desktop
noadd

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ বনাম সিবিআর ১৫০আর ২০১৬’র তুলনা

This page was last updated on 09-Jan-2025 06:01pm , By Shuvo Bangla

আমরা বরাবরই বলে আসছি বাংলাদেশে ১৫০ সিসি ক্যাটাগরিতে সবদিক বিবেচনায় হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর সবচেয়ে সেরা মোটরসাইকেল। অবশ্য দামের ব্যাপারটি এর মধ্যে ধর্তব্য নয়! আমার মতে, কোনো বাইকপ্রেমীই সিবিআর’কে ভালো না বেসে পারবে না। আর তাই এই বাইকটি নিয়ে কথা বলতে গেলেই প্রবল উত্তেজনা কাজ করে। তাহলে চলুন আজ আপনার উত্তেজনার পারদ আরো একটু বাড়িয়ে দিতে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ এর সঙ্গে নতুন সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ ভার্সনের তুলনা করে দেখি।

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ ও সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ ভার্সনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য

আধুনিক হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর দ্বিতীয় ও চতুর্থ প্রজন্ম একেবারে নতুন ও ভিন্নধর্মী স্টাইল নিয়ে মার্কেটে এসেছে। আসলে সিবিআর ১৫০আর প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্ম এবং পরে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্ম একই প্ল্যাটফর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে।

Also Read: Honda CBR 150R price in BD

পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর প্রথম দুই প্রজন্মে সিঙ্গেল হেড ল্যাম্প ও টুইন টিউব ডায়মন্ড ফ্রেম ছিলো। আর এর তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মে ডায়মন্ড ট্রাস ফ্রেমের সঙ্গে  টুইন হেড ল্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া প্রথম দুই ভার্সন থাইল্যান্ডে ও পরের দুইটি ইন্দোনেশিয়ায় প্রস্তুত করা হয়েছে।

Also Read: Bangladesh Honda Pvt Ltd বাংলাদেশে লঞ্চ করেছে Honda Dream 110

এখানে আমরা দ্বিতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর নিয়ে আলোচনা করবো। এগুলো হলো হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ সিঙ্গেল হেড ল্যাম্প ভার্সন এবং হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ ডুয়েল হেড ল্যাম্প ভার্সন।

হোন্ডা সিবিআর ১৫০ আর ২০১৪ এবং ২০১৬ ভার্সনের লুকস ও ডিজাইনগত পার্থক্য

আগেই বলেছি সিবিআর ১৫০আর এর উভয় ভার্সনের বাহ্যিকের পাশাপাশি মূল কাঠামোতেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, উভয় ভার্সনের ডিএনএ কিন্তু এক। দুটাই সরাসরি হোন্ডা রেসিং ডিএনএ অর্থাৎ ক্রস বিম রেসার (সিবিআর) থেকে এসেছে। ফলে মূল বৈশিষ্ট্য কিন্তু অক্ষুণ্নই রয়েছে।

Also Read: Honda CB Hornet 160R VS Honda CB Hornet 160R ABS ৭টি পার্থক্য !

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ এবং ২০১৬ ভার্সনের মাঝে আপনি ব্যাপক পার্থক্য দেখতে পাবেন। এগুলোর হেড ল্যাম্প ও টেইল পার্ট দেখেই এদেরকে আলাদা ভাবে চেনা যায়। এটাকে এদের পরিচয়গত পার্থক্যও বলা যেতে পারে। অবশ্য দুইটি ভার্সনের গোটা বডিতেই পার্থক্য রয়েছে। হ্যান্ডেলবার, লিভার, পেডালের মতো অল্প কয়েকটি বডি পার্টসের সঙ্গে শুধু ফুয়েল ট্যাঙ্কটাই একই রকম আইকনিক শেপে রয়েছে।

সিবিআর ১৫০আর এর ২০১৪ মডেলটি যথেষ্ট পরিমার্জিত ও সুস্থির। কিন্তু ২০১৬ মডেলটি দেখতে অনেক বেশি শার্পার ও অ্যাগ্রেসিভ। সিবিআর এর এই নতুন ভার্সনটিতে পুরোপুরি শার্পার থিম প্রয়োগ করা হয়েছে।

Also Read: Honda CB Hornet 160R 10,000 KM Test Ride Review

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর উভয় ভার্সনেই ফুল ফেয়ারড বডিতে আকর্ষণীয় কালার স্কিম ব্যবহার করা হয়েছে। উভয় ভার্সনেই সর্বোচ্চ অ্যারোডাইনামিক কাউলিং নিশ্চিত করা হয়েছে। মডেল দুইটির সিটিং পজিশনেও দৃশ্যমান পার্থক্য রয়েছে।

যদিও উভয় ভার্সনেই স্প্লিট সিট রয়েছে, তবে ২০১৪ মডেলের স্প্লিট সিট দুটি প্রায় সংযুক্ত। কিন্তু ২০১৬ মডেলে রাইডার ও পিলিওনের সিট দুটি একেবারে আলাদা করা। এটা অনেকটা ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর মতো অ্যাগ্রেসিভ করা হয়েছে।

Also Read: Honda CB150R Streetfire ৮,০০০ কিলোমিটার রিভিউ

তাছাড়া ২০১৬ মডেলে পিলিওনের জন্য গ্র্যাব রেইলটি সিটের নিচে লুকানো রাখা হয়েছে। অপরদিকে ২০১৪ মডেলে ডাবল হর্ন রেইলগুলো বাহির থেকে দেখা যায়। পাশাপাশি মডের দুইটির এক্সজস্ট পাইপেও ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।

অন্যদিকে ২০১৪ মডেলে যেখানে হেড ও টেইল ল্যাম্পসহ অন্য সব সিগন্যাল ও পাইলট লাইটে সাধারণ হ্যালোজেন বাল্ব ব্যবহার করা হয়েছে, ২০১৬ মডেলে এর পরিবর্তে সম্পূর্ণ এলইডি লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি ডুয়েল হেড ল্যাম্পের সঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণী আইব্রো ডিআরএল’ও ব্যবহার করা হয়েছে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ ভার্সনে।

Also read: ১ লক্ষ টাকার মধ্যে হোন্ডা বাইক এর দাম | বাইকবিডি

যেকোনো বাইকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ এর কনসোল প্যানেল। সিবিআর ১৫০আর এর ২০১৪ মডেলে ডিজিটাল অডো মিটারের সঙ্গে প্রথাগত রেভ কাউন্টার ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৬ মডেলে ব্যবহার করা হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন ও ডিজিটাল অডোর সঙ্গে ডিজিটাল রেভ ইন্ডিকেটর।

এই ভার্সনের বাইক বন্ধ করলেই ‘সি ইউ’ গ্রিটিং ভেসে ওঠে। যাহোক আমি অকপটেই স্বীকার করি সিবিআর এর এই দুই ভার্সনই আমি ভালোবাসি, যদিও দুইটারই আলাদা মজা ও আবেদন রয়েছে, তার পরও আশা করি আপনারাও আমাদের সঙ্গে একমত হবেন।

Also Read: Honda XBlade 160 4,500 Km User Review - Mohammad Nipun

আগেই বলেছি, হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর উভয় ভার্সনের ফ্রেম আলাদা। সর্বোপরি এদের আয়তনেও পার্থক্য রয়েছে। সিবিআর এর ২০১৪ ভার্সনটি আকারে কিছুটা বড়ো, উল্টোদিকে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ ভার্সনের হুইলবেজ আবার ২০১৪’র চেয়ে বড়ো।

এছাড়া উভয় ভার্সনের অন্য যন্ত্রাংশগুলো একই রকম। অবশ্য উভয় মডেলের সাসপেনশন যদিও এক, তবে ইন্দোনেশিয়ার পিটি অ্যাস্ট্রা হোন্ডা মোটর বলেছে, অধিক স্ট্যাবিলিটি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর রিয়ার সাসপেনশন সুইং আর্মের সঙ্গে নতুন করে বিন্যাস করা হয়েছে।

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ এবং ২০১৬ ভার্সনের মেকানিক্যাল পার্থক্য

তাহলে পাঠক, হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ এবং ২০১৬ এর বাহ্যিক পার্থক্য নিয়ে তো আলোচন হলো। বাইক দুটি দেশের মার্কেটে আসার পর এই পার্থক্য আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। যাই হোক, এখন মডেল দুটির মেকানিক্যাল দিক নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।

Also Read: Honda Commuter Bike Price In Bangladesh

আলোচনার শুরুতেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এই অংশই কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তাহলে এই রস আস্বাদনের পূর্বে মডেল দুটির টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এক নজরে দেখে নেয়া যাক।

স্পেসিফিকেশনহোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৬
ইঞ্জিনসিঙ্গেল সিলিন্ডার, ফোর স্ট্রোক, লিকুইড কুলড এস আই ইঞ্জিন
ডিসপ্লেসমেন্ট১৪৯.৪ সিসি১৪৯.১৬ সিসি
বোর × স্ট্রোক৬৩.৫ মিমি × ৪৭.২ মিমি৫৭.৩ মিমি × ৫৭.৮ মিমি
কম্প্রেশন রেশিও১১.১:১১১.৩:১
ভাল্ব সিস্টেমডাবল ওভারহেড কামশ্যাফট (ডিওএইচসি) যুক্ত চার ভাল্ব
সর্বোচ্চ ক্ষমতা  ১৮.২৮বিএইচপি (১৩.৬ কিলোওয়াট) @ ১০৫০০ আরপিএম (ভারতীয় ভার্সনে ১৭.৫৭ বিএইচপি)১৭.১ বিএইচপি (১২.৬     কিলোওয়াট) @ ৯০০০ আরপিএম
সর্বোচ্চ টর্ক১২.৬৬ নিউটন মিটার @ ৮৫০০ আরপিএম১৩.৭ নিউটন মিটার @ ৭০০০ আরপিএম
জ্বালানি সরবরাহইসিইউ নিয়ন্ত্রিত ফুয়েল ইঞ্জেকশন (পিজিএম-এফআই)
ইগনিশনসম্পূর্ণ ট্রানজিস্টোরাইজড
স্টার্ট প্রক্রিয়াশুধু ইলেকট্রিক
এয়ার ফিল্টার টাইপভিসকাস এয়ার ফিল্টারপাওয়া যায়নি
ট্রান্সমিশন৬ স্পিড, প্যাটার্ন ১-নিউট্রাল-২-৩-৪-৫-৬

ফ্রেম টাইপটুইন টিউব ডায়মন্ডডায়মন্ড ট্রাস ফ্রেম
আয়তন (দৈর্ঘ্য×প্রস্থ×উচ্চতা)(২০০০×৮২৫× ১১২০) মিমি(১৯৮৩×৬৯৪×১০৩৮)মিমি
হুইল বেজ১৩০৫ মিমি১৩১১ মিমি
গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স১৯০ মিমি১৬৬ মিমি
স্যাডল হাইটপাওয়া যায়নি৭৮৭ মিমি
কার্ব ওজন১৩৮ কেজি১৩৫ কেজি
জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা১৩ লি.১২ লি.

সাসপেনশন (সামনে/পিছনে)টেলিস্কোপিক / স্প্রিং লোডেড হাইড্রলিক টাইপ (মনোশক)
ব্রেক সিস্টেম (সামনে/পিছনে)উভয়টিতেই হাইড্রলিক
টায়ার সাইজ (সামনে/পিছনে)১০০/৮০-১৭ /১৩০/৭০-১৭; টিউবলেস

ব্যাটারি১২ ভোল্ট ৫এএইচ (এমএফ)
হেড ল্যাম্প১২ভি ৬০/৫৫ ওয়াট (সিঙ্গেল ইউনিট)ডাবল হেড ল্যাম্প
স্পিডোমিটারফুল ডিজিটাল সঙ্গে অ্যানালগ রেভ কাউন্টারফুল ডিজিটাল সঙ্গে ডিজিটাল রেভ ইন্ডিকেটর
মাইলেজ+/- ৩৫ কিমি/লি+/- ৩৯ কিমি/লি
সর্বোচ্চ গতি+/- ১৩৫ কিমি/ঘণ্টাবাংলাদেশে এখনো পরীক্ষা করা হয়নি

পাঠক, খোলাখুলিই বলি, এই আলোচনার জন্য আমি হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সবগুলো ভার্সন নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও বিশ্লেষণ করেছি। অবশ্য ভারতীয়-থাই ভার্সনও আমার চিন্তায় ছিলো। তো, আমার গবেষণার সার অংশটুকু আপনার সামনে তুলে ধরছি।

Also Read: Honda Dream Neo 110cc ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

পরিষ্কারভাবে বিভাজন করতে গেলে আমি বলবো, হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর থাই ও ইন্দোনেশিয়ান ভার্সনগুলো সম্পূর্ণ আলাদাভাবে প্রস্তুত করা হয়, তবে এক্ষেত্রে মূল কাঠামোতে সিবিআর রেসিং ডিএনএ’কে অবশ্যই অক্ষুণ্ন রাখা হয়।

সিবিআর ১৫০আর এর থাই ভার্সনগুলো উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সিবিআর যেমন সিবিআর ২৫০আর এর অণুকরণে বানানো হয়। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়ান ভার্সনগুলো সিবি ভার্সনের সঙ্গে উচ্চ ক্ষমতার সিবিআর ডিএনএ’র সংমিশ্রণে নির্মিত। ফলে দুই ভার্সনেরই আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকলেও সেটা ইতিবাচক।

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর দুইটি ভার্সনের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য এদের পিস্টন, সিলিন্ডার ও কানেকটিং রডের দৈর্ঘ্যে। ২০১৪ মডেলের বোর ও স্ট্রোক যথাক্রমে ৬৩.৫ মিমি ও ৪৭.২ মিমি। অপরদিকে নতুন ২০১৬ মডেলের বোর ও স্ট্রোক যথাক্রমে ৫৭.৩ মিমি ও ৫৭.৮ মিমি।

Also Read: Honda Africa Twin (2020) Price in Bangladesh

তাহলে দেখতেই পাচ্ছেন, ২০১৪ মডেলটির ইঞ্জিন ওভার স্কয়ার এবং ২০১৬’র ইঞ্জিন সলিড স্কয়ার। এবার তাহলে উভয় ইঞ্জিনের সুবিধা-অসুবিধাগুলো সম্পর্কে জানা যাক।

ওভার স্কয়ার ইঞ্জিন যেকোনো আরপিএমে অনেক বেশি মসৃণ ভাবে চলে। তবে স্বল্প আরপিএমে ও উচ্চ আরপিএমে এর ত্বরণ (এক্সিলারেশন) অন্য ইঞ্জিনের তুলনায় কম হয়।

এ ধরণের স্বল্প ক্ষমতার ইঞ্জিনে অধিক সংকোচন (কম্প্রেশন) পাওয়া খুব কঠিন। যদিও সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ মডেলটির কম্প্রেশন রেশিও ১১.১:১। এর ফলে এই ইঞ্জিনটি যথেষ্ট কার্যকরী। এটি অফ রোডের চেয়ে অন রোডে বেশি উপযুক্ত।

Also Read: Eid Safety Riding | Bangladesh Honda Pvt Ltd

অন্যদিকে নতুন ২০১৬ হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর  এর ইঞ্জিন প্রায় সলিড স্কয়ার। এতে কম্প্রেশন রেশিও কিছুটা বেশি, ১১.৩:১ যা যথেষ্ট ভালো। তবে স্কয়ার ইঞ্জিন হওয়ায় এটি আরো বাড়ানো যেতো। অবশ্য ইঞ্জিনের এই বৈশিষ্ট্য একে দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করে তুলেছে।

২০১৪ ভার্সনের মতো এই ২০১৬ ভার্সনটিও যেকোনো আরপিএমে মসৃণভাবে চলতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি আগেরটার চেয়ে বেশি এক্সিলারেট করতে পারে। বিশেষভাবে স্বল্প ও উচ্চ আরপিএমে তো বটেই। ম্যাজিকটা বুঝলেন তো!

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ মডেলটি সর্বোচ্চ ১৮.২৮ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে ১০,৫০০ আরপিএমে এবং ১২.৬৬ নিউটন মিটার টর্কের জন্য ৮,৫০০ আরপিএমের প্রয়োজন পড়ে। অপরদিকে সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ মডেলটিতে সর্বোচ্চ ১৭.১ বিএইচপি উৎপন্ন করতে ৯,০০০ আরপিএম এবং ১৩.৭ নিউটন মিটার টর্কের জন্য ৭,০০০ আরপিএম দরকার পড়ে। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে, ২০১৪ সিবিআর নতুন ২০১৬ মডেলটির চেয়ে বেশি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।

আর এক্ষেত্রে মজাটা হচ্ছে যে, ২০১৪ মডেলটির সর্বোচ্চ ক্ষমতায় যেতে অতি উচ্চ আরপিএম অর্থাৎ ১০,৫০০ ও ৮,৫০০ আরপিএম দরকার পড়ে। ফলে স্বল্প আরপিএমে কম জ্বালানি খরচ হয়। অর্থাৎ অল্প গতিতে বা শহরে চলার জন্য এটি খুব উপযোগী।

কিন্তু যখনই আপনি ঝড় তুলতে চাইবেন তখন দ্রুত গতি তুলতে এটি উচ্চ আরপিএমে অধিক জ্বালানি পোড়ায়। তাছাড়া উচ্চ আরপিএম নির্ভর হওয়ায় স্বল্প আরপিএমে এটি খুবই অলস। আবার টর্ক কম হওয়ায় উচ্চ আরপিএমেও এটি ধীরে ধীরে অলস হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে ২০১৬ মডেলটি অল্প আরপিএমে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় পৌঁছাতে পারে। ফলে এটাতে ২০১৪ মডেলের মতো আরপিএম ভেদে জ্বালানি খরচে তেমন উল্লেখযোগ্য তারতম্য দেখা যায় না। স্বল্প আরপিএম নির্ভর হওয়ায় এটি সবসময়ই যেকোনো আরপিএমে সমানভাবে কাজ করতে প্রস্তুত থাকে।

সেজন্য আরপিএম ব্যান্ডের চিন্তা বাদ দিয়ে আপনি বিনা দ্বিধায় রাস্তায় নেমে পড়তে পারেন। তাছাড়া যেকোনো আরপিএমে এটি তুলনামূলক ভালো এক্সিলারেশন দেয়।

হোন্ডা সিবিআর ২০১৪ ও ২০১৬ ভার্সনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

সর্বোচ্চ গতি ও ক্ষমতা বিবেচনায় পুরনো ২০১৪ মডেলটি বেশি মক্তি উৎপন্ন করতে পারে। অপরদিকে টর্কের দিক থেকে সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ মডেলটি এগিয়ে রয়েছে। ফলে উভয় দিক বিবেচনায় মেশিন দুটিকে সমান সমান বলা চলে।

আবার ২০১৪ মডেলের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় যেতে উচ্চ আরপিএম নির্ভর হওয়ার অসুবিধা এবং ২০১৬ মডেলের স্বল্প আরপিএমে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় যেতে পারার সুবিধা তাদেরকে সর্বোচ্চ গতির ক্ষেত্রে একই কাতারে দাঁড় করিয় দেয়। তার পরও ২০১৬ সিবিআর ১৫০আর দ্রুত গতি তোলার দিক থেকে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। আর এক্ষেত্রে একে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে ২০১৬ মডেলটির কার্ব ওজন রাখা হয়েছে ১৩৫ কেজি, যেখানে ২০১৪ মডেলের কার্ব ওজন ১৩৮ কেজি।

আমি এর আগেই বলেছি যে, ইন্দোনেশিয়ান সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ মডেলটি হোন্ডা সিবি সিরিজের সঙ্গে সিবিআর রেসিং ডিএনএ’র সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয়েছে। যেজন্য এর ইঞ্জিন সলিড স্কয়ার এবং এটি জ্বালানি সাশ্রয়ী। ইন্দোনেশিয়ান মোটরবাইক সংক্রান্ত ব্লগ ‘সেমি সেনা’ দাবি করেছে সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ প্রমিত মানদণ্ড বিবেচনায় প্রতি লিটারে +/-৩৯.৭২ কিমি চলে। আর আমাদের দেশে প্রচলিত সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ মডেলে আমরা প্রতি লিটারে +/-৩৫ কিমি মাইলেজ পাই।

বেছে নিন আপনার মডেলটি!

তাহলে পাঠক, আশা করছি এখানে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত আপনার অনুসন্ধিৎসা নিবারণ করতে পেরেছে। তবে একটি পরিষ্কার করা দরকার, এখানে দেওয়া বিশ্লেষণ সম্পূর্ণই তথ্য-উপাত্ত নির্ভর। বাস্তবে নতুন ২০১৬ মডেলটি বাংলাদেশে আসলেই আমরা প্রকৃত স্বরূপটি বুঝতে পারবো। আশা করছি এই অপেক্ষার দ্রুতই অবসান হবে।

তার পরও আলোচনা শেষ করার আগে পুরো বিশ্লেষণের একটি সারবস্তু আপনার সামনে তুলে ধরার প্রয়োজন বোধ করছি। হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৪ ও ২০১৬ উভয় ভার্সনই যান্ত্রিক দিক বিচেনায় প্রায় সমানে সমান। তবে ২০১৬ মডেলে কিছু নতুনত্ব যোগ হওয়ায় তা কিছুটা এগিয়ে রয়েছে বটে।

আরো সূক্ষ্ণভাবে বলতে গেলে, ২০১৪ হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর নতুনটির চেয়ে একটু বেশি মসৃণ তবে প্রারম্ভিক ও উচ্চ আরপিএমে এর এক্সিলারেশন আশাব্যঞ্জক নয়। তাছাড়া এটি জ্বালানি সাশ্রয়ের দিক থেকেও কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।

অপরদিকে নতুন ২০১৬ হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর একদিকে জ্বালানি সাশ্রয়ী, অন্যদিকে যেকোনো আরপিএমে ভালো এক্সিলারেশনও দেয়। তাছাড়া ওজনে কিছুটা কম হওয়ায় এটি ২০১৪ ভার্সনের চেয়ে কিছুটা দ্রুতই ছুটতে পারবে আশা করা যায়। ব্যস এইতো!

*এখানে দেওয়া স্পেসিফিকেশন কোম্পানি যেকোনো সময় পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে পারে। এরূপ কোনো পরিবর্তনের জন্য বাইকবিডি.কম দায়ী থাকবে না।