স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন করবে টিভিএস
This page was last updated on 11-Jul-2024 03:11pm , By Shuvo Bangla
দেশে মোটরসাইকেলের শুল্ক কমে যাওয়ায় দাম কমছে। বিক্রি বাড়ায় ক্রমেই বড় হচ্ছে বাজার। দেশে মোটরসাইকেলের বার্ষিক চাহিদা দুই লাখ হলেও এ বছর তা তিন লাখ ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে বহুজাতিক ব্র্যান্ডগুলো স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে। বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা পেলে ভারতীয় কম্পানি টিভিএস বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল উৎপাদন করবে বলে জানান টিভিএস অটো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে একরাম হোসাইন। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন করবে টিভিএস
প্রতিবছর বাজেট এলেই মোটরসাইকেলশিল্পের আমদানিকারক ও উৎপাদকদের মধ্যে শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন নিয়ে দোড়ঝাঁপ শুরু হয়। এই শিল্পে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দ্রুত একটি নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করেন জে একরাম হোসাইন। তাঁর মতে, নীতিমালাতেই দিকনির্দেশনা থাকতে পারে, একটা ব্র্যান্ড আগামী পাঁচ বছরে কী পরিমাণ লোকালাইজেশন করলে কী ধরনের সুবিধা পাবে। বাংলাদেশে টিভিএস অটোর যাত্রা ২০০৭ সাল থেকে শুরু হলেও ভারতে একটি অনেক পুরনো কম্পানি। বর্তমানে টিভিএস ব্র্যান্ডের ১০টির বেশি মোটরসাইকেল দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
Also Read: টিভিএস থান্ডার অফার
এ বছর আরো দুই-তিনটি মডেলের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে বাজারজাত করা হতে পারে বলে জানান একরাম হোসাইন। TVS Brand এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ট্রাস্ট ভ্যালু সার্ভিস বা টিভিএস ভারতের অনেক পুরনো একটি কম্পানি। ১৯১১ সালে এই কম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। টিভিএস যখন বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে তখন এটিই ছিল টিভিএসের প্রথম রপ্তানিকারক দেশ। এখন টিভিএসের পণ্য ৫০টির বেশি দেশে রপ্তানি হয়। টিভিএস গ্রুপ এখন ভারতের সবচেয়ে বড় কম্পোনেন্ট উৎপাদনকারী কম্পানি, যেটি বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি কম্পানির একটি। টু হুইলার, থ্রি হুইলারসহ অন্যান্য গাড়ির মধ্যে যত উপকরণ দেখা যায় সেখানে টিভিএসের পার্টস থাকেই। বাংলাদেশেও কম্পোনেন্ট উৎপাদন, ভেন্ডর ডেভেলপমেন্টে টিভিএস বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে পারে। ’
২০১৬ সালে মোট দুই লাখ ৫০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে টিভিএসের মার্কেট শেয়ার প্রায় ২০ শতাংশ। বাজাজ প্রথম, এরপর টিভিএস এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে হিরো। তবে সরকার মোটরসাইকেলের ওপর শুল্ক কমানোয় এ বছর বিক্রি তিন লাখ ছাড়াবে বলে মনে করেন টিভিএস অটো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে একরাম হোসাইন। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবকাঠামো এখনো উন্নত হয়নি। অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সাশ্রয়ী যানবাহন হিসেবে মোটরসাইকেলের চাহিদা আরো বাড়বে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী এখনো মোটরসাইকেলের বাজার সম্প্রসারণের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে এক হাজার মানুষ প্রতি মাত্র দেড়টা মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। যেখানে ভিয়েতনাম, ভারত হাজারে একশর বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি করে। আমাদের জনসংখ্যা অনুপাতে মোটরসাইকেল বিক্রি বছরে অন্তত ১০ লাখ হওয়া উচিত। পাকিস্তানেও বছরে ১২ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। আমাদের ১০ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি করতে হলে আরো অনেক কিছু করতে হবে। ’ সরকার মোটরসাইকেলশিল্প নিয়ে নীতিমালা প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে জানিয়ে একরাম হোসাইন বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে একমাত্র রানার অটোমোবাইল মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচার (উৎপাদন) করছে।
ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও বাজারজাত করছে। স্থানীয় শিল্পবান্ধব নীতিমালা হলে অন্য ব্র্যান্ডগুলোও স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে যাবে। নীতিমালা তৈরির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা ভিয়েতনাম ও ভারত গিয়েছিলেন। ’ মোটরসাইকেলের বিভিন্ন উপকরণ ভারত থেকে এনে বাংলাদেশে সংযোজন করে বাজারজাত করা হয় বলে জানালেন জে একরাম হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে টিভিএস মোটরসাইকেল উৎপাদনের পরিকল্পনা করছি। নতুন একটি কারখানা স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছি। এ বছর শেষে আমরা নতুন কারখানা চালু করতে পারব। তবে আমরা নীতিমালার জন্য অপেক্ষা করছি। মোটরসাইকেল নীতিমালায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে কী ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয় তা আমরা দেখেশুনে এগোব। কারণ বাংলাদেশে মোটরসাইকেলশিল্পে প্রতিবছর বাজেটে একেক ধরনের ঘোষণা থাকে। নীতির ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা না থাকলে আমাদের নতুন বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
একরাম হোসাইন বলেন, ‘আমরা দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করলে একদিকে গ্রাহকরা যেমন সাশ্রয়ী দামে মোটরসাইকেল কিনতে পারবে, তেমনি আমাদের নতুন কারখানায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মোটরসাইকেলের দাম কমে এলে বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে ভেন্ডর উন্নয়ন হবে। ’ টিভিএস অটো বাংলাদেশের এমডি জে একরাম হোসাইনের মতে, ভেন্ডর উন্নয়ন না হলে মোটরসাইকেলশিল্পের বিকাশ ঘটবে না। প্রযুক্তি স্থানান্তর, দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য ভেন্ডর তৈরি করা অপরিহার্য। একরাম হোসাইন বলেন, ‘আমরা সব কিছু বানাতে চাই না। আমরাও চাই দেশে ভেন্ডর উন্নয়ন হোক। এ জন্য সরকারকে এমন নীতিমালা করতে হবে যাতে ভেন্ডর উন্নয়নের দিকনির্দেশনা থাকবে। ’
বাংলাদেশ থেকে ভারতের সেভেন সিস্টার, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ আফ্রিকার বাজারে মোটরসাইকেল রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা আছে জানিয়ে একরাম হোসাইন বলেন, ‘তবে এটা নির্ভর করে প্রতিযোগিতামূলক দামের ওপর। মোটরসাইকেল রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়া হলে রপ্তানি বাজারেও সাফল্য দেখাবে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। ’ দেশে মোটরসাইকেলের দাম তূলনামূলকভাবে এখনো বেশি বলে জানান টিভিএস অটো বাংলাদেশের এমডি। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত শুল্কের কারণে মোটরসাইকেলের দাম অনেক বেশি পড়ছে। মোটরসাইকেল কোনো বিলাসপণ্য নয়, বরং এটি এখন মানুষের প্রয়োজনীয় বাহন।
মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্টাইল করার জন্য নয়, কাজের জন্য যাচ্ছে। আমার মনে হয় মোটরসাইকেল শিল্প নিয়ে সরকারেরও দৃষ্টিভঙ্গি আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে। ’ মোটরসাইকেল উৎপাদন শিল্পে প্রচুর উদ্ভাবন হচ্ছে বলে জানান একরাম হোসাইন। তিনি বলেন, ডুয়াল অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন (ইএফআই), ইলেকট্রনিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ সেলফ ব্যালান্সিং মোটরসাইকেল নির্মাণ করা হচ্ছে, যেটি পড়বে না। কিন্তু বাংলাদেশে ১৫০ সিসির ওপরে বাইকের অনুমোদন না থাকায় মোটরসাইকেলের বাজার ছোট হয়ে গেছে। তা ছাড়া গ্রাহকরাও আধুনিক প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টিভিএস অটো বাংলাদেশের এমডি বলেন, “প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডই চেষ্টা করে নিজস্ব স্বকীয়তা তৈরি করার। আমরা যেমন ১০০ সিসির বাইকে বলে থাকি ‘কম তেলে বেশি চলে।
আমাদের ১৫০ সিসির আরটিআর সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বাইক, যেখানে আমাদের মার্কেট শেয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ। ” আশা করা যাচ্ছে, সকল পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে শীঘ্রই বাংলাদেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন করবে টিভিএস মোটরস বাংলাদেশ, এবং তাদের পদাংক অনুসরন করবে অন্যান্য কোম্পানিগুলো। সংবাদ কৃতজ্ঞতাঃ কালের কন্ঠ