বারই হাট নামক একটি জায়গায় এসে এবার আমার সুজুকি জিক্সার এসএফ বন্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে লিমন ভাই বাইক ঘুরিয়ে আমার কাছে এলেন,উনার বাইক টা দিয়ে বললেন, ভাই আপনি আমার বাইক টাতে রুমানা আর রাইয়ান কে নিয়া আসেন, আমি আপনার টা ঠিক করে নিয়া আসছি, আমি কিছুসময় অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকালাম । সব দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়া নিলেন।মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে লিমন আর পাভেল ভাই আমার বাইক টা ঠেলে ঠেলে নিয়া গেল।
যাইহোক, মেকানিক পাওয়া গেল, বাইক ও ঠিক হল খুব তারাতারি। এর পর আমরা বাইপাস দিয়া খাগড়াছড়ির পথ ধরলাম। বৃষ্টি হচ্ছিল অনেক।আকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা।খুব বিপদজনক। সাবধানে এগুছি।কখনো লিমন ভাই সামনে গিয়ে আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন.. কখনো আমি লিমন ভাই কে পথ দেখাচ্ছি।
মাঝে একটু থেমে চা আর বিস্কুট খেয়ে নিলাম আর রাইয়ান কে ও একটু খাইয়ে দিলাম। আবার চলতে শুরু করলাম। পথিমধ্যে চা বাগান, রাবার বাগান দেখলাম সেল্ফি তুল্লাম। আল্লাহতালার অশেষ রহমতে বৃষ্টি থামল। আমরা সুন্দর সুন্দর পাহাড় আর বনভূমির সাথে সেল্ফি তুল্লাম। পাহাড়ের সৌন্দর্য বলে শেষ করতে পারব না। এক আলাদা অনুভুতি। যেতে যেতে পিনাক নামক বিজেবি এর একটি হোটেল এ বসে রুটির গ্রিল দিয়া লাঞ্চ করলাম। খাবার টা চমৎকার ছিল।
এরপর যতই সামনে যাই চমৎকার রোদ সাথে অসাধারণ সুন্দর সব পাহাড়, মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছি। সারাদিনের ক্লান্তি যেন নিমিশেই শেষ। অইদিন ছিল হিন্দুদের প্রধান দুর্গাদেবীর বিসর্জন। মাটিরাংগা পার হবার পর কমপক্ষে ৫০ টি গাড়িতে করে পাহাড়ি এলাকার অনেক নারি, পুরুষ নাচতে নাচতে তাদের দেবী কে বিসর্জন দিচ্চিল।
আমরা মুগ্ধ চোখে ওদের আনন্দ দেখছিলাম। আস্তে আস্তে আমরা আলুটিলা ঝরনা পার হয়ে আলুটিলা গুহাতে ডুকলাম। ভয়ানক ব্যাপার। ৩০ ফুট নিচে অন্ধকার বিশাল একটা গুহা। কিছুই ভাল করে দেখা জায় না। মশাল নিয়ে আস্তে আস্তে যেতে হয়। বেশ গা ছমছমে ব্যাপার। আলুটিলা গুহা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে আর বেশি সময় লাগল না।
৭.০০ দিকে আমরা খাগড়াছড়ি পৌছে গেলাম। হোটেল নিলাম। রেষ্ট নিয়ে ডিনার করে শহর ঘুরতে বের হলাম। বেশ গুছানো শহর। দেখলাম এক জায়গায় তাত বস্ত্র মেলা হচ্ছে,মেলায় ঘুরলাম কিছু কিনলাম। পরে রুম এ ফিরলাম । এসেই রুমানা আর রাইয়ান গুমিয়ে পরল। আমার আর ঘুম আসছে না চিন্তা হচ্ছে, কাল সাজেক যাব এত আকা বাকা খাড়া রাস্তা পারব তো? ??? টানা তিন দিন বাইক জার্নির ধকল রাইয়ান আর রুমানা নিতে পারবে তো? ???
আমি আর আমার সহযাত্রী রাও ক্লান্ত পারব তো? কাল ছুটি শেষ কালই আবার ঢাকা ফিরতে হবে পারব তো??? কখন ঘুমিয়ে পরলাম জানি না। সকালে রুমানার ডাকে ঘুম ভাঙল। ওরা সবাই রেডি। আমি ও রেডি হলাম। বের হলাম সাজেক এর উদ্দেশ্য। খাগড়াছড়ি থেকে সাজাকে ৩২ কিলোমিটার। চরম খাড়া রাস্তা। উচু নিচু অনেক বাক।পথে পথে আর্মি আর বিজেবির ক্যাম্প। বাইক চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে অনেক খাড়া ঢাল, চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমরা ১০ নম্বর চেকপোস্ট এ পৌছালাম। পাহাড়ি কলা,চা,বিস্কুট আর ঝরনার পানি দিয়া সকালের নাস্তা করলাম। এখান থেকে আর্মিরা আমদের প্রটেক্ট করে নিয়ে যাবে সাজেক পর্যন্ত ।
১০.৩০ আমরা চেকপোস্ট থেকে আবার যাত্রা শুরু করলাম।চরম খাড়া রাস্তা।উচু নিচু অনেক বাক। পথে পথে আর্মি আর বিজেবির ক্যাম্প। বাইক চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে অনেক খাড়া ঢাল, চড়াই উতরাই,কিন্তু যতই সামনে যাই ততই মুগ্ধ হই। জীবনে এত সুন্দর জায়গা আমি আর হয়ত দেখি নাই। ভুমি থেকে প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার উপরে সাজেক।অনেক কষ্ট করে উঠে গেলাম। উঠে যা দেখলাম তা এককথায় অবিশ্বাস। আমাদের সামনে পাহাড় আর তার উপরে মেঘ। যেন হাত দিলেই ছোয়া যায় । এ যেন সপ্ন!!!!!!! দেশি মুরগি, সব্জি,ডিম,আর ডাল দিয়ে লাঞ্ করে সাজেক এর সবচেয়ে বড় পাহাড় এ উঠলাম ।
আমার ছেলে ও আমার শাথে অনেকদুর হেটে উঠল। পাহাড় এ ছেলে নিয়া উঠার সময় লিমন আর পাভেল অনেক হেল্প করসে। না হলে আমি একা পারতাম না।পাহাড় এর চুরায় উঠে মেঘ দেখলাম। ঊপজাতিদের জীবনধারা দেখলাম।একসাথে খেলাম । জীবনটা কে নতুনভাবে ভাব্লাম। এবার ফেরার পআলা। ফেরার কাহিনি অন্য একদিন লিখবো। আর একটা কথা, আমার মনে হয়, রাইয়ান সবচেয়ে ছোট মানুষ (বয়সে) যে কিনা টানা তিন দিন বাইক জার্নি করে সাজেক পৌছেসে। ধন্যবাদ সহযাত্রীদের।
লিখেছেনঃ শেখ সালহে মাহমুদ অভি
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Saleh Bangla