সুজুকি জিক্সার বনাম ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই - তূলনামূলক রিভিউ

This page was last updated on 18-Aug-2024 05:12am , By Shuvo Bangla

বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটে ১৫০ সিসি এয়ার কুলড সেগমেন্টে সুজুকি জিক্সার এবং ইয়ামাহা এফজেডএস অন্যতম বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। কয়েক বছর ধরেই তারা তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা এবং বিভিন্ন ফিচারকে নির্ভর করে লড়াই করে যাচ্ছে। এবং, সম্প্রতি বাংলাদেশে এফজেডএস এফআই এর বিক্রি শুরু হবার ফলে এই প্রতিযোগীতা একটি নতুন মোড় নিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা এসেছি এই প্রতিযোগীতাকে আরো একটু ভালোভাবে বিশ্লেষন করতে, এই সুজুকি জিক্সার বনাম ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই তূলনামূলক রিভিউ এর মাধ্যমে। তাই চলুন, বাইকদুটির সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক যাতে করে দ্বিধায় ভুগতে থাকা যেকারো জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া কিছুটা সহজ হয়।

জিক্সার বনাম এফজেডএস এফআই তূলনামূলক রিভিউ বিস্তারিত

suzuki-gixxer-vs-yamaha-fzs-fi

 

ইতিপূর্বে আমরা সুজুকি জিক্সার বনাম ইয়ামাহা এফজেডএস এর তূলনামূলক রিভিউ পাবলিশ করেছিলাম – এরপরে সময় এবং পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। বর্তমানে ইয়ামাহা এর নতুন লড়াকু যোদ্ধা হচ্ছে অত্যাধুনিক ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই, এবং এর বিপরীতে সুজুকি জিক্সার ও আগের চাইতে অনেকটাই আধুনিক হয়েছে। সুজুকি জিক্সার এখন নতুন রঙ এবং কালার ডিজাইনবিশিষ্ট, এবং এতে পেছনের ডিস্ক ব্রেক সংযুক্ত করা হয়েছে।  ইয়ামাহা এবং সুজুকি – উভয় কোম্পানির এই ক্রমাগত আপগ্রেডেশন দেখলেই বোঝা যায়, যে যুদ্ধক্ষেত্র কেবলমাত্রই উত্তপ্ত হচ্ছে। কাজেই আর দেরী না করে চলুন বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।

 

suzuki-gixxer-vs-yamaha-fzs-fi-front-back-view-comparison

সুজুকি জিক্সার বনাম ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই – লুকস এবং স্টাইলিং

সুজুকি জিক্সার এবং ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই – উভয় বাইকই ভিন্নরকম লুকস, স্টাইল এবং ব্যক্তিত্ব বহন করে। বাইকদুটিরমধ্যে কোনটির স্টাইলিং বেশি ভালো – সেটা নিরূপন করার আদতে কোন উপায় নেই বললেই চলে। যদিও সুজুকি জিক্সার এর স্টাইলিং দেখে মনে হতে পারে যে এর ডিজাইনটি আগের এফজেডএস এর ছায়া থেকে অনুপ্রানিত, কিন্তু আদতে এর অভিব্যক্তি সম্পূর্ন অন্যরকম। সুজুকি জিক্সারকে পূর্ববর্তী এফজেডএস এর তূলনায় সামান্য বেশি শার্পভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এছাড়াও জিক্সারে বেশকিছু আকর্ষনীয় বাক রয়েছে যা এর নিজস্ব ফ্যানবেজ গড়ে তুলেছে। তূলনামূলক তীক্ষ্ণ ডিজাইন এর কথা বাদ দিলে এর চাকা , ব্রেক, সাসপেনশন, ও আরো জিনিস এফজেডএস এর সাথে মিলে যায়। 

suzuki-gixxer-vs-yamaha-fzs-fi-seat-comparison

প্রতিউত্তরে নতুন ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ভার্শনে সম্পূর্ন বডি এবং লুক নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এফজেডএস এফআই বাইকটিকে এর পূর্ববর্তী ভার্শনের ছায়া থেকে অনুপ্রেরনা নিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে, অন্য কোণ বাইকের থেকে কোনপ্রকার আইডিয়া নিয়ে নয়। এর মৌলিক এবং আকর্ষনীয় ডিজাইন আবারও ইয়ামাহা প্রেমীদের মনোযোগ ও বিশ্বাস – দুটোই আদায় করে নিয়েছে। নতুন ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই বাইকেও আকর্ষনীয় এবং তীক্ষ্ণ ডিজাইনের ছোয়া রয়েছে এবং এর বডি প্যানেলগুলো সম্পূর্ন নতুনভাবে ডিজাইন করা। কাজেই বলা যায়, এই তূলনামূলক যুদ্ধে ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই সম্পূর্ন নতুন এক যোদ্ধা।

সুজুকি জিক্সার বনাম ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই – ফিচারভিত্তিক তূলনা

সুজুকি জিক্সার বাইকটি আগে থেকেই অত্যাধুনিক টেকনোলজি সমৃদ্ধ। এর পরিমিত ওজন, শক্তিশালি ইঞ্জিন, ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্টাল প্যানেল, স্পোর্টি দ্বিমুখী এক্সহস্ট, পেছনের মনোশক সাসপেনশন, ইত্যাদি সবকিছু মিলে ফিচারের দিক দিয়ে বাইকটিকে করে তুলে অনন্য। এবং, বর্তমানে এর নতুন ডুয়াল টোন এর রঙ একে আরো বেশি আকর্ষনীয় করে তুলেছে।

gixxer-vs.-fzs

 

এর বিপরীতে ইয়ামাহা এফজেডএসআই মোটরসাইকেলে রয়েছে নতুন ডিজাইন, চেহারা, এবং আধুনিক ফিচার । নতুন ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই বাইকে রয়েছে ইয়ামাহা ব্লু-কোর টেকনোলজি, যেটা প্রতিফোটা জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে। এছাড়াও, ইয়ামাহা ব্লু কোর টেকনোলজি এর মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি অন্যান্য টেকনোলজির তূলনায় অনেক কম হয়। ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই এর মিটার সম্পূর্ন ডিজিটাল এবং এর ইঞ্জিনও সম্পূর্ন নতুন ডিজাইনের।

best-150cc-bike-in-bagladesh

সুজুকি জিক্সার বনাম ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই – স্পেসিফিকেশনসমূহ

আমাদের বিস্তারিত তূলনামূলক যাচাই এর পূর্বে বাইকদুটোর টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এর তূলনা দেখে নেয়া যাক। এই টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এর ফলে সবাই বাইকদুটির শক্তি এবং ক্ষমতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা পাবে –

ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশন সুজুকি জিক্সারইয়ামাহা এফজেডএস এফআই
ইঞ্জিন টাইপএয়ার কুলড, ফোর স্ট্রোক, টু ভালভ, SOHCএয়ার কুলড, ফোর স্ট্রোক, টু ভালভ, SOHC
সিলিন্ডার লেআউটসিঙ্গেল সিলিন্ডারসিঙ্গেল সিলিন্ডার
ডিসপ্লেসমেন্ট১৫৪.৯ সিসি১৪৯ সিসি
বোর x স্ট্রোক৫৬.০ x ৬২.৯ মিলিমিটার৫৭.৩ x ৫৭.৯ মিলিমিটার
কমপ্রেশন রেশিও পাওয়া যায়নি৯.৫.১
সর্বোচ্চ শক্তি১৪.৮ পিএস @৮০০০ আরপিএম১৩.১ পিএস @৮০০০ আরপিএম
সর্বোচ্চ টর্ক১৪.০ এনএম @৬০০০ আরপিএম ১২.৮ এনএম @৬০০০ আরপিএম
স্টার্টিং মেথডইলেকট্রিক এবং কিকইলেকট্রিক
লুব্রিকেশন টাইপওয়েট সাম্পফোর্স ফীড লুব্রিকেশন, ওয়েট সাম্প
ফুয়েল সাপ্লাইকার্বুরেটরফুয়েল ইনজেকশন
ক্লাচ টাইপওয়েট, মাল্টিপ্লেট ডিস্কওয়েট, মাল্টিপ্লেট ডিস্ক
ট্রান্সমিশনকনস্ট্যান্ট মেশ ৫-স্পীডকনস্ট্যান্ট মেশ ৫-স্পীড

suzuki-gixxer-vs-yamaha-fzs-fi-specification-comparison-review

ডাইমেনশন এবং অন্যান্যসুজুকি জিক্সারইয়ামাহা এফজেডএস এফআই
লেন্থ x ওয়াইডথ x হাইট২০৫০ x ৭৮৫ x ১০৩৩ মিলিমিটার১৯৯০ x ৭৭০ x ১০৫০ মিলিমিটার
সীট হাইট৭৮০ মিলিমিটার ৭৯০ মিলিমিটার
হুইলবেজ ১৩৩০ মিলিমিটার ১৩৩০ মিলিমিটার
গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স১৬০ মিলিমিটার ১৬০ মিলিমিটার
ওজন ১৩৫ কিলোগ্রাম ১৩২ কিলোগ্রাম
ফুয়েল ট্যাংক ১২ লিটার ১২ লিটার
ফ্রেম টাইপ পাওয়া যায়নিডায়মন্ড
সাসপেনশন (সামনে/পেছনে)টেলিস্কোপিক / মনোশকটেলিস্কোপিক / মনোশক
ব্রেক (সামনে/পেছনে)ডিস্ক / ডিস্ক (অথবা ড্রাম) ডিস্ক / ড্রাম
ফ্রন্ট টায়ার১০০/৮০-১৭ (টিউবলেস)১০০/৮০-১৭ (টিউবলেস)
রিয়ার টায়ার১৪০/৬০-১৭ (টিউবলেস)১৪০/৬০-১৭ (টিউবলেস)
ব্যাটারী১২ভি, ৩.০ এএইচ, এমএফ১২ভি, ৪.০ এএইচ, সীলড টাইপ
হেডলাইট১২ভি, ৩৫/৩৫ ডব্লিউ১২ভি, ৩৫/৩৫ ডব্লিউ
টেইলল্যাম্প এলইডি এলইডি
ইন্ডিকেটরকমলা লেন্সসমৃদ্ধ বাল্ব ক্লিয়ার লেন্স
ডিসপ্লে প্যানেলফুল ডিজিটাল ফুল ডিজিটাল

 এই স্পেসিফিকেশন তূলনা দেখে হয়তো আপনি একটি ধারনা পেয়েছেন যে বাংলাদেশের রাস্তায় কোন বাইকটি রাস্তায় বেশি ক্ষমতাধর! এছাড়াও আপনি হয়তো আপনার পছন্দের বাইক ঠিক করে ফেলেছেন এবং সেটা কেনার ব্যপারে চিন্তা করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাপারটা এতোটাও সহজ নয়! এই স্পেসিফিকেশন টেবিলের মধ্যে কিছু গোপন ব্যাপার রয়েছে! স্পষ্টতই বাইকদুটির মধ্যে সুজুকি জিক্সার তূলনামূলক বেশি শক্তিশালি, এতে ১৫৪.৯ সিসির একটি ইঞ্জিন রয়েছে। কিন্তু, কোন এক অজানা কারনে কোম্পানি বাইকটির কমপ্রেশন রেশিও তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি। জিক্সারের  ইঞ্জিন দীর্ঘ স্ট্রোকবিশিষ্ট – ইঞ্জিনের মাপ হচ্ছে ৫৬.০ মিলিমিটার X  ৬২.৯ মিলিমিটার। ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ শক্তি হচ্ছে ১৪.৮ পিএস এবং সর্বোচ্চ টর্ক হচ্ছে ১৪ নিউটন মিটার।

 

suzuki-gixxer-engine

অপরদিকে, এফজেডএস এফআই বাইকটি একটি ১৪৯ সিসি বর্গাকার ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত হয়, যার সিলিন্ডারের মাপ হচ্ছে ৫৭.৩ মিলিমিটার x  ৫৭.৯ মিলিমিটার। ইঞ্জিনের কমপ্রেশন রেশিও হচ্ছে ৯.৫.১ এবং এটা সর্বোচ্চ ১৩.১ পিএস শক্তি এবং ১২.৮ নিউটন মিটার টর্ক উতপন্ন করতে পারে। এখানে, সুজুকি জিক্সার এর শক্তি ও টর্ক ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই এর তূলনায় বেশি এবং জিক্সারে অধিক শক্তিশালি ইঞ্জিন রয়েছে। কিন্তু, এফজেডএস এফআই সুজুকি জিক্সার এর চাইতে ৩ কিলোগ্রাম কম ওজনবিশিষ্ট, এবং ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম থাকার কারনে ইঞ্জিনে পরিমানের চাইতে বেশি তেল যায় না, ফলে ইঞ্জিন চাপমুক্তভাবে স্মুথলি কোনপ্রকার ভাইব্রেশন ছাড়াই শক্তি উতপন্ন করতে পারে।

yamaha-fzs-engine-specification-performance

 

সুজুকি জিক্সারে তূলনামূলক লম্বা স্ট্রোক  থাকার কারনে এটা কম আরপিএমে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত, যেমন, ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পীড পর্যন্ত অনেক দ্রুত স্পীড তুলতে পারে। তবে, ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিবেগ এর পরে এর এক্সেলেরেশন কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে, এর শক্তিশালি ইঞ্জিন ভালো টপ স্পীড তুলতে সক্ষম। এর বিপরীতে ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই বাইকটি যেকোন আরপিএমেই একই পরিমান এক্সেলেরেটিং করতে সক্ষম, কারন এতে রয়েছে বর্গাকার ইঞ্জিন। আমাদের বিশ্বাস, অত্যান্ত উচ্চ আরপিএমেও এটা স্মুথ, কম্পনমুক্তভাবে শক্তির যোগান দেবে। এবং, নিঃসন্দেহেই ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই এর মাইলেজ সুজুকি জিক্সার এর চাইতে কিছুটা বেশি হবে।

suzuki-gixxer-vs-yamaha-fzs-fi-top-view-comparison

সুজুকি জিক্সার বনাম ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই – উপসংহার

এই তথ্যবহুল তূলনামূলক আলোচনার ফলে আমরা বুঝতে পারলাম যে সুজুকি জিক্সার এবং ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই – উভয় বাইকই সর্বদিক দিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বাইক। এদের মধ্যে কারোর স্টাইল, ফিচার এবং পারফর্মেন্সকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তবুও এতোকিছুর মাঝেও কিছু ছোটখাটো বিষয় রয়েছে যা উভয় যোদ্ধাকেই আলাদা করে এবং তাদের নিজস্ব ভক্তসমাজ গড়ে তোলে। তবে, সকল হিসাব-নিকাশ শেষে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিমতে, আপনি যদি শহরের রাস্তায় বাইক নিয়ে পরিমিত স্পীডে সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াতে চান, তবে সুজুকি জিক্সার আপনার জন্য অন্যতম সেরা পছন্দ হতে পারে। তবে, আপনি যদি আস্থাসম্পন্ন এবং ভালো পার্ফরমেন্সবিশিষ্ট একটি অলরাউন্ডার বাইক চান, তবে ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই আপনার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকার যোগ্যতা রাখে। আজ এটুকুই। আমাদের সুজুকি জিক্সার বনাম ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই তূলনামূলক রিভিউ নিয়ে যদি আপনার যেকোন প্রশ্ন বা দ্বিধা থাকে, তবে দেরী না করে এখনই কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করুন।