লনচিন জিপি ১৫০ মালিকানা রিভিউ - মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সায়মন
This page was last updated on 14-Jul-2024 06:58am , By Saleh Bangla
আমি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সায়মন। আজকে আমি আপনাদের সাথে বাংলাদেশের আলোচিত মোটরবাইক লনচিন জিপি ১৫০ নিয়ে আমার ১০,৫০০কিমি পথ পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ।
লনচিন জিপি ১৫০ বাইক চালানো এবং কেনার অভিজ্ঞতাঃ
বাইক চালানোটা সব সময় আমার কাছে থ্রিল। ছোটবেলা থেকেই অন্যান্য সবার মত বাইকের প্রতি আমি নিজেও অনেক আগ্ৰহী ছিলাম। স্বপ্ন দেখতাম নিজের বাইকের। আমার বড় হবার সাথে সাথে সেই স্বপ্ন ও বড় হতে লাগল। বাসায় বাইক কিনে দেয়ার কথা বলে লাভ হতো না। একমাত্র সন্তান হবার কারণে বাসা থেকে রাজি হচ্ছিল না।
কিন্তু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করে যেতাম যেন তিনি একটা ব্যবস্থা করে দেন। আলহামদুলিল্লাহ , এর মধ্যে আমার ছোট খালু একটি হোন্ডা কোম্পানির বাইক কিনেন। আমি সেই বাইকটি দেখতে যাই এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, তখন তার ঐ সদ্য কিনা বাইকটি তিনি আমাকে দিয়ে দেন।
এর আগে বন্ধুর বাবার বাইক দিয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল। ঐ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জীবনে প্রথম বারের মত সাভার থেকে উত্তরা আসি, পিলিওন সহ। যাক, সেই ঘটনার পর আমার বাসার সবার বাইক নিয়ে যেই ভীতি ছিল সেটা কিছুটা হলেও কমে। আর সময়ের সাথে সাথে সেটা এক পর্যায়ে সম্পূ রন দূর হয়ে যায়। পরে , আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় আম্মুকে রাজি করে ফেললাম বাইক কিনে দেয়ার জন্য। আম্মুর জমানো টাকা আর আমার নিজের টাকায় বাইক কিনে ফেললাম। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি লনচিন জিপি ১৫০ এর একজন গর্বিত মালিক। আর নিজের টাকায় কিনে বাইক চালানোর অনুভূতি অন্যরকম।
কেন লঞ্চিন জিপি ১৫০
স্পোর্টস বাইকের প্রতি দুর্বলতা কম বেশি সবারই থাকে। সেই কারনে পছন্দের তালিকা দখল করে ছিল ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এবং হোন্ডা সিবি আর (র্যাপসল)। কিন্তু , প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বাইক কিনার সামর্থ্য না থাকার কারণে সুজুকি জিক্সার এসএফ কিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে টাকা জমানো শুরু করি। এর মধ্যে লিফান কেপিআর বাইকটিও চোখে পড়ে। এর পর জিক্সার আর কেপিআর এর কম্পেয়ার করতে থাকি। লুক, স্টাইল , স্পিড , দাম এই সব মিলিয়ে মনে হল কেপিআর বেস্ট অপশন আমার জন্য।
এর পর বিভিন্ন সাইটে কেপিআর নিয়ে লিখা গুলো পড়তাম।
একদিন কোন একটা সাইট ঘাটতে গিয়ে দেখলাম লনচিন বনাম কেপিআর এর কম্পেয়ার। বিশ্বাস ক্রুন , প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই আমি লনচিন এর। এর পর জিক্সার , কেপিআর এবং লনচিন এর ছবি দেখাই আম্মুকে। আমাকে অবাক করে দিয়ে , আম্মুও লনচিন পছন্দ করে ফেলে। আর তখনি লনচিন জিপি ১৫০ কিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি । এর পর বাইকিং গ্ৰুপ গুলোতে লনচিন বনাম কেপিআর নিয়ে পোষ্ট করি। ১০০ জনের মধ্যে ৯৫ জন কেপিআর কিনতে বলে কিন্তু এত এত নেগেটিভ মন্তব্য আসার পরেও আমার মন লনচিন এর দিকেই ঝুঁকে ছিল। এর পর এক ভাইয়ার সহযোগিতায় লনচিন জিপি বাংলাদেশ গ্ৰুপটির লিংক পেয়ে সেখানে জয়েন করি। জয়েন করার পর মাইলেজ কম এই প্রবলেম ছাড়া আর বড় কোন সমস্যায় ইউজাররা পড়ে না দেখে এইটা কিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই চূড়ান্ত ভাবে।
একদিন কোন একটা সাইট ঘাটতে গিয়ে দেখলাম লনচিন বনাম কেপিআর এর কম্পেয়ার। বিশ্বাস ক্রুন , প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই আমি লনচিন এর। এর পর জিক্সার , কেপিআর এবং লনচিন এর ছবি দেখাই আম্মুকে। আমাকে অবাক করে দিয়ে , আম্মুও লনচিন পছন্দ করে ফেলে। আর তখনি লনচিন জিপি ১৫০ কিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি । এর পর বাইকিং গ্ৰুপ গুলোতে লনচিন বনাম কেপিআর নিয়ে পোষ্ট করি। ১০০ জনের মধ্যে ৯৫ জন কেপিআর কিনতে বলে কিন্তু এত এত নেগেটিভ মন্তব্য আসার পরেও আমার মন লনচিন এর দিকেই ঝুঁকে ছিল। এর পর এক ভাইয়ার সহযোগিতায় লনচিন জিপি বাংলাদেশ গ্ৰুপটির লিংক পেয়ে সেখানে জয়েন করি। জয়েন করার পর মাইলেজ কম এই প্রবলেম ছাড়া আর বড় কোন সমস্যায় ইউজাররা পড়ে না দেখে এইটা কিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই চূড়ান্ত ভাবে।
লনচিন জিপি ১৫০ এর ডিজাইনঃ
আমার মনে হয়না লনচিন জিপি ১৫০ এর ডিজাইন নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু বলতে হবে। স্পোর্টস সেগমেন্টের যত গুলো বাইক আছে বাংলাদেশে তার মধ্যে লনচিন এর লুকস প্রিমিয়াম ক্যাটগরির। সিটিং পজিশন ,৩ পার্ট হ্যান্ডেল বার , আলাদা পিলিওন সিট , ডিজিটাল স্পিডোমিটার , এনালগ আরপিএম মিটার, ৬ গিয়ার , সাইড ইন্ডিকেটর সাথে পার্কিং লাইট, এক কথায় কিলার লুক।
লনচিন জিপি ১৫০ এর স্পেসিফিকেশনঃ
ইলেক্ট্রিক স্টার্ট, ভ্যাকুয়াম কার্বুরেটর, এ্যালয় হুইল, টিউবলেস টায়ার, এফআর এন্ড আরআর ডিস্ক ব্রেক, এলইডি টেল লাইট, এলইডি টার্ন লাইট, ডিজিটাল মিটার, আপসাইড ডাউন এফআর শক এ্যাভজর্বার, সেন্টার প্লেসড এ্যাবজর্বার, এ্যালয় মেইন এন্ড প্যাসেঞ্জার ফুটরেস্ট, এ্যালয় রিম আর্মরেস্ট, এন্টি স্লিপ সিট, এ্যালয় বডি মাফলার, হাফ চেইন কেস.
লনচিন জিপি ১৫০ এর ইঞ্জিন এন্ড ট্রান্সমিশনঃ
ইঞ্জিন টাইপ সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক, অয়েল কুল্ড, ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ১৭.৭ পিএইচপি (১৩.২ কিলোওয়াট) @ ৮৫০০ আরপিএম ম্যাক্সিমাম টর্ক ১৭.২ এনএম @ ৬০০০ আরপিএম।
লনচিন জিপি ১৫০ এর ইঞ্জিন ক্ষমতাঃ
পারফেক্ট পারফরম্যান্স পেতে চাইলে " হাইওয়ে " ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ১১০-১১৫কিমি পর্যন্ত দানবের মত গতি উঠবে। কিন্তু এর পর স্লো। এর গিয়ার শিফটিং হার্ড। ১ ও ২ নং গিয়ার রাফ । বেশিক্ষণ রাইড করতে প্রবলেম হয়। ৩ নং গিয়ার কিছুটা স্মুথ , বাকি গিয়ার গুলো অনেক স্মুথ। ১ থেকে ৩ এ থাকা অবস্থায় গিয়ার বদলানোর কথা মাথায় আসবে বার বার। ৬ নং গিয়ারটা বেশি জোশ। আমি এর টপ স্পীড পেয়েছি ১৪১-১৪৩। হাইওয়েতে পিলিওন সহ আমি টপ পেয়েছি ১২৮-১৩০। ভাল্ব এ্যাডজাস্টমেন্ট ঠিক থাকলে বাইকে কোন ভাইব্রেশন পাবেন না।
লনচিন জিপি ১৫০ এর কন্ট্রোল , ব্রেকিং , কমফোর্টঃ
১০০ তে ৯৫ , মানে জিপিএ ৫। সাসপেনসান , ডুয়েল ডিস্ক , সিটিং পজিশন এই সব নিয়ে কোন কথা হবে না। একদম পারফেক্ট।
লনচিন জিপি ১৫০ মাইলেজঃ
সব চেয়ে বেশি জানতে চাওয়া প্রশ্ন। কিনার আগে ভেবে রেখেছিলাম , বাঘের খাবার একটু বেশী লাগে। তাই মাইলেজ নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাই না। কয়েক বার চেক করে ৩০+ পেয়েছি। হাইওয়েতে ৩০+ পাবেন ইনশাআল্লাহ। যদি প্রোপার কন্ডিশনে থাকে।
লনচিন জিপি ১৫০ এর ইঞ্জিন ওয়েলঃ
অফিসিয়াল রিকমেন্ড ২০w৫০। আমি মটুল ব্যবহার করে ভাল পারফরমেন্স পাচ্ছি।
লনচিন জিপি ১৫০ এর সুবিধাঃ
- অসাধারণ ব্রেকিং।
- অসাধারণ লুক।
- অসাধারণ সাসপেনশন
- অসাধারণ কমফোর্টেবল সিটিং পজিশন। কোমর ব্যাথা হয় না ।
- অসাধারণ স্পিড।
- অসাধারণ সাউন্ড এবং এক্সজস্ট।
- অবিশ্বাস্য মূল্য।
লনচিন জিপি ১৫০ এর অসুবিধাঃ
- ক্লাস এবং গিয়ার হার্ড।
- চেন লুজ হয় জলদি (লো কোয়ালিটি)।
- হেডলাইট আলো কম।
- বিল্ড কোয়ালিটি ১০০ তে ৮৫।
- স্মুথ না।
- জ্যামের মধ্যে হাত ব্যাথা করবে।
পরিসমাপ্তিঃ
১লাখ ৮০ হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে সেরা স্পোর্টস বাইক। প্রোপার সার্ভিস পেলে এই বাইক আপনাকে আশাহত করবেনা।
কিন্তু , সার্ভিস সেন্টার আর সার্ভিস টীমের কারনে কিছুটা সমস্যা হবে। আমরা আশা করছি , এই ব্যাপারগুলো এইচ-পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট দেখবে আর অনেক তাড়াতাড়ি সমাধান দিবে ।
কিছু টিপসঃ
- ২০W৫০ গ্ৰেডের ভাল মানের ১২০০মিলি ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করবেন।
- নিয়মিত চেইন পরিষ্কার, টাইট ও লুব করবেন (ও রিং চেইন সেট ব্যবহারে এই সমস্যার সমাধান পাবেন।
- বাইক চলানোর সময় হেলমেট পরবেন।
লিখেছেন - মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সায়মন