মোটরসাইক্লিংয়ে গিয়ার ডাউনশিফটিংয়ের ব্যবহার – এটি কি এবং কখন প্রযুক্ত হয়?
This page was last updated on 06-Dec-2023 08:49am , By Saleh Bangla
মোটরসাইকেল দুইচাকার এক দুর্দান্ত বাহন এবং মোটরসাইক্লিং আক্ষরিক অর্থেই একটি আর্ট হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে উপভোগ্য ও নিরাপদ মোটরসাইক্লিংয়ের জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক অনুশীলন, দক্ষতা বিকাশ, এবং সেইসাথে যতটা সম্ভব অভিজ্ঞতা অর্জন। আর রাইডিংয়ে দক্ষতা অর্জনের বিভিন্ন স্টেপের মধ্যে অন্যতম একটি টেকনিক্যাল স্টেপ হলো ডাউনশিফটিং, যা একটি মোটরসাইকেলের ব্রেকিংয়ে ও গতি কমানোর ক্ষেত্রেও একটি সম্পূরক কৌশল। চলুন তবে প্রাত্যহিক মোটরসাইক্লিংয়ে গিয়ার ডাউনশিফটিংয়ের ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
মোটরসাইক্লিংয়ে গিয়ার ডাউনশিফটিং আসলে কি?
ডাউনশিফটিং হলো মোটরসাইকেল রাইডিংয়ে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি টার্ম এবং টেকনিক। এখানে ডাউনশিফটিং বলতে মোটরসাইকেলের ট্রান্সমিশন সিস্টেমের টপগিয়ার থেকে লোয়ার গিয়ারে শিফট হওয়াকে বোঝায়, যার সাথে মোটরসাইকেলের গতি হ্রাসেরও সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ম্যানুয়েল গিয়ারের ফোর-হুইলার যেমনটা ক্লাচ ডিজএনগেজ করে উপরের গিয়ার থেকে সরাসরি নিচের যেকোনো গিয়ারে চলে যেতে পারে মোটরসাইকেলে তেমনটা সম্ভব না। কেননা, মোটরসাইকেলের ট্রান্সমিশন সিস্টেমে গিয়ারগুলি একের পর এক সাজানো যাতে ধারাবাহিক শিফটিং ছাড়া গিয়ার পরিবর্তন অসম্ভব। আর এখানেই প্রয়োজন হয় গিয়ার শিফটিংয়ে দক্ষতা অর্জন।
সাধারনভাবে মোটরসাইকেলের গতি বাড়ানো বা কমানোর সময়, মোটরসাইকেল রাইডারকে প্রতিটি গিয়ারে মোটামুটি সঠিক মাত্রার একটি গতিতে পৌঁছানোর পর কোন গিয়ার বাড়াতে বা কমাতে হয়। এদিকে, রেভ-ম্যাচিং বা সমন্বিতভাবে থ্রটল এবং ক্লাচ কন্ট্রোলও একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্ম, যার অর্থ কোন গিয়ারে চলমান অবস্থায় থ্রটল পজিশন এবং ক্ষেত্র বিশেষে ক্লাচ-ইন বা আউট সিঙ্ক্রোনাইজ করা। তবে যাইহোক, মোটরসাইকেলের রাইডিং কন্ডিশন বিবেচনা করে গতির সাথে থ্রটল ও ক্লাচের সমন্বয় করা বিষয়টা প্রাথমিকভাবে জটিল মনে হলেও এটি আসলে দক্ষতা অর্জন ও স্বতস্ফুর্ত অভ্যস্ততার বিষয়। তবে ডাউনশিফটিং টেকনিক অপেক্ষাকৃত সহজতর একটি বিষয়।
মোটরসাইক্লিংয়ে গিয়ার ডাউনশিফটিংয়ের ব্যবহার
এবার আসা যাক, মোটরসাইকেল রাইডিংয়ে ডাউনশিফটিংয়ের ব্যবহার ও বিভিন্ন অবস্থায় এর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে। সচরাচর একটি হাইস্পিডে চলা মোটরসাইকেলের স্পিড কমানোর সময় ডাউনশিফটিং অত্যন্ত আলোচিত একটি বিষয়। আমরা জানি যে, রাইডের সময় মোটরসাইকেলের গতি বাড়ানোর প্রয়োজন হলে তাকে প্রতিটি গিয়ারে থ্রটল ওপেন করে মোটামুটি একটি নির্দিষ্ট পরিসরের গতি অর্জন করার পরই পরের গিয়ারে শিফট করতে হয়।
তো স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, মোটরসাইকেলের গতি বাড়ানোর সময় গিয়ার আপশিফট করা হলে সেটির গতি কমানোর সময় বা থামানোর সময়ও কি তাহলে ডাউনশিফটিংয়ে যাওয়া উচিৎ নয়? এই প্রশ্নে এখানে মূলত দুটি টার্ম চলে এসেছে। একটি অংশে মোটরসাইকেলের স্পিড কমানোর কথা বলা হয়েছে, আর অপর অংশে রয়েছে মোটরসাইকেল পুরোপুরি থামিয়ে ফেলা বা ব্রেক করার বিষয়টা। তাই প্রথমে, মোটরসাইকেলের স্পিড কমানোর বিষয়ে বলতে হয়; যা কিনা ওপেন হাইওয়েতে হতে পারে অথবা শহরের সাধারন রাইডগুলিতেও হতে পারে।
মোটরসাইকেলের স্পিড কমানোর সময় ডাউনশিফটিং - এটি কি আসলেই দরকার?
তো মোটরসাইকেলের স্পিড কমানোর সময় ডাউনশিফটিং নিয়ে অভিজ্ঞ মহলে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। সাধারণত, একটি মোটরসাইকেল হাইওয়ে রাইডে হাইস্পিডে চালানোর সময় মোটরসাইকেলের স্পিড কমানোর জন্য কেবল থ্রটল ক্লোজ করাই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে থ্রটল ক্লোজ করার পরিমান গতি কমানোর ধরনের উপর নির্ভর করবে আর সেই সাথে রাইডার চাইলে হালকা ব্রেকও প্রয়োগ করতে পারেন। এসময় ক্লাচ করা বা গিয়ার শিফটের তাৎক্ষনিক কোন প্রয়োজন নেই। আর স্পিড কমে গেলে তা আবার বাড়ানোর জন্য সেই গিয়ারে থেকেই সমন্বিতভাবে থ্রটল ওপেন করাই যথেস্ট।
তবে সিটি রাইডের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ভিন্ন। সিটি রাইডে মোটরসাইকলের স্পিড অনেকটা নেমে যেতে পারে। আর স্পিড নেমে গেলে বা ক্ষেত্রবিশেষে রেভ-ম্যাচিংয়ের জন্য বা ইঞ্জিন নকিং এড়ানোর তখন হয়তো হালকা ক্লাচের সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে। তবে সিটি রাইডে মোটরসাইকলের স্পিড অনেকটা কম বেশি হওয়া খুবই সাধারন বিষয়। তাই থ্রটল ক্লোজ করায় মোটরসাইকেলের স্পিড অনেকটা নেমে গেলে হয়তো নিচের গিয়ারে শিফট করে আবার রেভ করে স্পিড তোলার প্রয়োজন হতে পারে যেটি কিনা সিটি রাইডে খুবই সাধারন বিষয়।
মোটরসাইকেল থামানোর সময় গিয়ার ডাউনশিফটিং
এবার আসা যাক দ্বিতীয় ইস্যুতে। একদম সরলসোজা ভাবে বলতে গেলে একটি হাইস্পিডে চলা মোটরসাইকেলকে স্পিড কমিয়ে তা থামানোর ক্ষেত্রে ডাউনশিফটিং একটি আর্ট; আর স্বাভাবিক অবস্থায় তা প্রয়োগ করাও জরুরী। আর একটি মোটরসাইকেল চলন্ত অবস্থা থেকে মসৃণভাবে থামিয়ে ০-কিমিতে আনতে ডাউনশিফটিংয়ে কিছু পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ সিনক্রোনাইজ করে নিতে হয় এবং মোটামুটি মানের রাইডারকেও যত্নের সাথে তাতে অভ্যস্ত হতে হয়।
এক্ষেত্রে একদম বেসিক স্টেপস হলো, মোটরসাইকেল রাইডার থ্রটল ক্লোজ করবে, প্রয়োজনে দ্রুত ক্লাচ-ইন করে গিয়ার ডাউনশিফট করবে ও ইঞ্জিনব্রেক এ্যাপ্লাই হতে দিবে, প্রয়োজনে সারফেস কন্ডিশন অনুযায়ী প্রযোজ্য প্রেশার দিয়ে উভয় ব্রেক ধরবে। এসময় চাইলে খুব দ্রুত আরো একধাপ গিয়ার ডাউনশিফট করে নেয়া যেতে পারে। এভাবে গতি কমে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রনে আসলেই পরের মুহুর্তে দ্রুত ক্লাচ-ইন করে পরপর গিয়ার ডাউনশিফট করে ব্রেক চেপে দাঁড়িয়ে যবে। এসময় মোটরসাইকেল ট্রান্সমিশন নিউট্রাল পজিশনে না থাকলে ক্লাচ লিভার ধরে থাকবে নয়তো ছেড়ে দেবে।
তো এই হলো হাইস্পিডে চলা একটি মোটরসাইকেল থামানোর ক্ষেত্রে গিয়ার ডাউনশিফটের প্রয়োগ ও সিকোয়েন্স। বিষয়টা শুনতে যতটা দীর্ঘ ও জটিল মনে হোক না কেন বাস্তবে তা কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। এটিই অভ্যস্ততায় নিয়ে আসার ব্যাপার। আর একজন রাইডার একবার তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে অভ্যাসবশতই তা কয়েক মিলি-সেকেন্ডে এ্যাপ্লাই করে ফেলতে পারবেন।
তবে টাইট-ট্রাফিক সিটি রাইডের ক্ষেত্রে বিষয়টা সাধারনত এরকম না; কেননা সেখানে টাইট-ট্রাফিকে লো-স্পিড রাইডে এসব বারবার সমন্বয় করা কঠিন। এক্ষেত্রে একজন রাইডার তার মোটরসাইকেলের গতি কমানো বা থামানোর ক্ষেত্রে আরো শর্টকাট পথ বেছে নিতে পারেন। এই ধরনের ক্ষেত্রে, থ্রটল কন্ট্রোল করা, কদচিৎ ইঞ্জিনব্রেক হতে দেয়া, উভয় ব্রেক এ্যাপ্লাই করা, এবং ক্লাচ-ইন ও থ্রটল সমন্বয় করে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রন করা, প্রভৃতি সচরাচর ব্যবহৃত টেকনিক। এখানে একটা প্রমিত স্টেপ বেছে নেয়া আসলেই যথেষ্ট মুশকিল।
তো বন্ধুরা, এই ছিলো আমাদের প্রাত্যহিক মোটরসাইক্লিংয়ে গিয়ার ডাউনশিফটিংয়ের ব্যবহার নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোটরসাইকেল রাইডিংয়ে স্পিড কমানো বা ব্রেক করে থামানোর ক্ষেত্রে গিয়ার ডাউনশিফটিং এর ব্যবহার অত্যন্ত সাধারন একটি বিষয়। তবে রাইডিং কন্ডিশন যাই হোকনা কেন এসময় মোটরসাইকেলের রেভ-ম্যাচিং ও ক্লাচ কন্ট্রোল খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে খুব ভালোভাবে অভ্যস্ত হতে যথেষ্ট অনুশীলন প্রয়োজন। আশাকরি আপনারা যারা নতুন তারা এই বিষয়গুলিতে নজর রাখবেন। ধন্যবাদ।