১ দিনের মোটরবাইক ট্রাভেল এবং মধুপুরের গড় সহ এর আশপাশের এলাকার বিস্তারিত
This page was last updated on 03-Jul-2024 08:30am , By Shuvo Bangla
১ দিনের মোটরবাইক ট্রাভেল নিয়ে একটু বিস্তারিত না লিখলে অনেক কিছুই বোঝা যায় না এজন্য একটু বিস্তারিত লিখেছি, ফলে লিখাটা বড় হয়ে গেল বলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
প্রস্তুতিঃ
টিম এবিএস এর সাথে একই প্লানে ময়মনসিংহ যাবার কথা ছিলো, কিন্তু মন চাইছিল আরও বেশী কিছু। চাকুরীজিবী হওয়ায় ১দিনের প্লানে ম্যাক্সিমাম আউটপুট কিভাবে বের করা যায় তা নিয়ে ২/৩ রাত নির্ঘুম কাটানোর পর অবশেষে বের করে ফেলি নতুন এক ট্যুর প্লান। মোটরবাইকে অফরোড আমার পছন্দের তালিকার প্রথমে থাকায়, বরাবরই মেইন রোড এভয়েড করতে আমি বেশি পছন্দ করি, এ কারনে নতুন রুটপ্লানের প্রায় অর্ধেকটাই রাখা হয়, জংগলের মধ্যে মাটির ও ইটের রাস্তা।
চেনা- অচেনায় বাংলাদেশঃ
সকাল ৬ টায় -ঢাকা- ভালুকা(ভরাডোবা)- হাতিবের গ্রামের কুমিরের ফার্ম- দিপ্ত অর্কিড গার্ডেন (ডুলমা গ্রামে)-দরগাচলা গ্রামের মিশন চার্চ ও অরফানেজ- সাগরদিঘী আনারস পুরী-সন্তষপুর রাবার বাগান- সন্তষপুর জংগলের মুক্ত বানর চলাচল স্পট- গারোবাজার- কাকরাইদ আনারসপুরী- জলছত্র পিকনিক স্পট- মধুপুর গড় হরিন প্রজনন কেন্দ্র- মধুপুর গহীন অরন্য হয়ে মধুপুর ময়মনসিংহ রোড- মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি ও ঐতিহাসিক মন্ডার দোকান- ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ বড় মাঠ এবং বম্মপুত্র নদী- এখানে নদীতে নৌকায় চড়া ও গোসল করা- এর পর সন্ধ্যা ৬ টায় লাঞ্চ করে ঢাকা ব্যাক করা রাত ৯ টায়।
এই এডভেঞ্চারে আমাদের সংগী হয় ৩টি এফ জেড এস এবং একটি এপাচী আর টি আর মোটরবাইক। আর ছিলাম আমি, শাওন, বর্ষন, খালিদ, কামরুজ্জামান, তুহিন ও জুয়েল।
সেপ্টেম্বর ৫’ ২০১৫—
সব কিছু নিয়ে বাইক স্টার্ট করাঃ
ভোর ৫টায় এলার্ম দেয়া ছিলো, রাত ৩ টায় ঘুমিয়ে গেলেও এলার্মের ১ম শব্দেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। বেডে থাকতেই আমার সাথে যারা যাবে তাদের কে ফোন দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলাম, একজন কে ফোনে পেলাম না। দ্রুত ব্রাশ করে গোসল করে প্যান্ট আর টিশার্ট পরে নেই। আমি সাধারনত ঘুম থেকে ওঠার পরে কোন কাজ রাখিনা। এজন্যে সকালে শঠিক টাইমিং করে বেরোতে পারি। এটা কিন্তু খুবই জরুরী। সকালে উঠে ধরুন আপনার টুরের জরুরী কিছু খুজে পেলেন না। তাহলে ভালো মুড টাই নস্ট হয়ে যাবে। আমি একবার সকালে উঠে হেডফোন টা খুজেই পেলাম না তারাহুরার কারনে। আর সেবার ৩ দিন আমাকে হেডফোন ছাড়াই থাকতে হলোL। যাহোক, আর্মর জ্যাকেট, লেগ গার্ডস, গ্লাভস, বুট, এগুলো পড়ে ঘর থেকে বের হলাম। এবার বাইকের কাছে এসেসবার প্রথম বাইকটা স্টার্ট করে নিলাম, বাইরে বেরনোর আগে ২/৩ মিনিট স্টার্ট করে রাখলে শুরু থেকেই পার্ফরমেন্স ভালো পাওয়া যায়। এবার বাইকে মোবাইল ফোন মাউন্টে ফোন সেট করলাম, চার্জার কেবল চার্জিং পয়েন্টে কানেক্ট করলাম, বাইকের ডান সাইড বাম্পারের উপর ক্যামেরা মাঊন্টে ক্যামেরা এডজাস্ট করলাম আর বাইকের বাম সাইডের বাম্পারের উপরে থারমাল ফগ লাইটের কাভার ওপেন করে নিলাম। কখন কি লাগে বলা তো যায় না। এবার একটা বড় কাপড় নাক মুখে বেধে টি শার্ট এর কলারের ভেতর বাকি অংশ ঢুকিয়ে রাখলাম। সবশেষে হেলমেট পড়ে বাকি যা থাকলো তা ছোট্ট একটা ব্যাগে নিয়ে আল্লাহর নাম নিতে নিতে বের হলাম।
এই ট্যুরের সংগী দের সংগী হওয়াঃ
আমি টাইমিং ঠিক রেখে সকাল ৫টা ৪৫ এ চলে আসি আইডিবি ভবনের সামনে। ১ মিনিটের মদ্ধ্যে বর্ষন ও তুহিন ও চলে আসে। এবার কামরুজ্জামানের জন্য অপেক্ষা। অপেক্ষা শেষ হলো ৬টা ১৫ তে। বেচারা সকালের দিকে মনে হয় ঘুমিয়ে গিয়েছিলো, এরপর দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে। ও র জন্যে আমাদের ২০ মিনিট দেরী হয়ে যায়। কামরুজ্জামানের সাথে একটা মিডিয়েম সাইজের ব্যাগ আগেই আনতে বলেছিলাম যাতে আমার ছোট ব্যাগটা ওর ব্যাগে রেখে দিতে পারি। এবারে আমরা সরাসরি গেলাম খিলখেত পেট্রোল পাম্প এর সামনে এখানে এসে খালিদ ও জুয়েল কে পেয়ে আর ১ মিনিট ও দেরী না করে এবিএস টিমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা রওনা হয়ে গেলাম। অনেক সকাল আর শনিবার থাকায় আমরা টংগী, গাজীপুর চৌরাস্তা, জয়দেভপুর হয়ে চলে আসি মাওনা পুষ্পদাম রেস্টুরেন্টের সামনে এখানে আমার ট্যুরের চিরসংগী শাওন আগে থেকেই অপেক্ষা করে ছিলো। ২ মিনিটের মদ্ধে আমরা আবার রওনা হই সময় তখন ঠিক ৭টা ১০।
গন্তব্য হাতিবের গ্রামের রেপ্টাইল ফার্মস লিমিটেডঃ
এই কুমিরের খামারটার কথা অনেক শুনেছি, তাই কাছথেকে দেখার একটা ইচ্ছা ছিলো। যদিও নেট ঘাটাঘাটি করে জেনে গিয়েছিলাম যে, সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত কুমিরের প্রজনন কাল এবং এই সময়ে সাধারন মানুষের ভেতরে প্রবেশ একেবারেই নিষেধ। কুমির অনেক দেখেছি, এখানে গেলাম কি পরিবেশ, কিভাবে চাষ হচ্ছে সেটা দেখতে। মাওনা থেকে সোজা ভালুকা বাসস্ট্যান্ড ক্রস করে ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড থেকে বামে টার্ন নিয়ে চলে এলাম হাতিবের গ্রামে। ভরাডোবার পরে গ্রামের রাস্তাটা ১২/১৫ ফিট পিচ করা রাস্তা, বর্ষাকালের শেষের দিকে বলে রাস্তার বেহাল দশা। যা হোক হাতিবের গ্রামে এসে পিচ রাস্তা ছেড়ে আ কিলোর মতো আমরা ইটের হেড়িং পিচ্ছিল রাস্তায় গেলাম খামারের গেট এ। অনেক ডাকাডাকির পরে একজন কর্মচারী এসে গেট থেকে কথা বলল। একটু পরে আরো একজন আসলো। তারা আমাদের যা বোঝালো তা হলো এখন কুমিরের প্রজনন কাল, কর্মিদের ও আসা নিষেধ। দুই ১ জন আছে এই বিশাল প্রজেক্ট দেখাশোনার জন্য। আমরা বাঊন্ডারি ওয়াল এর উপরে উঠে কেঊ কেঊ কুমির দেখলাম, অন্যান্য ফাকা জায়গা দিয়ে ভেতরটা দেখলাম। বেশী সময় নষ্ট না করে কিছু ছবি তুলে আমরা আবার বেরিয়ে পরলাম। সময় দেখে নিলাম সকাল ৮ টা ১০।
গন্তব্য এবার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্কিড বাগানঃ
হাতিবের গ্রাম থেকে আবার গ্রামের পিচ সড়কে উঠে আমরা অর্কিড গার্ডেনের দিকে চললাম। বেশি দূরে না মাত্র ৩ কিমির মদ্ধ্যেই পেয়ে গেলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেই অপরুপ সুন্দর অর্কিড বাগান। এখানে ঢাকা থেকে পুর্বেই অনুমতি নিয়ে আসতে হয়, আমরা তা করিনি, তবে এবার হাল ছাড়লাম না। প্রয়জনীয় সব জায়গায় ফোনে কথা বলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিললো। ভেতরে বাইক পার্ক করে আমরা সবাই এক নতুন অভিজ্ঞতা নিতে নিতে সম্পুর্ন বাগান ঘুরলাম, ছবি তুললাম, ভিডিও করলাম। এখানে প্রায় ১০,০০০ বিভিন্ন জাতের অর্কিড রয়েছে। ফুটে থাকা ফুল গুলোর মদ্ধ্যে সাদা, লাল, হলুদ, বেগুনি কালার বাশী চোখে পড়লো। যে পরিমান যত্ন দিয়ে গাছ গুলোকে রাখা হয়েছে তাতেই বোঝা গেল কেন এই গন্ধহীন ফুলের কদর এত বেশী?
সাগরদিঘি বাজারঃ
একের পর এক সুন্দর প্লেস দেখা হচ্ছে কিন্তু চা, নাস্তা কিছু করা হয়নি। এবার কিছু খেতে হবে। অর্কিড বাগান থেকে বের হয়ে গ্রামের ভালো মন্দ মিক্স পিচ রাস্তা ধরে সোজা চলে এলাম সাগরদিঘি বাজারে। সাগরদিঘি নামটা শুলেই মনে হয়েছিলো এখানে কোন দিঘি আছে এবং সেটাও দেখবো। কিন্তু এর কোন সন্ধান আমরা পাইনি। বাজারের একটা হোটেলে ডিম, পরোটা, সবজি, মিস্টি দিয়ে নাস্তা করে চা খেয়ে নিলাম। সারাদিনের যে প্লান আমরা হাতে নিয়ে বেরিয়েছি তাতে নস্ট করা মতো ১ মিনিট ও নেই। এবার চললাম গারোবাজারের দিকে।
চার্চ এবং অরফানেজ এর খোজে গারোবাজারঃ
নাম শুনলে মনে হয় গহীন কোন গারোপল্লীর গ্রাম, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বাংলাদেরশের আর ১০ টা মফস্বলের বাজারের মতোই এই বাজার, তবে বিভিন্ন উপজাতীর বাস যে এখানে আছে তা ইতিহাস ঘাটলেই বোঝা যায়, আমরাও দেখলাম। শুনেছিলাম বেশ কিছু চার্চ আর অরফানেজ এই এলাকায় আছে। এই বাজারে আমরা কথা বলে বুঝলাম যে ইনফরমেশন ঠিক। আমরা এমনই একটা চার্চ এর খোজ করতে করতে বাজারের পিচ রোড ছেড়ে শক্ত লাল মাটির রাস্তা ধরে, দুপাশে আনারস বাগান দেখতে দেখতে প্রায় ৪/৫ কিমি পর উপজাতিদের দরগাচলা গ্রামের মিশন চার্চ ও অরফানেজ এ চলে যাই।
বাজার থেকে মাটির রাস্তায় নামার অনেক আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। লাল শক্ত মাটির উপর বৃষ্টির পানি পড়ে রাস্তা খুবই খারাপ হয়ে উঠলো। ধিরে ধিরে বাইক চালিয়ে আমরা চলে এলাম মিশনের সামনে। বাইক থেকে নেমে সবাই ১৫ মিনিট ঘুরে দেখলাম। সবচেয়ে ভালো লাগছিলো আনারসের বাগানগুলো। যেদিকে চোখ যায় শুধুই আনারস। সবাই আনারস খাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো। আর বৃষ্টির ধারা বাড়তে থাকায় আমরা আর দেরি করলাম না। তাহলে মাটির রাস্তা আরও খারাপ হয়ে যাবে। একটা ডার্ট বাইকের লালিত শ্বপ্ন মনের কোনায় আবারো জেগে উঠলো। যা হোক, কাদায় এবার মাখামাখি করতে করতে আমরা পিচ রাস্তায় উঠে এলাম। এবার নতুন কোন গন্তব্য।
সন্তোষপুর বানর জোন/ অন্য নাম ও হতে পারেঃ
গারোবাজার থেকে সন্তোষপুর রাবারবাগান ভালো রাস্তায় যাবার কথা ছিলো। কিন্তু এলাকার একজন বললো যে আপনারা পেছন দিয়ে গেলে পুরো বাগানটা দেখতে পাবেন। মন তো এটাই চাইছিলো। যত বেশী খারাপ রাস্তা তত বেশী দক্ষতা টেস্টের সুযোগ। আমরা আবার মাটির রাস্তায় নেমে এলাম, কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি শেষ হলেও আমাদের জন্যে রেখে দিয়েছে কাদা আর দুর্ভোগ। যা হোক যেতে যেতে মধুপুর গড়ের ঘন একতা জংগল পড়লো, কয়েকজন মানুষ কে বসে থাকতে দেখে শাওন বললো ভাইয়ে চলেন দেখে যাই কি ওখানে। ওখানে গিয়েই আমরা বুঝতে পারলাম, এটা বানরের অভয়াশ্রম, ২০/৩০ টা বানর চারদিক থেকে ছুটে এল আমাদের চারপাশে, সবাই বাইক পার্ক করে দারানোর পরে বানোরগুলো আমাদের হেল্মেট, চাবি, গ্লাভস নিয়ে নিচ্ছিলো। আর আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। আমাদের বাইকের উপর ২/৩ টা করে বানর উঠে বসে পড়লো। ৪/৫ মিনিট পরে বানরগুলো আমাদের গায়ে ওঠা শুরু করলো। স্থানীয় লোকজন আমাদের অভয় দিলো। আমরাও বানরগুলার কান্ডকারখানা ভালোই এনজয় করলাম। কিন্তু আমাদের যেতে হবে এখনও অনেক পথ। তাই আর দেরী না করে আমরা রাবারবাগানের পেছন দিয়ে ঢুকে পড়লাম।
সন্তোষপুর রাবার বাগানঃ
উফ কি যে সুন্দর বাবারের বাগানগুলো। এক পশ্লা বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায়, আর মেঘলা দিন হওয়ায় আমরা মাটির রাস্তা ছেড়ে বাগানের মদ্ধ্যেই বাইক এলোমেলোভাবে ছালাতে থাকলাম। এক সাইজের গাছ, যতদুর তাকাই, সারি সারি গাছ। নিদ্রিস্ট দুরত্বে লাগানো। বাগানের মদ্ধ্যে কাদা নেই, মাটিগুলোর উপরে শেওলা পরে পিচ্ছিল হয়ে আছে। এখানে আমরা যার যার মতো করে বাইক চালালাম, স্কিডিং করলাম, ভিডিও করলাম। আমার ফেসবুক ওয়ালে ভীডিও টা পাবেন, এছাড়া ইউটিঊবেও পাবেন (Bangladesh off tourer/skill test in rubber লিখে সার্চ করুন)। এর পর আমরা রাবারের ফ্যাক্টরিতে যাই। এখানে ভিসিট করে আমরা মেঠো পথ ধরে উঠে আসি বাগানবাড়ি চৌরাস্তায়। এখানে আমরা আবার পেয়ে যাই সেই গ্রামের ভাংগা চোড়া পিচ রাস্তা। এপথে আমাদের টার্গেট এখন জলছত্র।
জলছত্র পিকনিক স্পটঃ
বাগানবাড়ি চৌরাস্তা থেকে কিছুদুর পরে কাকরাইদ বাসস্ট্যান্ড। এখানে দেখতে পাই হাজার হাজার আনারস। সবাই আনারস খেতে চাইছিলো অনেক আগে থেকেই। তাই এখানে আমরা তাজা রসালো আনারস খাই। আনারসের রসে চাঙ্গা হয়ে আমরা মধুপুর- ময়মনসিংহ প্রধান হাইওয়ে দিয়ে জলছত্র টুরিস্ট স্পট এ যাই। এটা মুলত মধুপুর গরের মধ্যেই পড়েছে। একটা বড় মাঠ আর একটা ওয়াচ টাওয়ার দেখতে পাই। সবাই টাওয়ারের উপরে উঠে পড়ে বন দেখার জন্য। ১৫ মিনিট পরে আমরা এখান থেকে আবার রোনা হই। এবার মধুপুরের গড়টা ভালো মতো দেখতে হবে।
মধুপুরের গড় ও হরিন প্রজনন কেন্দ্রঃ
জলছত্র থেকে ময়মনসিংহ রোড এ আসার দুইটি রাস্তা রয়েছে। একটা ৮/১০ ফিটের পিচ করা রাস্তা, যেটা দিয়ে আমরা এখানে এসেছি, আর একটা গহীন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কাদা, ইটের হেরিং রাস্তা। জলছত্রের কেয়ারটেকার রা বললো ওই ইট মাটির রাস্তায় না যেতে। আমাদের মদ্ধ্যেও কেও কেও বললো যে এই বনের মদ্ধ্যে অনেক ক্রাইম হয় কিছুদিন আগেও নাকি টিভিতে প্রতিবেদন দেখিয়েছে। আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ওই পথেই যাবার সিদ্ধান্ত নিই, এবং রোনা হই। যাবার পথ ছিলো পানি, মাটি, ইট, পাথরের গুরায় মাখামাখি। ১০/১৫/২০ স্পিডে চলতে থাকি। ৩/৪ কিমি এগোনোর পর পেয়ে যাই হরিন প্রজনন কেন্দ্র। ওখাঙ্কার একজন কর্মচারী বললো, হেখানে হরিন দেখতে হলে সকাল ৯ টায় আসতে হবে। তখন হরিনদের খাবার দেওয়া হয়। তখন ১০০/১৫০ হরিন একসাথে দেখা যায়। নিঝুম বনের মদ্ধ্যে থমথমে পরিবেশ গা ছমছম করে। আমরা এখন থেকে আবার চলতে থাকি। আমরা ইঞ্জিন ধিরে চালাই, কোন প্রকার হর্ন নাদিয়ে আমরা চলে আসে গড়ের বাইরে ময়মনসিংহ রোডে। এখানে ৫ মিনিটের একটা ব্রেক নিয়ে ছলে আসি সরাসরি মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি।
মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি ও প্রসিদ্ধ মন্ডাঃ
আমরা যখন জমিদার বাড়ি আসি সময় তখন দুপুর ৩টা। আমরা প্রথমে মন্ডার দোকানে যাই। মন্ডা খাই। অনেকটা কাচাগোল্লার স্বাদের ২০ টাকা পিছ মন্ডা খেয়ে আমরা জমিদার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করি। এখানে সবাই ছবি তুলি, কিছুটা সময় কাটাই। ভাংগাচোরা ধ্বংসাবশেষ আমার ভালোই লেগেছে। এখানে সব কাজ শেষ করে আমরা ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ বড় মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা হই।
ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ বড় মাঠ ও মাঠের শেষে পাড় বাধানো নদে গোসলঃ
ময়মনসিংহ এর এই মাঠ এবং নদীর পাড় আমার সব সময় ই ভালো লাগে। এখানে এসেই দেখতে পাই বিশাল এবিএস টিম কৃষি বিস্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সবাই ব্যাস্ততার মদ্ধ্যে আছে তাই কাউকে না দাড় করিয়ে আমরা আমাদের কাজে নেমে পড়ি। পাড়ে বাইক পার্ক করে সবাই নৌকা নিয়ে নদীর অপর পাড়ে চলে যাই গোসল করতে।
এত লাফালাফি ঝাপাঝাপি শেষ কবে করেছি মনে নেই। সবাই ভরা নদীতে আনন্দে লাফালাফি করে সারাদিনের ক্লান্তি বেমালুম ভুলে গেল। ছবি তোলা হলো অনেক। ভালোভাবে গোসল করে আমরা নৌকায় উঠে পড়ি। মাঝি নৌকা ছাড়ে আমরাও আমাদের কাপর চেঞ্জ করতে থাকি এবং ব্যাগ প্যাক করতে থাকি। এপাড়ে এসে আমরা এক্সেল স্ট্যান্ট রাইডার জিনান খান কে পেয়ে যাই। তিনি এপাড়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমরা একসাথে এখানে লেবু চা খেলাম। চা খেয়ে অনেক ভালো লাগলো। এবার জিনান ভাই আমাদের নিয়ে গেল বিখ্যাত সারিন্দা রেস্টুরেন্টে। এখানে আমরা সন্ধ্যা ৬ টায় দুপুরের খাবার খাই।
ঠিক ৬টা ৩০ মিনিটে আমরা মেইন রাস্তা ধরে ঢাকার পথে রওনা দিই এবং আল্লাহ্র অশেষ রহমতে সবাই স্বুস্থভাবে ১০ টার মদ্ধে বাসায় ছলে আসি। শেষ হয় আমাদের ১৬ ঘন্টার এই একদিনের ৩৫০কিমির কিছু বেশি পথচলা।
একদিনের মোটরবাইক ভ্রমনের তালিকায় হয়ত অনেক যায়গা ইনক্লুড করা হয়েছে। ব্যাস্ত জীবনের ফাকে ১ দিন সময় আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান। সময়ের পুরোটা কাজে লাগাতে চেস্টা করেছি।
লেখক ঃ Taimur Hasan