রাইডিং গিয়ার এর আরো কিছু উপকারিতা
This page was last updated on 11-Jul-2024 02:55pm , By Shuvo Bangla
রাইডিং গিয়ার কি শুধুই সেইফটি এর জন্য, নাকি এর আরও কিছু দিক আছে? গত কয়েক বছর যাবৎ কোথাও হেলমেটের আলোচনা উঠলেই এইটা একটা কমন কোশ্চেন। আজ আমরা সেই বিষয়েই আলোচনা করবো। একদল এর কথা হচ্ছে “আমি তো হেলমেট সহ যেমন চালাই, ছাড়াও তেমন চালাই। তাহলে হেলমেট কেন লাগবে?” আরেকদলের কথা হচ্ছে “আরে আজকাল রোডে এক্সিডেন্ট অনেক হচ্ছে। হেলমেট থাকলে মাথাটা বাঁচবে। তৃতীয় দলের কথা হলো “ চালক ভালো হলে এইসব দরকার পড়ে না” আমি শুধু প্রথম আর তৃতীয় দলের কথার রেশ ধরে আজকের লেখাটা লিখবো। প্রথমেই আসি ভালো চালক এবং বাইক চালানোর স্টাইলের উপরে। আমাদের উঠতি বয়সের তরুণদের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে ভালো চালক মানে যে জ্যামের চিপার ভিতরে ৬০-৮০ কিমি/ঘন্টা স্পীডে চালাইতে পারে অথবা হাইওয়েতে ১০০-১১০স্পীডে টানাটানি করতে পারে আর নাহলে যে বেসিক স্টপি মারতে পারে আর রেগুলার বাইক নিয়ে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার আপলোড করতে পারে।
একটু বড় রাইডিং গ্রুপে গেলে হাই রেজুলেশন অ্যাকশন ক্যামেরা আর ৫-৬ লাখ টাকার বাইক না হলে কেউ গুনতেই চায় না। আদতে একজন ভালো রাইডার হওয়ার জন্য উপরোক্ত কোনটারই দরকার হয় না। তাহলে প্রশ্ন আসে, যে “ভালো রাইডার বলতে তাহলে কি বোঝায়?” আসুন আজকে একজন ভালো রাইডারের মোটোপ্সী (আমার নিজস্ব বানানো টার্মিনোলজি যা বোঝায় অটোপ্সি বা বায়োপ্সির মোটরবাইক এডিশন) করে ফেলা যাক। ভালো রাইডার হল তিনি যিনি রাইডিংকে এঞ্জয় করেন। শুনতে খুব সাদাসিধে মনে হলেও রাইডিং এঞ্জয় করা মুড়ি খাওয়ার মত সোজা কাজ নয়। এজন্য দরকার ১। ধৈর্য ২। আত্নবিশ্বাস ৩। বাইকের লিমিট জানা ৪। আশেপাশের কন্ডিশন বিবেচনা করে চালানোর স্টাইল বদলানো। ‘ধৈর্য’ যেইটা আমাদের বেশীরভাগেরই নাই। যেমন অযথা হর্ন বাজানো, রং সাইড দিয়ে ওভারটেক, ফুটপাথ দিয়ে ভুজুং ভাজুং করে শর্টকাট মারা, বাইক চালাইতে চালাইতে ফোনে কথা বলা, যেখানে সেখানে পার্কিং করা, ২০-৩০ ফুট জায়গা পাইলে সেইখানে ১০০ স্পীড উঠিয়ে ব্রেক করা ইত্যাদি।
এইগুলো থেকে বেরিয়ে না আসলে ভালো রাইডার হওয়া স্বপ্নই থেকে যাবে। ‘আত্নবিশ্বাস’ যেইটা আমাদের ভিতরে নাই। আছে এইটার চেয়ে এক লাইন বেশী তা হইল অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাস। আসল কথা হল আপনার দুই পায়ের গ্যাপে যেই কোম্পানীর বাইক ই থাক না কেনো যদি “পাবলিক রোডে” অন্যদের যোগ্য সম্মান না দেন তাহলে আপনার ভালো রাইডার হয়ে ওঠা হবে না। ‘বাইকের লিমিট’ জানা” এইটা আসলে শিখার ব্যাপার। যত চালাবেন তত শিখবেন। সাধারণ নিয়ম হইল আপনার বাইক যেই স্পিড পর্যন্ত কন্ট্রোলে থাকে সেটাই হইল আপনার বাইকের লিমিট। লিমিটের বাইরে গেলে কি হয় সেটা আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই। এর সাথে আপনার লিমিটেরও ব্যাপার আছে। যেমন ধরেন আপনি একটা ৮০-১০০ সিসি বাইক চালিয়ে অভ্যস্ত এবং ১৫০ সিসি বাইক কিনলেন অনেক শখ করে। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে নতুন বাইকের ক্ষমতা এবং ওজন আপনার ৮০-১০০ সিসির ইঞ্জিনের চেয়ে বেশী। তাই থ্রটল এবং ব্রেক সাবধানে ব্যবহার করতে হবে যতদিন পর্যন্ত না নতুন বাইকের ওজন এবং ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার পুরোপুরি ধারণা না আসে।
কন্ডিশনের বিবেচনা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন স্কিল একজন ভালো রাইডারের কারণ এইখানে আপনাকে ধৈর্য, আত্নবিশ্বাস এবং বাইকের লিমিট অনুযায়ী রাইড করা এইসবগুলো একসাথে প্রয়োগ করতে হবে। কথায় আছে ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়। ঠিক সেরকম ই বৃষ্টির দিনে চালানো দেখে রাইডার চেনা যায়। এইবার আসি আলোচ্য লেখার মূল পয়েন্ট, রাইডিং গিয়ার (হেলমেট, গ্লাভস, এলবো নী গার্ড, জ্যাকেট)’কিভাবে আপনার রাইডিং স্কিল বাড়াতে সহায়তা করে। প্রথমত হেলমেটের কথা বলবো যা আপনার চোখ এবং কানকে বাতাস থেকে সুরক্ষা দেয় এবং পুরো মাথাকে বড় ধরনের ধাক্কা থেকে রক্ষা করে।
বাতাস অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর। কারণ চোখ আর কান আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের একটা অংশ। মেডিকেল লাইনে অ্যাক্সিডেন্ট অ্যান্ড এমার্জেন্সী এর উপরে পোস্ট বেসিক এর একটা বড় পড়াশোনা এইটার উপরে। এইটা পড়তে গিয়ে অসংখ্য রোড এক্সিডেন্ট কেস স্টাডিতে পাওয়া গেছে অর্ধেকের বেশী ক্ষেত্রে বাইকারের নিজস্ব ভুল ছিলো তা হল হেলমেট না পরার কারণে চোখে বাতাস লাগলে টানেল ভিশন হয় যা ইমার্জেন্সিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। হেলমেট থাকলে যেই জিনিসটা হয় সেটা হল আপনার চোখের সেন্সরী নার্ভগুলো অপ্রয়োজনীয় তথ্য ব্রেইনে পাঠানো বন্ধ করে দেয় এবং আপনি তখন শুধু প্রয়োজনীয় রাইডিং স্কিলের উপরে মনযোগ দিতে পারবেন (যেমন কত দূরত্বে ব্রেক ধরতে হবে এবং কতখানি গতি কমাতে হবে বা বাড়াতে হবে) এবং আপনি ধীরে ধীরে একজন ভালো রাইডার হয়ে উঠবেন। এরপর আসি গ্লাভসের কথায়। গ্লাভসও মোটরসাইকেল এর অন্যতম প্রয়োজনীয় রাইডিং গিয়ার। গ্লাভসও হেলমেটের মতই কাজ করে কারণ আঙ্গুলে ক্রমাগত বাতাস লাগতে থাকলে আঙ্গুলে থাকা সেন্সরী নার্ভগুলো সবসময় অপ্রয়োজনীয় তথ্য ব্রেইনে পাঠাতে থাকে। কাজেই তখন আমাদের আঙ্গুল অবশ হওয়ার মত হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে আমরা যখন ব্রেক করি বা ক্লাচ ছাড়ি তখন হয় সেটা বেশি ছাড়া হয়ে যায় অথবা বেশি ধরা হয়ে যায়। গ্লাভস থাকলে আপনার ক্লাচ ছাড়ার টাইমিং এবং ব্রেক লিভারের উপর কন্ট্রোল বাড়বে এবং ফিল বাড়বে যা আপনার রাইডিং স্কিলকে অন্য রকম উচ্চতায় নিয়ে যাবে। মনে রাখবেন গতি বাড়ানো যেমন স্কিল, গতি কমানো তার চেয়ে বড় স্কিল। পায়ের আঙ্গুলগুলোকেও জুতা দিয়ে কাভার করে রাখলে পেছনের ব্রেক এবং গিয়ার শিফটারের উপরে আপনার টাইমিং এবং স্মুদনেস বাড়বে এবং ফুটপেগ এর উপরে গ্রিপও বাড়বে। তাই পা খোলা স্যান্ডেল পরে বাড়ির আশেপাশে থাকলেও সিটির মধ্যে এবং হাইওয়েতে মানসম্পন্ন জুতা ব্যবহার করুন।
Also Read: মোটরসাইকেল চালানোর উপকারিতা
আরও সেইফটি গিয়ার যেমন চেস্টগার্ড আপনার বুকে বাতাস এর ধাক্কা অনুভব করতে দেয় না। এর ফলে হাইওয়েতে ওভারটেকের সময়ে সুবিধা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় বুকে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া, কফ জমাট বেঁধে যাওয়াসহ অনেক রকম রোগ থেকেও আপনাকে নিরাপত্তা দেয়। একটা ভালো জিন্স প্যান্ট তেলের ট্যাঙ্কের সাথে আপনার দুই পায়ের কানেশন এবং তাপকে পায়ে লাগতে দেয় না। এর ফলে বাইকে বসে থাকা অবস্থায় আপনার সার্বিক বডি পজিশন এবং রাইডিং কম্ফোর্ট অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া বসে থাকা ভালো হলে সাসপেনশন থেকে যেইসব ফিডব্যাক আসে সেগুলো পায়ের পাতার ভিতর দিয়ে মেরুদন্ড হয়ে ব্রেইনে যায় এর ফলে রাস্তার অবস্থা এবং কতখানি গ্রিপ আছে এইগুলো অনেক ভালো করে বুঝা যায় যা আপনার এক্সপার্ট রাইডার হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শুনতে অনেক ছোট ডিটেইলস মনে হলেও এইসব ছোটখাটো ব্যাপারগুলোই একজন ভালো রাইডার এবং একজন সাধারণ “চালকের” মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। আফসোস লাগে যখন হেলমেটকে “চুলের স্টাইল নষ্ট হয়ে যাবে” এই বলে মানুষ তাচ্ছিল্ল্য করে। গ্লাভসে “ অযথা ভাব মারা “ হিসেবে গন্য করে। বাকিগুলোর কথা না হয় না ই বললাম। বাইক চালানো একটা আর্টের ব্যাপার সেটা আপনি প্রতিদিন অফিস যাতায়াত করুন আর টেকনাফ-তেঁতুলিয়া ট্যুর দিন না কেন। কাজেই এই আর্টে যদি আর্টিস্ট না হয়ে ওঠা যায় তাহলে কি আর “বাইকার” হওয়া যায় বলুন? তাহলে আজকেই শুরু হয়ে যাক ভালো রাইডার হয়ে ওঠার গল্প। দেখা হবে আপনাদের সাথে সামনে অন্য কোন আর্টিকেল নিয়ে। ততক্ষন পর্যন্ত নিরাপদে থাকুন এবং সর্বদা রাইডিং এর সময় সেফটি রাইডিং গিয়ার ব্যবহার করুন। লিখেছেনঃ ওমর ফেরদৌস