সিকেডি মোটরসাইকেল আমদানি বন্ধের উদ্যোগ

This page was last updated on 06-Jul-2024 09:15am , By Shuvo Bangla

দেশে অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশ এবং স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে সরকার পর্যায়ক্রমে সিকেডি মোটরসাইকেল (বিযুক্ত অবস্থায়)  আমদানি বন্ধ করতে যাচ্ছে। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা, মোটরসাইকেল উত্পাদন ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের নেতার গত বৃহস্পতিবার এনবিআরের এক বৈঠকে সিকেডি মোটরসাইকেল আমদানি বন্ধের সুপারিশে এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হচ্ছে। কমিটি নতুনভাবে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের সংজ্ঞা ও পরিসীমা নির্ধারণ করবে। তবে সিবিইউ (সম্পূর্ণ প্রস্তুত) আমদানি অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয়ভাবে উত্পাদনকে উৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, কিছু অসাধুু আমদানিকারক  রপ্তানিকারকদের যোগসাজশে এলসিতে কম মূল্য দেখিয়ে দেশীয় বাজারে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে মোটরসাইকেল বিক্রি করছে। চলতি অক্টোবরের এলসি মোতাবেক, আমদানি করা কিছু মোটরসাইকেলের দাম সাধারণ দামের চেয়ে ৭০ থেকে ১০০ ডলার কম মূল্য দেখানো হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে যে দাম আছে তার চেয়েই এই দাম কম।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমএমইএবি) প্রেসিডেন্ট হাফিজুর রহমান খানসহ অন্য ব্যবসায়ী নেতারা ওই বৈঠকে সিকেডি মোটরসাইকেল আমদানি বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতিপূর্বে মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ দিলে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দীনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সিকেডি বাইক আমদানি স্থানীয় শিল্পকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে উল্লেখ করে সভায় মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘উদীয়মান এই শিল্প দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। সিকেডি মোটরসাইকেল আমদানি বন্ধ না করলে দেশীয় শিল্প নাজুক পরিস্থিতির মুখে পড়বে।’ মাতলুব আহমাদ আরো বলেন, ‘বিযুক্ত অবস্থায় মোটরসাইকেলের সকল যন্ত্রাংশ আমদানির বাধ্যবাধকতার বিধান বাতিল করতে হবে। সংযোজনকারীরা স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত যন্ত্রাংশ ব্যবহারে আগ্রহী; কিন্তু আইনে তার সুযোগ না থাকায় তারা সেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে পারছে না।

স্থানীয় শিল্প বিকাশে যা যা করা দরকার সরকারকে তাই করতে হবে।’   এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আরো বলেন, দেশে যন্ত্রাংশ শিল্প গড়ে উঠতে হবে এবং সে জন্য যেসব যন্ত্রাংশ প্রস্তুত হয় সেগুলো আমদানি বন্ধ করতে হবে। আমরা কতকাল আর আমদানির ওপর নির্ভরশীল থাকব? আমাদের এখন উত্পাদনে যেতে হবে। দেশে যেসব যন্ত্রাংশ তৈরি হয় সেগুলো আমদানি করার কোনো যুক্তি নেই। স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত মোটরসাইকেলের মান বিষয়ে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, উত্পাদনকারীরা মান আরো বাড়াতে পারবে যদি তাদের আরো সহযোগিতা দেওয়া হয়। চীন ও ভারত তাদের উত্পাদিত মোটরসাইকেলের মান বাড়িয়েছে এক দিনে নয়।

Also Read: মোটর সাইকেল আমদানি পদ্ধতি সহ বিস্তারিত

দেশে চাহিদার ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উত্পাদন করা সম্ভব। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শিগগিরই একটি কমিটি করে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের নতুনভাবে সংজ্ঞা ও পরিসীমা নির্ধারণ করা হবে। মোটরসাইকেল আমদানিতে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের পর এক হিসেবে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৫৬৪.৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা ২০১৪ সালের একই সময়ে ছিল ৫৭৫ টাকা। কিন্তু আমদানি ব্যয় বাবদ ৭৬.১৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

মোটরসাইকেল উত্পাদনে সক্ষমতা বেড়েছে বাংলাদেশের। বড় অংশ সরবরাহ করছে দেশীয় কয়েকটি কম্পানি। এ অবস্থায় দেশীয় এই শিল্পকে সুরক্ষা দিতে চলতি বাজেটে সিকেডি মোটরসাইকেলের ওপর সম্পূরক শুল্কহার ৩০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। বাজেটে বর্ধিত ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছেন আমদানিকারকরা। তবে আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি এক সারসংক্ষেপে লিখেছেন, ‘মোটরসাইকেল উত্পাদনকে সুরক্ষা দিতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। মার্কেট ইমপ্যাক্ট আরো মাসখানেক মূল্যায়ন করা যেতে পারে।’ অর্থমন্ত্রী আরো মন্তব্য করেন, ‘বাজারে কি সত্যিই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে? আমরা কি জানি স্থানীয় উত্পাদন কত হয়েছে? আমদানিকারক বা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বক্তব্য যথেষ্ট নয়।’